মাতা পিতা: ভালোবাসা ও অত্যাচার
আজকের সমাজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন রয়েছে। কিন্তু মুসলিম সমাজের মধ্যে কোন পরিবর্তন নেই। আগে যেই রকম ছিল সেই রকম রয়েছে আজ মুসলিম সমাজএবংযেই রকম মাতা পিতার ওপর ভালোবাসা ও অত্যাচার করতো সেই রকম রয়েছে।মাতা পিতা হচ্ছে একটি ফুলের মতো যেমন পৃথীবিতে ফুলের মতো কোন সুন্দর জিনিস নেই। সেই রকম একজন সন্তানের জীবনে মাতা পিতা ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু আমাদের বর্তমান সামাজে সেই ফুল আর নেই।আজকের সমাজে মাতা পিতার ওপর অন্যায় অত্যাচার করা হয়। মাতা পিতাকে সঠিক দৃষ্টিতে দেখা হয়না।
এই জন্য আল্লাহ কুরআন শারীফের সুরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলছেন:- و اعبدوا الله ولا تشركوا
به شئا وبالولدين احسانا
অর্থাৎ: তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত কর তার সাথে কোন শিরক করোনা এবং তোমরা তোমাদের মাতা পিতার সাথে সদ ব্যাবহার করো।
এখানে বলা হয়েছে যে আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করোনা এবং তার সাথে সাথে তোমরা মাতা পিতার সাথে অত্যাচার করোনা। কিন্তু আজ আমাদের বর্তমান সমাজে আমরা দেখতে পায় সেটা করা হয়না।
এবং আর একটা হাদীস শারীফেররয়েছে:-
و ابى امامة رضى الله عنه ان رجلا قال يا رسول- ما حق الولدين على ولده. قال هما جنتك و نارك( ابن ماجه)
অর্থাৎ- হযরত আবু উমামা রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে:- একটি সন্তানের মাতা পিতার ওপর কি অধিকার। তখন নাবী কারীম সাল্লাহহু আলাইহিস সালাম বলেন:- মাতা পিতা তোমাদেরজন্য জান্নাত এবং জাহান্নাম।
অর্থাৎ এই হাদীস দ্বারা আমাদের বোঝানো হয়েছে যে ব্যাক্তি মাতা পিতার সাথে সৎআচরণ করে না এবং সাথে সাথে মাতা পিতার সাথে অন্যায় অত্যাচার করে তাকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামে দিয়ে দিবে।
এবং যে ব্যাক্তি মাতা পিতার সাথে সৎ আচারন করে এবং মাতা পিতার সাথে অত্যাচার করে না সে ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতি বানিয়ে দেবে।
আর একটি হাদীস শারীফে রয়েছে-
নাবী কারীম সাল্লাহু আলাই হিসসালাম বলেন:-الجنة تحت الأقدام الأمهات
অর্থাৎ মাতা পিতার পায়ের নিচেয় তোমাদের জান্নাত
এই হাদীস দ্বারা আমাদেরকে বলা হয়েছে যাদের প্রতি তোমরা অন্যায় অত্যাচার করে এবং যে মাতা পিতার অধিকার থেকে তাদেরকে পদদলিত করে তাকে আল্লাহ তায়ালা কখনই জান্নাত বাসি করবেনা।
আর একটা হাদীস শারীফে রয়েছে:-
جاء رجل النبى صلى الله و سلم قال اريد الجهاد في سبيل الله فقال له رسول الله هل امك حية قال نعم قال التزم رجلها فثم الجنة
নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসামের যুগে একজন ব্যাক্তি নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসামের নিকটে এসে জিজ্ঞসা করে। সেই ব্যক্তি বলে আমি আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদ করতে চায়।
তখন নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসাম বলেন তোমার মাতা পিতা কি জীবিত রয়েছেন। তখন সেই ব্যক্তি বলে হ্যাঁ আমার মাতা পিতা জীবিত রয়েছে। তখন নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসাম বলে তুমি তোমার মাতা পিতার সাথে ভালো ব্যবহার কর এবং তাদের খিদমত কর। সেইটাই হবে তোমার জন্য জান্নাত।
এই কাহিনি থেকে বোঝা যায় যে আল্লাহ তায়ালা রাস্তায় জিহাদ করার চেয়ে উত্তম হচ্ছে মাতা পিতার খিদমাত করা।
কিন্তু আমাদের আজকের সমাজে আমরা দেখতে পায় যে মাতা পিতার ওপর কেমন ভাবে অত্যচার করা হয় এবং তাদেরকে কিভাবে মারধর করা হয়।
নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসাম বলেন:- সন্তানের মাতা পিতার ওপর তিনটি হক রয়েছে (১) তার জন্মের পরে একটা ভালো নাম রাখা। অর্থাৎ যার নামের অর্থ হচ্ছে উত্তম (২) তার জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে তাকে কুরআনে কারীম শিক্ষা দেওয়া (৩) তার প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া
আর একটি হাদীস শারীফ রয়েছে-
হযরত আন আবু হুরায়রাতা রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে যে নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসাম বলেন:- পৃথীবির মধ্যে ওই ব্যক্তি অপমানিত ও ধংস হয়ে গেছে যে ব্যাক্তি নিজেদের মধ্যে মাতা পিতাকে পেয়ে তাদের খিদমাত করে জান্নাত লাভ করে পারেনি।
হযরত আবু মাসউদ রাদিআল্লাহ আনহু বলেন আমি নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসামকে জিজ্ঞাসা করলাম পৃথীবির মধ্যে সবচেয়ে বড়ো আমল কোনটি তখন নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসাম বলেন- সঠিক সময়ে নামায আদায় করা এবং আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম দ্বিতীয়তম পৃথীবির সবচেয়ে বড়ো আমল কোনটা তখন আবার নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসাম বলেন:- মাতা পিতার সাথে সদ ব্যবহার করা এবং আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম তৃতীয়তম পৃথীবির সবচেয়ে বড়ো আমল কোনটা তখন আবার নাবী কারীম সাল্লাহু আলাইহিসসাম বলেন:- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।
কিন্তু আমরা এইসব জানার পরেই মাতা পিতার সাথে অন্যায় অত্যাচার করে থাকি। মাতা পিতাকে ভালো বাসতে পারিনা কিন্তু আমাদের প্রতি অতি প্রয়োজন মাতা পিতার সাথে সদ্ব ব্যবহার করা।