ভয়াবহ কিয়ামতের দিন এবং তার উপসর্গসমূহ

কিয়ামত হল এই ভুবনধারার পতনের এক প্রকাশ্য চিহ্ন, যেমন মানুষের পতনের সময় কিছু উপসর্গ দেখা যায়, ঠিক তেমনি দুনিয়া পতনের সময় কিয়ামত আসবে। আর পশুপাখি,  গাছপালা, মানুষ  আর আসমান জমিন কিছু বাকি থাকবেনা । আল্লাহ ইরশাদ করেছেন : يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ ۖ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ  (সূরাহ ইবরাহীম ৪৮) অর্থাৎ যেদিন পৃথিবী ও নভোমন্ডলকে পৃথিবী ব্যতীত অন্য কিছুতে পরিবর্তিত করা হবে এবং আকাশমন্ডলী আবির্ভূত হবে অদ্বিতীয় এবং পরাজয়কারী আল্লাহর নিমিত্তে (৪৮)।কিয়ামত আসার আগে পৃথিবীর বুক থেকে শিক্ষার শিখা উঠিয়ে নেয়া হবে যখনকোনো আলিম থাকবে না সবাই জাহিল হয়ে যাবে । আর ছেলের থেকে মেয়ে বেশি হয়ে যাবে। কিয়ামতের আগে বড়ো দাজ্জাল আসবে  এবং পুরো দুনিয়ার বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। অতঃপর আরও এক শত দাজ্জাল আসবে যারা নাবী হওয়ার দাবি করবে অথচ নবী মুহাম্মাদের (সাঃ)পরে নবুয়াত পুনরায় কাওকে দেয়া হবেনা ইটা হাদিসে প্রমাণিত। আরবে চাষ ,বাগান শুরু হবে এবং নদী বয়ে যাবে । আর নাহরে ফুরাতের জল শুকিয়ে  যাবে এবং তা থেকে সোনা বেরোবে । আর মাটি নীচের  সমস্ত ধণ সম্পদ বার করে দিবে। সময় অনেক গতি বা বেগ বেড়ে যাবে। মানুষ  শিক্ষা  দুনিয়া পাওয়ার জন্যে অন্নেষণ করবে এবং আখিরাত কে ভুলে যাবে।  আর মানুষ জাকাত দিতে অমান্য করবে। আর ছেলে  মা আর বাবাকে অমান্য করবে । ছেলেরা মেয়েদের মান্যতা করবে । মদ খাওয়া গান বাজানো অনেক বেশি হয়ে যাবে । আর মানুষ মাসজিদে চিৎকার করবে আর সূর্য পশ্চিম দিকে উঠবে যার ফলে তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে । 

ইয়াজুজ মাজুজ ,দাব্বাতুল আরদ এবং দাজ্জাল বেরোবে । এবং মেহদি  (আঃ) আসবে। ইসা (আঃ) আকাশ থেকে দুনিয়ার বুকে গমন করবেন,এবং দাজ্জালকে শেষ করবেন। কিয়ামতের দিন  আল্লাহর আদেশে হযরত ইসরাফিল (আঃ) শিঙ্গায় ফুক দিবেন। এই আওয়াজ শুনে আকাশ আর দুনিয়ায়  যা কিছু  আছে সবাই মারা যাবে । অতঃপর ইসরাফিল (আঃ) ও মারা যাবেন। এই আওয়াজ এমন ভয়ঙ্কর আর হৃদয়বিদারক যার শব্দ শুনে আকাশে আর জমিনের সবাই মারা যাবে আর আল্লাহ যাকে রক্ষা করতে চাইবেন  তারাই শুধু রক্ষা পাবে। তারপর ৪০ বছর পর আবার তাঁকে আল্লাহ তায়ালা জীবন দেন করবেনএবং আবার ফুক দেওয়ার আদেশ দিবেন। তখন আবার শিঙ্গাই ফুক দেওয়া হবে অতঃপর সব রুহ হাশরের ময়দানে সমাবেশিত হবে । আর সেই কিয়ামতের দিন সমতল জায়গায় সবাইকে দাড় করানো হবে । যেখানে লুকোনোর  জন্য কোনো উঁচু বা নিচু  গর্ত থাকবে না । আর সেখানে দুনিয়ার মত পাহাড় পর্বত বাড়ি গাড়ি গাছ পালা থাকবে না। সেই সমতল জায়গায় সবাই কে জমা করা  হবে। সেখানে কেউ কাউকে চিনবে না। আর সবাই নিজের জন্য নাফসি নাফসি করবে। কিয়ামতের দিন মানুষ তার ভাইকে দেখে পালাবে মা ছেলেকে দেখে পালাবে ছেলে মাকে দেখে পালাবে আর পিতা ছেলেকে দেখে পালাবে ছেলে পিতাকে দেখে পালাবে । মানুষ মানুষকে দেখে পালাবে কেউ কাউকে চিনতে পারবেনা । তারা সব উলঙ্গ হয়ে থাকবে আর খালি পায়ে থাকবে।

 

 আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন 

فَإِذَا جَآءَتِ ٱلصَّآخَّةُ  يَوۡمَ يَفِرُّ ٱلۡمَرۡءُ مِنۡ أَخِيهِ وَأُمِّهِۦ وَأَبِيهِ وَصَٰحِبَتِهِۦ وَبَنِيهِ لِكُلِّ ٱمۡرِيٕٖ مِّنۡهُمۡ يَوۡمَئِذٖ شَأۡنٞ يُغۡنِيهِ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ مُّسۡفِرَةٞ ضَاحِكَةٞ مُّسۡتَبۡشِرَةٞ وَوُجُوهٞ يَوۡمَئِذٍ عَلَيۡهَا غَبَرَةٞ تَرۡهَقُهَا قَتَرَةٌ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَفَرَةُ ٱلۡفَجَرَةُ

অর্থাৎ :যখন সেই বিকট চিৎকার (অর্থাৎ মহাপ্রলয়) আসবে, যেদিন মানুষ তার ভাইয়ের কাছ থেকে পলায়ন করবে, আর তার মা ও বাবার কাছ থেকে পলায়ন করবে, এবং তার সঙ্গী ও পুত্রগণও তার থেকে পলায়ন করবে, সেদিন তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব বিষয় থাকবে যা তাকে সমৃদ্ধ করবে। 

সেদিন কিছু মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে, হাসিখুশি, প্রফুল্ল রইবে। আর কিছু মুখমন্ডল ধুলোয় ঢাকা থাকবে। যাদের চেহারায় ক্লান্তি ও গ্লানি থাকবে, এরাই হলো কাফের ও ফাসেক।

তাদের মাথার উপরে সূর্য থাকবে । সেই সূর্যের তাপে মাথার মগজ ঝলসে যাবে আর সমস্ত মানুষ তাদের ঘামে হাবু ডুবু খাবে যার যেমন গুনাহ সেরকম সে তার ঘামে ডুবে থাকবে কেউ হাঁটু পর্যন্ত আবার কেউ কোমর পর্যন্ত আবার কেউ গলা পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে । তাই রসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন: 

عن ابن عمر رضي الله عنهما أن رسول الله قاليقوم الناس لرب العالمين حتي يغيب أحدكم في رشحه إلي أنصاف أذنيه                     

       অর্থাৎ : ইবনে উমার  ( র:) থেকে বর্ণিত  নিশ্চয় রসুল  ( সা:) বলেছেন : কিয়ামতের দিন মানুষ আল্লাহর  সামনে দাঁড়াবে। সেদিন তোমাদের মধ্যে এমন কেও থাকবে যে তার নিজের ঘামে তার দুই কানের অর্ধাংশ পর্যন্ত ডুবে যাবে ।

কিয়ামতের দিন সেই গরম সূর্যের তাপে আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। তার জন্য রসুল ( সা:) ইরশাদ করেছেন : কিয়ামতের দিন  আল্লাহ তাআলা হাশরের মাইদানে শুধুমাত্র সাত জনকে তার রহমতের ছায়া দিবেন তাদের মধ্যে প্রথম হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী ইমাম । দ্বিতীয়, সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতে লালিত হয়েছে। তৃতীয়, সেই ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা মাসজিদের সাথে যুক্ত থাকে। চতুর্থ, সেই ব্যক্তি যে কাওকে আল্লাহর জন্য ভালবেসেছে আর আল্লাহর জন্য আলাদা হয়ে যেতে তৈরি। পঞ্চম, সেই ব্যক্তি যাকে এক ভালো বংশের সুন্দরী মেয়ে পাপের দিকে ডাকল কিন্তু সে বলল: না আমি আল্লাহকে ভয় করি । ষষ্ঠ, সেই ব্যক্তি যে তার ডান হাত দিয়ে সদকা করল কিন্তু তার বাম হাত জানতে পারলনা । সপ্তম, সেই ব্যক্তি যে গোপনে আল্লাহকে স্বরণ করে এবং তার ভয়ে অশ্রু ঝরালো। 

সেই কিয়ামতের দিন সবাই নাফসি নাফসি করবে। কেও কাওকে সুপারিশ করবেনা তখন প্রত্যেক উম্মত তাদের নাবীর কাছে গিয়ে সুপারিশ চাইবে। কিন্তু কোনো নবী সুপারিশ করার জন্য তৈরি থাকবেনা। তখন সমস্ত মানুষ ছুটে বেড়াবে। শেষ পর্যন্ত সবাই রসুল (সা:) এর কাছে গিয়ে শাফায়াতের দাবি করবে। তখন রসুল  ( সা:) আল্লাহর দরবারে সেজদায় নিমজ্জিত হয়ে বলবেন, رب هب لي أمتي : তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সেজদাতেই থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ সন্তষ্ট হবেন  না । তারপর সেই কিয়ামতের দিন হাসশরের ময়দানে হিসাব শুরু হবে আর মানুষ সেখান থেকে এক পাও নড়াতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত চারটি প্রশ্ন না করা হবে।

রসুল ( সা:) ইরশাদ করেছেন :

 عن أبي برزة الأسلمي رضي عنه قال: قال رسول الله صلي الله  لا تزول قدما عبد يوم القيامة حتي يسأل عن عمره فيما افناه وعن علمه فيما فعله وعن ماله من اين اكتسب وفيما أنفقه وعن جسمه فيها ابلاه (رواه الترمذي)

অর্থাৎ : আবু বারজাতুল  আসলামি (রা:) থেকে বর্ণিত রসুল (সা:) বলেছেন : কোনো বান্দার দুটো পা ততক্ষণ পর্যন্ত হিলবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে তার মেয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করা হবে কিভাবে তা ব্যয় ও জাপন করেছে? এবং তার জ্ঞানের ব্যাপারে সে তার জ্ঞান দারা কি করেছে? এবং তার ধন সম্পদের ব্যাপারে কেমন করে তা উপার্জন করেছে এবং কেমন করে খরচ করেছে। এবং তার দেহের ব্যাপারে সে কেমন করে বরবাদ  করেছে। 

হিসাব কিতাব করার পর ও যদি দুনিয়ায় ভালো আমল করে থাকে তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে । আর জান্নাতি হলে তাকে তার ডান হাতে আমল নামা দেওয়া হবে  এবং তাকে জান্নাতে প্রবেস করানো হবে। আর সে দৌড়ে  খুশি হয়ে জান্নাতের দিকে যাবে । আর যদি দুনিয়ায় ভালো আমল না করে থাকে তাহলে জাহান্নামী হবে । আর সে জাহান্নামী হলে তাকে তার বাম হাতে আমল নামা দেওয়া হবে এবং তাকে টানতে টানতে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে এবং তাকে জাহান্নামে ফেলা হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে জান্নাতবাসী হওয়ার তৌফিক দেন- আমিন। 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter