সুখ এবং জীবনের উপভোগ

   প্রতেক ব্যক্তির নিজ লক্ষ্যের চেষ্টার এবং আশা ও পরিকল্পনার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো একটি সুখী জীবন কাটানো। এইটা কোন ব্যাপার না কার কি জাতীয়তা যৌনতা বয়স ভাবনা ও ধর্ম প্রত্যেক ব্যক্তি হয়তো সুখী হতে চায় বা সুখী থাকতে চাই।

সুখী জীবনের অর্থ কি? হাজার হাজার কবি ও পুরোহিত, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী, শিক্ষক ও প্রচারক এবং প্রত্যেক যুগের নেতারা একটি সুখী ও সন্তুষ্ট জীবনের সহজ ও সরল সূত্র তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এই দৃষ্টিকোণটি মহত্ত্বপূর্ণ যে প্রত্যেক যুগের দার্শনিকগণ এই কথাটির উপর সম্মত যে, আমাদের জীবনের চিন্তা করার রাস্তা থেকে সত্য সুখ আমাদের নিজেদের থেকে একটি গুণ থেকে উদ্ভূত হয়। যদি তৃপ্তের নীতি আমাদের নিজ মধ্যে থেকে না হয়, তাহলে না কোন উপাদান ও বস্তুগত সাফল্য না কোন আনন্দ ও সম্পত্তি আমাদের সুখ দিতে পারবে। তোমার সুখের জন্য প্রত্যেক চেষ্টা বৃথা হয়ে যাবে, যদি তুমি সেটা নিজ মধ্যে থেকে সন্ধান না করতে পারো, নিজ হৃদয় থেকে নিজ আত্মা থেকে।

  সত্য সুখ হলো আমাদের কাছে যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট হওয়া। সত্য সুখ আছে ঈশ্বরের ও মানুষের প্রতি আমাদের কর্তব্য বুঝাতে, ভবিষ্যতের উপর উদ্বিগ্ন নির্ভরতা ছেড়ে বর্তমানকে উপভোগ করাতে। যদি ইতিহাস দেখা যায়, পাওয়া যাবে এই কথা অনেকেই বলে গেছেন যেমন সিজার বলেছেন- "to be content with what we possess is the greatest and most secure of riches" যার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে "আমাদের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকায় সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে নিরাপদ সম্পদ" এবং এপিকিউরাস অন্য শব্দে বলে গেছেন- "if thou wilt make a man happy, add not unto his riches but take away from his desires." অর্থাৎ "তুমি যদি একজন মানুষকে সুখী করতে চাও তবে তার ধন সম্পদ বাড়াও না তার আকাঙ্ক্ষা থেকে তাকে দূর কর।"

  আজকাল পৃথিবীতে মানুষের অশান্তি বেড়ে চলেছে। কারণ তারা তাদের ধন-সম্পদ ও সাফল্য নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। আরো চাই। তারা এইটা বুঝার চেষ্টা করে না যে, একজন সবকিছুতে প্রথম হতে পারে না, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ ও সাফল্য নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া শিখে যাবে, সেইদিন সে সত্য সুখ কি জিনিস বুঝতে পারবে।

  সন্তুষ্ট জীবন নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণ প্রশংসনীয়। ইসলাম ধর্ম প্রত্যেক ব্যক্তি ও অনুসারীদের উৎসাহ দেয় যে, তারা আল্লাহর দান করা সম্পদ ও সাফল্যতে সন্তুষ্ট হয়ে যায় । শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সেই ব্যক্তি সাফল্যতা পেয়ে গেছে যে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং যথেষ্ট জীবিকা পেয়েছে এবং তাকে আল্লাহ যা কিছু দান করেছে তাতে সন্তুষ্ট করিয়েছে। আরবি ভাষায় القناعة শব্দের অর্থ হলো সামান্য জিনিসের সন্তুষ্ট হওয়া। আল্লাহ যা ভাগ করেছেন তাদের সন্তুষ্ট হওয়া। যদিও সেটা সামান্য হয়। অন্যের হাতে কি আছে তার দিকে না তাকানো। মোঃ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য একটি হাদিসে ইরশাদ যে, ধন-সম্পদ -এর প্রাচুর্যতা ধনীর চিহ্ন নয়, আসল ধনীব্যক্তি সে যে, নিজ জান থেকে ধনী।

একটি আরবি কবিতায় বলা হয়েছে  

وَاقْنَعْ بِمَلْبُوسٍ وَ اَدْنَى قُوْتِ

وَافْرِغْ لِجَمْعِ الدُّرِّ وَ اليَاقُوتِ.

   তুমি কাপড় ও সামান্য জীবিকাতে সন্তুষ্ট হয়ে যাও এবং মুক্তা ও রুবি সংগ্রহ করার জন্য খালি হয়ে যাও। ইসলাম এমন একটি প্রশংসনীয় ধর্ম যে, ধর্ম তার অনুসারী ও পৃথিবীর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সত্য সুখী জীবন কাটানোর জন্য উৎসাহ করে এবং কিভাবে সুখ পাবে সেটাও বলে দেয়। দার্শনিকরা ও পুরোহিতরা যেইটাকে ইংরেজি ভাষায় self contentment বলে গেছেন সেই টাকে রসূল القناعة শব্দে ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তি সর্বধনী যে, তার নিজ ধন সম্পদ ও সাফল্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেল।

  লালসতা প্রতি ব্যক্তির জন্য একটি ক্ষতিকর বস্তু ও বিশেষ্য মানুষ যদি লালসী হয়, সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে কখনোই সক্ষম হবে না। লালসতা মানুষকে প্রতিপালকের স্মরণ থেকে দূরে নিয়ে যায় এবং পার্থিব বস্তুর ভালোবাসায় মুগ্ধ করে দেয়, যে কারণেই তার ধন দৌলতে বরকত অবতীর্ণ হয় না। আল্লাহ বলেছেন:

 لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ 

 তোমরা  কৃতজ্ঞ  হও,   তবে   আমি  তোমাদেরকে   আরো  অধিক  দেবো

وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيْدٌ. 

এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে আমার শাস্তি কঠোর।

  নিজের ধন-সম্পত্তিতে এবং সাফল্যতে বরকত অবতীর্ণ হওয়ার একটিই রাস্তা হচ্ছে যে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে যা দান করেছে তাতে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। লালসা থেকে দূর থাকা।

  এই বর্তমান যুগে মানুষ নিজের কাজে ও পদে সন্তুষ্ট না হয়ে উঁচু পদের জন্য চিন্তাভাবনা চালিয়ে যাচ্ছে, যেই ভাবনা কোন কোন ব্যক্তিকে বিষন্নতার শিকার বানিয়ে দিচ্ছে। এই বিষন্নতা হাজার হাজার মানুষের আত্মহত্যার কারণ প্রমাণ হচ্ছে। পরিবারে অশান্তি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও অশান্তি, ভাই অপর ভাইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষ করছে, এইসবের কারণ হলো সেই লালসতা ও অসন্তুষ্টতা।

  যদি এক কথায় বলা যায় তবে আল্লাহ তা'আলা মানুষের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছে তা সে নিঃসন্দেহে পাবে। তার চেয়ে একটি দানা কম ও বেশি পাবেনা। এক ব্যক্তি তার জন্য আল্লাহর দ্বারা নির্ধারিত করা জীবিকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে পরলোক গমন  করবে না।

 একটি সরল সুখী ও বিষণ্নতা মুক্ত জীবনের জন্য প্রথমতঃ প্রতিপালকের কৃতজ্ঞ হতে হবে। দ্বিতীয়তঃ নিজের অন্তরকে সন্তুষ্ট করতে হবে এবং নিজের হৃদয় থেকে সুখ ও তৃপ্তির নীতি সন্ধান করতে হবে।

 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter