ইসলাম ও মানবতা
ইসলাম ধর্মে মানবতা তা নয় যা শুধু মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবা কিন্তু কল্যাণ করা না, এ ধর্মে মানবতা তা যা মানুষের কল্যাণের চিন্তা করার সাথে সাথেই সেই সৎ চিন্তাগুলিকে পূর্ণ করা। এই পবিত্র ধর্মের প্রধান গ্রন্থ কুরআন শরীফ থেকেই মুসলমানরা সৎকর্ম শেখে যা শুধু মানুষের কল্যাণের জন্য করা হয়। এর সাথেই মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে মানবজাতির জন্য যেই পবিত্র গ্রন্থটি অর্থাৎ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, তা মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবন এবং তার কর্মের মধ্যে এই শিক্ষাগুলো পাওয়া যায়। মুসলমানদের কাছে, ইসলাম হচ্ছে তা যা আল্লাহ তাআলা কুরআন শারীফে পালন করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং তা যা মুহাম্মাদ ﷺ তার জীবনে যে সব কর্মগুলি করে তিনি নিজের জীবন কে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাই, ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে যেকোনো বিষয় জানতে বা বুঝতে হলে এই দুইটির (কুরআন এবং মুহাম্মাদ ﷺ হাদিস)- এর উপর নির্ভর করতে হবে।
ইসলাম এমন একমাত্রই ধর্ম যা মানুষদের শেখায় একজন মুসলমান যদি মানবকল্যাণে অংশগ্রহণ না করে, তবে তার ধর্মীয় জীবন অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়। আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেন যে- সৎকাজ শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাগণেদের উপর এবং সমস্ত নবী ও রসূলগণের উপর, আর ধন ব্যয় করবে আত্নীয়-স্বজনের মহব্বতে, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী দাসিদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত ও সাদকা দান করে এবং যারা প্রতিজ্ঞা সম্পূর্ণকারী এবং অভাবে, দুঃখ কষ্টে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
এইভাবেই, ইসলাম ধর্মে নিজেদের মাতা-পিতা, আত্মীয়দের, অসুস্থদের, প্রতিবেশীদের এবং ক্ষুদ্র ও গরিব জাতির লোকেদের প্রতি দায়িত্বের কথা নির্দিষ্টভাবে ব্যাখা করা হয়েছে। একটি হাদিসে আছে, নবী ﷺ বলেছেন যে- আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এই পবিত্র হাদিস দ্বারা আমরা ঝলমলে জলের মত বুঝতে পারি, ইসলাম এই মানবতার প্রতি এতই লক্ষ করে আমাদেরকে বাধ্য করতে হয়ে বলেছে যে যারা সম্পর্ক ছিন্নকারী তাদের ওপরে জান্নাত যাওয়া অসম্ভব ও কঠিন।
আর একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে আল্লাহ, হাশরের দিন, সে সকল মানুষের উপর রেগে থাকবেন যারা অসুস্থ বা রোগীদের দেখা সত্তেও তাদেরকে অবহেলা করে সেবা করেনি এবং যারা ক্ষুদার্তদেরকে খাবার দিয়ে সাহায্য করেনি। চিন্তার বিষয় শুধু এই যে যদি দুই জাহানের পালনকর্তা, যদি সেই ভয়ংকার হাশরের দিনে তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে যায় তাহলে, তাদের জান্নাতে প্রবেশ করার কোন সুযোগ পর্যন্ত থাকবে না। এই হাদিসটি দ্বারা সম্পূর্ণ ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে ইসলাম এই মানবতা ও মানব কল্যাণের ওপর কত লক্ষ্য করেছে।
এই ধর্মের মানুষদেরকে বাধ্য করা হয়েছে, অন্যের প্রয়োজনের সময় সাড়া দেওয়ার জন্য সে যেরকম ধরণের সাহায্যই কিংবা হোক না কেন। কখনও গরিবেদের যাকাত বা সাদকা দিতে বলেছেন তো কখনও দুর্বলদের ওপর অত্যাচার করতে আমাদের বারণ করা হয়েছে।
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পছন্দ সেরা ধর্ম, যে ধর্মে নাই কোন অমানবতা। তবে এই শতাব্দীর মানুষ ইসলাম ধর্মকে একটি অমানবতার ধর্মের চোখে দেখে। কিন্তু তারা জানেনা যে ইসলাম তাদেরই কল্যানের জন্য সর্বদা চেয়ে আছে ও থাকবে।