মুমিনের পথেয় : যিকির
যিকির হল সর্বোত্তম ইবাদাত। যে ইবাদাত দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং আমাদের উপর তিনি অনেক রহমত ও বরকত অবতীর্ণ করেন। হযরত আবু দারদা ( রা: ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন , রাসুল ( সা: ) সাহাবায়ে কেরামদের সম্মোধন করে ইরশাদ করেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের সংবাদ দেবো না–যা তোমাদের যাবতীয় আমলের চেয়ে অনেক উত্তম , তোমাদের প্রভুর কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, তোমাদের মর্যাদা বিশেষভাবে বর্ধনকারী । আল্লাহর রাস্তায় সোনা –রুপ দান করা ও আল্লাহর পথে বের হয়ে শত্রুদের মকাবিলা করতে গিয়ে শাহাদাত লাভ করার চেয়ে উত্তম?’ সাহাবায়ে কেরাম রাসুল কারিম ( সা: ) কে আরজ করলেন : ইয়া রাসুলুল্ললাহ (সা:) সেটি কোন আমল? ‘ রাসুল কারিম (সা:) ইরশাদ করলেন: সেটি হল আল্লাহর যিকির। যে যিকির দারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবো।
যিকিরের পরিচয়:
'যিকির’ শব্দের অর্থ হচ্ছে স্মরণ করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। অর্থাৎ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করা, তার আনুগত্য করা এবং তার ইসমে জাত ও ইসমে সিফাত মুখে কিংবা মনে মনে উচ্চারণ করা। আল্লাহ তায়ালা জ্বিন ও ইনসান কে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাত করার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আমি জ্বিন ও ইনসান কে আমার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি’ ( সুরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬ )
যিকির সব ইবাদাতের রূহ:
সব ইবাদাতের রূহ হচ্ছে আল্লাহর যিকির করা। আল্ললাহ তায়ালা বান্দাদের সর্বাবস্থায় অধিকহারে তার যিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
41- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا – 42 وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
(হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমান-স্মরন কর এবং সকাল–সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ঘোষণা করো। ) ( সুরা আহজাব, আয়াত, ৪১-৪২ )
এখানে আল্লাহর ঘোষণা বলতে আল্লাহর যিকিরকে বোঝানো হয়েছে। সর্বাবস্থায় অর্থাৎ দারিয়ে, বসে এমনকি শুয়ে বা রাস্তাই হাটতে হাটতে–যেভাবে পারা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যারা দাঁড়ীয়ে,বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা –গবেষনা করে, আসমান ও যামিন সৃষ্টি বষয়ে ( তারা বলে ) ‘হে মাদের প্রতিপালক ! এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেনন‘। (সুরা আল ইমরান,আয়াত,১৯১)
যিকির এমন একটি ইবাদাত যার কোনো নির্ধারিত সময় ও সীমা, পরিমান ও শর্ত নেই। দিনে- রাতে, সকাল- সন্ধ্যায়, হাটতে–বসতে এমনকি শয়ন অবস্থায় এবং ওজ অবস্থায় হোক কিংবা ওজু বিহীন হোক সর্বাবস্থায় যিকির করার নির্দেশ দেওয়া হয়ছে। যিকির উপকারিতা এত বেশি ও ব্যাপক যে, এর মাধ্যমে পার্থিব কার্যক্রমত্ত ইবাদাতে পরিনত হয়ে যায়। যেমন – আহার করার সময় আহারের দুওয়া পড়া, ঘুমানরা সময় ঘুমের দুওয়া পড়া, কাপড় পড়ার সময় কাপর পরার দুওয়া পড়া, এগুলো ইবাদাতের রূপান্তরিত হয়ে যায়। অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহ সম্পর্কে অমনোযোগী ও গাফেল না হওয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন: “ অতঃপর তোমরা যখন দণ্ডায়ামান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির করো। ( সুরা নিসা, আয়াত, ১০৩ )
যিকির দারা অন্তরে আল্লাহর ভয়:
আমরা সবাই জানি যে যিকির এমন একটি ইবাদাত যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার ভয় আমাদের আন্তরে জাগ্রত হয় এবং বান্দা সেই ভয়ের কারনে আল্লাহ তাআলার কে বেসি বেসি করে স্মরণ করতে থকে এবং তার ইবাদাত বা আনুগত্যের প্রতি আগ্রসর বা ছুকে পরে। বান্দা যখন আলাহ তাআলার যিকির করে তখন বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা চলে আসে এবং সেই ভালোবাসা করনে বান্দা লাভ-লালসার, যুওয়া, নেশা দ্রব্য পান করা, অশ্লীল কর্ম, যেনা বা গীবত এই সব গুনাহ করা থেকে বান্দা দূর হয়ে যায় বা তাদের অন্তরে ঘৃনা সৃষ্টি হয়। এই জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআন শরিফে ইরশাদ করেন যে: “ যারা ঈমান্দার তারা এমন লোক যে, যখন আল্লাহর যিকির করা হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে । আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হয় তখন ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বিয়া প্রভুর ওপর ভরসা করে”। (সুরা আনফাল, আয়াত, ২ )
যিকির আল্লাহ তায়ালার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম এবং এটি সব সৃষ্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতও বটে । এর মাধ্যমে সৃষ্টিজগত আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। যিকির থেকে গাফিল হলে সৃষ্টির ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নানা বিপদাপদ নাযিল হয়ে থাকে। যারা যিকির থকে গাফিল হিয়ে থকে তাদের দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে এবং যে আল্লাহর যিকির করে না – তাদের দৃষ্টান্ত হল জীবন ও মৃতদের মত“। ( বুখারী -৬৪০৭, মুসলিম -৭৭৯ )
যিকিরকারী অনেক পছন্দনীয়:
আল্লাহ তায়ালা তার যিকিরকারী বান্দাদের পছন্দ করেন। যিকিরকারীর দুয়া কবুল করেন। হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে যে আল্লহ তায়ালা ইরশাদ করেন: “আমি আমার বান্দার ধারনা মোতাবেক হই এবং আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমার যিকির করে । যদি সে তার মনে মনে আমার যিকির করে আমি তাকে আমার কুদরতি মনে যিকির করি । আর যদি সে আমাকে মাজলিসে যিকির করে তহলে আমি তাকে তাদের চেয়েও উত্তম মাজলিসে স্মরণ করি “। ( বুখারি -৭৪০৫, মুসলিম -২৬৭৫ )। আল্লাহ তায়ালা রাতের বেলা সাত আসমানে নেমে আসে আর বলেন কে আছে যে আমাকে দাক দিবে আমি তার দাকের সারা দেব বাকি। যারা ইমাদার বান্দা হবে তারা সেই গভির রাতে উঠে আল্লাহর জন্য নামায আদায় করে এবং আল্লাহর যিকির করে।
যিকিরে শয়তান বিতাড়ন:
শয়তান হচ্ছে মানুষের চিরশত্রু। সে সর্বদা মানবজাতিকে গুনাহে লিপ্ত করে জাহান্নামি বানাতে আপ্রান চেষ্টা চালায়। আল্লাহর যিকির হল শয়তানকে বিতাড়িত করার বড় সফল অস্ত্র। রাসুল কারিম ( সা ) ইরশাদ করেন: “শায়তান আদম সন্তানের আন্তরে হাটু গেড়ে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর যিকির করে, তখন শায়তান পালিয়ে যায় আর যখন সে আল্লাহর যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শায়তান তাকে প্ররোচনা দেয়”। ( তাখরিজ মিসকাতুল মাসাবিহ ২/৪৬২, আজ –জুহদ -৩৩৭ ) শয়তান মানুষ কে পাপকাজে লিপ্ত করে। তার পাপের কারনে মানুষের আন্তরে কালিমা সৃষ্টি হয়। এই কালিমা মানুষের আন্তর থেকে দুরভিত হয় আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে। হযরত সব্দুল্লাহ ইবনে উমার ( রা ) থেকে বর্ণিত–রাসুল কারিম ( সা ) ইরশাদ করেন যে : “প্রত্যক বস্ত্র পরিষ্কার করারা উপকরণ আছে। তেমনি আন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ হল আল্লাহর যিকির“।
যিকির নৈকট্য লাভের আন্যতম মাধ্যম:
যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার যোগসুত্র তৈরি হয়। বান্দাহ আল্লাহর দয়া ও মাগফিরাত লাভ করার সক্ষম হয়। আল্লাহতায়ালা কুরানে ইরশাদ করেন যে : فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ) “তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমি তমাদের কে স্মরণ করবো“। ( সুরা বাকারা, আয়াত-১৫২ ) এখানে কে একটা প্রশ্ন হতে পারে যে, আমরা তো আল্লাহকে তিনার ইবাদাত দারা স্মরণ করি কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমদের কে কি ভাবে স্মরণ করেন ? অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বলেন তোমরা যদি আমকে হুকুমের আনুগত্যের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ কর তাহলে আমি তোমাদের কে আমার সাওয়াব ও মাগফিতের দিয়ে স্মরণ করবো। আমরা যদি আল্লাহ হুকুম মেনে চলি তাহলে সেটা হবে আমরা আল্লাহ কে স্মরণ করা, আর যখন আল্লাহ তার বান্দাদের কে কোন আমলের কারনে যেই সাওয়াব বা মাগফিরাত দান করেন সেটাই হচ্ছে আল্লাহ আমাদেরকে স্মরণ করা।
আজ আমরা বলে থাকি যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর এত আযাব নাযিল করছে কেন এর কারন কি আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে স্মরণ করেন না। আপনি যদি এটা ভাবেন তাহলে শুনুন, আপনি একেবারে ভুল কেন না আল্লাহ তায়ালা বলেন যে মানুষ যা করবে সেরকন ফল পাবে আজ আমরা আল্লাহর যিকির করা থকে দূর হয়ে আছি। আজ আমরা আল্লাহকে স্মরণ করা ছেরে দিয়েছি। আজ মাদের দুনিয়ার সব কর্ম করার জন্য সময় আছে কিন্তু মুয়াজ্জিন আমাদের কে প্রতি দিন ৫ বার করে মসজিদে নামায পড়তে ডাকে কিন্তু আমরা বলে থাকি যে সময় নায়। যিকির করলে যেমন আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রতি খুশি হন অনুরূপ নামায পরলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয় এবং নাময হল এমন একটি ইবাদাত যার কোন ক্ষমা নেয় এবং কিয়ামতের দিন প্রথম প্রশ্ন হবে নামযের।