মার খাচ্ছে মুসলমান চতুর্দিকে!
রমজান মাসের আগমন কুশক্তির উৎস শয়তানকে শিকলব্ধ করে দেয়। কিন্তু শত্রু শক্তি এখনও নিস্তেজ হয়নি। চীন দেশে ইউঘুর মুসলমানদের ওপর নির্যাতন পদ্ধতি কেবলমাত্র প্রবর্তিত হয়েছে। প্রথম রমজানে ইসরাইলের হামলায় নিহত হয় বহু সংখ্যাক নিরীহ ফিলিস্তিনি প্রাণ। ইয়ামিনে একদিকে গৃহযুদ্ধ অন্যদিকে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার। আফগানিস্তানে তালিবানের প্রত্যাগমন এবং ইরানে মাহিশা আমিনের মৃত্যুর পর দুই দেশ আবার নতুন বিপাকে। অন্য একটি ছবি দেখা গেল চেক রিপাবলিক দেশে মসজিদ ভাঙচুর; দেওয়ালে লাল অক্ষরে লেখা প্রতারণামূলক হুমকির বাক্য। অনুরূপ দৃশ্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে - গোরক্ষার নামে ভারতে, রাজনীতির নামে পাকিস্তানে - মার খাচ্ছে মুসলমান চতুর্দিকে।
ইউঘুর মুসলমান ও নির্যাতন কথা
মুসলিম দেশসমূহে চীনের মধ্যাস্তা দেখে মনে হয় চীনা সরকার খুব মুসলিম বন্ধুপ্রিয়। কিন্তু আশ্চর্য যায় যে সেই দেশে এক কোটির অধিক মুসলমান নির্যাতিত, তবুও নিরব মুসলিম বিশ্ব। চীনের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত শিনচিয়াং অঞ্চলে সংখ্যালঘু ইউঘুর মুসলমানের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় ১১ মিলিয়ন যথা এক কোটি দশ লাখ। বলা হয় ইউঘুর জাতি মুসলমান তুর্কি বংশোদ্ভূত। চীন ছাড়াও বিভিন্ন দেশে এদের জনসংখ্যা ছড়িয়ে আছে।
রমযান মাস শুরু হতে না হতেই কিছু অনলাইনে ছবি দেখে মন বিচলিত হয়ে উঠে। বরকতপূর্ণ ইফতারের পরিবর্তে নিষিদ্ধ বা হারাম পানে বাধ্য ইউঘুর মুসলমান। চীনের কমিউনিস্ট সরকার ইসলামে বিশ্বাসীদের ওপর জোরপূর্বক ধর্ম বিরোধী তত্ত্ব আরোপ করছে। যথাযথ অনুশীলনের জন্য নির্মিত হয়েছে কুখ্যাত রি-এজুকেশন সেন্টার। লক্ষ লক্ষ মুসলমান চীনের রাজনৈতিক কুশাসন ও নির্যাতনের শিকার। কখনও বাধ্যতামূলক শ্রম তো কখনও স্বাধীনতার খর্ব ও স্বইচ্ছায় ধর্ম পালনে বাঁধা ইত্যাদি ব্যাক্তিগত এবং সামাজিক বিপত্তির সম্মুখীন অসহায় বিরাট এক মুসলিম জনসংখ্যা। বিশ্ব অন্ধ - দেখতে পায়না এই মানবধিকার লঙ্ঘন, এই জনসংহার!
অনুরূপ, মুসলমানের দুর্দশাপূর্ণ করুন অবস্থা প্রত্যক্ষ হয় বিশ্বের সব কোণে। লেখা সংক্ষিপ্ত করার উদ্দেশ্যে এই রচনায় শুধুমাত্র ইউঘুর মুসলমানদের সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা থাকলো। ভিন্ন ভিন্ন কারণে এই সমাজ অত্যাচার, লাঞ্ছনা, অপমানের মাঝে - প্যালেস্টাইনে, ইয়ামিনে, সিরিয়ায়, ইরাকে, ভারতে, মায়ানমারে, প্রভিতি দেশে।
কারণ ও সমাধান
মুসলমানের এই প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণ কি এবার মূল্যায়ন করা যাক। নবী মুহাম্মাদ দ্বারা ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, অনুসারী মুসলমানদের যুগ যুগ ধরে যথেষ্ট সমস্যা ও সংগ্রামে থাকতে হয়েছে। প্রত্যেক কালে ইসলাম বিরোধী উপকরণ উন্থীত হয়েছে এবং সর্বদা ঈমানী শক্তির মোকাবিলায় পরাজিতও হয়েছে। এরই মধ্যে ধর্মের সঙ্গে সঙ্গে পার্থিব ক্ষেত্র গুলিতেও মুসলমান উন্নতির শৃঙ্গ শিখরে অবস্থান করে এসেছে।
কিন্তু, বর্তমান অবস্থা একটু অন্যরূপ - প্রায় সকল কক্ষে মুসলিম সমাজ পদদলিত। ১৯২৪ সালে ওসমানীয় সম্রাজ্য পতন হওয়ার পর, এদের কোনো বৈশ্বিক প্রতিনিধি নেয়; বর্তমানে মুসলমানদের সমস্যার সমাধান সূত্র দিচ্ছে ওরাই যারা এই সমাজকে বিপাকে ফেলেছে যথা নামধারী আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠন। মুসলমান নিজেই নিজ ধর্ম-কর্মকে খেল উপকরণে পরিবর্তন করে পাশ্চাত্য পথের অনুগামী হয়ে গেছে, প্রত্যেক যুগের মত মুসলমান সমাজ এযুগে কিন্তু তার আসল শত্রুকে চিনতে পারেনি বা তাদের আক্রমণের প্রতিরোধে অক্ষম, উম্মতির এক সার্বিক ঐকতাকে হারিয়ে ফেলেছে, ইত্যাদি অনেক বাহ্যিক কারণ গুনা যাবে।
ঠিক একই রকমভাবে ভাগ্য বা কদর, পরীক্ষা বা ইমতিহান, সবর বা ধর্যের কথা। উপরন্তু, দুনিয়া মুমিনদের জন্য জেলখানা স্বরুপ। কিন্তু, মুসলমানের কর্তব্য ও অপরিহার্যমূলক দায়িত্ব বিশ্বব্যাপী ইনসাফ বা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। মহান আল্লাহ তাআ'লার ঘোষণা:
আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাদেরকে যারা তোমাদের মধ্যে ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে যে, অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফত প্রদান করবেন। (কুরআন, সূরা নূর, ২৩:৫৫)
আরেকটি অন্য ঘোষণা স্মরণ করা উচিত: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে। (কুরআন, সূরা রা'দ, ১৩:১১)