অমুসলিমদের দৃষ্টিতে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)

 এই পৃথিবী যখন ঘন আধারে মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিল। যখন গোত্রে গোত্রে ছিল দলাদলি, হানাহানি ও রক্তারক্তির প্রবল স্রোতধারা, মানুষে মানুষে ছিল আভিজাত্যের দুর্ভেদ্য দেয়াল। ঠিক তেমনি বিভীষিকাময় মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনার জন্য সময় মতো এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার দূতকে এই ধরার বুকে প্রেরণ করেছেন। যত নবী-রাসুল প্রেরিত হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই নির্দিষ্ট এলাকা বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনোনীত হয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন। একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) এমন একজন প্রেরিত রাসুল; যিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র ভূSপৃষ্ঠে আগত মানুষের হিদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তথা, আল্লাহ তাআলা কুরান শারিফে ঘোষণা করেছেন যে, وما أرسلناك إلا رحمة للعامين অর্থাৎ আমরা আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ব্যতীত প্রেরণ করিনি।অতঃপর সেই নবীর সম্পর্কে অমুসলিমদের কি দৃষ্টিভঙ্গি তা উল্লেখ্য করা অনেক প্রয়োজন। তাই নিম্ন লাইনে তা ব্যাখ্যা করা হল:- 


1) Michael H. Hart তাঁর লিখিত বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ The 100: A Ranking of the Most Influential Persons In History-তে লিখেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বকালের সবচেয়ে প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেওয়াটা বেশির ভাগ পাঠককে আশ্চর্য করতে পারে এবং নিজের মনে মনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। তাই আমি মনে করি, ধর্মীয় উভয় ক্ষেত্রে প্রভাবের এই যোগ্য ব্যক্তিকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গুননা করি ।’ 
 
2) Washington Irving তিনি হচ্ছেন “First American man of letters.” এবং ‘Father of American literature’ নামে পরিচিত বিখ্যাত লেখক। তাঁর ঐতিহাসিক গ্রন্থ Muhammad-এ লিখেছেন, “একজন মানুষের পরিপূর্ণ সৎ ও পুণ্যবান হতে গেলে যে সমস্ত গুনের প্রয়োজন তা সবই তিনার মধ্যে পাওয়া যায়। তিনি এতটাই নির্মল প্রকৃতির অধিকারী ছিলেন যে স্বাভাবিকভাবে সকলের কাছে (الأمين ) ‘আল-আমিন’ নামে পরিচিত ছিলেন।” মি. ইরভিং এই বইয়ের ১৯২ ও ১৯৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, তিনি হচ্ছেন  অতিমানবীয় এবং সৃজনশীল জেনিয়াস। লেখক ১৯৯ পৃষ্ঠাই আর বলেছেন যে, অসংখ্য  যুদ্ধে জয় লাভ করার সত্যেও তিনার মনে কোনো গর্ব কিংবা দম্ভের জন্ম দেয়নি। 


3) Mr James A. Michener তিনি হচ্ছেন বিখ্যাত মার্কিন লেখক। তিনি ‘The readers digest’ পত্রিকার ১৯৫৫ জুন সংখ্যায় ‘Islam the misunderstood Religion’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইসলাম যেভাবে অতি দ্রুতগতিতে পুরো বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছিল, সেভাবে অন্য কোনো ধর্ম প্রসার লাভ করতে পারেনি। মুহাম্মদ (সা.)-এর সর্বোত্তম স্বভাব ও অতিমানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই ইসলাম আরব দেশ থেকে বেরিয়ে  অতি দ্রুত ফিলিস্তিন, মিসর, সিরিয়া, আধুনিক রাশিয়ার সীমান্তবর্তী জায়গাসহ উত্তর আফ্রিকার মধ্য দিয়ে স্পেনের প্রাচীর পর্যন্ত বিজয় অভিযান চালিয়েছিল। সবই কিন্তু তিনার চরিত্রের ফল। 


4) Mahatma Gandhi  যিনি হচ্ছেন আধুনিক ভারতের জনক তিনি বলেছেন, ‘আমি এক এমন বেক্তির সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম, যিনি আজ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান নিয়ে আছেন। সর্বশেষে খুঁজে পায়  মুহাম্মাদ নামক ইসলামের শেষ নবীকে যিনি ইসলামকে তরবারির সাহায্যে বিস্তারিত করেনি বরং দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করার মাধ্যমে ইসলামকে প্রসারিত করেছেলেন।’ 


5) Jakob Leonhard Euler তিনি বলেন, পৃথিবীতে কোনো মানুষ আল্লাহকে দেখেনি মুহাম্মদ সা: ব্যতীত , যদি কোনো মানুষ মহান উদ্দেশ্য নিয়ে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করে থাকেন, তা হল আরবের নবী মুহাম্মদ সা:। মুহাম্মদ সা: যে কেবল সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন তা নয়; বরং এ যাবৎ মানব ইতিহাসের যত মানুষের জন্ম হয়েছে, তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব একমাত্র তিনি। 
 
6) Dr. Edward Gibbon  বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক তিনি ‘The History of the Decline and Fall of the Roman Empire’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বস্তুতপক্ষে হজরত মুহাম্মদ সা: যে শারীয়ত এনেছিলেন তা সর্বলোকের জন্য প্রযোজ্য। এ শরিয়ত এমন বুদ্ধিবৃত্তিক মূলনীতি যে, সমগ্র বিশ্বে এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না (معارف القرآن, খণ্ড-১ পৃ. ১৬৩)। 
 
7) George Bernard Shaw তিনি হচ্ছেন আইরিশ নাট্যকার, সমালোচক, বিতর্কবাদী এবং রাজনৈতিক কর্মী তিনি অতি তেজস্বী ভাষায় মহানবীর প্রতি সম্মান নিবেদন করেন- “আমি সর্বদা মুহাম্মদের ধর্মকে  উচ্চ মূল্যায়নে ধরেছি। এটিই একমাত্র ধর্ম যা আমার কাছে অস্তিত্বের পরিবর্তিত পর্যায়ে সেই আত্মীকরণ ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে হয় যা নিজেকে প্রতিটি যুগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। তিনি আরো স্পষ্ট ভাষায় বলতে গিয়ে বলেছেন যে, বিশ্বের শাসন যদি আজ মুহাম্মদ সা:-এর মতো এক পরিপূর্ণ  পুরুষের হাতে দেওয়া হয়, তবে এই পৃথিবীর যাবতীয়সমস্যার এভাবে সমাধান হয়ে যেত যে, গোটা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার দোলনায় পরিণত হতো’ (دار العلوم ديوبند, সেপ্টেম্বর সংখ্যা-৯৭৭)। 


8) John Medows Rodwell: ‘বিশ্ব সূত্রে প্রমাণিত যে, মুহাম্মদ সা:-এর সততার কারণে মানবজাতি মূর্খতা এবং মূর্তিপূজা থেকে মুক্তি পায়। এবং এক আল্লহর পথে ফিরে আসে’। (آئنہ حقیقت موسیٰ) 


9) Indra Gandhi : তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে বৈষম্যবাদ থেকে পবিত্র। ইসলাম সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা লাভ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো যখন প্রাচ্যে এক নক্ষত্রের উদয় হয়। এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যার আলোকে অন্ধকার পৃথিবী আলোকিত হয়ে ওঠে। ইসলাম মিথ্যা নয়। আমি অতিবিশ্বাসের সাথে বলছি, ইসলাম তরবারি দিয়ে প্রসার লাভ করেনি; বরং এর মূলে আছে রাসূলে আরবির দূঢ় প্রত্যয়, প্রমাণ, নিজের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দান এবং অপরাপর মহৎ গুণাবলি। 


   এই ছিল আমাদের নবীর প্রশংসা অমুসলিমদের মুখ থেকে। তার জন্য কুরান শারিফে ঘোষণা করা হয়েছে যে, হে নবী আমরা আপনাকে শুধু মুসলমানদের নিমিত্তে রহমত করে প্রেরণ করিনি বরং পুরো বিশের জন্য।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter