সকল কুর্কমের মূল কারণ শয়তানের কুমন্ত্রণা

ভূমিকা

আমরা আজ যে শয়তান সম্পর্কে ধারণা রাখি, সে সৃষ্টির শুরু থেকে এমন ছিল না। তার নাম ছিল ‘আজাজিল’। ইবলিসের এই অবস্থার শুরু আল্লাহর আদেশ অমান্য করার পর থেকে। সে প্রথমে ফেরেশতাদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিল।

আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতিকে সৃষ্টি করলেন এবং প্রথম মানব হিসেবে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি সকল ফেরেশতাকে আদেশ দিলেন: “আদমকে সিজদা কর।” সব ফেরেশতা সিজদা করল, কিন্তু ইবলিস তা করল না। সে অহংকার করে বলল, “আমি তাকে সিজদা করব না, কারণ আমি আগুন থেকে সৃষ্টি আর সে মাটি থেকে।” এই অহংকার ও অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। তখন শয়তান বলল, “হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দাদের গোমরাহ করব এবং তাদের তোমার ইবাদত থেকে ফিরিয়ে রাখব।” 

মানুষ গুনাহের দিকে অগ্রসর হয় শয়তান ও নিজের নফসের কারণে। শয়তানের মানুষকে গোমরাহ করার কারণ নিহিত রয়েছে তার আদম (আঃ)-এর প্রতি অবাধ্যতার ইতিহাসে। এ থেকেই বোঝা যায়, সে মুমিনদের প্রতি কতটা শত্রু। শয়তান প্রতিনিয়ত মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে এবং গুনাহের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রবন্ধে আমরা শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও তা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করব- ইনশাআল্লাহ ।

কুরআন ও হাদীসে শয়তানের শত্রুতার প্রমাণ

আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বহু স্থানে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক করেছেন।

সুরা ফাতির (৩৫:৬)-এ আল্লাহ বলেন:

إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ لَكُمْ عَدُوٌّۭ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُوا۟ حِزْبَهُۥ لِيَكُونُوا۟ مِنْ أَصْحَـٰبِ ٱلسَّعِيرِ ٦

“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, সুতরাং তোমরাও তাকে শত্রু মনে কর। সে তার দলবলকে আহ্বান করে যাতে তারা জাহান্নামবাসী হয়।”

সুরা বাকারা (২:১৬৯)-এ বলা হয়েছে:

إِنَّمَا يَأْمُرُكُم بِٱلسُّوٓءِ وَٱلْفَحْشَآءِ وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ- ١٦٩

“শয়তান তোমাদের শুধু অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের আদেশ দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলতে বলে, যা তোমরা জান না।”

সুরা বনী ইসরাঈল (১৭:৫৩)-এ বলা হয়েছে:

“নিশ্চয় শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। শয়তান মানুষের এক প্রকাশ্য শত্রু।”

এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি ফজরের সময় না উঠে, সে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ঘুমিয়ে থাকে।”

আরেকটি হাদীসে আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

“শয়তান ঘুমন্ত অবস্থায় মুমিনের শরীরে তিনটি গিঁট বেঁধে দেয়। সে বলে, ‘তোমার জন্য গভীর রাত, ঘুমিয়ে থাক।’ যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর নাম নেয়, একটি গিঁট খুলে যায়; ওযু করলে আরেকটি, আর নামাজ শুরু করলে তৃতীয়টি খুলে যায়।” (রিয়াদুস সালিহীন)

হালাল খাদ্য গ্রহণ ও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করা

ইমাম মুসলিম (রঃ) আইয়াদ (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেন:

“আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের জন্য রিযিক হালাল করেছি। আমি আমার বান্দাদের একত্ববাদে সৃষ্টি করেছি, কিন্তু শয়তান তাদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, হালালকে হারাম করছে।”

এ সময় সাহাবি সা‘দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের জন্য দোয়া করুন যাতে আমরা এই অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে পারি।”

তখন তিনি বলেন,

“হে সা‘দ! হারাম থেকে বেঁচে থাক। যে ব্যক্তি হারাম খাদ্য গ্রহণ করে, তার চল্লিশ দিন পর্যন্ত আল্লাহ কোনো ইবাদত কবুল করেন না।” (মুসলিম শরীফ ৪/২১৯৭)

জাহিলিয়াত যুগে "বহীরা", "সাইবা" প্রথার মতো কুসংস্কারও শয়তানেরই প্ররোচনা ছিল, যেখানে নির্দিষ্ট উট বা পশুকে দেবতাদের নামে উৎসর্গ করে মানুষের জন্য হারাম ঘোষণা করা হতো। কুরআনে আল্লাহ এসব কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করেছেন।

কিয়ামতের দিনে ইবলিসও আল্লাহর রহমতের আশা করবে

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন:

“কিয়ামতের দিনে যখন আল্লাহ মুমিনদের জন্য তাঁর রহমতের দরজা খুলে দেবেন, তখন ইবলিসও আশায় বুক বাঁধবে। কিন্তু আল্লাহ তাকে ও তার অনুসারীদের চিরজাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।”

উপসংহার

শয়তান আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। সে সবসময় মুমিনদের ঈমান ও আমল ধ্বংস করার চেষ্টা করে। মৃত্যুর সময়ও সে আমাদের শিরক বা কুফরের দিকে ডেকে নিতে চায়। তাই আমাদের উচিত ঈমান রক্ষা করা, নিয়মিত নামাজ পড়া, এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ করে আল্লাহর পথে থাকার চেষ্টা করা।

শুধুমাত্র আল্লাহর সাহায্যই আমাদের শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করতে পারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পরম দয়ালু, সর্বশ্রেষ্ঠ হিফাজতকারী।

রেফারেন্স:

  • তাফসির ইবনে কাসির
  • রিয়াদুস সালিহীন
  • হৃদয়ের দাওয়াহ (প্রকাশক: আলহাজ আব্দুর রহমান মোল্লা)
  • মিশকাতুল মাসাবীহ



 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter