ইসলাম ধর্মে ন্যায়বিচার করার পরিণাম

দৈনন্দিন জীবনে আমরা সকল প্রকার কাম কাজে লিপ্ত থাকি যার মধ্যে সৎকর্ম ও কুকর্ম উভয়েই আমরা করি তা সম্পূর্ণ করা কালীন মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু বিবাদ বা ঝগড়ার পক্ষে পরতে হয় তা মানে এটা নয় যে চিরকাল তার সঙ্গে দুশমনি বা দুশমন বলে বহন করা আমাদের ঈমান কে নষ্ট করে ও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।  “ যদি মুমিনদের মধ্যে দুই পক্ষ ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তবে তাদের মধ্যে আপনি ন্যায়বিচারের সাথে শান্তি স্থাপন করুন । কারণ যারা ন্যায়পরায়ণ হয় আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। মুমিনরা তো একক ভ্রাতৃত্ব, সুতরাং তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর"।  ঝগড়া-বিবাদ করা খুবই খারাপ। এর কুফল এতই ক্ষতিকর যে, এটি একজন মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতকে ধ্বংস করে দেয়। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এর কুফল খুবই মারত্মক। এর কারণে মানুষের অন্তর কঠিন হয় এবং পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। তাই এ ঝগড়া-বিবাদ মানুষের স্বভাবের সাথে আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রাকৃতিক ভাবে একজন মানুষ অধিক ঝগড়াটে স্বভাবের হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ কুর’আন শরীফে ইরশাদ করেছেন-

وَلَقَدۡ صَرَّفۡنَا فِي هَذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لِلنَّاسِ مِن كُلِّ مَثَل وَكَانَ ٱلۡإِنسَنُ أَكۡثَرَ شَيۡء جَدَلٗا  “আর আমরা এই কুরআনে মানুষের জন্য সকল প্রকার উপমা বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। আর মানুষ সবচেয়ে বেশি তর্ককারী।”(সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৫৪) । অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি ঝগড়াকারী ও প্রতিবাদী, সে সত্যের পতি নমনীয় হয় না এবং কোনো উপদেশ-কারীর উপদেশে সে কর্ণপাত করে না।

 মহান আল্লাহ কুর’আনে ইরশাদ করেছেন-  হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ ৷ দোষ অনুসন্ধান করো না৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া পছন্দ করবে ? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয় ৷ আল্লাহকে ভয় করো ৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু ৷ (সূরা হুজরাত-১২)

প্রকৃতবিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আগুন যে ভাবে লাকড়িকে পুড়ে ফেলে তেমনি ভাবে ঠাট্টা-মস্করা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে নিঃশ্বেস করে দেয়।’ “আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনাকে ও তিনার কলিজার টুকরো হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাদের উভয়ের দরজায় পাড়ি দিয়ে উভয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা উভয়ে কি সালাত আদায় করনি ? আমরা তিনাকে উত্তরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জীবনতো আল্লাহর হাতে, তিনি ইচ্ছা করলে আমাদের জাগাতে পারতেন। আমরা এ কথা বলার সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে ফিরে যান। আমাদের কোন উত্তর দেন নি। তারপর আমি শুনতে পেলাম যে তিনি যাওয়ার সময় তার রানে আঘাত করে বলছে (সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৪৫) অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দ্রুত উত্তর দেওয়া ও ব্যাপারটি নিয়ে কোনো প্রকার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ না করাতে অবাক হন। এ কারণেই তিনি স্বীয় উরুর উপর আঘাত করেন।”

তবে এখানে একটি কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, তা হলো মানুষ হিসেবে সবার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করার গুণ প্রাকৃতিক হলেও কোনো কোনো মানুষ এমন আছে, যার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করার গুণ অন্যদের তুলনায় অধিক বেশি এবং সে ঝগড়া করতে অন্যদের তুলনায় অধিক পারদর্শী। আমরা যখন চাইবো যে, আমরা অনর্থক বিতর্ক ও ঝগড়া-বিবাদ হতে বিরত থাকবো এবং ঝগড়া-বিবাদের নিজেদের জড়াবো না, তখন আমাদের কর্তব্য হলো, যে আমরা এ দ্বীনকে মজবুত করে ধরি দ্বীন থেকে যেমন বিচ্যুত না হয়। কেননা, যারা দ্বীনকে ছেড়ে দেয় বা দ্বীন ইসলাম থেকে বিরত থাকে, তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি হলো, আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে মূর্খতা ও ঝগড়া-বিবাদ ও ফিতনা ছড়িয়ে দেয়। আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَا ضلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدىً كَانُوا عَلَيْهِ إِلَّا أُوتُوا الجَدَلَ ثم تلا النبي هذه الآية - وَقَالُواْ ءَأَلِهَتُنَا خَيۡرٌ أَمۡ هُوَ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلَا بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ    خَصِمُونَ - “মানুষ সঠিক পথের ওপর থাকার পর কখনো গোমরাহ হয় না কিন্তু যখন তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ দেওয়া হলো, তখন তারা ধ্বংস হতে আরম্ভ করল। তার পরবর্তীতে এ আয়াতটি তিলাওত করেন- “আর তারা বলে, ‘আমাদের উপাস্যরা শ্রেষ্ঠ নাকি ঈসা’? তারা কেবল কূটতর্কের খাতিরেই তাকে তোমার সামনে পেশ করে। বরং এরাই এক ঝগড়াটে সম্প্রদায়।” (সুরা আল-যুখরুফ, আয়াত: ৫৮)।

আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে বদলা নিয়েছেন এবং তাদের শাস্তি দিয়েছেন। যেমন, তাদের নিকট যে দীন ও ইলম পেশ করা হয়েছিল তার বিনিময়ে তাদের ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত করা হয়েছে। তাদের অনর্থক বিতর্কে লিপ্ত করে দেওয়া হলো। আর মনে রাখতে হবে, এ হলো, চিরন্তন নিয়ম, যখন কোনো জাতি উপকারী ইলম ও কুরআন ও সুন্নাহের ইলম ত্যাগ করে দেবে, সেই সময়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও ফিতনা ফাসাদ ছড়িয়ে দিয়ে তাদের থেকে বদলা নিবে।

হে আল্লাহ তুমি দোজাহানের মালিক আমাদের সততা সঠিক হিসেবে পরিচয় করে দাও আর তার অনুকরণ করার তৌফিক দান কর।  বাতিল কে বাতিল হিসেবে চেনার তৌফিক দাও এবং বাতিল থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দাও। 

 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter