ইসলাম ধর্মে শিক্ষার গুরুত্ব ( প্রথম ভাগ)
আল্লাহ রব্বুল আলামীন মানব জাতিকে অফুরন্ত ও অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। তন্মধ্যে বিদ্যা তথা জ্ঞান একটি অন্যতম অমূল্য নিয়ামত।এই জ্ঞানের দ্বারাই মানুষ পশু হতে পৃথক হয়। এরই মাধ্যমে নিম্ন স্তর থেকে উচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়,মান- সম্মানের শীর্ষ স্থানে অধিষ্ঠিত হয়। এই জ্ঞানের দ্বারাই মানুষ, মাথা উঁচু করে গর্বে আপ্লুত হয়ে মানুষকে ঠাট্টা কারী সুউচ্চ পাহাড়কে পদ দলিত করে শৃঙ্গে পৌঁছে তার গর্বকে খর্ব করে জয়ের পতাকা গেড়ে দেয়। ভয়ঙ্কর গভীর সমুদ্রের বুক চিরে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দেয়। লাগামহীন অনিয়ন্ত্রিত পশুকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের বিভিন্ন কাজে লাগায়।এরই দৌলতে নিজের কর্তৃত্ব মানিয়ে জনসাধারণের ওপর রাজ করা যায়। এরই মাধ্যমে অকল্পনীয় অভেদ্য বায়ূমণ্ডলকে ডিঙিয়ে চন্দ্রে পৌঁছে বিজয় উৎসব পালন করা সম্ভব হয়। এরই সাহায্যে নানান অভিনব জিনিস আবিষ্কার করে মানব-জীবন যাত্রাকে সহজ ও সুগম করে তোলা যায়। তাই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ও মাহাত্ব অপরিসীম ও অতুলনীয়।
এহেন অমূল্য ও অতুলনীয় নিয়ামতের প্রতি ইসলাম ধর্ম তেমন কোন বিশেষ গুরুত্ব দিবেনা তা ভাবায় যায়না। বরং ইসলাম ধর্মের মতো একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য দিবে সেটাই তো স্বাভাবিক। এজন্যই তো আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা স্বল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের ওপর আল্লাহর যে মহা গ্রন্থ কোরান শরীফ নাজিল হয়েছিল তার প্রথম শব্দটিই হলো ইক্বরা। অর্থাৎ পড় বা পড়ুন। এক গণণা অনুযায়ী পবিত্র কোরান শরীফে ব্যবহৃত ৭৮ হাজার শব্দের মধ্যে প্রথম শব্দ এটিই। এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতেই পারে যে ইসলাম ধর্মের শুভ সূচনাই হয়েছে জ্ঞান চর্চা দিয়ে। কিছু গবেষকের গবেষণা অনুযায়ী প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ দুই মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জায়গায় বিভিন্ন রূপে জ্ঞান বা তার সমার্থক শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এ হতে আমরা বুঝতে পারি ইসলাম ধর্মে বিদ্যার মাহাত্ব কত।
কোরান মধ্যে বিদ্যার মাহাত্ব
কোরান শরীফের সূরা বাক্বারায় মানব জাতির সৃষ্টির আদি কথা উল্লেখ করতঃ বলা হয়েছে যে মানব জাতির সৃষ্টির প্রারম্ভে আল্লাহ্ তাআলা ফেরেস্তাগণকে সমস্ত জিনিসের নাম বলতে বললে তারা অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন, মানবকুলের আদি পিতা হজরত আদম আলায়হিস্ সালামকে নাম বলতে বলেন। হজরত আদম আলায়হিস্ সালাম সমস্ত জিনিসের নাম বলে দেন। তাই হজরত আদম আলায়হিস্ সালামের সম্মানার্থে সমস্ত ফেরেস্তাদের হুকুম দেওয়া হয় তাঁরা যেন তাঁকে সেজদা করেন। ইবলিশ শয়তান ছাড়া সমস্ত ফেরেস্তারা হজরত আদম আলায়হিস্ সালামকে সেজদা করেন।
এই ঘটনা ছাড়াও জ্ঞানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রকাশ করতঃ কোরান মাজীদে একাধিক স্বাতন্ত্র আয়াত নাজিল হয়েছে। তন্মধ্যে দু'একটি আয়াত পাক আপনাদের আত্মা শান্তির জন্য পেশ করা হচ্ছে ---- আল্লাহ্ বলেন -----
এবং আরজ করুন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান বেশি দাও।( সূরা ত্বহা আঃ নং ১৪৪)
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন ---
আপনি বলুন, জ্ঞানীরা আর অজ্ঞ লোকেরা কি এক সমান? উপদেশ তো তারাই মানে যারা বোধশক্তি সম্পন্ন।( সূরা যুমার আঃ নং ৯)
আল্লাহ্ তাআলা অন্য এক জায়গায় জ্ঞানী ব্যক্তিদের সম্মান বর্ধন করতঃ এরশাদ করেন --
আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে ইমানদারদের ও তাদেরই যাদের কে জ্ঞান প্রদান করেছেন সমুন্নত করবেন।
বিদ্যা অর্জনের সহজ উপায়ের হদিস দিয়ে অন্য জায়গায় আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন বলেন ---
সুতরাং হে লোকেরা! যা তোমরা জানোনা তা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।(সূরা নাহল আঃ নং ৪৩)