জুমাদা আল-আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য 

আরবি হিজরি বর্ষপুঞ্জির প্রথম উৎপত্তি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমার বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লহু আনহুর জামানা থেকে হয়। এটি একটি ইসলামিক প্রথম বর্ষ পুঞ্জিকা। এখানে ১২ মাস আরবি ভাষার আনুকরণ করে করা হয়েছে। এর প্রথম মাস মুহাররাম ও শর্ব শেষ মাস জিলকাদাহ। ইসলাম ধর্মে রমজান মাসেকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এটিকে মূলত আল্লাহর মাস বলা হয়। ইসলামিক শরিয়ত হিসেবে এই মাসে সলক মুসলমান নর নারির উপর রোজা ফরজ। এর পরে রজ্জব মুহারারম তা ছাড়া আর আন্যান মাসের যথেষ্ট গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশিষ্ট মাস জুমাদা আল-আউয়াল এর কিছু ফজিলত ও এই মাসে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বলি  ও সাহাবায়ে কেরাম দের এই মাসের কিছু বিশিষ্ট ইবাদত সমূহ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরব ইনশাল্লাহ।

ভুমিকাঃ- 

চন্দ্র মাসের পঞ্ছম তম মাস এই জুমাদা আল-আউয়াল মাস। ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর মাসে বিগত সোমবার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পঞ্ছমতম মাস জামাদিউল আওয়ালের আগমন ঘটেছে। এই মাস নবীজি ও সাহাবাগনের কাছে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ও ফজিলতে পূর্ণ ছিল, এই মাসে তিনারা নফল ইবাদত ও আর আন্যান্য নেকির কাজ কর্ম বেশি বেশি করে আদায় করে থাকতেন। তথ্য অনুযায়ী আরব দেশে এই দুইটি মাসের নামকরণ প্রথমটি জামাদিউল আউয়াল ও এর পরের মাস জামাদিউস সানি, ওই সময়ের   আবহাওয়া ও তখনকার পরিবেশ আনুযায়ি করা হয়েছিল।

নামকরণের কারনঃ  

মুলত আরব দেশে এই দুই মাসে প্রচণ্ড শীত শৈলে প্রবাহে প্রায় সমস্তকিছু জমে যেত সেই কারনে এই মাস দুইটির নাম এরূপ দেওয়া হয়েছিল। এটির বাংলা মানে প্রথম শীত ও দ্বিতীয় শীত। জুমাদা শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল দৃড় , জমাট বদ্ধ ,কঠিন, নিথর,শীতল,শীতকাল, শীতবস্ত্র, চিন্তাযুক্ত অবস্তা, ওআস্থির সময় এই দুইটি মাসে শীত এতটাই শক্তিশালী হয়ে যেত যে  তরল পানি জমাট বদ্ধ হয়ে যেত, প্রাণী জগৎ নীরব হয়ে যেত জড় পদার্থ বরফে জমাটবদ্ধ হয়ে যেত , উদ্ভিদ জীব সকল কিছু নিথর আবশ হয়ে থাকত। এই কারনে এই দুইটি মাসের নাম হওয়ার মূল করণ। এককথায় বলতে গেলে জুমাদা মানে আরব বাসী দের শীত কাল। 

এই মাসের কিছু বিশিষ্ট ইবাদাত ও এর ফজিলতঃ

এই জুমাদা আল-আউয়াল মাস রজ্জব মাসের পূর্বের মাস রজ্জব মাসে নিজেকে রমজানের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে , তাহলে আমরা এই মাসটিকে রজ্জবের প্রস্তুতের মাস হিসেবে নিতে পারি কেননা রজ্জব মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বার এসেছে ইসলামে ওই মাসটির ফজিলত আসিম। এছাড়া নবীজির সাহাবি গনের কাছে এই মাসের গুরুত্ব অনেক ছিল, জামাদিউল উলা মাসে তিনারা কিছু বিশিষ্ট ইবাদত ও জিকির আজকার করে থাকতেন। তোহফাতুল ইয়ামনি কিতাবে বর্ণিত আছে যে রসুল সাল্লাহু আলাহিওসাল্লাম এর সাহাবা গন জামাদিউল উলা মাসের প্রথম দিন মাগরিব ও ইশা নামাজের মধ্যাবর্তি সময় বিশ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। এই নামাজ গুলিকে সাহাবাগন বিশেষ সাওয়াবের উদ্দেশ্যে ও বিশেষ কল্যাণময় ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করতেন। এই নামজের নিয়ম নফল নামাজের নিয়মে দুই রাকাত করে দশ সালামের শহিত প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। ও শেষে দরুদে ইব্রাহীম পড়তে হবে। এ ছাড়া আর নফল নামাজের জিকির আন্যান্য বইয়ের মধ্যে এসেছে। 

এ ছাড়া নফল রোজা রাখা , কোন কাজা রোজা থাকলে সেটি পূরণ করা মান্নত রোজা থাকলে পূরণ করা এছাড়া এই মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখা প্রথম নবী হজরত আদাম আলহিসাল্লামের সুন্নত। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার সুক্রবার নফল রোজা রাখা , তসবি তাহলিল দরুদ শরীফ পাঠ করা দোয়া কালাম , ইস্তেগফার তওবা, খতম তিলাওয়াত কিয়ামুলাইল সদকা দান খাইরাত ইত্যাদি করা উত্তম।এগুলি করলে এর ফজিলত ও কল্যান আমরা লাভ করতে পারব।    

   এই মাসে সংঘটিত বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলি ঃ

  1. এই মাসে হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাহুআলাইহিওসাল্লাম) প্রথম বিবাহ তিনার ২৫ বছর বয়সে এক ৪০ বছরের বৃদ্ধ নারীকে করেন।যে সময় সারা দুনিয়া নারীদের উপর নিপীড়ন আত্যাচারে মগ্নছিল সেই সময় তিনি এক বৃদ্ধ নারীকে বিবাহ করে দুনিয়া বাসিদের নারীর মর্জদা বুঝিয়ে দেন।
  2. ইতিহাসের এক বিশিষ্ট যুদ্ধ জাঙ্গে মুতা ১ জুমাদা আল-আউয়াল সংঘটিত হয় এটি একটি সিরিয়া যুদ্ধ ছিল সেটির নেতৃত্বে জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছিলেন এবং তিনি এই যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান।
  3. এই মাসে ১৩ তারিখ খাতুনে জান্নাত হজরত ফতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা ২৩ বছর বয়সে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরলোকগমন করেন।
  4. ২২ শে জুমাদা আল-আউয়াল এক মরমান্তিক ঘটনার প্রতি ইতিহাস সাক্ষ দেয় এই মাসে উস্মান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যকারিদের কাছ তেকে কিসাস নেওয়ার বিষয়ে আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু ও হজযরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে গৃহযুদ্ধ জাঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।এই যুদ্ধে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু জয়লাভ করেন।
  5. ১৫ই জুমাদা আল-আউয়াল ইসলামের নেতা হজরত জয়নুল আবিদিন রাদিয়াল্লাহু আনহু জন্ম গ্রহণ করেন।    

 উপসংহার:

প্রিয় পাঠকবিন্দু, হাদিসে উল্লেখিত আছে যে এই দুনিয়া মুমিন এর জন্য এক জেলখানা সরূপ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের অযথা সময় অপচয় করা চলবে না। নইলে কাল কিয়ামতের ময়দানে আমাদের আফসোস ছাড়া কিছুই থাকবে না। এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশী। নবীজি ও সাহাবায়ে  কেরাম গন এই মাসকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছিলেন যার কারণে তিনারা এই মানে বেশি বেশি নফল নামাজ আরও আন্যান্য কাজ করে থকতেন। তাই আমাদের এই মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা দকরকার। শুধুমাত্র রমজান মাসই নেক আমলের মাস না, বরং ইসলাম আমাদের সর্বকালেই সৎকাজের আদেশ দিয়ে থাকে, সুতরাং যেহেতু এই মাসের মর্যাদা অনেক বেশি তাই এই মাসে আরো বেশি বেশি ভালো এবং নেক আমলে আমাদের ব্যাস্ত হওয়া করণীয়। আসুন আমরা এই পরিবেশকে শিরকমুক্ত করে আল্লাহর আদেশসমুহ মেনে ঈমানের সহিত বিদায় নেওয়ার চেষ্টা করি।  হে আল্লাহ  আমাদের তৌফিক দিন-আমিন।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter