শান্তির বজায় রাখায়সালামেরভূমিকা

বর্তমানে মনুষ্য জাতি সর্বদা সুখে শান্তিতে বসবাস করার জন্যে দৃষ্টিপাত করে রয়েছে, কিন্তু এটি বিন্দুমাত্র সম্পন্ন ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না যতক্ষণ না সকলেই ইসলামকে নিজের প্রতিপক্ষ বলে অবলম্বন করবে । নবী সাহেবের হাদিস, আল্লাহর বাণী কোরআন সর্বত্রই বিনামূল্যে পাওয়ার লক্ষ্যে আজকের বর্তমান সমাজ, কিন্তু সকলেই এই বিষয়টি ভুলেই গেছে যে কোরআন হাদিসের শিক্ষা, আল্লাহ ও তিনার প্রেরিত রাসূলের বাণী ফ্রিতে এই জন্য প্রদান করা হয় কারণ কারো অস্তিত্বে এত সম্বল নেয় যে সে আল্লাহর বাণী ও নবীজির হাদিসকে কিনতে সক্ষম হবে। 

বিদ্রোহী সমাজে ইসলাম ধর্ম প্রচারের ধারণা 

ইসলাম বিরোধী সকল দেশই এই ধর্মের অশান্তির ব্যাপারে চর্চা করে । উক্ত ধর্মের ব্যাপারে চর্চা করার সময় সর্বোপরি এই কথাটি উঠে আসে যে ইসলাম এক অশান্তি ও নিষ্ঠাচার এর ধর্ম। কিন্তু শত বছর পূর্বের ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে ইসলাম ব্যতীত পৃথিবীর সভ্যতার অগ্রগতি একদম শূন্যের অবস্থায় ছিল। 


সালামের অর্থ 

 আরবি ভাষায় সালাম মাত্র চারটি অক্ষর দিয়ে গঠিত। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে শান্তি বা একে অপরকে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া। এই চারটি অক্ষরের মধ্যে সীমিত থাকার শব্দ নয় সালাম। সালাম নিজেই চাই যে আমার প্রচার ও চর্চা সর্বদা পৃথিবীতে হয়ে থাকুক । মানব সভ্যতার কল্যাণ এবং সত্য নিষ্ঠার নিমিত্তে সালাম বা শান্তির ও সুখের বার্তা দেওয়া অনেকই অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা নিজ পবিত্র গ্রন্থে সালাম শব্দটি কয়েকশো বার ব্যবহার করে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে আমি তোমাদের রব তোমাদের শান্তি বজায় রাখা আমার দায়িত্ব, কিন্তু এক শর্তে সানিদ্ধে যে তোমরা নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। 

সালামের ইতিহাস 

সালামের ইতিহাস শুরু হয় আদম আলাইহিস সাল্লাম এর সৃষ্টির পরে। যথা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র ভাষায় বর্ণনা করেছেন “আল্লাহ তায়ালা যখন মানবজাতির পিতা আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করলেন তখন আল্লাহ তিনাকে উপদেশ দিলেন হে আদম তুমি সেই ফেরেশতাদের গোত্রকে সালাম দাও এবং তারা যা উত্তর দেবে মনোযোগ সহকারে শুনো। অতএব ইতিহাসে বর্ণিত রয়েছে যে আদম নবী ফেরেশতাদের গোত্রে গিয়ে আসসালামুয়ালাইকুম বলেন এবং ফেরেশতাগণ তার প্রত্যুত্তরে ওলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু বলেন। সালাম আরম্ভের পরে পরেই এই শান্তির বার্তাটি সকল উম্মতের জন্য মিলনের এক শুভেচ্ছায় রূপান্তরিত হয়।

হাদিস শরিফে সালাম প্রচারের নির্দেশ 

 একজন মুসলিম ব্যক্তি যখন অপর মুসলিম ভাইকে সালাম প্রদান করে তখন দুজনেই একে অপরের জন্য এই দোয়া করে যে আল্লাহ তা'আলা তোমার উপর শান্তি বর্ষণ করুক। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে অনেক হাদীসের দ্বারা সালামের মর্যাদা সমাজকে শিখিয়েছেন। যেমন, আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন মুআয রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত যে একদা এক সময় নবী সাঃ এর কাছে এসে একজন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেন যে ইসলাম ধর্মের সব থেকে পছন্দনীয় আমল কোনটি ? তখন নবী সাঃ তার প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে ইসলাম ধর্মের সব থেকে পছন্দনীয় আমল হলো এতিম ও মিসকিনদের ভোজন এবং জানা-অজানা সকলকে সালাম দেওয়া । তেমনি আবু উমারাহ বারা বিন আযিব রাঃ বলেন যে আমাদের নবী সাঃ সাতটি জিনিসের উপদেশ দিয়েছেন। যথা, অসুস্থদের দেখতে যাওয়া, শবযাত্রা অনুসরণ করা, হাঁচির সময় উত্তর দেওয়া, দুর্বলদের সাহায্য করা, নিপীড়িতদের সাহায্য করা, শান্তি ছড়িয়ে দেওয়া বা সালাম দেওয়া এবং কসম পালন করা। ইহা ছাড়া মুসলিম শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হবে না, আর পরিপূর্ণ মুমীন ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে আর একে অপরের মধ্যে  ভালোবাসা তখনই হবে যখন তোমরা এক মুসলিম ভাই অপর মুসলিম ভাইকে সাক্ষাতের সময় সালাম জানাবে। কোরআন শরীফে সালাম শব্দটিকে দশবার এবং হাদীস শরীফে ১১৩২ বার ব্যবহার হয়েছে। সালাম শব্দের এতইবার কোরআন ও হাদিসে ব্যবহার, এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সালাম বা একে অপরের জন্য শান্তির বার্তা দেওয়া হচ্ছে ইসলামের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একদা একসময় এক সাহাবী এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন যে ইসলামের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনটি তখন তিনি বললেন যে ইসলামের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গরিবদের খাবার খাওয়ানো এবং একে অপরকে শান্তির বার্তা দেওয়া অর্থাৎ সালাম করা । এরকম ভাবে আরও একটি হাদীসে সালাম কে বলা হয়েছে যে এটি হচ্ছে আল্লাহর কাছে সবথেকে পছন্দনীয় আমল। তাই আমাদের উপর একান্ত প্রয়োজন যে আমরা সকলেই একে অপরকে সালাম দেই। শুধুমাত্র দুই ঈদের মধ্যে সীমিত না রেখে সালামকে সব সময়ের জন্য প্রচলিত রাখি ।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter