রমযান উপহার
মাসের সর্দার রমযান মাসের আগমন হয়েছে। সুতরাং সর্বপরি সেই মহান সত্তা আল্লাহ পাকের কৃ্তজ্ঞতা জ্ঞাপন করি যিনি আমাদের এই পবিত্রময় ও বরকতপূর্ণ মাসে পৌঁছিয়েছেন। উক্ত মাস পাওয়ার উদ্দেশ্যে গত তিন মাস যথা রজব মাস থেকে আমরা যে আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ দুয়া করে আসছি আল্লাহ পাক তা বাস্তবায়িত করেছেন; আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের এই মাসে সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াতুল কুরআন ও সমস্ত সৎ কাজের তৌফিক প্রদান করেন; আমীন।
ইসলামি পুঞ্জিকার এই অভিনব মাসে এই লেখনী ‘রমযান উপহার’ ফুলের মত আপনাদের জীবনে প্রস্ফুটিত হক। এই ছোট উপহারটিতে রমযান মাসের বিভিন্ন ফযিলত, বরকত ও গুরুত্ত্ব প্রতিফলিত হয়েছে। উক্ত মাসের এক বিশেষ রাত ভাগ্য নির্ণায়নের রাত যথা লাইলাতুল-কদর চরম বিস্ময়পূর্ণ মহামানিক্যে গুপ্ত। সমস্ত কিছু অতিসংক্ষেপে প্রমাণ-প্রমাণাদির সঙ্গে এই উপহারটিতে অলঙ্কারিত হয়েছে।
ক্বুরআন ও হাদিসের আলোকে...
রমযান মাস সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা সুরাহ আল-বাক্বারা’র ১৮৫ নং. আয়াতে ইরশাদ করেনঃ
“রমযানের মাস, যাতে ক্বুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, মানুষের জন্য হিদায়ত ও পথ নির্দেশ এবং মীমাংসার সুস্পষ্ট বাণীসমূহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই সেটার রোযা পালন করে...”
(সুরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮৫)
অন্যথায় বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রো্যা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয হয়েছিল, যাতে তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হয়।”
(সুরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮৩)
এছারও বিভিন্ন আয়াত রমযান ও রোযা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, তা এখানে অউল্লেখ্যিত থাকল। অনুরুপ হাদিসের আলোকেও রমযানের মর্যদা জানা হক।
“যখন রমযান মাস আসে তখন আকশ বা জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে জিঞ্জিরে আবদ্ধ করা হয়।”
(বুখারী ও মুসলিম)
“যে ব্যক্তি ঈমান সহিত ও পূণ্যের আকাঙ্ক্ষায় রমযানের রোযা রাখল, তার পূর্বে ঘটিত সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
(মুসলিম)
লাইলাতুল-ক্বদর
লাইলাতুল-ক্বদর অর্থাৎ ভাগ্য নির্ণায়নের রাত। উলামাদের মধ্যে উক্ত রাত্রি নির্দিষ্টকরণে মতভেদ আছে। সুতরাং প্রতেক রাতে বিশেষভাবে রমযনের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলিতে এবং আরও বিশেষ করে রমযানের ২৭ তারিখে লাইলাতুল-ক্বদর সন্ধান করা উচিত। আল্লাহ পাক আমদের তৌফিক প্রদান করেন, আমিন।
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
“নিশ্চয় আমি সেটা (ক্বুরআন)-কে ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি।এবং আপনি কি জানেন ক্বদর-রাত্রি কি? ক্বদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম...। ”
(সুরাহ আল-ক্বদরঃ ১-৩)
আল্লাহর রসুল ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ
“যে ব্যক্তি ঈমান সহিত ও নেকির আকাঙ্ক্ষায় লাইলাতুল ক্বদরে জাগল, তার পূর্বে ঘটিত সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
(মুসলিম)
উক্ত রাতের খুবই বরকতময়। আল্লাহ পাক শুধু মাত্র উম্মতে মুহাম্মাদিকেই এই রাত্রি উপহার স্বরুপ প্রদান করেছেন। লাইলাতুল-ক্বদরকে ‘শবে-ক্বদর’ও বলা হয়। শবে-ক্বদর সম্পর্কে অনেক আয়াত অবতীর্ণ ও হাদিসবাণী বর্ণিত হয়েছে। মহিমাণ্বিত ক্বদরের রাতে বিভিন্ন ফিরিশ্তা ও স্বয়ং জিব্রাঈল (আঃ) প্রতিপালক আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় ভূপৃষ্ঠে অবতীর্ণ হন। এই মঙ্গলময় রাতকে সর্বজ্ঞানী আল্লাহ পাক গুপ্ত রেখেছেন। সেই গোপনীয়তার পিছনে এক বিরাট রহস্য লুকিয়ে আছে। জোহর সন্ধান সহজ-সাদ্ধ্য ব্যাপার নয়, জোহরিকে সমূদ্র পারি দিতে হয়।সুতরাং এই মহামূল্যবান রাতের অনুসন্ধানে প্রয়োজন আন্তরিক সাধনা, মানবিক চেতনা ও দৈহিক কার্যকলাপের সমস্ত সম্ভাবনা।
কিছু জানার বিষয়...
রমযান মাসের সমস্ত দিনে রোযা আদায় করা প্রত্যেক শর্তম্পূর্ণ মুসলিমের উপর ফরয। নিয়ত সহিত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নামই হল রোযা।
রোযার নিয়তঃ (রাতের ক্ষেত্রে) নাওয়াইতু আন আসুমা গ্বদান লিল্লাহি তা’আলা মিন শাহরি রামযানা হাযা।
রোযা ভঙ্গের কারণসমূহঃ * রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃ্ত কোন কিছু পানাহার বা সহবাস করলে। * মুখ ভরে ইচ্ছাকৃ্ত বমি হলে। * বমি গিলে নিলে, যদিও তা পরিমানে অল্প হয়। * লবণ খেলে, যদিও তা অল্প হয়। কুল্লি বা নাকে পানি নেওয়ার সময় পানি ভিতরে চলে গেলে। * ইচ্ছাকৃ্ত গলার ভিতর ধূঁয়া প্রবেশ করলে। * অখাদ্য বস্তু যেমন মাটি, কাঠ খেয়ে নিলে। * সময় আছে ভেবে সকালে সেহরি করা। * সময়ের পূর্বেই ইফতার করে ফেললে, ইত্যাদি।
যে সব কাজে রোযা ভঙ্গ হয় নাঃ * রোযা অবস্থায় ভুলবশতঃ কোন কিছু পানাহার করলে। * তৈল মালিশ করলে। * মুখের থু-থু গিলে নিলে। * গীবত, অশ্লীল ভাষা বা মিথ্যা কথা বললে। * আঁতর, আগর বাতি প্রভৃতির সুগন্ধ গ্রহন করলে। * চোখে সুরমা ব্যাবহার করলে। * মশা-মাছি, ধূলো-বালি অনিচ্ছাকৃ্ত গলার ভিতর প্রবেশ করলে। * অল্প পরিমানে বমি হলে, ইত্যাদি।
ইফতারের দু’আঃ আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়াবিকা আমানতু, ওয়া’আলায়কা তাওয়াক্কালতু, ওয়া’আলা রিযক্বিকা আফতারতু।