উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দী: বাংলায় আধুনিক ইসলামী শিক্ষা ও সাহিত্যিক জাগরণের পথিকৃৎ

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দী উনিশ শতকের বাংলার মুসলমান সমাজের অন্যতম আলোকিত এবং প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ছিলেন । সে সময়ে সমাজের মধ্যে এক বিশেষ ধারণা ছিল যে, ধর্মীয় শিক্ষা ও আধুনিক বিদ্যা একসাথে চলতে পারে না। কিন্তু তাঁর কর্ম ও চিন্তার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে এই দুই ধারার মাধ্যমেই বা এই দুই ধারাকে একত্রিত করলেই জ্ঞানের পরিধি বাড়ে এবং সমাজকে এক নতুন উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো যায় । তাঁর জন্ম হয়েছিল একেবারে ছোট্ট গ্রাম চিতওয়ায়, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। শৈশব থেকেই তিনি শিক্ষা দীক্ষাই অনেক মেধাবি ছিলেন। প্রথমে বাড়ির পাঠশালায় আরবি ও ফার্সি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। পরে  কলকাতার মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি অত্যন্ত মনোযোগী ও পরিশ্রমী ছিলেন। তাঁর অধ্যবসায় ও দিকনির্দেশনা তাঁকে শুধু একজন জ্ঞানী মানুষই তৈরি করেনি, বরং ভবিষ্যতের জন্য একজন বৃহৎ চিন্তাশীল সমাজসংস্কারক গড়ে তুলে ছিল। 

তিনি শুধুমাত্র একজন শিক্ষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ এবং অনুপ্রেরণাদায়ক পথপ্রদর্শক। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোতে তিনি ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি সমাজ ও জীবনের বাস্তব শিক্ষাকে উল্লেখ করেছেন। তাঁর লেখনীতে এমন সহজ ভাষা ও গভীর চিন্তার সমন্বয় ছিল, যা সমাজের সাধারণ মানুষও সহজে বুঝতে পারত। শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি যে সংস্কার করেছিলেন, তা বাংলার মুসলমান সমাজকে নতুনভাবে শেখার ও ভাবার সুযোগ দিয়েছে। আধুনিক শিক্ষাকে গ্রহণ করার প্রতি মানুষের মনোভাব বদলে যায়। 

জন্মসূত্র ও পারিবারিক পরিচয়

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দী ১৮৩২ সালে চিতওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যা তৎকালীন সময়ে  মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত ছিল। তাঁর জন্মকালীন সময়ে বাংলার মুসলমান সমাজ শিক্ষার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু তাঁর পরিবার ছিল জ্ঞান ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। তিনি জন্মেছিলেন সুহরাওয়ার্দী বংশে, যা ছিল একটি প্রসিদ্ধ সুফি পরিবার। এই পরিবারের পূর্বপুরুষরা কেবল আধ্যাত্মিক জ্ঞানেই পারদর্শী ছিলেন না, বরং সমাজে সম্মানিত ও প্রভাবশালী অবস্থানও দখল করেছিলেন।

তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন সুহরাওয়ার্দীর নাম উল্লেখযোগ্য। বলা হয়, উবায়দুল্লাহ আল উবায়দীর পরিবার সরাসরি এই আধ্যাত্মিক সাধকের বংশধর। পারিবারিক ঐতিহ্যে ছিল ধর্মীয় চেতনা ও জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ, যা ছোট্ট উবায়দুল্লাহর মনে শিক্ষার প্রতি এক আলাদা আকর্ষণ তৈরি করেছিল। তাঁর বাবার নাম শাহ আমীনুদ্দীন সুহরাওয়ার্দী। তিনি ছিলেন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও মানবিক গুণাবলীর জন্য বিশেষভাবে শ্রদ্ধেয় ছিলেন। উবায়দুল্লাহর পরিবারে আরও দুজন ভাই ছিলেন। একজন আইনজীবী এবং অপরজন সাবঅর্ডিনেট জজ হিসেবে ব্রিটিশ আমলে দায়িত্ব পালন করতেন। সে সময়ে এই ধরনের পেশা ছিল সমাজে মর্যাদার প্রতীক।

এমন পরিবেশে বড় হতে হতে ছোট্ট উবায়দুল্লাহর মনে শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ জন্মায়। পারিবারিক ঐতিহ্য ও সুষ্ঠু দিকনির্দেশনাই পরবর্তীতে তাঁকে বাংলার মুসলিম সমাজে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দীর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল বাড়ির পাঠশালায়, যেখানে তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষা শিখেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে ছিল জ্ঞানের প্রতি গভীর আকর্ষণ। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ১৮৫৭ সালে সিনিয়র সেন্ট্রাল পরীক্ষা উতীর্ণ হন। এই সময়ে ভারতীয় সমাজে বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছিল, তবুও তিনি অধ্যবসায়ের মাধ্যমে শিক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। তিনি শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেননি; নিজ প্রচেষ্টায় ইংরেজি ভাষাও রপ্ত করেন। বহু ভাষায় দক্ষতার কারণে ব্রিটিশরা তাঁকে সম্মানসূচক উপাধি দেয় “বাহরুল উলুম” বা “জ্ঞানসমুদ্র”। এবং এই নামই প্রমাণ করে যে তিনি কতটা জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিলেন।

কর্মজীবন

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দীর কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময় এবং শিক্ষামূলক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে তিনি কলকাতায় টিপু সুলতানের নাতি প্রিন্স জলালউদ্দিনের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম চাকরি এবং এখান থেকেই তিনি প্রশাসনিক কাজের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পরে তিনি ব্রিটিশ সরকারের আইন পরিষদ বা Legislative Council-এ স্ক্রাইভনার হিসেবে যোগ দেন। এখানে তাঁর প্রধান কাজ ছিল নথিপত্র লেখা এবং অনুবাদ করা। বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতার কারণে তিনি দ্রুতই সবার নজরে আসেন এবং নিজের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করেন।

১৮৬৫ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। হুগলি মোহসিন কলেজে তিনি অ্যাংলো-আরবি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এই কলেজেই তিনি বহু মেধাবী ছাত্রকে গড়ে তুলেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৈয়দ আমীর আলী যিনি পরবর্তীতে ভারতের মুসলিম সমাজের অন্যতম চিন্তাবিদ ও লেখক হিসেবে পরিচিতি পান।

১৮৭৪ সালে তিনি ঢাকা মাদ্রাসার প্রথম সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগদান করেন। এটি ছিল তাঁর কর্মজীবনের অন্যতম সেরা সাফল্য। এখানে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেন, পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনেন এবং শৃঙ্খলা ও উন্নত মানের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে ঢাকা মাদ্রাসা দ্রুতই একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, তিনি সমাজ উন্নয়নেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৮৭৯ সালে তিনি ঢাকায় সমাজ সম্মিলনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য ছিল মুসলিম সমাজের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন। এরপর ১৮৮৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মুসলমান সোহরিদ সম্মিলনী, যা শিক্ষক, ছাত্র ও সমাজের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।

বাংলায় আধুনিক ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দী ছিলেন এমন একজন শিক্ষাবিদ, যিনি প্রমাণ করেছিলেন যে ধর্মীয় শিক্ষা এবং আধুনিক শিক্ষা একসাথে চলতে পারে। তিনি বিশ্বাস করতেন, মুসলমানদের উন্নতির জন্য শুধুমাত্র ধর্মীয় জ্ঞান যথেষ্ট নয়; বিজ্ঞানের আলো, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন ও আধুনিক জ্ঞানও শিক্ষার অংশ হওয়া উচিত। তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ইংরেজিতে লেখা বই Mohammedan Education in Bengal (১৮৬৭)। এই বইটিতে তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন, কীভাবে বাংলা মুসলমান সমাজে শিক্ষার মান উন্নত করা যায়। তিনি বিশ্লেষণ করেন, কেন মুসলমানরা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়েছে এবং কীভাবে ধর্মীয় শিক্ষা ও আধুনিক বিদ্যার সমন্বয়ে তাদের নতুনভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। এই বইটি কেবল তাত্ত্বিক আলোচনা নয়; এর মাধ্যমে তিনি এক নতুন শিক্ষাদর্শের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।

শুধু বই লেখাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; বাস্তব কাজেও তিনি এগিয়ে এসেছিলেন। ঢাকা মাদ্রাসায় যোগদানের পর তিনি সেখানে নতুন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেন। আরবি ও ফার্সির পাশাপাশি ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার্থীরা যাতে ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক জীবনের জন্যও প্রস্তুত হতে পারে, সেজন্য তিনি পাঠ্যক্রমে ভারসাম্য তৈরি করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। তাই শিক্ষক নিয়োগে তিনি যোগ্যতা ও দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

তাঁর এই প্রচেষ্টা শুধু মাদ্রাসা শিক্ষায় নয়, সমগ্র মুসলমান সমাজে নতুন চিন্তার জন্ম দেয়। তিনি মানুষকে শিখিয়েছিলেন—ধর্মীয় জ্ঞান ও আধুনিক বিদ্যা একত্রিত করলেই প্রকৃত উন্নতি সম্ভব। এ কারণেই তাঁকে বাংলায় আধুনিক ইসলামী শিক্ষার পথিকৃৎ বলা হয়।

সাহিত্য ও ভাষা ক্ষেত্রে অবদান

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দী কেবল শিক্ষাবিদই নন, ছিলেন একজন বহুভাষী সাহিত্যিক ও অনুবাদক। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভাষা হলো জ্ঞানের সেতু। তাই তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন এবং এই ভাষাগুলিতে বহু বই রচনা ও অনুবাদ করেন।

তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আরবি ব্যাকরণের উপর Lubbul Arab, ফার্সি ব্যাকরণের উপর Dastar-e-Farsi Amuz, উর্দু ব্যাকরণের জন্য Miftahul Adab বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর Mohammedan Education in Bengal বইটি মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখে। কবিতার জগতে তাঁর অবদানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ১৮৮০ সালে উর্দু কবিতার সংকলন Urdu Diwan এবং ১৮৮৬ সালে ফার্সি কবিতার সংকলন Farsi Dewan প্রকাশ করেন। তাঁর কবিতায় আধ্যাত্মিকতা, জ্ঞানচর্চা ও মানবতাবোধের ছাপ স্পষ্ট। 

তিনি অনুবাদের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সৈয়দ আমীর আলীর সহযোগিতায় সৈয়দ কেরামত আলীর Makhaz-ul-Ulm বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এছাড়া রাজা রামমোহন রায়ের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ Tuhfatul Muwahedin ১৮৮৪ সালে অনুবাদ করেন, যা ধর্মীয় সহনশীলতা ও প্রগতিশীল চিন্তাকে তুলে ধরে।

এছাড়াও তাঁর বহু পাণ্ডুলিপি আজও অপ্রকাশিত রয়েছে, যেগুলো ভাষাতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান ও নারী শিক্ষার মতো বিষয় নিয়ে রচিত। জানা যায়, তিনি ল্যাটিন ও গ্রীক ভাষারও প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, যা তাঁর অসীম জ্ঞানপিপাসার প্রমাণ।

সম্মান ও উত্তরাধিকার

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দীর জ্ঞান ও অবদানের স্বীকৃতি তাঁর জীবদ্দশাতেই পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসকরা তাঁর অসামান্য পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁকে "Bahrul Ulm" বা "জ্ঞানসাগর" উপাধিতে ভূষিত করেন। এই উপাধি প্রমাণ করে, তিনি শুধু বাংলা নয়, সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করেছিলেন।

তাঁর স্মৃতিকে আজও সম্মান জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি “Bahrul Ulm Ubaidi Suhrawardy Medal” প্রদান করে, যা একজন অসাধারণ শিক্ষাবিদকে দেওয়া হয়। এই পদক তাঁর শিক্ষাচিন্তা ও অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়।

তাঁর উত্তরাধিকার শুধুমাত্র বই বা পদকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর পরিবার থেকেও বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি বেরিয়ে এসেছেন। তাঁর ছেলে স্যার আব্দুল্লাহ আল-মামুন সুহরাওয়ার্দী ছিলেন একজন বিশিষ্ট একাডেমিক। কন্যা খুজিস্তা আখতার বানু সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখেন। নাতি হুসেইন শহীদ সুহরাওয়ার্দী ছিলেন একজন প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রভাব শুধু পরিবারে নয়, পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষাবিদ, লেখক ও সমাজসংস্কারকদের মধ্যেও অনুভূত হয়। তাঁকে অনুসরণ করে অনেকেই বাংলা মুসলমান সমাজে শিক্ষা ও প্রগতির আলো ছড়িয়েছেন।

তাঁর কবর ঢাকা শহরের লালবাগ দুর্গের কাছে অবস্থিত। এটি শুধু একটি সমাধিস্থল নয়; এটি জ্ঞান, সাহিত্য ও শিক্ষার প্রতি তাঁর অবদানের স্মৃতিচিহ্ন। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা সেখানে গিয়ে অনুপ্রেরণা লাভ করেন।

উপসংহার

ভাবো তো, যদি আজ আবার এমন একজন মানুষ আমাদের মাঝে আসতেন যিনি ধর্মের আলোকে আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞানের সাথে মিশিয়ে সমাজকে নতুন দিশা দেখাতেন।  এমন একজন যিনি শিশুদের জন্য সহজ ভাষায় শিক্ষা তৈরি করতেন, তরুণদের চিন্তাশক্তি জাগ্রত করতেন এবং পুরো সমাজে আলো ছড়াতেন। তাহলে কি আমাদের সমাজ আরও উন্নত হত না?

উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সুহরাওয়ার্দী ছিলেন সেই স্বপ্নের প্রতীক। তিনি দেখিয়েছিলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে না ফেলেও আধুনিকতা গ্রহণ করা যায়। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, শিক্ষা শুধু ধর্মীয় পাঠেই সীমাবদ্ধ নয়; এর মধ্যে থাকতে হবে বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন ও মানবিক মূল্যবোধ। তিনি সাহিত্যকে সহজ ও প্রাঞ্জল করে তুলেছিলেন, যাতে সাধারণ মানুষও জ্ঞানের স্বাদ নিতে পারে। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে ধর্ম ও আধুনিক বিদ্যা হাতে হাত রেখে চলতে পারে। তাঁর চিন্তা ও কর্ম শুধু উনিশ শতকের জন্য নয়, আজকের সময়েও সমান প্রাসঙ্গিক।

আজকের দিনে যখন শিক্ষা বিভক্ত, সমাজ বিভক্ত, তখন তাঁর দেখানো পথ আরও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন সত্যিকারের জ্ঞান মানে হলো সেতুবন্ধন, বিভাজন নয়। তাঁর জীবন যেন একটি প্রদীপ, যার আলো কখনও নিভে না। সেই আলো থেকেই নতুন প্রজন্ম অনুপ্রেরণা নেবে, নতুন চিন্তা তৈরি করবে এবং সমাজকে আরও সমৃদ্ধ করবে। তাই বলা যায়, তিনি শুধু অতীতের নন, ভবিষ্যতেরও আলোকবর্তিকা।






Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter