আজমীর ৯২ ফিল্ম; ভারতীয় মুসলিম সমাজের প্রতিক্রিয়া
কাশ্মীর ফাইল, কেরালা স্টোরি, টিপ্পু তারপর এবার আজমীর ৯২ নামক মুসলিম বিরোধী আরেকটি মুভি ২০২৩ এর জুলাই মাসে রিলিজ হতে যাচ্ছে। পুশপেন্দ্র সিং দ্বারা সজ্জিত এই ছবিতে যারিনা ওয়াহাব, কারেন বর্মা, সুমিত সিং, সায়াজি শিন্দে, মনোজ জোশি, এবং প্রমূখ অভিনেতাদের দেখা যাবে। এই ফিল্মটি ১৯৯২ সালে রাজস্থানের আজমির শহরে সংঘঠিত একটি ঘর্ষণ মামলাকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। মুভিতে উক্ত ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত রাজস্থান ইয়ুথ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ফারুক চিশতীকে কিভাবে কংগ্রেস নিজ আমলে আপন মন্ত্রীকে রক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল সেটি হাইলাইট করা হয়েছে।
আজমীর ঘর্ষণ মামলা
১৯৯২ সালে ভারতবর্ষের রাজস্থান রাজ্যের অন্তর্গত আজমীর শহরে জোরপূর্বক যৌন শোষণের একটি ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় শত শত তরুণী, কলেজ শিক্ষার্থী এমনকি বিদ্যালয়ের পাঠরত ছাত্রীরাও শিকার হয়। ঘটনাটি আরম্ভ হয় কিছু তরুণী মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে । আজমির দরগা শরীফের কিছু নিষ্ঠাচার খাদিমরা এই ধরনের কুকর্মে লিপ্ত হয়। প্রথমত আজমির শরীফের প্রধান খাদিম ফারুক চিশতী সোফিয়া সেনিওর সেকেন্ডারি স্কুলের একটি অল্পবয়সী মেয়েকে আটকে রাখে এবং তার অশ্লীল ছবি তুলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে। এবং তার সকল বন্ধুবান্ধবদের এই রকম ভাবেই ব্ল্যাকমেইল করে ধারাবাহিক ভাবে শারিরিক নির্যাতন করতে থাকে। মেয়েদের ধর্ষণ করা, যৌন শোষণ করা, ও তাদের অশ্লীল ছবি তুলে খামার বাড়িতে রাখার কাজ চলতেই থাকে। এই ভাবেই ফারুক চিশতীর গ্যাং তার সমস্ত কার্য সম্প্রসারণ করে এবং ক্রমাবর্ধমান তরুণীদের শিকার করে। কিন্তু একদিন নবজ্যোতি নামক এক পেপারের সম্পাদক দ্বীনবন্ধু চৌধুরী এই ঘটনার খবর পান, এবং সেটাকে নিজ পেপারে ছাপিয়ে সমস্ত ভারতবাসীকেও এই বিষয়ে অবগত করেন। তিনি নিজ রিপোর্টে এটাও বর্ননা করেন যে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কতৃপক্ষরা প্রায় এক বছর আগে থেকেই এহ কান্ডর ব্যাপারে অবগত ছিল কিন্তু তবুও কোন অ্যাকশান নেওয়া হয়নি, এর কারন তিনি বর্ননা করেন যে কংগ্রেস আমলে থাকা কালীন তারা নিজ কর্মীকে রক্ষা প্রদান করছিল, কিন্তু এটি ভুল ধারনা যে কংগ্রেস তাকে রক্ষা প্রদান করেছে, কারন কেস ফাইল হওয়ার পরই এই অভিযুক্তকে ফাঁসি সাজা শুনাই কংগ্রেস সরকার।
খবরটি সমস্ত প্রবাসীর আবেদন মেনে প্রধান অভিযুক্ত ফারুক চিশতী এবং তার ছয়জন সঙ্গীকে ফাঁসির সাজা শুনানো হয়। কিন্তু সাজা শুনানির আগেই অধিকাংশ অভিযুক্তরা আত্মহত্যা করে। নিহত মেয়েদের মধ্যে অধিকাংশ মেয়েরাই হিন্দু পরিবারের ছিল এবং কিছু মুসলিম নারীও। ঘটনাটির পরিণাম হিসেবে সকল দেশবাসীই হতবাক হয়ে পরে। মানুষ রাস্তায় এসে প্রতিবাদ এবং উত্তেজনা করতে শুরু করে। তিনদিনের বনধ পালন হয়। মামলাটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে স্থগিত হয়। অবশেষে ১৮ জন সিরিয়াল অভিযুক্তদের কোর্টে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং প্রধান অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়।
আজমীর ৯২ ফিল্মে দেশবাসীর প্রতিক্রিয়া
আজমীর ৯২ মুভিটির রিলিজের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর বিভিন্ন দিক থেকে বিরোধিতা আসতে আরম্ভ হয়। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের প্রেসিডেন্ট মাউলানা শিহাবুদ্দিন রেযভি বারেল্ভি সাহেব বলেন যে এই ফিল্মটি হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করবে। কারন ফারুক চিশতী একজন মুসলিম ছিল। রাজনিতি বিশেষজ্ঞরা বলেন যে আগত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে সামনে আসতে বাঁধা দেওয়ার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টির এই পদক্ষেপ। আবার কেউ এটাও বলে যে কর্নাটাকা আস্যাম্বেলিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমিত শাহ যে মুসলিমদের রেজারভ্যাশন বন্ধ করার কথা বলেছিল তার জন্যে এটি একটি তাদের প্রথম পদক্ষেপ।
মুসলিম সমাজের করণীয়
বিজেপি সরকার ভারতবর্ষের ক্ষমতায় আসার পর শুধু মুসলিম জাতীকে অভারতীয় হিসেবে দেখানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে । তারা সঙ্ঘ পরিবারের নির্দেশ অনুযায়ী ইসলাম ধর্মকে খারাপ দেখানোর জন্য অনেক ফিল্ম রিলিজ করেছে। কাশ্মীর ফাইল, কেরালা স্টোরি, শিভাজি, ইত্যাদি মুভি রিলিজ করে মুসলিমদের বিরোধিতা করছে। যদি মুসলিম সমাজ চাই তাহলে তারাও এই ধরনের কর্মে লিপ্ত হতে পারে। তারা ইচ্ছা করলে কাশ্মিরে যে কিছু হিন্দু শিক্ষকরা চার বছরের একটি ছোটো মেয়ে আসিফাকে যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণ করে হত্যা করেছিল এবং যার কোন মামলা বিজেপি সরকার দায়ের করেনি সেটির একটা মুভি তৈরি করতে পারে, যদি চাই তাহলে গুজরাতের হামলার সময় বিল্কিস বানু ও তার পরিবারের সঙ্গে যা ঘটেছে অতএব তার পরিবারের হত্যাকারীদের কিছু মাস পুর্বে জেল থেকে রেহাই করা হয় সেটাও প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু এইসব দ্বারা শুধু সামাজিক দন্দ বৃদ্ধি পাবে কোন ফল হবে না। আর ইসলাম ধর্ম সামাজিক দ্বন্দ্ব ও ধর্ম বিদ্বেষ থেকে নিষেধ করে বলে কোন মুসলমান এই রকম পদক্ষেপ নেইনা। তাই সকল সমাজের উপরে অপরিহার্য যে তারা যেন মুসলিমদের এই মানকে রক্ষা করে এবং এই ধরনের ফিল্ম তৈরি না করে।