ইস্তেগফার: দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্যার সমাধান
ভুমিকাঃ
ইস্তেগফারহল আরবি হল আরবি শব্দ যার অর্থ ক্ষমা চাওয়া। ইস্তেগফারশব্দটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। তবে আমরা ইস্তেগফারের অর্থ এবং উপকারিতা হতে অনেকেই অজানা। ইস্তেগফারহল পাপ মোচনের সহজ রাস্তা, যার দ্বারা মানুষ নিজের গুনাহ পরিষ্কার করে অপবিত্রতা মুক্ত হতে সফল হয়। সাধারণত, ইস্তেগফারের ফলে মানুষ নিজের ভুল স্বীকার করে এবং ক্ষমা চায় যার মাধ্যমে ব্যক্তিরা মানসিক স্বস্তি অনুভব করে, ফলে উদ্বেগ কম হয় এবং সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। আজ আমরা জানবো, ইস্তেগফারের অর্থ, এর উপকারিতা এবং কীভাবে এটিকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ করা যায় তা অন্বেষণ করব। ইস্তেগফার আমাদের দুনিয়ার সমস্যা সমাধানে এবং আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করতে পারে তাও আলোচনা করব।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে এর গুরুত্বঃ
কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের শিক্ষা দেয় যে ইস্তেগফার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যেমন,
"وَمَن يَعْمَلْ سُوٓءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُۥ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورًۭا رَّحِيمًۭا"
অর্থাৎ, "যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পাই"। (সূরা নিসা : ১১০)
"ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ"
অর্থাৎ, "অতঃপর তাওয়াফের জন্য দ্রুত গতিতে এখান থেকে ফিরে আসো, যেখান থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহর কাছেই মাগফেরাত কামনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ক্ষমাকারী, করুণাময়"। (সূরা আল-বাকারা : ১৯৯)
"فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا"
অর্থাৎ, "তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন"। (সূরা আন-নাসর : ৩)
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেনঃ “তওবার দরজা সর্বদা খোলা থাকে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয়”। (সহীহ মুসলিম)
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেনঃ “আমার অন্তরে কখনও কখনও অলসতা দেখা দেয়, তাই আমি দৈনিক ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা পার্থনা করে থাকি”। (সহীহ মুসলিমঃ ৬৭৫১)
হজরত হাসান বসরি (রহঃ) বলেন, “তোমার জীবনের ইস্তেগফারের পরিমাণ বৃদ্ধি করো। কারণ, তুমি জানোনা, কোন দিকে আল্লাহ তাআলার রহমত তোমার ওপর অবতীর্ণ হবে”।
ইস্তেগফারের উপকারিতাঃ
ইস্তেগফারের ইহকাল ও পরকালে অনেক উপকারিতা রয়েছে। ইস্তেগফার স্বস্তি ও সুখের প্রবেশ দ্বার। প্রথমত, মানুষের ভুলতার স্বীকৃতি, আল্লাহর রহমত ও করুনা পাওয়া, আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করা, আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া, আল্লাহর সাথে বন্ধন মজবুত করা, গুনাহের ক্ষমা, বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা, রিযিক বৃদ্ধি, মনের শান্তি, সঠিক নির্দেশনা পাওয়া, দোয়া কবুল হওয়া।
দ্বিতীয়ত, ইস্তেগফারের ফলে মনস্তাত্ত্বিক উপকারিতাও দেখা যায়, যেমন, মানসিক চাপ কমানো, আত্ম-সচেতনতা এবং বৃদ্ধি ও নম্রতা এবং সহানুভূতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ও হৃদয়কে কোমল করে। এছাড়াও, সামাজিক হিসেবে দেখতে গেলে, সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ও একটি সুরেলা সমাজ গঠন হয়।
তৃতীয়ত, দুশ্চিন্তা দূর করে এবং দুয়া কবুল হয়, রিযিকের, রহমতের ও জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়, বিয়ে সহজ করে দেয়, সন্তান-সন্তানাদি আসতে সাহায্য করে। এবং যখনই আমাদের মনে হতাশ ও দুশ্চিন্তা ঘিরে ফেলে তখন আমাদের বিশেষ করে ইস্তেগফার (আস্তাগফিরুল্লাহ) পাঠ করা দরকার।
ইস্তেগফার কীভাবে করবেনঃ
কিছু সাধারণ বাক্যাংশ আছে যা ক্ষমা চাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন, “আস্তাগফিরুল্লাহ”, “আস্তাগফিরুল্লাহিল আযীম”, “আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহ”, আস্তাগফিরুল্লা হিল্লাযি লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল হায়্যুল কায়্যুম”, রাব্বিগ ফিরলি ওয়া আতুবু আলায়্যা”।
ইস্তেগফার ভালো ও নেক আমল করার পরে করা মুস্তাহাব। যেমন, প্রত্যেক ফরয নামাযের পর। কারণ, রাসূল (সাঃ) যখনই ফরয নামায সমাপ্ত করতেন, তারপরে পরেই তিনি তিনবার ইস্তেগফার পড়তেন। তারপর, ওযু করার পরে, যে কোনো মজলিসের সমাপ্তিতে, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার সময় ইস্তেগফার পড়া মুস্তাহাব।
ইস্তেগফার এমন একটি ইবাদত যার দ্বারা মানুষ সমস্ত সমস্যার সমাধান বের করতে পারবে। আর্থিক অসুবিধা, দুনিয়ার দিকে অধিক ঝুকি ও আখেরাতের ভাবনা মনে না আসা এই সমস্ত ধরণের সমস্যার সমাধান ইস্তেগফারের দ্বারাই সম্ভব। ইস্তেগফার হল ভুল স্বীকার করা ও আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার আরেক নাম। কারণ, আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন যে, “মানুষকে নিসয়ান দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে”। নিসয়ান শব্দের অর্থ হল ভুল। এবং এরই ক্ষতিপূরক হিসেবে তৈরি করেছে ইস্তেগফার বা তওবা। যেন মানুষ সফলতা লাভ করতে পারে।
ইস্তেগফার, দুনিয়ার তুলনায় পরকালের বা আখেরাতের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দুনিয়াতে আমরা সকলেই সামান্য সময় কাটাতে এসেছি। তবে আখেরাতেই রয়েছে আমাদের অনন্ত জীবন। এবং সেই জীবনটিকেই সফল বানাতে হলে আমাদের ওপর জরুরি যে আমরা প্রত্যেক দিন ইস্তেগফার করি ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। যখন কোন বান্দা আল্লাহর নিকট ইস্তেগফার করে তখন আল্লাহ তাআলা প্রচুর খুশি হন। এবং আল্লাহ তাআলাকে খুশি করাই হচ্ছে আমাদের জীবনের একান্ত লক্ষ্য।
উপসংহারঃ
ইস্তেগফার হল একটি শক্তিশালী ইবাদত যার ইহকাল ও পরকালে অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি একটি সাধারণ কাজ যা আমরা সকলেই করতে সক্ষম তবে এটি আমাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখে। কারণ এর দ্বারা আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি, আর আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব এবং সমস্ত নেয়ামত উপভোগ করতে পারব। জীবনের কখনো যদি আপনি বিপদের সম্মুখীন হন তাহলে সর্বপ্রথম আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন। দেখবেন খুব সহজেই আপনি সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।