শাওয়াল মাসের ছটি রোজা ও এর ফজিলত
শাওয়াল মাস শেষের খুব কাছে চলে এসেছে। শাওয়ালের ছয়টি রোজা হল ফযীলতের আমলগুলির মধ্যে একটি, যার সওয়াব অনেক এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে এই মাসে পালন করার জন্য উত্সাহিত করেছেন। শাওয়ালের ছয়টি রোজা পালন করা মুস্তাহাব এবং এর ফজিলত বরকতময় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং তারপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, সে গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয় যেন সে আজ তার মায়ের গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করেছে। (মাজমা উজ জাওয়াইদ: ৫১০২)
এই রোযার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদিসে বলেছেন: من صام رمضان ثم أتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر (যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে এবং শাওয়ালের ছয়টি রোজা পালন করবে, তাহলে সেগুলি সারা বছরের রোজা হিসাবে গণ্য হবে।) (আই'লাউসুনান ২৫৪১) এর কারণ পবিত্র কুরআনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রতিটি নেক আমলের অন্তত দশ গুণ সওয়াব দেওয়া হয়, যেন রমজানের এক মাসের রোজা দশ মাসের রোজার সমান এবং শাওয়ালের ছয়টি রোজা ষাট দিনের সমান যা দুই মাসের সমান। সুতরাং যে ব্যক্তি রমজানের সাথে শাওয়ালের রোজা রাখবে সে সারা বছর রোজা রাখবে।
এটি পবিত্র কুরআনের আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে যেখানে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন: مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ۖ وَمَن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَىٰ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ (যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।) (পবিত্র কুরআন: ১৬০/০৬)। এই আয়াতে, আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি তাঁর বান্দাকে একটি নেক কাজের জন্য দশটি নেকী দেবেন এবং যে ব্যক্তি একটি পাপ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর ন্যায়বিচারের প্রয়োজন অনুসারে তাকে একটি পাপের জন্য শাস্তি দেবেন।
আলেমদের মতে, রমজানের রোজা রাখার সময় যে ভুল ও তুটি হয়ে থাকে, শাওয়ালের ছয় দিনের কারণে আল্লাহ তায়ালা এই ভুল ও তুটি মাফ করে দেন, এভাবে এই ছয় দিনের রোজা পালনের সঙ্গে একই সম্পর্ক রয়েছে, যা ফরজ নামাযের সঙ্গে সুন্নত নামাজের। কেননা এই সুন্নতের কারণে আল্লাহ তাআলা আমাদের ফরয নামাযের ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দেন। এই রোজাগুলি ঈদের পরপরই অর্থাৎ ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে একটানা শাওয়ালের রোজা রাখা পছন্দনীয় ও মুস্তাহাব, কেননা এটি একটি ভালো কাজ আর ভালো কাজে অপরের থেকে দ্রুত ও এগিয়ে থাকা উত্তম। কিন্তু কেউ যদি এই রোজাগুলি শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই তাহলে সে এটা করতে পারে আর এতে চিন্তার বা দোষের কোনো বিষয় নেই তবে তাকে শাওয়াল মাসে এই ছয়টি রোজা পূর্ণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের এই রোজাগুলো পালন করার তৌফিক দান করুন: আমীন