দোয়া করা ও সন্তুষ্টিতে মৌনতা অবলম্বন করা সম্পর্কে কিছু মতামত
মহান আল্লাহর নিকট বান্দার দোয়া করা (মৌখিক আবেদন নিবেদন ও প্রার্থনা করা) উত্তম, না সর্বাবস্থায় নীরবতা অবলম্বন করে তার প্রতি সন্তুষ্ট ও খুশী থাকা উত্তম?
এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের একদলের মত হল, দোয়া করাই উত্তম।
যেহেতু এর সমর্থনে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বহু দলীল বিদ্যমান আছে। আরো যুক্তি হল এই যে, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বান্দা দোয়া করারই হকদার। কেননা, এতে স্বীয় দাসত্বের ত্রুটি ও হীনতা প্রকাশ করা হয়। আর এ জন্যই আল্লাহ পাক ঐ সব লোকের সমালোচনা করেছেন যারা তাঁর নিকট কিছু চায়না। এরশাদ হয়েছে: তারা তাদের হাতকে গুটিয়ে নেয়। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের নিকট কিছু পাওয়ার জন্য হাত উত্তোলন করেনা যথা দোয়া করেনা। কারো কারো মতে এ কথার অর্থ হল তারা আল্লাহ পাকের নিকট কিছু প্রার্থনা করতে গিয়ে তাদের হাতকে সম্প্রসারণ করেনা।
উলামায়ে কেরামের আরেক দলের মতে, মহান আল্লাহর ফায়সালার অধীনে চুপ থাকা, মৌনতা অবলম্বন করাই বান্দাহর চরম সন্তুষ্টির পরিচায়। আসলে সন্তুষ্টি তো ঐ অবস্থার প্রতি, যার সম্পর্কে মহান আল্লাহর ইচ্ছা পূর্বেই (তকদীরে) স্থিরকৃত হয়ে আছে। এ সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, আমার জিকর যে বান্দাকে আমার নিকট ছওয়াল করা থেকে বিরত রেখেছে অর্থাৎ যে বান্দা আমার নিকট দোয়া করার পরিবর্তে আমার জিকরে মশগুল আমি তাকে দোয়া কারীগণকে যা দান করি তার চাইতে উত্তম বস্তু দান করি।
উলামায়ে কেরামের অন্য এক দলের মতে, বান্দার প্রতি অত্যাবশ্যক যে, সে নৌখিক দোয়া করবে এবং আন্তরিকভাবে মহান আল্লার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে তাহলে উভয় মতের মধ্যে সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়ে যায়।
আল্লামা কুশাইরী (রহঃ) বলেন: এ বিষয়ে উত্তম কথা হল এই যে, সময়ের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। কোন কোন সময়ে দোয়া করাই উত্তম। আর কোন কোন সময় মৌনতা অবলম্বন করাই উত্তম। এ উভয় আমলের (দোয়া ও মৌনতার) মধ্যে পার্থক্যকারী হল মনের আন্তরিকতা, ইঙ্গিত ও আকর্ষণ। আর যদি বান্দার অন্তরে দোয়ার প্রতি আন্তরিকতা ও আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তাহলে ঐ সময়টা দোয়ার সময় হিসেবে বিবেচিত। আর দোয়ার প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি না হলে সেটা দোয়ার সময় নয় বরং মৌনতা অবলম্বন করে (প্রশ্নসার ও স্বীকারুক্তির) সময়। এ ছাড়া অন্তর প্রসারণ ও সংকীর্ণতার দ্বারা দোয়া করা না করার সময়ের মধ্যে পার্থক্য করা যায়।
তাই, দোয়া করতে গিয়ে যদি উহা অন্তরের সম্প্রসারণ সৃষ্টি করে তাহলে দোয়া করবে। আর যদি দোয়া করতে গিয়ে উহা অন্তরের সংকীর্ণতা সৃষ্টি করে তাহলে দোয়া না করে চুপ থাকবে। আর যদি দোয়া করতে গিয়ে অন্তরের বিস্তৃতি বা সংকীর্ণতা কোনটিই পাওয়া না যায় তাহলে দোয়া করা না করা তার ইচ্ছাধীন ব্যাপার। যদি ঐ সময় ইলম ও মারেফতের চর্চা তার নিকট সমান হয়। কিন্তু ঐ সময় ইলম ও মারেফতের চর্চা যদি তার নিকট প্রাধান্য লাভ করে তাহলে দোয়া করাকে প্রাধান্য দিবে। আর যদি মারেফতের চর্চা তার নিকট প্রনিধান যোগ্য হয় তাহলে মৌনতা অবলম্বনকে প্রাধান্য দিবে ।
আল্লামা কুশাইরী (রহঃ) বলেন: উক্ত বিষয়ে একথাও বলা যেতে পারে যে, যে বিষয়ে বান্দাদের স্বার্থ জড়িত অথবা যাতে আল্লাহ পাকের পাওনা বিদ্যমান সেক্ষেত্রে দোয়া করাই উত্তম। আর যে বিষয়ে দোয়াকারীর নিজস্ব স্বার্থ জুড়িত সে ক্ষেত্রে চুপ থাকাই উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, বান্দা
আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করতে থাকে এবং আল্লাহ পাক তাকে ভালবাসতে থাকেন, তখন আল্লাহ পাক ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ)কে বলেন: হে জিব্রাঈল! আমার বান্দার হাজত ও প্রয়োজন মিটাতে বিলম্ব কর। কেননা আমি তার দোয়ার আওয়াজ শুনতে ভালবাসি। পক্ষান্তরে, এমন বান্দা আছে যে আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করতে থাকে কিন্তু আল্লাহ পাক তার প্রতি বিরক্ত। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক বলেন, হে জিব্রাঈল! তুমি আমার এ বান্দার হাজত মিটায়ে দাও। কেননা, আমি তার দোয়ার শব্দ শুনতে অপছন্দ করি।