নবী সাঃ এর বৈবাহিক জীবন। পর্ব ২
অন্যান্য স্ত্রীগণ
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জয়নাব বিনতে খুজাইমাকে বিয়ে করেন যিনি বিয়ের দুই মাসের মধ্যে মারা যান। উহুদের যুদ্ধে তার প্রথম স্বামী আব্দুল্লাহ বিন জাহেশ শহীদ হন। জয়নাব বিনতে জাহশের এবং নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর বিবাহ কটাক্ষ ভাবে বিরোধ করা হয়েছে। প্রথমত নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর দত্তক পুত্র জায়েদ বিন হারিস তাকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু, এরপরে জায়নাব এবং জায়েদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিতে শুরু করে যা শেষ পর্যন্ত তালাকের দিকে নিয়ে যায়।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম খোদার আদেশে বিয়ে করতে রাজি হন। এই বিয়ে দ্বারা এটা বুঝতে পারা যায়, যে দত্তক পুত্রের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারা যাবে। জাহিলিয়াত যুগে একজন দত্তক পুত্রকে জৈবিক পুত্রের সমান মনে করা হতো। কিন্তু ইসলাম অবশেষে এই বিশ্বাসের অবসান ঘটায়। এটা ভুল ধারণা যে নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তার সৌন্দর্যের জন্য তাকে বিয়ে করেছিলেন। বরং তিনার খালাতো বোন ছিল যদি চাইতেন অনেক আগেই সুযোগটা উঠাতে পারতেন।
পরবর্তীতে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো কয়েকজনকে জীবন সাথী বানিয়ে ছিলেন। যেমন উম্মে হাবিবা রমলা বিনতে আবি সুফিয়ান, যার দ্বারা তিনার পূর্ববর্তী দুশমনকে ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেন। অন্যদের মধ্যে রয়েছে উম্মে সালামা, মুসলিম আবু সালামার স্ত্রী, একজন ইহুদি নেতার মেয়ে সাফিয়া বিনতে হুয়ায়ি যার স্বামী খাইবার যুদ্ধে মারা যান, এবং জুওয়ায়রিয়া বিনতে আল-হারিস যিনি বনু মুসতালাক যুদ্ধে জিম্মি হন। এবং খাউলা বিনতে খুজাইমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সঙ্গী হন।
গুজব এবং প্রতিক্রিয়া
অনেক খ্রিস্টান যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বহুবিহার উপরে ভুল মন্তব্য এবং অনেক আরোপ লাগিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ভুল ধারণা একদিন ভাঙবেই। নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম যৌবনের শীর্ষে তিনি তার প্রথম স্ত্রী খাদিজাকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল ১৫ বছর। ডক্টর ফিলিপ হিট্টি, স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, যতদিন পর্যন্ত এই মহিলা তার ব্যক্তিত্ব এবং মহৎ চরিত্রের সাথে বেঁচে ছিলেন, ততদিন নবী সাঃ এর জন্য বিকল্প ছিল না।
একবিংশ শতাব্দীর মহান শিক্ষাবিদ, সাঈদ রমজান আল- বুতি লিখছেন, খাদিজা ও নবী সাল্লাল্লাহু বিবাহ থেকে বুঝতে পারা যায় যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনাকে বিয়ে করেননি তার সৌন্দর্যের জন্য। যদি তিনি তাই হতেন তবে তিনি বয়স অনুসারে তার চেয়ে কম বয়সী একজন মহিলাকে বেছে নিতেন বা এমনকি একজনকে বেছে নিত যে তার বয়সের প্রায় কাছাকাছি। তিনি তার ব্যক্তিত্ব ও সম্মান এবং তার সমাজে মানুষদের প্রতি ভালোবাসা দেখেই বেছে নিয়েছিলেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অন্য কোন নারীকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেননি। ২০ থেকে ৫০ বছর এমন সময় যেখানে একটা মানুষের চাহিদা বেশি হয়।
দ্বিতীয় স্ত্রী সাওদাহ বিনতে জামাহ , ৫৫ বছর বয়সী একজন মহিলা যিনি নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর জীবনে আসে যখন তিনার বয়স ৫০। এটি এমন একটি সময় ছিল যখন তিনি তার প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি তার মিশন পূরণ করার সঙ্গে সান্তনা খুজে পেতে এবং তার দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য তার এমন একজনের প্রয়োজন ছিল। উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট, একজন স্কটিশ প্রাচ্যবিদ এবং ইতিহাসবিদ, পর্যবেক্ষণ করেছেন যে মুহাম্মদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ে কখনোই পরিতৃপ্তির জন্য ছিল না। খাদিজা রাঃ যখন জীবিত ছিলেন তখন তারা আর কোন নারী ছিল না। সর্বোপরি, তার বিয়ে রাজনৈতিক কারণে হয়েছিল। সাওদার বিয়ে করেছিলেন যখন তিনি তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন। তিনি চাইতেন যে সে যেন কোন অমুসলিমকে বিয়ে না করে নেই।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে বিয়ে করার পিছনে একটি হেকমত লুকিয়ে রয়েছে। এটি ছিল আবু বকরের সাথে তার অসাধারণ বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করার জন্য। W.M. ওয়াট বলেন, “জয়নাব বিনতে জাহশের, নবী সালাম বিয়ে করেছিলেন যখন তিনার বয়স ছিল 55। এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে তার মুগ্ধতা এক নজরে আকৃষ্ট করেছিল, তাছাড়া দত্তক পুত্র জায়েদ বিন হারিসার সাথে বিয়ে করেছিলেন।
নবী সাঃ প্রতিটি বিয়েই কোন না কোনভাবে তাৎপর্য ছিল। জায়েদের এবং জয়নাবের মধ্যে খারাপ আচরণ দেখতে পান, এবং বুঝে যান যে তাদের সম্পর্ক বেশিদিন টিকবে না, তালাকে পরিবর্তন হবে। তিনি চাইতেন যে কোন মূর্খতার কারণে যেন কারো জীবন ভেঙ্গে না যায়। টমাস কার্লাইল বলেন, যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম কখনোই ইন্দ্রিয় সুখের মানুষ ছিলেন না। যদি নবী সাঃ কে এইভাবে চিত্রাঞ্জন করা হয়, তাহলে এটা হবে অন্যায় এবং মস্ত বড় ভুল। তিনি এক সাধারণ জীবন যাপন করেছিলেন, যার প্রার্থীব জীবনে কোন আগ্রহ ছিল না। তিনি মোটা পোশাক পড়তেন এবং সাধারণ খাবার খেতেন। তিনি অসাধারণ মহত্ত্বের একজন অসামান্য ব্যাক্তি ছিলেন।
খাদিজা রাঃ এর পর নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর প্রিয়তম স্ত্রী ছিলেন আয়েশা রাঃ, যিনি ছিলেন জ্ঞানী। নবীজির জীবনের পুরো ছবি ধারণ করার জন্য এমন একজন উজ্জ্বল তরনীয় প্রয়োজন ছিল। তার জীবন ধর্মীয়, ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক যাই হোক না কেন তার অনুসারীদের শিখতে হবে এবং অনুকরণ করতে হবে।
নবী সাল্লাহু সাল্লাম এর সাহাবীগণ তার কাছে জরুরি বিষয়ে শিখতে ও জানতে যেতেন। হাসান ইবনে সাবিত বলেন, “আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার চেয়ে কোরআনে বেশি জ্ঞানী কাউকে দেখিনি”
উপসংহার
উল্লেখ্য তাৎপর্য থেকে বুঝতে পারা যায়, যে নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর বহুবিবাহকে বিতর্ক করেছেন ইউরোপীয় পণ্ডিতরা। কিন্তু এদের মধ্যে অনেক সাহসী দেখিয়েছে যেমন, R.V.C. বোদলি, যিনি ‘দ্য মেসেঞ্জার, দ্য লাইফ অফ মুহাম্মদ’ রচনা করেছিলেন, তিনি বলেন, “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর বিবাহিত জীবনকে পশ্চিমা ও খ্রিস্টান নীতি বা ঐতিহ্যের দৃষ্টি কোণে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই”।
আরবরা পশ্চিমা বা খ্রিস্টানও ছিল না। তারা এমন এক যুগ এবং পরিবেশে বড় হয়েছে যেখানে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতি এবং জন্মগত বৈশিষ্ট্য ছিল। তাই তাদেরকে পশ্চিমার বৈশিষ্ট্য দিয়ে, গৌরব করার কোন দরকার নেই। ইউরোপীয়দের উচিত যেন তারা অন্য ধর্ম বা মতাদর্শের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ছিলেন ইসলাম প্রচারক এবং মানব জাতিকে তৌহিদের আলোর দিকে পরিচালিত করার নির্বাচিত আল্লাহর রাসূল।
তিনার এমন একটি জীবন ছিল যারা তিনার পর এসেছেন, অনুসরণ করেছেন। হোগার্থ এবং হিট্টি বলেন, তিনার দৈনন্দিন আচরণ এমন একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিল যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে আজও অবহিত করে। ইতিহাসে, এরকম সম্মান কেউ পাননি। তিনি ছিলেন আল্লাহর সমস্ত রাসূলদের মতন মাসুম বা নির্দোষ। শত্রুরা যতই আরোপ লাগাক, তিনি বিশ্বব্যাপীর কাছে হিরো হিসেবে থাকবেন।