আল্লাহর নিকটে হাত তুলে দুয়া করার বর্ণনা
আল্লাহর নিকটে দুয়া করার সময় হাত উত্তলন করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও স্বাহাবায়ে কেরামের সুন্নত ! হাজরাত সালিম বর্ণনা করেন যে , হাজরাত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) তাআলা আনহুমা , প্রথম জামরাই সাতটি পাথর নিক্ষেপ করতেন , আর তকবীর পাঠ করে আগিয়ে যেতেন , অতঃপর নরম জায়গায় গিয়ে কিবলা মুখি দাঁড়িয়ে , কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন আর দুয়া করতেন , ও দুয়া করার সময় নিজের দুই হাত উত্তলন করতেন ।
তিনি মধ্যবর্তি জায়গায় পাথর নিক্ষেপ করে বাম দিকে গিয়ে নরম জায়গায় দাঁড়াতেন , আর অনেকক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন ويدعو يرفع يديه অর্থাৎ তিনি নিজের দুই হাত উত্তলন করে দুয়া করতেন অতঃপর তিনি মরূদ্যনের নিচু অংশে , জামরায়ে উক্ববায় পাথর নিক্ষেপ করতেন কিন্তু সেখানে দাঁড়াতেন না ! আর হাজরাত আব্দুল্লাহ বীন উমর (রাঃ) আনহুমা বললেন , আমি রাসুল (সাঃ) কে এই মতই পাথর নিক্ষেপ করতে দেখেছি ।
হাজরাত আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ) আনহু বর্ণনা করেছেন যে হজুর (সাঃ) যখন হুনাইনের যুদ্ধ থেকে মুক্ত হলেন , তখন তিনি হাজরাত আবু আমির (রাঃ) আনহুকে এক সৈন্য দলের নেতা নির্বাচিত করলেন আর আওতাসের দিকে পাঠালেন , এবং হজুর আমাকেও তিনার সাথে পাঠালেন । আওতাসের নেতা ঊরাইদ বিন সুম্মার সাথে যখন যুদ্ধ হল আর সে মারা গেল , তখন তার সৈন্য যুদ্ধর জাগা ছেড়ে পালিয়ে গেলো , কিন্তু যুদ্ধর সময় হাবশা দেশের কোন এক ব্যাক্তি একটি তীর নিক্ষেপ করলে সোজা হজরত আবু আমিরের হাঁটুতে এসে লাগে , এই অবস্তাই আমি তার নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করি , চাঁচাজান ! এই তীর আপনাকে কে মেরেছে ? তিনি ইশারা করে উত্তর দিলেন , আমার কাতিল সেই ব্যাক্তি যে আমার দিকে তীর নিক্ষেপ করেছে !
আমি সেই হাবশির দিকে ছুটে গেলাম , সে আমাকে নিজের নিজের দিকে যেতে দেখে দ্রুত বেগে পালাতে লাগলো , কিন্তু আমি তার পিছন যাওয়া ছাড়িনি আর এই কথাই বলছিলাম যে , আরে বেহায়া ! এমন পালাছছিস কেন ? দাঁড়াচ্ছিস না কেন ? সুতরাং কন এক সময় সে দাঁড়িয়ে গেল , তার পর আমরা উভয়ে তরবারি দ্বারা যুদ্ধ আরম্ব করলাম , শেষ পর্যন্ত আমি তাকে মেরে ফেললাম ।
আমি হাজরত আবু আমির কে এই সুসংবাদ দিলাম যে , আল্লাহ তাআলা আপনার কাতিলকে ধ্বংস করেছেন , ইহা শুনে তিনি বললেন , এখন এই তীর বের করে দাও , আমি যেমনই তীর টেনে নিয়েছি তেমনই অতিরিক্ত রক্ত বইতে লাগলো , তখন তিনি আমাকে বললেন । এই ভাতিজা রাসুল (সাঃ) কে আমার সালাম পৌঁছে দিও , এবং আমার পক্ষ থেকে এই কথা বল যে , তিনি যেন আমার জন্য মাগফিরাতের দুয়া করেন , তার পর তিনি আমাকে নিজের জায়গায় মানুষের নেতা ধার্য করেন , আর কিছুক্ষনের মধ্যে , ইন্তেকাল করে গেলেন । ইন্না লিল্লাহি অ ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।
তাহলে দেখুন তিনি শুধু সালাম বলতে বললেন এবং দুয়া করতে বললেন তার কারনে তিনি জান্নাত পেয়ে গেলেন ।
আজ কাল আমাদের দুয়া কবুল হয় না কেন ! কারন সাধারণভাবে মুসলমানদের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে যে , আমরা যখন কন দুয়া করি তখন তার কবুলিয়াতের কোনো প্রভাব আমাদের মধ্যে পড়ে না , এবং আমরা যা কামনা করি তা পাই না । আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আমাকে ডাকো এবং আমার কাছে দুয়া করো , আমি তোমাদের দুয়া কবুল করবো , তো আমাদের দরকার আল্লাহ তাআলার কাছে দুয়া করা , আমাদের জানা দরকার কি করলে এবং কন সময়ে দুয়া করলে আলাহ তাআলা কবুল করবেন ।
দুয়া কবুলের সময়ঃ
১) শবে – কদর , রমজান শরিফের ২১,২৩,২৫,২৭,২৯, এর রাতে ।
২)নামাজের জন্য যখন মুয়াজ্জিন আজান দেয় সে সময় অর্থাৎ ওই সময়ে দুয়া কামনা করলে তা কবুল হয় ।
৩)কোরান খতমের পর , বিশেষ করে ক্বারির কুরানের অক্ষরে ,হাফিজের কোরান পাঠ শেষ হওয়ার পর , তার দুয়া শ্রবণকারী হিসেবে বেশি সম্ভাবনাপূর্ণ ।
৪) রাত্রে দুয়া করা , বিশেষ করে অর্ধেক রাতের পর ।
৫)রাতের তিনভাগের শেষভাগের অর্থাৎ ১২ ঘণ্টার রাত হলে রাত ২ টো থেকে ৬ তা প্রজন্ত।
৬) সুবহ সাদিকের সময় ।
৭) জুম্মার রাত ও জুম্মার দিন।
8) ইউয়ামে আরাফা ( রমজানের ৯ তারিখ )
৯) বৃষ্টি মাথাই কাবাশরিফ দর্শনের সময় ।
১০) ফজর নামাজের পর ।
এবং নানা ধরনের জিনিস পড়ে আমরা যদি দুয়া করি তাহলে আমাদের দুয়া কবুল করবেন। যেমনঃ আমরা যদি দিনে, ইয়া আরহামার রহিমিন পড়ি তাহলে আমাদের দুয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন । আমরা যদি ইয়া আরহামার রহিমিন বলে দুয়া কামনা করি , তাহলে দুয়া কবুল করে নেওয়া হয় , ( কোনো মুসলমান যখন এই কলেমা পাঠ করে তখন ফেরেশতা ও বান্দাকে সম্ভোধন করে বলে , আরহামার রহিমিন তোমার প্রতি মেহেরবান , যা চাওয়ার তা তুমি চেয়ে নাও ।
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যারা অসংখ্য পাপ করেছে , সেই গুনহা মোচনের জন্য আমাদের দুয়া করা দরকার । আমারা যদি এই দশটি সময়ে দুয়া করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের দুয়া কবুল করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর তৌফিক দান করুন ।