তলোয়ার বনাম ঈমান: আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়েরের আত্মবলিদান
হাজ্জাজ: এক জল্লাদ, যার বাগ্মিতা ছাপিয়ে গিয়েছিল বর্বরতাকে
ইতিহাসে এমন কিছু চরিত্র থাকে, যাদেরকে একক কোনো অভিধায় বর্ণনা করা যায় না। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ তাদেরই একজন। সে ছিল একাধারে বক্তা, বাগ্মী, প্রশাসক, বিদ্বান—আবার সেই একই মানুষ ছিল নিষ্ঠুর, রক্তপিপাসু ও জুলুমের প্রতীক। এমন এক জল্লাদ, যার শাণিত তরবারির আগেই ছুটে যেত আগুন জ্বালানো বাণী। হাজ্জাজ ছিল কুরআনের হাফিয। তার আরবি ব্যাকরণে দখল ছিল বিস্ময়কর। তাফসির ও ভাষাতত্ত্বেও সে পারদর্শী ছিল। কিন্তু এই জ্ঞান তাকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেনি। বরং তার জ্ঞান ও ভাষাকে সে ব্যবহার করেছে শাসকের লাঠিয়াল হয়ে ওঠার জন্য।
উমাইয়া খিলাফতের রক্তচক্ষু হাজ্জাজ। তাকে বানানো হয়েছিল বিরোধীদের দমন করতে। তার হাতে উমাইয়া শাসকের তরবারি, আর মুখে ছিল ভয়াবহ বাণী। সে মানুষকে জুলুম করত, তারপর সেই জুলুমকে ইসলামের নামে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করত। ইতিহাসে হাজ্জাজকে পাঠানো হয়েছিল কাবার ছায়ায় আশ্রিত এক সাহসী মুজাহিদ — আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (র.আ.)-এর বিরুদ্ধে। একজন সাহাবিপুত্র, একজন খলিফা, একজন আলেম, একজন প্রিয় ইবাদতকারী—তার বিরুদ্ধে হাজ্জাজকে পাঠানোর সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে যে, খিলাফতের ভয় ছিল সত্যের প্রতিরোধে, এবং সেই প্রতিরোধকেই দমন করতে তারা নিয়োগ করেছিল রক্তপিপাসু এক বক্তাকে।
হাজ্জাজ ঘোষণা করেছিল—
“আমার তরবারি কথা বলবে, আর আমার ভাষা গিলে খাবে বিদ্রোহ।”
এই একটি বাক্যেই লুকিয়ে আছে তার চরিত্রের অন্তর্নিহিত ভয়ঙ্করতা। ভাষা যার অস্ত্র, অথচ সেই ভাষাই যখন জুলুমের সুরে বাজে, তখন তা সভ্যতাকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। তার জমানায় শত শত নিরপরাধ মুসলমান, বহু আলেম, এবং এমনকি সাহাবিদের বংশধররাও তার হাতে শহীদ হন। তিনি নিজেকে বলতেন ইসলামি রাষ্ট্রের রক্ষক। অথচ সেই রক্ষা করার নামেই তিনি হত্যা করেছেন সেইসব মানুষদের, যাদের হৃদয়ে ছিল ঈমানের আলো।
ইসলামের ইতিহাসে যেসব শাসক ধর্মের নামে জুলুম করেছে, হাজ্জাজ তাদের অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি। তার সময়কাল আমাদের শেখায় — যদি কোনো জালিম শিক্ষিত হয়, তবে তার জুলুম হয় আরও বিপজ্জনক। কারণ সে ভাষা দিয়ে রক্ষা করে নিজের জুলুম, আর মানুষকে বিভ্রান্ত করে সত্য থেকে।
হাজ্জাজ: তলোয়ার ও তর্কের রাজা
ইতিহাসে বহু শাসক এসেছে যারা ছিল নৃশংস, বহু জেনারেল এসেছে যারা ছিল কৌশলী, এবং বহু বাগ্মী এসেছে যারা মানুষকে ভাষার মোহে বেঁধে ফেলতে পারত। কিন্তু হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ছিল এই তিনটির এক বিস্ময়কর এবং ভয়ংকর সমন্বয়। একদিকে সে ছিল কুরআনের হাফিয, আরবি ব্যাকরণের বিশেষজ্ঞ, অন্যদিকে নির্মমতা ও দমন-পীড়নের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছিল উমাইয়া খেলাফতের ভীত, কিন্তু সেই ভীত ছিল রক্ত ও আতঙ্কের উপর দাঁড়ানো।
হাজ্জাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র ছিল তার ভাষা। সে কথা বললে লোকেরা স্তব্ধ হয়ে যেত, শত্রুরা থরথর করে কাঁপত। তার বক্তৃতা ছিল তীক্ষ্ণ, আগ্নেয়, বিদ্বেষে পূর্ণ — যেন প্রতিটি বাক্যই একেকটি ছোড়া বিষভরা তীর। অথচ সেই কথার অন্তরালে ছিল এক রক্তাক্ত তরবারি, যা চলত কোনো দ্বিধা ছাড়াই। ইতিহাসবিদ ইবনু কাসীর তাকে অভিহিত করেছেন “উমাইয়া খেলাফতের কুঠার” হিসেবে, যার কাজ ছিল বিরোধিতার প্রতিটি অঙ্কুরকেই শিকড় থেকে তুলে ছুড়ে ফেলা।
এমন একজন ব্যক্তিকে যখন সাহাবিপুত্র, খলিফা ও মুত্তাকি মুজাহিদ আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (র.আ.)-এর বিরুদ্ধে পাঠানো হলো, তখন সেটি কেবল একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষ ছিল না, বরং এটি হয়ে দাঁড়ায় সত্য ও শক্তির মুখোমুখি একটি ট্র্যাজেডি। হাজ্জাজ ঘোষণা দেয়, “আমার তরবারি কথা বলবে, আর আমার ভাষা গিলে খাবে বিদ্রোহ।” এই বাক্য এক যুদ্ধনীতিরও চেয়েও ভয়ংকর — এটি ছিল দমন-পীড়নের ঘোষণাপত্র।
হাজ্জাজ কেবল ইবনু যুবায়েরকেই দমন করেনি, সে ইতিহাসের অসংখ্য আলেম, মুত্তাকি ও সাধারণ মুসলমানদের রক্তে তার রাজ্যকে রঞ্জিত করেছে। কুফা ও বসরার হাজারো মানুষ তার নির্মম হুকুমে জীবন হারায়। অথচ সে দাবী করত— সে ইসলামের সেবক। এ যেন ঠিক সেই অবস্থা, যখন কেউ কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে, আর পিছন দিকে ছুঁড়ে দেয় আগুন!
তাকে যারা বুঝতে চায়, তাদের শুধু তার কীর্তি নয়, তার অন্তরের বর্বরতা বোঝা দরকার। একদিকে সে কুরআন মুখস্থ করেছিল, আর অন্যদিকে কুরআনের নির্দেশকেই পদদলিত করেছিল। তার ভিতরে ছিল এমন এক দ্বিচারিতা, যা ইসলামি শাসনের নাম নিয়েও ইসলামি মূল্যবোধকে পদদলিত করেছিল।
ইবনু যুবায়ের (র.আ.)-এর বিরুদ্ধে তাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল উমাইয়া খেলাফতের এক বিপজ্জনক পদক্ষেপ, যা ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবাকেও ভয়াবহ এক কলঙ্কে জড়িয়েছে। এবং সেই কলঙ্কই আমাদের নিয়ে যাবে পরবর্তী অধ্যায়ে — মক্কার অবরোধ এবং কাবার উপর কামান দাগার ভয়াবহ ইতিহাসে।
মক্কার আকাশে জুলুমের ধোঁয়া
মক্কা—যে শহরের নাম শুনলে অন্তর নরম হয়ে যায়। যে কাবার দিকে তাকিয়ে চোখ ভিজে আসে। যেখানে আমাদের নবী (সা.) মাথা নত করে ইবাদত করেছেন, যেখানে সাহাবিরা নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন দ্বীনের জন্য। অথচ সেই পবিত্র ভূমিতেই একদিন দেগে উঠেছিল কামান, ঝরে পড়েছিল শহীদের রক্ত, এবং ইসলামের প্রতীক কাবাও রক্ষা পায়নি ক্ষমতার উন্মাদনার হাত থেকে।
৭২ হিজরিতে হাজ্জাজ যখন মক্কা অবরোধ করেন, তখন তিনি কেবল একজন বিদ্রোহী দমন করছিলেন না, বরং ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর এক অধ্যায় রচনা করছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (র.আ.) কাবার ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন—তিনি কেবল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, ছিলেন এক মোতাক্কী, এক মুজাহিদ, এক সাহাবিপুত্র, যিনি খেলাফতের প্রকৃত মর্মবাণী ধারণ করতেন।
হাজ্জাজ মক্কার চারপাশ ঘিরে ফেলেন। খাদ্য ও পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেন, এমনকি সাধারণ হজযাত্রীদের যাতায়াতেও বাধা সৃষ্টি করেন। মক্কা যেন এক সময় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। কাবার চারপাশে জুমআর খুতবা নয়, উচ্চারিত হতে থাকে যুদ্ধের দামামা। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল সেই মুহূর্ত, যখন হাজ্জাজ কাবার উপর কামান দাগার নির্দেশ দেন। সে নিজে বলেছিল:
“আমি কাবার আশ্রয়ে লুকানো বিদ্রোহীদের গুঁড়িয়ে দেব, যদি প্রয়োজন হয় কাবার দেওয়ালও ভেঙে ফেলব!”
এটি ইতিহাসের এক জ্বলন্ত কলঙ্ক—যেখানে এক মুসলিম জেনারেল ইসলামের ঘরের দিকেই কামান তাক করেছিল।
ইমাম যুহরির মতে, সেই কামানের গোলায় কাবার একাংশ ভেঙে যায়। হাজ্জাজ কাবা সংস্কার না করে শুধু সামান্য মেরামত করে, যাতে তার অপরাধ চাপা পড়ে। অথচ, সে কাবার দিকে কামান চালানোর পরও দাবি করেছিল যে সে ‘ইসলামের রক্ষক’!
এত কিছু সত্ত্বেও ইবনু যুবায়ের (র.আ.) পিছু হটেননি। দীর্ঘদিন অবরোধে থেকেও তিনি হাল ছেড়ে দেননি। তার সাহস ছিল কাবার মাটি থেকে উৎসারিত, আর তার অন্তর ছিল মদীনার আলোকধারায় গঠিত। তাকে সাহায্য না করলেও, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত প্রমাণ রেখে গেছেন যে—কাবার ছায়ায় দাঁড়িয়ে শির কাটানো যায়, কিন্তু মাথা নোয়ানো যায় না।
এই অধ্যায় প্রমাণ করে, ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত থাকে যেগুলো কেবল কলঙ্ক নয়, বরং চেতনাজাগানিয়া শিক্ষা। মক্কা অবরোধ আমাদের শেখায়, যখন ক্ষমতা ঈমানকে পদদলিত করে, তখন কাবাও আর নিরাপদ থাকে না।
এক শহীদ ও এক জননী: ইতিহাসের গর্বিত অধ্যায়
ইতিহাসে কিছু মৃত্যু থাকে যা কেবল প্রাণহানি নয়, বরং একটি আদর্শের মাইলফলক। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (র.আ.)-এর শাহাদত এমনই এক মৃত্যু, যা শুধু তলোয়ারে কাটেনি, বরং কালের অন্তঃস্থলে ছাপ রেখে গেছে। আর এই শহীদের পেছনে ছিলেন এক মহান জননী—আসমা বিনতে আবু বকর (র.আ.), যিনি সাহস, ঈমান ও সত্যের অনন্য প্রতীক।
যুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, তখন ইবনু যুবায়ের (র.আ.) বুঝতে পারেন, এই লড়াই হয়তো তার জন্য শেষ যুদ্ধ। কিন্তু তিনি চান না, তার মা তার দুর্বলতা দেখুক বা তাকে হাল ছেড়ে দিতে বলুক। তবুও তিনি তার মায়ের কাছে যান—শেষবারের মতো দেখা করার জন্য। তিনি মাকে বলেন:
“আম্মা, আমি দ্বিধায় আছি। যদি আমি যুদ্ধে যাই, শহীদ হই, তবে আমার সম্মান থাকবে। কিন্তু যদি আত্মসমর্পণ করি, হয়তো জীবন বাঁচবে, কিন্তু লাঞ্ছনা থেকে বাঁচব না।”
আসমা (র.আ.) উত্তর দেন—এমন শক্ত কণ্ঠে, যেন এক নতুন যুগের ঘোষণা হচ্ছে:
"আল্লাহর কসম, ওরে বাছা! তুই যদি জানিস তুই সত্যের উপর আছিস, তবে মৃত্যুকেও ভয় করিস না।"
"আর যদি দুনিয়া চাস, তবে তুই এক নিকৃষ্ট দাস।"
এই উত্তরের পর, ইবনু যুবায়ের (র.আ.) কাঁদলেন না। পিছপাও হলেন না। বরং উঠে দাঁড়িয়ে বললেন:
“আম্মা, আপনি আমাকে এমন শক্তি দিলেন, যা হাজার সৈন্যও দিতে পারত না!”
তিনি কাবা চত্বরে যুদ্ধে নামলেন—নিরস্ত্র, ক্লান্ত, কিন্তু চেতনাগতভাবে বিজয়ী। অবশেষে, হাজ্জাজের সেনারা তাকে হত্যা করে, তার দেহকে ক্রসের মতো ঝুলিয়ে রাখে—দিনের পর দিন। মানুষ ভয়ে কাছে আসত না, কিন্তু তখনও আসমা (র.আ.) ঘরে বসে থাকেননি।
তিনি নিজেই যান ছেলের মরদেহ দেখতে। হাজ্জাজ বলেন:
“তুমি দেখো, আমি কীভাবে তোমার বেটাকে শায়েস্তা করেছি।”
আসমা বিনতে আবু বকর (র.আ.) মাথা উঁচু করে জবাব দেন:
"আমি তো দেখতে এসেছি, তুমি কীভাবে এক শহীদকে সম্মানিত করেছো।"
"তুমি তার দুনিয়া নিলে, আর সে তোমার আখিরাত নিয়ে নিল।"
এই মায়ের কথা ইতিহাসে লেখা থাকে স্বর্ণাক্ষরে। এক হাতে তিনি তার পুত্রকে গড়ে তুলেছেন, আর অন্য হাতে সত্যের মানচিত্র এঁকেছেন। এমন মা-ছেলের সম্পর্ক কেবল ইসলামের ইতিহাসেই পাওয়া যায়—যেখানে আদর্শের জন্য মৃত্যুও গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আসমা (র.আ.) তার বয়স তখন শত ছুঁই ছুঁই, তবুও তার ভাষা, তার দৃঢ়তা, তার ঈমান ছিল এক নতুন প্রজন্মের বাতিঘর।
ইতিহাসে কার জয়? সত্য না শক্তি?
ইতিহাস অনেক কিছুর সাক্ষী। সে দেখেছে কীভাবে শক্তিশালী সেনানায়করা বীরদের হত্যা করেছে, কীভাবে ক্ষমতালোভীরা ধর্মের প্রতীকগুলোকে পদদলিত করেছে, আর কীভাবে স্বার্থান্ধরা সত্য বলার অপরাধে নবীদের, ওলিদের, সাহাবাদের রক্ত ঝরিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস একটি বিষয় কখনোই ভুলে না—সত্যের পক্ষের মানুষেরা মরেন ঠিকই, কিন্তু হারেন না। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের হাতে আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (র.আ.) শহীদ হলেন। কিন্তু পরাজিত হলেন কে? আজ হাজ্জাজের নাম উচ্চারিত হয় এক নিষ্ঠুর শাসকের পরিচয়ে। আর ইবনু যুবায়েরের নাম উচ্চারিত হয় এক সাহসী মুজাহিদের পরিচয়ে—যিনি জীবন দিয়ে কাবার সম্মান রক্ষা করেছিলেন, ন্যায়ের পতাকা উঁচিয়ে রেখেছিলেন, সত্যকে পরাজিত হতে দেননি।
হাজ্জাজ তো কাবা ঘিরে কামান চালিয়েছিল, শহরের পানির লাইন কেটে দিয়েছিল, কাফনের অনুমতি দিত না, মরদেহ ঝুলিয়ে রাখত। কিন্তু সে কি মানুষের অন্তর জয় করতে পেরেছিল? না। ইতিহাসে তার স্থান হয়েছে “জল্লাদ” হিসেবে। আর ইবনু যুবায়ের, যিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন বাহ্যিকভাবে—তিনি স্থান করে নিয়েছেন মুসলমানদের হৃদয়ে, শহীদের মর্যাদায়।
উপসংহার:
একদিক থেকে ইতিহাস ছিল কাবার মিনারে ধেয়ে আসা কামানের শব্দে প্রকম্পিত। আরেকদিক থেকে ইতিহাস নিজেই মাথা নত করেছিল সেই শহীদের সামনে, যার পা ছিল পবিত্র কাবার ছায়ায়, চোখ ছিল আখিরাতের পথে।
আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (র.আ.)-এর শাহাদত কোনো একক ঘটনা নয়—এটা সত্য আর শক্তির চিরন্তন দ্বন্দ্বের স্মারক। আর তাঁর মাতা আসমা (র.আ.) ছিলেন সেই প্রেরণার উৎস, যিনি সাহস, ধৈর্য ও ঈমানের এক অনন্য প্রতীক।
আজও আমাদের জন্য এই ইতিহাস থেকে কিছু বার্তা রয়ে গেছে—
- সত্যের পথ কণ্টকাকীর্ণ, কিন্তু চিরস্থায়ী।
- একজন মা-ই পারে একটি জাতিকে জাগিয়ে তুলতে।
- কাবার সম্মান রক্ষা মানেই ঈমানের এক কঠিন পরীক্ষা।
- দমননীতি দিয়ে সত্যকে দমন করা যায় না—তা বরং ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে।
ইতিহাসের দরবারে প্রশ্ন উঠে—কে বিজয়ী? জুলুম, না সত্য? জবাব লুকিয়ে আছে এক রক্তাক্ত মিম্বরে দাঁড়িয়ে উচ্চারিত সেই শেষ বাণীতে,"আল্লাহর কসম, আমি এক মুহূর্তের জন্যও দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিইনি।" সেই আত্মপ্রত্যয়ী উচ্চারণই আজও বাতলে দেয়—জয় হয় তারই, যে সত্যে অটল থাকে। আমরাও কি প্রস্তুত সেই পথের যাত্রী হতে?