মানবতার মুক্তির আলো হিসেবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: আলোর পথে যাত্রা ও চিরস্মরণীয় দৃষ্টান্ত সমূহ
উক্ত বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করার পূর্বে, সেই প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কিছু প্রশংসা তুলে ধরতে চাই।
সর্বোপরি, আল্লাহ কে? কে সেই সৃষ্টিকর্তা?
মনুষ্য, জীবজন্তু, গাছ পালা, পাহাড় পর্বত, বন উপবন, সাগর মহাসাগর, চন্দ্র সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র প্রভৃতি! যিনি কুন শব্দের দ্বারায় সৃষ্টি করেছেন তিনি আল্লাহ, তিনিই আল্লাহ! তিনি ত্যেজোময় জ্যোতি সর্বত্র বিরাজমান, মহাসত্য, চিরজীবী, চিরস্থির, নিরপেক্ষ। তিনি সদা-জাগ্রত! তিনি অতীতে যেরকম ছিলেন বর্তমানে সেরকম আছেন, ভবিষ্যতেও একই রকম থাকিবেন। যিনার কুদরতে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত বৎসরে একবার করে অতিক্রম করছে। যিনার কুদরতে, আকাশের পানি বর্ষণের ফলে, পৃথিবীর মরা মাটি, প্রাণিজগত, উদ্ভিদ জগত, জীবিত হয়েছে। যিনার কুদরতে দিনের পর রাত্রি ও রাত্রির পর দিন আসছে।
তারপরে পরেই আমার নবী, আপনার নবী, সারা বিশ্বের নবী, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনার উপর হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, অসীম দরুদ ও শান্তির ধারা, বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিত হোক!
আমিন!
ভূমিকা
পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিষয়টি ঝকঝকে জলের ন্যায় পরিষ্কার যে প্রকট মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও মুহূর্তসমূহ ইসলামের ইতিহাসের ও বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি একটি অমূল্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এক আদিবাসী কুরাইশ গোত্র হইতে এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মুসলিমদের জন্য আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয় যেই আদর্শের আকাঙ্ক্ষায় যে কোন মানুষই আকাঙ্ক্ষিত হলে তার ইহ জীবন ও পরজীবনের উজ্জ্বলতার প্রকাশ্যের বিবরণ দেওয়া অসম্ভব।
শৈশব ও কৈশোর
আমিনার রাজকুমার হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শৈশব ও কৈশোর ছিল অতি চ্যালেঞ্জপূর্ণ। তিনি কুরাইশ গোত্রের অভিজাত বনী হাশিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের কিছুদিন আগে তার বাবা আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন, এবং তার মা আমিনাও তার খুব অল্প বয়সেই ইন্তেকাল করেন। এতিম হয়ে ছোট বয়স থেকেই তিনি তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে বড় হন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই এতিম জীবনের সাদৃশ্য বজায় রেখে একটি নাত বা গজল প্রকাশ্য আছে যে
"আমি এতিম হয়েও কাঁদি না কেন তোমরা বলতে পারো এতিম ছিলেন আমার নবী এতিম আমিও"
যখন তার দাদাও ইন্তেকাল করেন, তখন চাচা আবু তালিব তাকে লালন-পালন করেন। যিনি তার সন্তান আলি রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকেও রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতেন। ছোটবেলা থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সততা, সতর্কতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, যা পরে তার নবুওয়তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রারম্ভিক জীবন এবং মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক
তার শৈশব থেকেই মুহাম্মদ (সা.) তার সততা এবং সত্যবাদিতার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন এবং "আল-আমিন" (বিশ্বাসযোগ্য) ও "আস-সাদিক" (সত্যবাদী) উপাধিতে পরিচিত হন। ব্যবসায়ী হিসেবে তার অসাধারণ সাফল্য ছিল, যা মানুষকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে। শৈশব কালে, বিভিন্ন সফর তিনি তার চাচা আবু তালিবের সঙ্গে পূরণ করেন। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরিয়া সফর চাচা আবু তালেবের সঙ্গে ও বুহাইরা নামক এক পাদ্রির সঙ্গে আলাপ। যে বুহায়রা নামক পাদ্রী রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে হতবাক হয়ে চাচা আবু তালেব কে তার হেফাজতের জন্য পরামর্শ দেন। কারণ তিনি জানতেন, যে তিনি নবী! এবং তার বিভিন্ন চিহ্ন গুলি বাইবেল পুস্তকের পরবর্তী শেষ নবীর ন্যায় মিলিত। তার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সততার জন্য খাদিজা নামে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মহিলা তার প্রতি আগ্রহী হন ও পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স ২৫ ও খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার বয়স ৪০।
নবুয়ত প্রাপ্তি
৪০ বছর বয়সে, হেরা গুহায় ধ্যান করার সময় মুহাম্মদ (সা.) প্রথম ওহি লাভ করেন। ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাকে কুরআনের প্রথম আয়াত পাঠ করেন,
اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّكَ الَّذِیۡ خَلَقَ ۚ﴿۱﴾
(ইকরা বিছমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক)
তুমি পাঠ কর তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ ۚ﴿۲﴾
(খালাকাল ইনছা-না মিন ‘আলাক)
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে।
اِقۡرَاۡ وَ رَبُّكَ الۡاَكۡرَمُ ۙ﴿۳﴾
(ইকরা’ ওয়া রাব্বুকাল আকরাম)
পাঠ করঃ আর তোমার রাব্ব মহা মহিমান্বিত,
الَّذِیۡ عَلَّمَ بِالۡقَلَمِ ۙ﴿۴﴾
(অল্লাযী ‘আল্লামা বিলকালামবিলকালাম)
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।
عَلَّمَ الۡاِنۡسَانَ مَا لَمۡ یَعۡلَمۡ ؕ﴿۵﴾
(আল্লামাল ইনছা-না-মা-লাম ইয়া‘লামলাম)
তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।
ইহাই ছিল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের শুরু।
প্রথমে তিনি শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুদের ইসলামের দাওয়াত দেন। ধীরে ধীরে, ইসলাম তার অনুসারী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, কিন্তু একই সঙ্গে কুরাইশ নেতারা তার প্রচারকে বিপদ হিসেবে দেখতে শুরু করে এবং এর বিরোধিতা করে। নবুয়ত প্রাপ্তির এই মুহূর্ত তার জীবনের অন্যতম প্রধান মোড় ছিল, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎকে চিরতরে পরিবর্তন ও অতুলনীয়ভাবে রূপান্তর করেছে।
মক্কার জীবন ও প্রতিরোধ
মক্কার কুরাইশ নেতারা মুহাম্মদ (সা.) ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে তীব্র ও কঠোর বিরোধিতা করতে শুরু করে। যার ফলে মুসলিম সমাজ তাদের অত্যাচারের কারণে নিপীড়নীয় ও জ্বালাতনীয় কঠিন ও দৃড় সময় অতিক্রম করে। শুধু তাই নয় বরং মুসলিমদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করা হয়, এবং তারা অনেক কষ্ট সহ্য করতে বাধ্য হন। এরপরও, মুহাম্মদ (সা.) ধৈর্য ধারণ করে তার দায়িত্ব পালন করে যান এবং আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করতে থাকেন। তিনি কোনো প্রতিহিংসার বদলে কেবল ধৈর্য ও সহানুভূতির আদর্শই বজায় রাখেন যেই ধৈর্য ও সহানুভূতির প্রতি মুসলিম সমাজ এখনো আকৃষ্ট ও আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে।
হিজরত (মদিনায় প্রস্থান)
যখন জ্বালাতন নিপীড়ন ও অত্যাচার দিনের পর দিন রাতের পর রাত কঠোরভাবে বাড়তে থাকে তখন রসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬২২ খ্রিস্টাব্দে, হিজরতের প্রতি আদেশ দেন।্যযেটি ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে আসে। এই হিজরত শুধুমাত্র ভৌগোলিক স্থানান্তর ছিল না, বরং এটি ইসলামের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। বিশেষ মুহূর্ত ও মোজেজা অনুযায়ী বলা যেতে পারে হিজরতের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সকলকে মদিনার দিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মক্কায় বাকি থাকেন। চারিদিক থেকে কাফেরেরা ঘিরে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার প্রতি, একতাবদ্ধ হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুঠো ধুলো নিয়ে সুরাতুল ইয়াসিনের কিছু আয়াত পাঠ করতে থাকেন ও তাদের দিকে উড়িয়ে দেওয়ার ফলে সকলে অন্ধ হয়ে যায় ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বক্কর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন।
সকল মদিনা বাসি যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের কথা জানতে পারলো তখন সকল মদিনা বাসী শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপেক্ষায় অপেক্ষিত হয়ে পড়ল এবং যখন এ খবর পৌঁছে যায় যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসছেন সেই সময় সকল মদিনা বাসি একত্রিত হয়ে আপন মনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা কে প্রকাশ করে পড়তে থাকেন
طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا مِنْ ثَنِيَّاتِ الوَدَاع
وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا مَا دَعا الله داع
أَيُّهَا الْمَبْعُوثُ فِينَا جِئْتَ بِالأَمْرِ المُطَاع
جِئْتَ شَرَّفْتَ المَدِينَة مَرْحَبًا يَا خَيْرَ داع
মদিনায় পৌঁছানোর পর মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই হিজরতের ঘটনা ইসলামের ক্যালেন্ডারের (হিজরি) সূচনা হিসেবে গণ্য হয় এবং দিনের পর দিন ধারাবাহিকভাবে ইসলাম ও এর বিকাশ আরও সুসংহত ও শক্তিশালী হতে থাকে।
মদিনায় সমাজ ও ইসলামি রাষ্ট্রের বিকাশ
মদিনায় পৌঁছে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কার বাড়িতে আস্থা নিবে এ নিয়ে ব্যর্থ কথোপকথন শুরু হয়। সকলে বলে রসূল আমার বাড়িতে থাকবে! তারপর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক যুক্তি করে বললেন যে আমার উট যার বাড়িতে থাকবে তার বাড়িতে আমি থাকবো তারপর সেই উট আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর বাড়িতে প্রস্থান নেই। রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অন্যের চেয়ে আলাদা ও উত্তম। তিনি একটি বহুজাতিক ও বহু-ধর্মীয় সমাজে বসবাস শুরু করেন। তিনি মুসলিম, ইহুদি, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য মদিনার সনদ নামে একটি চুক্তি করেন। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধানগুলোর একটি, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেতৃত্বে মুসলিমরা মদিনায় একটি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলে, যা ইসলামের প্রসার ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বদর, উহুদ এবং খন্দকের যুদ্ধ
মদিনায় স্থিত হওয়ার পরেও মুসলিমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। মক্কার কুরাইশরা ইসলামের প্রসার রোধ করার জন্য মদিনার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। বদরের যুদ্ধে মুসলিমরা অলৌকিকভাবে কুরাইশদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়, যা ইসলামের জন্য একটি বিশাল মনস্তাত্ত্বিক বিজয় ছিল। যেথায় মুসলিমেরা মাত্র ৩১৩ জন এবং কাফেরেরা হাজার জনেরও বেশি ছিল। উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা কষ্টের সম্মুখীন হয়, তবে এতে তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। খন্দকের যুদ্ধে, কৌশলগতভাবে মুসলিমরা শত্রুদের পরাজিত করে, যা মদিনার নিরাপত্তা ও ইসলামের বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে গড়ে উঠেছিল।
মক্কা বিজয়
৮ বছর পর, ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার অনুসারীরা মক্কা বিজয় করেন। এটি একটি রক্তপাতহীন বিজয় ছিল, এবং তিনি মক্কায় প্রবেশ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। যারা তাকে এবং তার অনুসারীদের অত্যাচার করেছিল, তাদেরও তিনি ক্ষমা করে দেন। এই ছিল আমাদের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ, শুকুর, সবর ও আখলাক। এরপর তিনি কাবা শরীফকে মূর্তিমুক্ত করে তা ইসলামের মূল কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে এটিও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ এটি ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের পথ খুলে দেয়। ইসলামের প্রচার ও বিকাশ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকার একটি সূচনা তৈরি করে।
বিদায় হজ এবং চূড়ান্ত উপদেশ
৬৩২ খ্রিস্টাব্দে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার শেষ হজ সম্পন্ন করেন, এই শেষ হজ ই বিদায় হজ নামে পরিচিত।
বিদায় হজের সময়, তিনি মানবতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ প্রদান করেন, যা তার জীবনের সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তব্য হিসেবে গণ্য হয়। বিদায় খুতবায় তিনি মানবাধিকার, নারী অধিকার, এবং ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন,
"আজকের দিন তোমাদের জন্য! তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করা হয়েছে"
যেই বিবরণ ইসলামের সম্পূর্ণতার ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইন্তেকাল এবং উত্তরাধিকার
বিদায় হজের কিছু মাস পর, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পরও, তার জীবন ও শিক্ষা আজ পর্যন্ত মানবতার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে রয়েছে। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তার যে অবদান, তা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। তার জীবন ছিল আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত, আনুগত্য এবং মানবতার প্রতি অসীম সহানুভূতির উদাহরণ।
উপসংহার
এইভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও সমগ্র ক্রিয়াকলাপ আজ এখনো মানুষের জন্য চিরন্তন দৃষ্টান্ত দৃঢ় হয়ে রয়ে আছে । তার প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহর নির্দেশিত পথে ছিল এবং তার নেতৃত্ব মানুষকে ধর্মীয়, সামাজিক এবং নৈতিকভাবে উন্নত করেছে। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলা যেন আমাদের সকলকে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাস্তায় চলার তৌফিক দান করেন। আমিন!