মালদ্বীপে ইসলাম পৌঁছানর আশ্চর্য ঘটনা

মালদ্বীপ হল একটি ইসলামি দ্বীপ যেটি সমুদ্রের মাঝে অবস্থিত। সেখানে কিভাবে ইসলাম পৌঁছাল? জাহাজ ছাড়া সমুদ্র অতিক্রম করে যেখানে পৌঁছান অসম্ভব সেখানে কিভাবে দেখা যায় ইসলামের আধিপত্য? কে সেখানে ইসলামকে নিয়ে গেছেন? এই সব বিষয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হল।

হাফেয আবুল বারাকাত নামে একজন আঠারো বছরের যুবক বাণিজ্যের উদ্যেশে কোন এক সমুদ্র জাহাজ পূর্বের দিকে যাত্রা করে যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পরে। জাহাজের অভিযাত্রি সকলেই প্রাণ হারান। হাফেয আবুল বারাকাত এক খণ্ড কাঠ কে অবলম্বন করে প্রাণে বেঁচে যান। ভাসতে ভাসতে তিনি মালদ্বীপে এসে পৌঁছান। সেখানে তিনি এক বৃদ্ধার বাড়িতে আশ্রয় নেন।

মালদ্বীপে তিনি জঙ্গলে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একদিন তিনি যখন কাঠ বাড়িতে ফেরে তখন তিনি বৃদ্ধাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পান। বৃদ্ধাকে তিনি কান্না করার হেতু জিজ্ঞাসা করলে বৃদ্ধা তাকে সব খুলে বলেন, বৃদ্ধা বলেন যে তাদের দ্বীপে বছরের কোন একটি বিশেষ দিনে একটি ভয়ঙ্কর রাক্ষসের আবির্ভাব হয়। তার হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সেই দিনে কোন এক যুবতি নারিকে সমুদ্রের কিনারায় অবসস্থিত মন্দিরে রেখে আসতে হয় এবং তার পরের দিনে সেই যুবতির লাশ পাওয়া যায়। তাই আমাদের রাজা লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে যে কে যাবে সেই মন্দিরে। যার নাম সেই লটারিতে ওঠে তাকে রাজার সিপাহীরা সেই মন্দিরে রেখে আসে এবং পরের দিন তার লাশ উদ্ধার করে। এইবার আমার মেয়ের পালা তাই আজ রাত্রে আমার মেয়েকে সেই ভয়ানক মন্দিরে রেখে আসবো, তাই আমি কান্না করছি।

যুবক বৃদ্ধার এইসব কথা শুনে অনেক দুঃখ পেলেন। বৃদ্ধা তাকে তার দুঃসময়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছে তাই সে বৃদ্ধাকে বলতে থাকে: হে চাচি আপনি আপনার মেয়ের পরিবর্তে আমাকে সেখানে পাঠান। আপনার মেয়ের পোশাক আমাকে পরিয়ে দিন যাতে কেউ না বুঝতে পারে যে আমি একজন পুরুষ। বৃদ্ধা তার কথা শুনে বলতে থাকে: আমার মেয়ের পরিবর্তে তোমার আমি কখনয় দিতে পারবনা। এটা আমার জন্য শোভনীয় নয়। যুবক বৃদ্ধাকে বলতে থাকে: চাচি আমি একজন হাফিযে কুরআন। সেই রাক্ষস আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, কেননা আমার সঙ্গে আল্লাহ থাকবেন। আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি হতে দেবেন না। এইভাবে যখন বৃদ্ধাকে বোঝাতে থাকে তখন বৃদ্ধা নিরুপায় হয়ে রাজি হয়ে যায়। এবং তাকে তার মেয়ের পোশাক পরিয়ে দেয়। রাজার সৈন্যরা তাকে যুবতি ভেবে সেই মন্দিরে রেখে আসে।

যখন গভীর রাত চারি দিকে নিরবতা ছেয়ে গেছে, সকলেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে সেই সময় আবুল বারাকাত আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন একের পর এক সুরা তিলাওয়াত করতেই আছে। হঠাৎ সমুদ্রের ঢেউ উত্তাল হতে শুরু হয়। দূর হতে এক বিরাট রাক্ষসের উদ্ভব হয়। রাক্ষসটি মন্দিরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। হঠাৎ তার কানে আয়াতের ধ্বনি বাজতে থাকে, ফলে সে সামনে আর অগ্রসর হতে পারেনা এবং যেদিক থেকে এসিছিল সেদিকে ফিরে যায়।

যখন সকাল হয় তখন বৃদ্ধা ভাবতে থাকে যে যুবকটি হয়ত মরে গেছে। কিন্তু যখন রাজার সৈন্যরা তাকে জীবিত অবস্থায় পায়, তখন তাদের অবাকের আর সীমা থাকেনা। তারা দেখে যে সেখানে কোন মহিলা ছিলনা পরিবর্তে একজন পুরুষ রয়েছে। সৈন্যরা তাকে রাজার দরবারে নিয়ে যায়। রাজা যুবকটিকে জিজ্ঞাসা করে যে যুবকটি সেখানে কি করছিল? সেখানে কোন মহিলা যাওয়ার পরিবর্তে সে কেন গিয়েছিল? তাকে রাক্ষস কেন কোন ক্ষতি করেনি? যুবকটি রাজাকে বলে যে সে একজন মুসলিম। সে আল্লাহর তাওহিদের উপর বিশ্বাস রাখে তাই রাক্ষস তার কোন ক্ষতি করতে পারেনি এবং ফিরে গেছে।

এই সব কথা শুনে রাজা যুবকটিকে বলতে থাকে যে এর পরের বার যুবক সেখানে যদি একা যেতে পারে এবং সুরক্ষিত হয়ে ফিরতে পারে তবে মালদ্বীপের সকল প্রজা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান নিয়ে আসবে। এই কথা শুনে যুবকটি অনেক পুলকিত হয় এবং সে রাজি হয়ে যায়।

দেখতে দেখতে আবার কটি বছর কেটে যায়, এবং সেই দিনটি আবার চলে আসে। তখন হাফেয আবুল বারাকাত সেই মন্দিরে যাওয়ার জন্য আবার প্রস্তুত হন। এবং রাত্রে বেলায় সেই মন্দিরে গিয়ে অবস্থান করতে থাকে, সেই বার আর কোন দৈত্য আসেনা। তার পর থেকে সে দৈত্যটি আর কোন দিন মালদ্বীপে আসেনি। বলা হয় হাফেয আবুল বারাকাত যখন অক্ষত হয়ে ফিরে আসেন তখন প্রথম দিনেই ছয় লক্ষ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।

এই ভাবে মালদ্বীপে ইসলাম ছরিয়ে পরতে থাকে। এবং সেখানকার সকল মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter