তওবার ফযিলত
তওবা মানে হচ্ছে যে মহান আল্লাহ তা'য়ালার কাছে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। এই তওবার ব্যাপারে কুরআন শারিফে অনেক ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে। যেহেতু কুরআনে এবং হাদীসে কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়টি বারংবার উল্লেখ ও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সে কারণে ইসলামী ধর্তমত্ত্বে তওবার গুরুত্ব অনেক। তওবা ব্যাতিরেকে কবিরা গুনাহ মাফ হয় না। যে তওবার পর পাপকর্মের পুনরাবৃত্তি হয় না, তাকে বলে তওবাতুন নাসুহা বা খাঁটি তওবা। তওবার আক্ষরিক অর্থ মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। ইসলামী শরীয়তে এর অর্থ অতীত পাপকাজ থেকে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় সংকল্প করা। কুরআনের সূরা ৬৬ আয়াত ০৮-তে তওবা শব্দটি ′নাসূহ (نصوح ) শব্দ সহকারে ববহৃত হয়েছে যার অর্থ খাঁটি । সুতরাং, তওবার প্রকৃত তাৎপর্য হল আন্তরিক অনুশোচনা।
হে মমিনগন! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর,যাতে তোমরা সফল হতে পার। হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর নিকটে খাঁটি তওবা কর, এই আশায় যে তোমাদের কর্তা তোমাদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন যারা তাঁর কাছে তওবা করে, এবং তিনি তাদেরকে ভালবাসেন যারা নিজেদেরকে পবিত্র করে। অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর অতি দেড়ি না করে তওবা করে, এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন মাথার উপর মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে – “আমি এখন তওবা করছি”। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফুর অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।কুরআনে আল্লাহ অবিশ্বাসী ও অবাধ্যদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন যে, তারা যদি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনর্ত করে তবে আল্লাহ তাদেরকেও ক্ষমা করে দেবেন। কিয়ামতের দিনে তার কুফুর কারীদের শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে, এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে,- কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, এইরূপ লোকেদের জন্য আল্লাহ পাপের পরিবর্তে পুণ্যসমূহ দান করবেন, আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল পরম করুণাময়। আর যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎকর্ম করে তবে তো সেই ব্যক্তি সত্যিই আল্লাহর নিকট রূপান্তরিত হয়ে প্রত্যাবর্তনর্ত করেছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে (বানী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, ‘সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’ সে বলল, ‘না'। সুতরাং সে রেগে গিয়ে তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলিমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ পাপের দেশ।’ সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু হয়ে গেল।এবং তার দেহ থেকে আত্মা বের করার জন্য রহমত ও আযাবের ফেরেশতা উপস্থিত হলেন। ফিরিশতা- দের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফেরেশতাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং তার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে। ’ আর আযাবের ফিরিশতারা বললেন, ‘ এখনো ভাল কাজ করেনি এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত। ’ এমন অবস্থায় একজন ফিরিশতা মানুষের রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশতাগণ তাঁকে তিন নম্বর ফিরিশতা মানলেন। তিনি ফায়সালা করলেন যে, ‘তোমরা দু’দেশের দূরদূত্ব মেপে দেখ।অর্থাৎ যে গ্রাম থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরদূত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরদূত্ব এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশি নিকটবর্তী হবে, সে তারই বান্দা হবে। ’ অতএব তাঁরা দূরদূত্ব মাপলেন এবং যে দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই দেশকে বেশি নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন। ’’ কোন এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুলের কাছে এসে বলল, আমি এমন এক পাপ করেছি যার জন্য আমার উপর হদ (হুদুদ আইনের শাস্তি) প্রযোজ্য হয়, তাই আল্লাহর কিতাব অনুসারে আমার উপর তা প্রয়োগ করুন। আল্লাহর রাসুল বললেনঃ তুমি কি সালাত আদায়ের সময় আমাদের সঙ্গে ছিলে না? লোকটি বলল: হ্যা। আল্লাহর রাসুল বললেন: আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিয়েছেন।
আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি, "আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন সত্তরবারেরও অধিক বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার্থ করি এবং তওবা করে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনর্ত করি। "
হযরত আবদুর রহমান বিন জুবাইর হযরত আবুতালীব শাতবুল মামদুদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একজন খুবই বৃদ্ধ ব্যক্তি লাঠিতে ভর দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন যার চোখের পাতা তার চোখের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি রাসূলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, যদি কোন লোক সব ধরণের পাপ করে থাকে, এমন কোন পাপ নেই যা সে করেনি (ছোট বড় সব ধরনের পাপই করেছে)। (অপর বর্ণনায় এসেছে যে, সে সব পাপই করেছে, তার পাপ যদি দুনিয়া বাসীর উপর বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিত) এর কি তাওবা করার সুযোগ রয়েছে? তিনি বললেন, আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করছেন? সে বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, ভাল কাজ করবেন এবং মন্দ (পাপ) কাজ পরিত্যাগ করবেন তাহলে আল্লাহ তা'আলা আপনার জন্য সব পাপকে ভাল কাজে পরিণত করে দিবেন। সে বলল, আমার গাদ্দারী ও কুকীর্তি সমূহ? তিনি বললেন, হ্যাঁ।হ্যাঁ বর্ণনা কারী বলেন, সে বার বার আল্লাহু আকবার ( আল্লাহ মহান) ধ্বনি উচ্চারণ করছিল যতক্ষণ না সে চোখের আড়াল হয়ে যায়।