উচ্চ শিক্ষায় মুসলমান আবার পিছিয়ে
আবার নুতুন শিক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু, পূর্ব পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং অবনীতিরই নতুন নতুন দিক উন্মুক্ত হচ্ছে। রিপোর্টটির সারাংশ - উচ্চ শিক্ষায় মুসলমান আবার পিছিয়ে।
পূর্বে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অল ইন্ডিয়া সার্ভে অন হায়ার এডুকেশন (AISHE 2020-2021) দ্বারা প্রস্তুত প্রতিবেদনের ওপর এক টীকায় লেখা: উচ্চশিক্ষার জন্য মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের এনরোলমেন্ট বা তালিকাভুক্তিকরণ একেবারে ৮% হ্রাস পেয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হল এই শিক্ষার দুর্যোগে উত্তর প্রদেশের মুসলিমের অংশ ২০%, সারাদেশব্যাপী শুধুমাত্র ৪.৬% মুসলিম শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় যুক্ত হয়েছে।
বর্তমান প্রতিবেদনটি ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (UDISE+) এবং অল ইন্ডিয়া সার্ভে অফ হায়ার এডুকেশন (AISHE) থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে যা গত ২৮ নভেম্বর দ্য হিন্দু (The Hindu) ইংরেজি প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়। “ভারতে মুসলিম শিক্ষার অবস্থা” রিপোর্টটি তৈরি করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশনাল প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (NIEPA) প্রাক্তন অধ্যাপক অরুণ সি. মেহতা।
কিছু মূল্যায়ন
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৮-২৩ মধ্যবর্তি মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর হার ৮.৫% হ্রাস পেয়েছে। শুধু মাত্র এক বছরে এই বড়ো মাত্রায় শিক্ষার হার কমে যাওয়া এক প্রশ্নের বিষয়। ফাঁক কোথায় দায়িত্ববান সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাদের তা খুঁজে বের করতে হবে। তাছাড়া মুসলিম সমাজেরও ধর্মীয়, জাতিক ও ব্যাক্তিগত দায়িত্ব উপলদ্ধি করে কল্যাণের পথে অগ্রসর হওয়া দরকার।
প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য উচ্চ শিক্ষাও প্রয়োজন। এর মাধ্যমে, ঘর থেকে বাইরে সমগ্র ক্ষেত্র সমৃদ্ধ করা যায়। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯-২০-এর তুলনায় পরে বছর মুসলিম সমাজে উচ্চ শিখায় প্রায় ২ লক্ষ ভর্তি কম হয়েছে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তির সংখ্যা যেখানে ২১ লক্ষ ছিল, ২০২০-২১ তা কমে ১৯.২১ লাখে দাঁড়ায়।
আগের তুলনায় বর্তমান শিক্ষাবর্ষে অবস্থা বেশি শোচনীয় যেহেতু এই হ্রাসের প্রচন্ডতা ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো দেখা গেছে। উপরে দেওয়া হয়েছে চার্টটি দেখলে বোঝা যায় ২০২০-এর পর থেকে মাত্রা চিহ্ন উল্লম্বভাবে নিচের দিকে যাচ্ছে। চার্টে এটাও স্পষ্ট যে শিক্ষা ক্ষত্রে ছেলের তুলনায় মেয়েদের নথিকরণ সংখ্যা একটু বেশে রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যেমন কি দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, “২০১৬-১৭ সালে ১৭,৩৯,২১৮ জন মুসলিম ছাত্র উচ্চ শিক্ষায় নথিভুক্ত হয়েছিল, ২০২০-২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১৯,২১,৭১৩ হয়েছে। যাইহোক, ২০২০-২১ সালে, উচ্চ শিক্ষায় মুসলিম নথিভুক্তি ২০১৯-২০ সালে ২১,০০,৮৬০ সংখ্যা থেকে ১৯,২১,৭১৩-তে নেমে এসেছে। নিখুঁতভাবে ১,৭৯,১৪৭ শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে।”
রাজ্য ভিত্তিক
প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ভারতের উচ্চ শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে যেখানে বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিষয় যথাযথ বিবেচনার। রিপোর্টটিকে ভেঙে রাজ্য ভিত্তিক তথ্যও পাওয়া যায় যেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ড্রপআউট হার ২৯.৫২% নিয়ে পূর্বাঞ্চলে অসম রাজ্যে সব থেকে বেশি। তারপরে ২৩.২২%-এর সঙ্গে আসে পশ্চিমবঙ্গ। এই দুই রাজ্যেই মুসলিম জনসখ্যার হার ২৫%-এর উর্ধে।
আবার ড্রপআউট হার সব থেকে কম (৫.১%) এবার দেখা গেছে মুলসিম অধ্যষিত জম্মু ও কাশ্মীরে। নিম্ন দ্বিতীয় স্তরে দক্ষিণ রাজ্য কেরালায় যেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীর ড্রপআউট হার আগের তুলনায় একটু বেড়ে ১১.৯১% হয়েছে। তাছাড়া, এর পূর্বে রিপোর্টে কেরালাই ছিল ড্রপআউট হারে সর্ব নিম্ন রাজ্য।
অন্য একটি তুলনা
প্রতিবেদনে আরও প্রকাশিত হয় যে মাধ্যমিক বিভাগে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ড্রপআউট হার (১৮.৬৪%) অন্যানদের তুলনায় প্রায় ৬% বেশে। প্রতিবেদনটি অনুসারে বাকি শিক্ষার্থীদের ড্রপআউট হার ১২.৬%। এই মূল্যায়নেও দেখা যাচ্ছে যে মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে মুলসিম শিক্ষার্থীদের হার সর্ব নিম্নে।
এই সমস্ত প্রতিবেদন এবং অনুসংখ্যান মূল্যায়ন দেখে স্পষ্ট যে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার উন্নতি প্রকল্পে যথাযথ উদ্যেগ এবং তার যথাযথ রুপায়ণ আবশ্যিক। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংস্থাদের বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাছাড়া, দায়িত্ববান ধর্মগুরু এবং সামাজিক বিশেষজ্ঞদের একত্রিত হয়ে একটি লক্ষ্যযুক্ত প্রকল্পের অধীনে কাজ করতে হবে। অবশই, ব্যাক্তিগত জাগরণও চায়। নচেৎ, আগের মতো এই বারও রিপোর্ট ও প্রতিবেদন কিছুই কাজের থাকেনা - আর দরকার কাজের।