কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত?
ইসলাম একমাত্র পূর্ণ দ্বীন বা ধর্ম। যার বাস্তবতার আলোকে চতুর্দিক থেকে প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। যে ধর্মে বড় থেকে অতি ক্ষুদ্রতম জিনিসের সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এবং মানুষ যে এই দুনিয়ায় চিরকাল বসবাস করার জন্য আসেনি সেই ব্যাপারেও বার বার মনে করিয়ে দেয়। যেন মানুষ নিজের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এবং সুন্দর ও সফল জীবন গড়তে পারে। কিন্তু এই সমস্ত করার জন্যে ওই জ্ঞানের প্রয়োজন যা আল্লাহ ও তিনার রসূল আমাদের শিখিয়েছেন। হ্যাঁ, কুরআন ও হাদিসই হল মুসলমানদের একমাত্র গাইডবুক যা দ্বারা মানুষ শুধুমাত্র সফল জীবনীই নয় বরং শান্তি ও সমৃদ্ধির সমাজ গড়তে পারবে। তবে মানুষ কিন্তু আজ পদে পদে শয়তানের অনুসরণকারী হয়ে উঠছে। অথচ মানুষ বুঝতেও পারছে না যে কিভাবে তারা ইসলামের বিধান ত্যাগ করে এক ক্ষতিগ্রস্ত জীবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তার মধ্যে কিছু মূল বিষয় আছে যা থেকে মানুষকে একান্তভাবেই সতর্ক থাকা উচিত। যেমন , গিটের নিচে কাপড় পরিধানকরা, গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া, মিথ্যা শপথ, অত্যাচারী হওয়া , ছবি ও মূর্তি গ্রহণকরা, মাপে ও ওজনে কম দানকরা, বেপর্দা নারী ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের সকলকেই সতর্ক থাকা উচিত।
প্রথমত , গিটের নিচে কাপড় পরিধান করা অহংকার ও দাম্ভিকতার আরেক নাম, যা আল্লাহ ঘৃণা করেন। কারণ অহংকার করা একমাত্র আল্লাহরই শোভা পায়। অন্য কেউ তা গ্রহণ করলে তার পরকাল হবে জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন: "তুমি গর্ব করে পৃথিবীতে বিচরণ করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করে না''। (সূরা লোকমান :১৮).
দ্বিতীয়তঃ গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তির শাস্তি খুব অপমানজনক। যেহেতু এসব কাজের ভালো-মন্দ চোখ ও কানের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, সেহেতু আল্লাহ তাআলা এমন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং বড়ই অপমানজনক। আল্লাহ বলেন: "ধরনের লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অন্ধভাবে গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা লুকমান : ৬).
রাসুল (সাঃ) বলেন: "অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা জেনা , রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্র কে হালাল মনে করবে"। (বুখারী -২/৮৩৭).
তৃতীয়তঃ মিথ্যা শপথ এক বড় পাপ, যার মধ্যে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করা হয় এবং অন্যের ক্ষতি সাধন করা হয়। মিথ্যা শপথ কারীর জন্য পরকালে কোনো বাঁচার উপায় নেই। মিথ্যা শপথকারীকে আল্লাহ পবিত্র করবেন না। আল্লাহ তার জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি নির্ধারণ করে বলেন : "যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। তাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি করুনার দৃষ্টিও দিবেন না। তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুত তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (আল ইমরান : ৭৭).
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন "যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছায় মিথ্যা কসম করে অন্য মুসলমানের সম্পদ দখল করে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত). মানুষের প্রতি অমানবিক আচরণ করা, মানুষের অর্থ সম্পদ অন্যায় ভাবে দখল করা হলো অত্যাচার। অত্যাচারী মানুষকে মানুষ ভয় করে। এর পরিণাম শুধুমাত্র জাহান্নাম। সাধারণত সবল মানুষ দুর্বল মানুষের প্রতি অত্যাচার করে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন: "নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না"। (শুরা : ৩৯). এবং তিনি আরো বলেন: "অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ " । (শুআরা - ২২৯). রাসুল (সাঃ) বলেন: "অত্যাচারীর কেয়ামতের দিন হবে অন্ধকার।(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ). আরো বলেন, "যে ব্যাক্তি অত্যাচার করে অর্ধ হাত জমিনে দখল করে নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি জমিন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে" । (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ).
এছাড়াও ছবি ও মূর্তিগ্রহণ করা শিরকের উৎস। এর মাধ্যমে আকীদা ও দ্বীন নষ্ট হয়। ছবি ও মূর্তি যুবক-যুবতীদের চরিত্র ধ্বংস করে। এজন্য ছবি-মূর্তি গ্রহণকারীদের শাস্তি বড়ই কঠিন। তাদের ছবি-মূর্তিতে আত্মা সঞ্চালন করতে বাধ্য করা হবে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন : "যারা আল্লাহ ও রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহুই তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিশাপ করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন অপমানজনক শাস্তি। (আহযাব : ৫৭). কারণ এখানে, ছবি ও মূর্তি করে আল্লাহর গুণাবলীতে সাদৃশ্য প্রকাশ করে আল্লাহকে কষ্ট দেয়।
আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সেই ঘরে রহমত ও বরকতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (বুখার : ২/৮৮০ , মিশকাত -৪৪৮৯).
মাপে কম দেওয়া হারাম। বিষয়টি শুধু ওজনে কম করার মধ্যে সীমিত নেই, বড় মাপের মাধ্যমে হক, গণনার মাধ্যমে হোক অথবা অন্য যে কোন পন্থায় হোক প্রাপককে তার প্রাপ্য কম দিলে তা হারাম হবে। প্রাপককে প্রাপ্য কম দেওয়া হক নষ্ট করার পাপ। এই প্রাপ্য পরিশোধ না করলে অথবা ক্ষমা না নিলে কিয়ামতের দিন নেকি দিয়ে পরিশোধ করতে হবে। নেকি না থাকলে প্রাপকের পাপ নিতে হবে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: "ওজন ও মাপ পূর্ণ করো ন্যায় সহকারে। আমি কাউকে তার সাধ্যের অতীত ভালো অর্পণ করি না। যখন তোমরা কথা বলো, তখন সুবিচার করো যদি সে আত্মীয়ও হয়"। (আনআম : ১৫২).
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা ও তিনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি জাহান্নামের উল্লেখ করেছেন, বেপর্দা নারী তাদের অন্যতম। যা মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। মানুষের ঈমান ধ্বংসের কারণও বটে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন :"তোমরা আপন গৃহে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না"। (আহযাব-৩৩).
এছাড়াও বর্তমানে মানুষ এতটাই দুনিয়ার প্রতি লিপ্ত হয়ে পড়েছে যে তারা একের পর এক গুনাহ করতে থাকে অথচ তারা সেটা উপলব্ধিই করে না। মানুষ আজ আল্লাহ ও রাসূলের কথাকে গুরুত্ব না দিয়েই সুন্দর ও সফল জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখে। বিশেষ করে নারীদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কারণ তিনি দেখেছেন যে, জাহান্নামে পুরুষের তুলনায় মহিলার পরিমাণ বেশি। কারণ তারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য শরীরে চিত্র অঙ্কন করে, দাঁত শাতিন করে, ভ্রু সরু করে ও চুলে জোড়া লাগায়। তার চেয়ে বড় কথা, যেই সমস্ত নারীরা স্বামীর অবাধ্য হয় তারা কখনোই জান্নাত পাবে না, এমনও হাদিসে বর্ণিত আছে। আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহ ও রাসূলের কথার উপরে চলা। কারণ, কুরআন ও হাদিস ছেড়ে সুন্দর ও সফল জীবনের স্বপ্ন দেখা, জলের উপর লেখার ন্যায়। যার কোনটাই বাস্তবে উপকারিতা হবে না।