কুরআনের আলোকে বিশ্বনবী ﷺ
পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসে ১২ তারিখে, সোমবার দিনের জন্য সূর্য ওঠেনি আলো আধারে মাখামাখি অর্থাৎ সুবেহ সাদিকের সময়, মা আমিনার কোলে জগতকে আলোকিত করে পৃথিবীর বুকে আগমন করলেন মরুর দুলাল, আরব-রবি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা ﷺ।
তাঁর আগমনের অপেক্ষায় মানুষ,জিন এমনকি ফেরেস্তারাও অধির আগ্রহে তাহার জন্য অপেক্ষা করছিল। চন্দ,সূর্য,গ্রহ,নক্ষত্র আনন্দে দোল খাচ্ছিল। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতে পিতা আব্দুল্লাহকে হারালেন। জন্মের ছয় বছর পর তিনার মাকেও তিনি হারালেন। এবং আব্দুল মুত্তালিব তাঁর দাদা তার নাম রেখেছিল মুহাম্মদ যার অর্থ হল চরম প্রশংসিত, মা আমিনা তার নাম রেখেছিল আহমাদ অর্থাৎ চরমপ্রশংসা কারি,পবিত্র কুরআনে দুটি নামই উল্লেখিত রয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ মানবজাতির জন্য় আল্লাহর সর্বশেষ্ঠ প্রেরিত পুরুষ। আল্লাহ তাঁকে সর্বোত্তম শিক্ষক ও আদর্শ মানব হিসেবে প্রেরন করেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে তার জন্যে রাসুলের মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ। (সূরা:আহজাব,আয়াত:২১ )
এই মাসের বারো তারিখে সারা দুনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় নফল ইবাদত, তসবীহ, তাহলিল,কুরআন খতম ও দরুদ পাঠ করে তাঁর সওয়াব নবী করিম ﷺ এর পবিত্র রুহ মোবারাকের ওপর বখসিস করে থাকে।
তিনি হলেন সর্বশেষ্ঠ এবং শেষ নবী তিনি মনগড়া কথা বলেন না ।তিনি যা দেখেছেন তাঁর অন্তর তা অস্বীকার করেনি। মহানবী ﷺ পবিত্ত দীন ইসলামের ধারক ও বাহক ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রসূল ও তিনার প্রিয় হাবিব কে দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করছিল শুধুমাত্র ইসলামের পথ ও আলোরপথ দেখাতে, যাতে করে কাফের বে'দিন এবং পথভ্রষ্ট মানুষেরা খারাপ পথ থেকে সঠিক পথে প্রচলিত হয়। যদিও তা মুশরিকরা অপছন্দ করে, মহানবী ছিল মানবতার বন্ধু । আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমাদের মধ্য আমি যে রসূলকে দুনিয়ার বুকে প্রেরন করেছি সে সবসময় তোমাদের জন্য মঙ্গল চাইবে তোমরা তার ধর্ম কে আকড়ে ধরবে তাহার ধর্ম কে ছেড়ে পথভ্রষ্ঠ হয়ে যেও না, তাতে তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাসূল ﷺ এর উপর পবিত্র কিতাবুল্লা অর্থাৎ কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছে যা আলোকদীপ্ত গ্রন্থ, যা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে। আল্লাহ বলেন : ‘নিশ্চয়ই এই কুরআন হিদায়াত করে সে পথের দিকে, যা সুদৃঢ় এবং সৎকর্মপরাণ মুমিনদের সুসংবাদ দেয় যে তোমাদের জন্য আছে মহাপুরুস্কার, যদি তোমরা এই কুরআনকে মেনে চলতে পারো। এবং নবী ﷺ সবসময় ইন্সফের কথা বলেছেন, মানুষকে ছোট ছোট কাজে দেওয়ার ক্ষেত্রেও যদি আমরা সহায়তা করি, তাহলে সেটাও হবে সওয়াবের কাজ ।
আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদিকে ‘উত্তম জাতি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত মানবজাতির জন্য তোমাদের অবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ দাও অসৎ কাজে নিষেধ করো। মহা নবী ﷺ এর সাহাবি ছিলেন আল্লাহর সন্তষ্টিপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্যে পরীক্ষা করেছেন।তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও পুরস্কার।
আল্লাহ বলেন : একজন রাসুল, যিনি তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতগুলো পাঠ করে। যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ন তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য। তবে চিন্তার বিষয় যে আবু জেহেল এর মতো বড়ো বড়ো কাফেররা আমাদের রসূল ﷺকে কাছে পেয়েও ইসলাম কবুল করেনি । এমন কি তার চাচা আবু তালিবও ঈমান নিয়ে আসেনি। তারা কত দুরভাজ্ঞবান যে তারা তাদেও জামানায় রসুল ﷺ কে পাওয়ার পরেও ঈমান নিয়ে আসেনি।
এবং মেরাজের ঘটনার ব্যাপারেতো সকলের জানা , হুজুর ﷺ বলেছেন যে, আমার কাছে একটি সাদা প্রাণী 'বুরাক' নিয়ে আসা হয় যা গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে ছোট। তার এক এক ধাপ এতদূরে ছিল যতদুর তার দৃষ্টি যাই। আমি তার উপর বসলাম এবং আমাকে নিয়ে চললো। আমি বাইতুল মুক্কাদাসে পৌঁছে গেলাম। তারপর মসজিদ প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলাম। মসজিদ থেকে বের হলাম তখন জিব্রাইল (আঃ) একটি পাত্রে মদ ও অপর পাত্তে দুধ এনে দিল, আমি দুধ পছন্দ করলাম। অত:পর আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। মহান রব্বিল আলামিনের দরবারে যাওয়ার আগে ,প্রথম আসমান থেকে সপ্তম আসমান প্রর্যন্ত গেলাম। প্রথম আসমানে মানব পিতা সাফিউল্লা আদাম (আঃ) সঙ্গে সাক্ষাত হয়। দ্বিতীয় আসমানে ঈশা (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ)এর সঙ্গে সাক্ষাত হল যারা একে অপর এর খালাতো ভাই ছিল। তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আঃ), চতুর্থ আসমানে ইদ্রিস (আঃ), পঞ্চম আসমানে হারুন(আঃ), ষষ্ঠ আসমানে মুসা (আঃ) ও সপ্তম আসমানে ইব্রাহিম (আঃ), সেখানে ইব্রাহিম (আঃ) বাইতুল মামুর-এ হেলান দিয়ে বসে ছিলেন যেখানে সত্তর হাজার ফেরেস্তা সব সময় হাজির থাকেন । তারপর আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন এবং সকাল বেলায় যখন আবুবাক্কার (রাঃ) এ সব কথা বলেন। তখন আবুবাক্কএর (রাঃ) বিশ্বাসের সাক্ষ্য দেন এবং বাকি যারা ছিল তারা বিশ্বাস করছিল না। বিশেষত কাফিররা হজরত মুহাম্মাদ ﷺ কে মিথ্যাবাদী হিসেবে ঘোষনা করছিল। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবী ﷺ - এর আদেশকে অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন আমীন ……!