আল্লাহর ভয়
আল্লাহ তাআলা আমাদের তিনার খলিফা হয়ে সৃষ্টি করেছেন। খলিফার অর্থ হল আল্লাহ তাআলা রাসুল এবং আম্বিয়াগণদের মাধ্যমে যার উপর আদেশ দিয়েছেন তা অনুসরণ করা এবং যার উপর আমাদের নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। কিছু জিনিস আমাদের জন্য জাইয করেছেন এবং কিছু জিনিস নাজাইয। এ সব কিসের জন্য? আমাদের কর্মের ফল কি হবে? মানবজীবনের আসল উদ্দেশ্য কি? এই দুনিয়াতে কিছু করে যাওয়ার পর আমাদের অবস্থা কি হবে? এই দুনিয়ার এবং এই দুনিয়াতে যা কিছু রয়েছে এ সবের সৃষ্টিকর্তা কে? আমাদের সমস্ত কাজকর্ম কি এখানেই শেষ, না এর কোন ফল পাওয়া যাবে? এই কিছু প্রশ্ন থেকেই গেছে যার উত্তর দিতে বড়ো বড়ো পণ্ডিতরা পরাজিত হয়েছেন এবং তার উত্তর অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এর উত্তর শুধু সেই ধর্ম দিতে পারে যার সৃষ্টি কর্তা স্বয়ং আল্লাহ।
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের ভয় হচ্ছে তাঁর প্রতি গভীর ভক্তি বা সম্মান বজায় থাকা। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে এই দুনিয়াতে দুটি পৃথক শক্তি দিয়ে প্রেরন করেছেন। যার মাধ্যমে মানব নেক কর্ম করে ফেরেশতার চেয়েও বেশি মর্যাদা অর্জন করতে পারে। এবং যার মাধ্যমে মানবজাতি খারাপ কর্ম করে কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট হতে পারে। ইসলাম মানবজাতিকে দেখিয়েছে কিভাবে একজন মানুষ সব থেকে বেশি মর্যাদাশীল হতে পারে। আল্লাহ তাআলা রাসুল এবং আম্বিয়াদের প্রেরন করেছেন মানবজাতি সঠিক পথ থেকে পথভ্রষ্ট না হয়ার জন্য এবং তাদেরকে সঠিক পথে হিদায়াত করার জন্য । এই দুনিয়ায় হজরত আদম আলাইহি সাল্লাম থেকে নিয়ে হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত হাজার হাজার নবী এবং রাসুল এসেছেন। নিজের নিজের কওমকে সঠিক পথে হিদায়াত দিয়েছেন। সমস্ত নবীর শরিয়াত ভিন্ন ছিল কিন্তু সবার একই উদ্দেশ্য ছিল (আল্লাহ তায়ালার জন্য)। সমস্ত নবী নিজের কওমকে এই উপদেশ দিতে থাকতেন যে, এই দুনিয়ায় জীবন কিছুক্ষণের জন্য। আমাদের আসল উদ্দেশ্য হল আখিরাতের জীবন যা মৃত্যুর পর আরম্ভ হবে। ওই জীবনের জন্য আমাদের নিখুঁতভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই আমাদের আল্লাহর জন্য জীবন যাপন করতে হবে। ধ্বনি হোক বা গরীব, ছোটো হোক বা বড়ো সবাইকে এই পৃথিবী থেকে নিদায় নিতে হবে। উর্দু কবিতায় বলা হয়েছে:-
زندگی انسان کی ہے مانند مرغ خوش نوا
ايک شاخ پر بيٹہا کوئ دم چہچہايا اڑگيا
(মানুষের জীবন সুখী মোরগের মতো একটা ডালে বসে কিছুক্ষণ কিচিরমিচির করে উড়ে গেল)
আমাদের জীবনের অন্তিম আছে। আমাদের এই দুনিয়া কবর পর্যন্ত থাকবে। কবরের পরে নেকি কর্ম ব্যতীত এক মুহূর্ত আগে অগ্রসর হওয়া যাবে না।
সুলাইমান আলাইহিসসাল্লাম একজন নবী ও তার সাথে সাথে তিনি একজন বাদশাহ ছিলেন। যখন বিলকিশ রানির সিংহাসন নিয়ে তার সামনে রাখা হলো। তিনি বলেন এটা আমার আল্লাহর কৃপা। এটা আমার বৈশিষ্ট্য নয়। এটা আমার রবের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর ভালোবাসা তিনার ইবাদতের মধ্যে লুকিয়ে আছে। কোন রাজত্বের মধ্যে নয়। ইবাদত তিনারই করতে হবে যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের জীবনযাপনের রাস্তা দেখিয়েছেন। সঠিক পথে চলার জন্য রাসূলগণদের প্রেরণ করেছেন। আসমানী গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন। তবুও মানবজাতি কিছু নিকৃষ্টের এবাদত করে থাকে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে আল্লাহ বলে ঘোষণা করে। নিজের ইচ্ছামত জীবনযাপন করে। ফলাফল এটা দেখা যাচ্ছে যে আল্লাহ যে মানবজাতিকে তিনার খলিফা রূপের সৃষ্টি করেছেন সেই মানবজাতিরা শয়তানের খলিফা হয়ে গেছে।
দুনিয়ার জীবন মানবজাতির জন্য একটা পরীক্ষার ন্যায়। এই জীবনে বিভিন্ন রকমের দুঃখ-কষ্ট আসবে। সমস্ত কিছুকে সহ্য করে চলতে হবে। মানবজাতির জীবন একটা ভ্রমণের মতো আর এই ভ্রমণ মৃত্যু দিয়ে শেষ হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে আসল জীবন হলো মৃত্যুর পর অর্থাৎ আখেরাতের জীবন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি অয়াসাল্লাম আমাদের এই দুনিয়ার জীবন নিয়ে সতর্ক করেছেন। আর আমাদের কে যে রাস্তায় চলতে হবে সে রাস্তায় চলে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর সেটা হল তাকয়ার রাস্তা এবং পরহেজগারী। যে ব্যক্তি পরহেজগারী হবে অর্থাৎ মুত্তাকী হয়ে জীবন যাপন করবে, সেই ব্যক্তি আখেরাতের রেহায় পাবে। কিন্তু আল্লাহর অমূল্য পুরস্কার সেই ব্যক্তি পাবে যে ব্যক্তির হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কাঁপে। আল্লাহ তাআলা করআন শরিফে ইরশাদ করছেনঃ-
وَ لِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ (سورة الرحمن: 46)
অর্থাৎঃ- আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দুটি জান্নাত।
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে সে দিকে লক্ষ্য রেখে সে আল্লাহর সমস্ত আদেশ পালন করে এবং সমস্ত নিষিদ্ধকে ত্যাগ করে তাকে আল্লাহ তাআলা দুটি জান্নাত দিবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কায়েস রাদিয়াল্লাহ আনহুর পিতা হয়ে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সা বলেছেনঃ দুটি জান্নাত চাঁদির হবে এবং অর সমস্ত আসবাবপত্রও চাঁদিরই হবে। আর দুত জান্নাত হবে স্বর্ণ নির্মিত। অর বরতন এবং ওতে যা কিছু রয়েছে সবই হবে সোনার। ঐ জান্নাতবাসীদের মধ্যে ও আল্লাহর দর্শনের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না, থাকবে শুধু তাঁর কিবরিয়ার চাঁদর যা তাঁর চেহারার উপর থাকবে। এটা থাকবে জান্নাতে আদানে।
আল্লাহ তাআলা করআন শরিফে আরও ইরশাদ করছেনঃ-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (সুরাহ তওবাঃ ১১৯)
অর্থাৎঃ- হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনার শেষ বছরে ইরশাদ করেছেনঃ-
الصَّلَاةُ الصَّلاَةُ اتَّقوُا اللهَ فِيْمَا مَلَكَتْ أَيْمانُكُمْ
অর্থাৎঃ- হে আমার উম্মত নামাজ! নামাজ! এবং তোমরা যাকিছু অর্জন করেছ সেই সমস্ত জিনিস দিয়ে আল্লাহকে ভয় কর।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনার শেষ মুহূর্তে আমাদের নামাজের উপর এবং আল্লাহর ভয়ের উপর বিশেষ করে জোর দিয়েছেন যে, হে আমার উম্মত তোমরা জীবনে কখনো নামাজ ত্যাগ করবে না এবং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করবে। কারণ মুমিনগণ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না। সম্পূর্ণ মুমিন হতে গেলে আল্লাহকে ভয় করা অনিবর্য