হিন্দুস্তানি সিনেমায় উর্দু তেহজিব এবং উর্দু সমাজ: হারানো শালীনতার একটি শৈল্পিক উপস্থাপনা
ভূমিকা
জাতীয় উর্দু দিবসের প্রেক্ষাপটে উর্দু ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে ভাবলে হিন্দুস্তানি সিনেমার অবদান উপেক্ষা করা অসম্ভব। উর্দু কেবল একটি ভাষা নয়, এটি এক সম্পূর্ণ তেহজিব— যেখানে শালীনতা, আদব ও সৌজন্য মিলেমিশে এক শিল্পিত জীবনধারার রূপ নিয়েছে। “তেহজিব” মানে শুধু আচার-আচরণ নয়, বরং এমন এক সভ্যতার প্রতীক যা বিনয়, রুচি ও নৈতিকতার সমন্বয়ে গঠিত। দিল্লি ও লখনৌর নবাবি সংস্কৃতি থেকে শুরু করে গালিব ও মীরের কবিতার কাব্যিক ভাষায় উর্দু তার শুদ্ধতম সৌন্দর্য অর্জন করে। সেই ভাষার মাধুর্যই পরবর্তীতে হিন্দুস্তানি চলচ্চিত্রের সংলাপ, সংগীত ও অভিনয়ে প্রাণ সঞ্চার করে। ‘আদাব’, ‘তাশরিফ’, ‘মেহরবানি’— এমন শব্দে মিশে ছিল পরিমিতি, বিনয় ও শালীনতা। উর্দু সিনেমাকে এক সভ্য সমাজের প্রতিচ্ছবিতে রূপ দিয়েছে, যেখানে ভাষা ও সংস্কৃতি মিলেমিশে গড়ে তুলেছে মানবিকতার কাব্য। এভাবেই হিন্দুস্তানি চলচ্চিত্র উর্দু তেহজিবকে এক শৈল্পিক রূপে চিত্রিত করেছে— যা আজও আমাদের সংস্কৃতি ও নৈতিক সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উর্দু ভাষা ও তহজিবের শিকড়
উর্দু ভাষার জন্ম ভারতীয় উপমহাদেশের বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে, যেখানে পারসীয়, তুর্কি ও আরবি ভাষার সংমিশ্রণে এক অনন্য ভাষার বিকাশ ঘটে। দিল্লি, দাক্ষিণাত্য ও লখনৌর সভ্যতা এই ভাষার শৈল্পিক বিকাশে মুখ্য ভূমিকা রাখে। বিশেষত লখনৌ-র নওয়াবি যুগে উর্দু কেবল যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না; এটি পরিণত হয়েছিল এক পরিপূর্ণ জীবনাচারে, যা শালীনতা, বিনয় ও সংস্কৃতির প্রতীক।
“আদাব”, “তাশরিফ”, “মেহমাননওয়াজি”, “খিদমত” — এই শব্দগুলো উর্দু সমাজের ভদ্রতা ও নৈতিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। কথার ভঙ্গি, হাসি, চোখের নম্রতা— সবই তেহজিবের অঙ্গ ছিল। উর্দুর এই সংস্কৃতি মানুষকে শেখায়, কীভাবে বিনয় ও রুচির মাধ্যমে সমাজে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা যায়।
উর্দুর তেহজিব সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে এর সাহিত্য ও কাব্যে। মির্জা গালিব, মীর তাকী মীর, দাগ দেহলভি, ইকবাল— এঁরা উর্দুর সেই কবি, যাঁরা ভাষাটিকে কেবল সাহিত্য নয়, এক সভ্যতার প্রতীক করে তুলেছেন। তাদের কবিতায় প্রেম, মানবতা, নৈতিকতা ও বিনয়ের সমন্বয়ে উর্দু এক আধ্যাত্মিক মর্যাদা লাভ করে।
লখনৌর দরবারি জীবন, পোশাকের শালীনতা, নরম উচ্চারণ, অতিথি আপ্যায়ন ও সৌজন্যপূর্ণ আচরণ উর্দু তেহজিবের মূলভিত্তি স্থাপন করে। এই রুচি ও নান্দনিকতা পরে হিন্দুস্তানি চলচ্চিত্রে প্রবাহিত হয়— সংলাপের সুরে, গানের কথায়, চরিত্রের আচরণে। ফলে উর্দু তেহজিব শুধু ইতিহাস নয়, আজও এটি ভারতীয় সংস্কৃতির অন্তরাত্মায় প্রবাহিত এক শাশ্বত সৌন্দর্য।
হিন্দুস্তানি সিনেমার জন্ম ও উর্দুর প্রবেশ
১৯৩০ ও ৪০-এর দশকে যখন হিন্দুস্তানি সিনেমা তার নিজস্ব পরিচয় খুঁজছিল, তখন উর্দু ভাষা সেই শিল্পের প্রাণ হয়ে ওঠে। চলচ্চিত্রের কাহিনি, সংলাপ, গানের কথা—সবখানেই উর্দুর শালীনতা, সৌন্দর্য ও কাব্যিক মাধুর্য ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার লেখক ও গীতিকারদের মধ্যে ছিলেন কাইফ আজমী, সাজ্জাদ জাহির, রাজিন্দর সিং বেদী, সাদত হাসান মান্টো—যাঁরা মূলত উর্দু সাহিত্যের বিশিষ্ট নাম। তাঁরা চলচ্চিত্রে এনে দেন এক নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাহিত্যিক মর্যাদা। তাঁদের লেখা সংলাপে যেমন কাব্যের গুণ ছিল, তেমনি সমাজ, প্রেম, দারিদ্র্য ও মানবতার প্রতিফলনও পাওয়া যেত।
কাইফ আজমীর অমর সৃষ্টি “Waqt ne kiya kya haseen sitam” (কাগজ কে ফুল, ১৯৫৯) শুধু প্রেমের গান নয়, বরং সময়, সম্পর্ক ও মানবিকতার এক গভীর দার্শনিক প্রতিচ্ছবি। এমন গানে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়—সেটি ছিল নরম, ভাবপ্রবণ ও আবেগপূর্ণ উর্দু। এই সময়ের সিনেমায় “আপ”, “জনাব”, “তাশরিফ”, “মেহরবানি”, “ইজ্জত” ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার সমাজে এক নতুন সংস্কৃতির পরিচয় দেয়—যেখানে ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সম্মান, শালীনতা ও পারস্পরিক সৌজন্যবোধ।
উর্দু কেবল চলচ্চিত্রের ভাষা নয়, বরং সেই সময়কার সিনেমা হয়ে ওঠে উর্দু সংস্কৃতির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। স্ক্রিপ্ট, সংলাপ ও গানের মধ্যে দিয়ে উর্দু ভাষা হিন্দুস্তানি চলচ্চিত্রকে দেয় এক নতুন তেহজিব—যা আজও ভারতীয় সিনেমার সৌন্দর্য, আদব ও মানবিকতার প্রতীক হিসেবে বিরাজমান।
উর্দু তহজিবের প্রতিফলন
উর্দু তেহজিবের সৌন্দর্য সবচেয়ে জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে হিন্দুস্তানি চলচ্চিত্রের চরিত্র, সংলাপ ও সংগীতে। এই ঐতিহ্যের মূল শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় আমির খুসরুর কাব্য ও সঙ্গীতধারায়— যিনি হিন্দুস্তানি সংস্কৃতি ও মুসলিম নান্দনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। তাঁর উদ্ভাবিত কবওয়ালি, গজল ও খেয়াল ধারা পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র সংগীতে গভীর প্রভাব ফেলে। খুসরুর রচিত ভাষার মিশ্র সৌন্দর্য— ফারসি, হিন্দি ও আরবির সংমিশ্রণ—ই পরবর্তীকালের উর্দু তেহজিবের ভাষাগত ভিত্তি তৈরি করে, যা হিন্দুস্তানি সিনেমার ভাষাতেও প্রতিফলিত হয়েছে।
এই প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে ক্লাসিক চলচ্চিত্রগুলোতে। যেমন— মুঘল-এ-আজম (১৯৬০)-এ সালিম ও অনারকলির প্রেম উর্দু কাব্যের মতোই শালীন ও গৌরবময়; সংলাপের প্রতিটি বাক্যে রাজকীয়তা ও বিনয়ের ছোঁয়া। পাকিজা (১৯৭২)-তে মেহবুবির চরিত্র মুসলিম সমাজের রুচি, সংগীত ও নারীর আত্মসম্মানের প্রতীক হয়ে ওঠে; সংলাপে উর্দু শব্দের মাধুর্য পুরো সিনেমাটিকে এক কাব্যিক রূপ দেয়। মির্জা গালিব (১৯৫৪)-এ উর্দু কাব্যের আত্মা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে— গালিবের গজল “নুকতা-চিন হ্যায় গম-এ-দিল, উসকো বুলানিয়ে না দে” আজও উর্দুপ্রেমীদের হৃদয়ে অমর। আর উমরাও জান (১৯৮১)-এ উর্দু সমাজের পোশাক, সংগীত, নৃত্য ও আদবের নিখুঁত প্রতিফলন দেখা যায়, যা এক নান্দনিক শিল্পধারায় রূপ নেয়।
এই চলচ্চিত্রগুলো কেবল গল্প নয়, বরং সভ্যতার প্রতিচ্ছবি। নারী-পুরুষের সম্পর্কের শালীনতা, সংলাপের কোমলতা ও আচরণের রুচিশীলতা ইসলামী তেহজিবের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধকে সামনে আনে— যা আজও উর্দু সমাজের শালীনতা ও শিল্পবোধের প্রতীক।
উর্দু সমাজ ও চলচ্চিত্রের আন্তঃসম্পর্ক
হিন্দুস্তানি চলচ্চিত্র আসলে উর্দু সমাজের জীবনদর্শন, স্বপ্ন ও বাস্তবতার মেলবন্ধন। মুসলিম সমাজের পারিবারিক মূল্যবোধ, অতিথিপরায়ণতা, সালাম ও দুআর সংস্কৃতি, শালীন পোশাক, ভাষার কোমলতা—সবকিছুই সিনেমার পর্দায় এক শৈল্পিক রূপ পেয়েছে। উর্দু সমাজের এই তেহজিব কেবল সংলাপে নয়, চরিত্রের আচরণ ও পরিবেশের সৌন্দর্যেও প্রতিফলিত হয়েছে।
বিশেষ করে ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ দশকের মধ্যে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো উর্দু সমাজের নৈতিকতা, মানবিকতা ও রুচির আদর্শকে প্রতিফলিত করেছে। “মেরে মেহবুব” (১৯৬৩) চলচ্চিত্রে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন, সাহিত্যপ্রেম ও ভদ্রতাবোধ এমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যে, তা যেন বাস্তব উর্দু সমাজের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। চলচ্চিত্রের সংলাপে ‘আপ’, ‘মেহেরবানি’, ‘ইজ্জত’—এই শব্দগুলো শুধুমাত্র ভাষার সৌন্দর্য নয়, বরং এক সভ্য সমাজের পরিচায়ক।
একইভাবে “চৌদহভি কা চাঁদ”, “বাজার” ও “গরম হাওয়া” সিনেমাগুলো উর্দু সমাজের সংগ্রাম, প্রেম, বিচ্ছেদ ও মানবিক মর্যাদার কাহিনি তুলে ধরে। এসব সিনেমায় দেখা যায়, প্রেমের প্রকাশ কখনোই উচ্ছৃঙ্খল নয়; বরং তা হয় বিনয়, সম্মান ও আত্মসংযমের মাধ্যমে।
চলচ্চিত্র তাই কেবল বিনোদনের মাধ্যম ছিল না—এটি হয়ে উঠেছিল উর্দু সমাজের নৈতিক আয়না। যেখানে আদব, ইজ্জত, তাশরিফ ও মেহমাননওয়াজি ছিল গল্পের মূল সুর। এই সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা উর্দুকে কেবল এক ভাষা নয়, বরং এক পরিমার্জিত জীবনধারার প্রতীক করে তুলেছে—যা হিন্দুস্তানি সিনেমার হৃদয়ে আজও ধ্বনিত হয়।
আধুনিক বলিউডে উর্দু তহজিবের অবক্ষয়
আধুনিক বলিউডে, বিশেষত ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে, উর্দু তেহজিব ধীরে ধীরে পেছনের সারিতে সরে গেছে। এক সময় যে সিনেমার সংলাপে ছিল “মেহরবানি”, “তাশরিফ”, “ইজ্জত” ও “জনাব”-এর মতো শব্দের আদব, সেখানে এখন ভদ্রতার জায়গা নিয়েছে অশালীনতা ও অতিনাটকীয় প্রকাশভঙ্গি। উর্দুর কোমল উচ্চারণ, পরিমিত সংলাপ ও কাব্যিক গীতিকাব্য—সব মিলিয়ে যে শালীন পরিবেশ তৈরি হতো, তা আজ বিরল।
পূর্বতন যুগে ইশ্ক মানে ছিল আত্মিক সংযোগ, বিনয় ও শ্রদ্ধা—যেমনটি দেখা যেত পাকিজা বা চৌদহভি কা চাঁদ-এর মতো সিনেমায়। কিন্তু আধুনিক চলচ্চিত্রে প্রেমের মানে দাঁড়িয়েছে শারীরিক আকর্ষণ ও বাজারচলতি রোমাঞ্চ। সংলাপের জায়গা দখল করেছে ইংরেজি মিশ্রিত শব্দ, আর গানের কাব্যিকতাকে স্থান দিয়েছে পপ সুর ও বাণিজ্যিকতা।
এই পরিবর্তন শুধু ভাষার নয়, সমাজের রুচি ও নৈতিকতারও প্রতিফলন। উর্দু তেহজিব একসময় ইসলামী মূল্যবোধ, সংযম, আদব ও নান্দনিকতার প্রতীক ছিল—যেখানে কথা বলার মধ্যেও ছিল সৌন্দর্যের রীতি। আজ সেই ঐতিহ্য বিনোদনের ঝলকে ঢেকে গেছে।
তবে আশার কথা, কিছু চলচ্চিত্র নির্মাতা এখনো উর্দু সংস্কৃতিকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। গজল বা নাজম-এর প্রভাব পাওয়া যায় কিছু আধুনিক প্রযোজনায়ও। তবু মূলধারার বলিউডে যে সৌজন্য, নৈতিকতা ও রুচি একদিন উর্দু তেহজিবকে অলঙ্কৃত করেছিল—তা আজ কেবলই অতীতের স্মৃতি, ইতিহাসের মলাটে বন্দী এক শালীনতার প্রতীক।
উর্দু দিবসে পুনর্বিবেচনা
প্রতি বছর ৯ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় জাতীয় উর্দু দিবস— মহান দার্শনিক, কবি ও চিন্তাবিদ আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল (১৮৭৭–১৯৩৮)-এর জন্মদিন উপলক্ষে। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, উর্দু কেবল একটি ভাষা নয়; এটি এক সভ্যতা, এক আদব, এবং এক নৈতিক সংস্কৃতির প্রতীক।
আজ যখন হিন্দুস্তানি চলচ্চিত্রে উর্দুর কোমলতা, উচ্চারণের সৌন্দর্য ও কাব্যিক রীতি হারিয়ে যাচ্ছে, তখন এই দিবস আমাদের আহ্বান জানায় পুনর্জাগরণের পথে ফিরে যেতে। উর্দু আমাদের শেখায় শালীনভাবে কথা বলা, সম্মানের সঙ্গে মত প্রকাশ করা, আর বিনয়ের সঙ্গে ভালোবাসা প্রকাশ করা—যা একসময় ভারতীয় সমাজ ও চলচ্চিত্রের নৈতিক মেরুদণ্ড ছিল।
স্কুল, কলেজ, মিডিয়া ও সংস্কৃতিক্ষেত্রে উর্দু শিক্ষার প্রসার, উর্দু সাহিত্যচর্চা এবং নৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাণ—এই তিনটি ক্ষেত্রই পারে উর্দু তেহজিবের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে।
এই ৯ নভেম্বর, উর্দু দিবসের পবিত্র উপলক্ষে, আমাদের উচিত এক নতুন অঙ্গীকার নেওয়া—
আমরা উর্দুকে কেবল ভাষা নয়, এক আদব ও মানবিকতার উত্তরাধিকার হিসেবে বাঁচিয়ে রাখব।
উর্দু হোক আমাদের হৃদয়ের সুর, আমাদের সংস্কৃতির পরিচয়, এবং আমাদের চলচ্চিত্রের শালীন আত্মা।
উপসংহার
উর্দু তেহজিব একসময় হিন্দুস্তানি সিনেমার হৃদস্পন্দন ছিল। সংলাপের ভদ্রতা, সংগীতের কাব্যিকতা, পোশাকের শালীনতা ও চরিত্রের আচরণ—সবকিছু মিলিয়ে এটি এক সভ্য, নৈতিক ও রুচিশীল সমাজের প্রতিচ্ছবি উপস্থাপন করেছিল। মুঘল-এ-আজম, উমরাও জান বা মেরে মেহবুব-এর মতো চলচ্চিত্রগুলোতে উর্দু ভাষা শুধু কথার মাধ্যম ছিল না; বরং তা ছিল সৌন্দর্য, সংযম ও মানবিকতার প্রকাশ।
কিন্তু আধুনিক যুগে যখন অশালীনতা, কৃত্রিমতা ও বাণিজ্যিকতার ঝড়ে সিনেমার নান্দনিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের ফিরে তাকাতে হবে সেই হারানো তেহজিবের দিকে—যেখানে প্রেম মানে ছিল পবিত্রতা, আর ভাষা মানে ছিল আদব ও সম্মান।
চলচ্চিত্র আবারও হতে পারে সমাজের শালীনতার আয়না, যদি আমরা উর্দুর সৌন্দর্য ও নৈতিকতার ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে পারি। উর্দু কেবল শব্দের সমষ্টি নয়—এটি এক নৈতিক শিক্ষার ধারক, এক আত্মিক সভ্যতার প্রতীক।
যেমন বলা হয়—
“زبان نہیں تہذیب ہے اردو”
উর্দু কেবল ভাষা নয়, এটি এক তেহজিব।
এই উপলব্ধিটিই হোক জাতীয় উর্দু দিবসের মূল বার্তা—যেখানে আমরা উর্দুর আদব, সৌন্দর্য ও মানবিকতার উত্তরাধিকারকে নতুন প্রজন্মের হাতে পৌঁছে দিই।