আধুনিক ও প্রাক-আধুনিক ভারত তথা বিশ্বে আরবি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ আল-রাবেয় আল হাসানী আল-নদভীর অবদান।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আরবি সাহিত্য, প্রবন্ধ এবং বই সারা বিশ্বে আরবি অধ্যয়ন পরিপূর্ণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতে অনেক ইসলামিক পণ্ডিত রয়েছে যাদের বই, সাহিত্যের কাজ এবং গবেষণাপত্র আরবি ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি আরবি অধ্যয়নকে পরিপূর্ণত করতে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রয়েছে। এই নিবন্ধটি বিংশ শতাব্দীর মহান আলোকিত এবং কিংবদন্তি চরিত্রগুলিরদের মধ্যে একজন তিনার নাম মুহাম্মদ আল-রবি আল হাসানী আল-নদভী। তিনি 1929 সালে উত্তর ভারতের রায়-বরেলিতে জন্মগ্রহণ করেন। মুহাম্মদ আল-রবি আল হাসানী আল-নদভী ছিলেন একজন ইসলামিক পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, লেখক এবং চিন্তাবিদ। তিনি আরবি ভাষায় বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, বই এবং গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি আরবি এবং উর্দু উভয় ভাষায় সাহিত্য ও ইতিহাসের উপর 50টি বই এবং শতাধিক গবেষণাপত্র লিখেছেন।
আরবি ভাষার প্রচার: আল-নদউই ভারতে আরবি ভাষার একজন বিশেষ চরিত্র। তিনি আরবি ভাষায় তার লেখার দক্ষতার মাধ্যমে আমাদের আরবি অধ্যয়নের বিকাশের জন্য আরবি ভাষার প্রচার করেন। সরকারি স্কুলে আরবি ভাষাকে মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি সর্বদা চেষ্টা করেন ।
আরবি সাহিত্য প্রকাশ: আল-নদভী বিভিন্ন আরবি সাহিত্যের বই লিখেছেন। তিনি 50টি বই এবং প্রবন্ধ লিখেছেন এবং সেগুলি অসংখ্য পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন।
একাডেমিক স্কুল: স্কুল এবং ইসলামিক প্রতিষ্ঠান আরবি অধ্যয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল-নদভী দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামার চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি সমগ্র ভারতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতের ছাত্রদের মধ্যে আরবি অধ্যয়নের নেতৃত্ব দেওয়া। এছাড়াও, তিনি ইসলামী ফিকহ একাডেমির প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
ভূমিকা: এই নিবন্ধটি, ইসলামের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর একজন মহান আলোকিত ব্যক্তি এবং একজন কিংবদন্তির অবদান তুলে ধরার প্রয়াস, যিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সামাজিক সংস্কার এনে দিয়েছে। তার বিখ্যাত রচনাগুলি ভারতবর্ষে আরবি অধ্যয়নের প্রচার করতে সাহায্য করে। শুধু আরবি অধ্যয়নের প্রচারে নয় ভারতে ইসলাম, সংস্কৃতি এবং তার ঐতিহ্য সংরক্ষণও করে। মুহাম্মদ আল-রাবেয় আল হাসানের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ আল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মুসলমানদের জন্য সময় এসেছে যখন বর্তমান নেতারা মানবতার জন্য অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। আমরা মুহাম্মদ রাবে হাসান কে একজন মহান নেতা হিসাবে জানি যিনি ভারতে আরবি শিক্ষার পক্ষে ছিলেন এবং একজন মহান পণ্ডিত, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সংস্কারক, বক্তা, সাংবাদিক, লেখক, নবী মুহাম্মদের জীবনীকার ছিলেন। তিনি আরবি এবং উর্দু উভয় ভাষায় ইতিহাস, সাহিত্য এবং ধর্মের উপর 50 টিরও বেশি বই লিখেছেন। এই কাজটি ভারত এবং বিশ্বে আরবি অধ্যয়নের প্রচারে একটি দুর্দান্ত অবদান এনে দিয়েছে। ভারতে আরবি শিক্ষার ক্ষেত্রে তার অনেক অবদান রয়েছে। মুহাম্মদ আল-রাবেয় আল হাসানী আল-নদভী সুন্নি ইসলাম এবং হানাফীর আইনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
শিক্ষা: তিনি তার পিতা এবং অন্যান্য পণ্ডিতদের পরামর্শে ইসলামিক শিক্ষা শুরু করেন। তার জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ এবং আরবি অধ্যয়নের প্রতি নিবেদন অল্প বয়সেই প্রকাশ পায়। একজন আলিম (ধর্মীয় পণ্ডিত) হওয়ার জন্য তাকে ভারতের লখনউতে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামায় পাঠানো হয়েছিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি ছিল। এটি ১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি ইসলাম এবং আধুনিক শিক্ষার সম্মিলিত শিক্ষার জন্য পরিচিত ছিল। তিনি ১৯৪৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা পুরো করেন । তিনি এক বছর দারুল উলূম দেওবন্দে হানাফীর আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য হেজাজে যান। তিনি তার চাচা আবুল হাসান নদভী এবং হুসেইন আহমদ মাদানী এবং আব্দুল কাদির রায়পুর সহ অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিখেছিলেন। তার সবচেয়ে প্রভাবশালী কৃতিত্ব ছিল ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার এবং ২০১৫ সালে নয়াদিল্লিতে শাহ ওয়ালী উল্লাহ পুরস্কার।
কর্মজীবন: তিনি তার স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৫২ সালে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামায় সহকারী অধ্যাপক হন। তিনি মুসলিম বিশ্ব লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। পরে তিনি 1993 সালে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামার অধ্যক্ষ হন।
ভারতে আরবি অধ্যয়নের প্রচারে কিছু মূল অবদান:
ভারতে আরবি অধ্যয়নের প্রভাবে রাবে আল হাসানী আল-নদভীর অবদান ব্যাখ্যা করা যায় না। আরবী শিক্ষায় এর প্রভাব আমরা দেখতে পাই তার লেখা, বক্তৃতা এবং এর জন্য অনেক স্কুল নির্মাণের মাধ্যমে। আরবি ভাষা, সাহিত্য এবং আরবি শিক্ষার প্রভাব শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রাবে আল হাসানী আল-নদউই ছিলেন একজন মাস্টার মাইন্ড আইকন যিনি একই সাথে ভারতে আরবি অধ্যয়ন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সব সময় স্কুলে আরবিকে মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সে জন্য তিনি নিজের স্কুল ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এসব বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য আরবি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষাকেও উৎসাহিত করে। তিনি সকল ক্ষেত্রে বহুমুখী ব্যক্তি ছিলেন এবং অনেক ছাত্র তাকে প্রভাবিত করেছিল এবং ভারতে তাদের আরবি অধ্যয়ন চালিয়ে গিয়েছিল।
আরবি শিক্ষার জন্য সমর্থন: রাবে আল হাসানী আল-নদভী ভারতে আরবি শিক্ষাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি ছাত্রদের আরবি ভাষা ও ইসলামিক অধ্যয়ন শেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য আরবি স্কুল প্রতিষ্ঠান করেন। আরবি শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি বিশেষ প্রচেষ্টা চালান। তার আরবি ভাষায় বই, ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র ছাত্রদের আরবি অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
আরবি বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাষা। আমরা কুরআনের ভাষা আরবী , জান্নাতের ভাষা আরবি এবং সকল নবীর ভাষা ছিল আরবি। ভাষা হিসেবে আরবি ভাষার গুরুত্ব অনেক। আরবি ভাষার প্রচারে রাবে আল হাসান আল নাদভীর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আরবী ভাষার প্রসারে তার বই ও লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আরবি অধ্যয়নের জন্য তাঁর সাহিত্যকর্ম: রাবে-আল-নদভী অসংখ্য বই লিখেছেন যা ভারতে আরবি অধ্যয়নের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে। সেই বইগুলির মধ্যে একটি হল (تاريخ الدعوات والأزهر في الهند) "ভারতে ইসলামিক আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস"। যা আরবি অধ্যয়নের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই বইটিতে বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি লখনউতে কারওয়ান-ই-আরব পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বইগুলির মধ্যে রয়েছে আল আদাব আল-আরাবি বায়না' আরদ এবং তারিখ-আদাব আল-আরাবি এই সমস্ত বই ভারত ও বিশ্বে আরবি অধ্যয়নে বেশ কিছু ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার: মুহাম্মাদ আল রাবে আল হাসান আল নাদভির ভারতে এবং বিশ্বকষে আরবি শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি সর্বদা মুসলিম সম্প্রদায়কে সঠিক পথে সমর্থন করেন। আরবি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ আল রাবে আল হাসান আল নদভীর অবদান এবং প্রচেষ্টাগুলি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সেই ইতিহাসের সোনালী পাতায় তার অবদান আমরা লিখতে পারি। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর কাজগুলি ভারত তথা সারা বিশ্বে ইসলামিক অধ্যয়নের প্রচারে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল।