যেখানে নিউটন, ঈসা ও বুদ্ধ—সবার উপরে মহানবী ﷺ: মাইকেল হার্টের আলোচিত ক্রমতালিকা
ভূমিকা
বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গবেষণা সবসময়ই পাঠক, গবেষক ও চিন্তাবিদদের বিশেষ আগ্রহের বিষয় হয়ে এসেছে। মানবসভ্যতার হাজার বছরের যাত্রাপথে অসংখ্য নেতা, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, ধর্মীয় সংস্কারক এবং রাজনৈতিক চিন্তাবিদ নিজেদের অবদান দিয়ে ইতিহাসকে নতুন মোড় দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন সবসময় থেকেই যায়—কে আসলেই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বহু রচনাই প্রকাশিত হয়েছে, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টান লেখক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ মাইকেল এইচ. হার্টের রচিত The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History.
১৯৭৮ সালে প্রকাশিত এই বইটি প্রকাশের সাথে সাথেই বৈশ্বিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে। কারণ, হার্ট এতে মানব ইতিহাসের শতজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন এবং নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে তাঁদের প্রভাবের মাত্রা অনুযায়ী ক্রমানুসারে সাজান। তাঁর তালিকায় যেমন ছিলেন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের নায়ক আইজ্যাক নিউটন, আধ্যাত্মিক শিক্ষক গৌতম বুদ্ধ, চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস, খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক ঈসা (আঃ), এবং আধুনিক বিজ্ঞানকে নতুন পথে নিয়ে যাওয়া আলবার্ট আইনস্টাইন—তেমনি ছিলেন সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা, চিন্তাবিদ এবং সামাজিক সংস্কারকগণ।
কিন্তু সবচেয়ে বেশি বিস্ময় ও আলোচনার জন্ম দেয় তাঁর তালিকার প্রথম নামটি। হার্ট লিখেছেন, মানব ইতিহাসের এক নম্বর প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ। এটি শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব ইতিহাস ও একাডেমিক গবেষণার জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কারণ, একজন খ্রিস্টান গবেষক, যিনি পশ্চিমা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বেড়ে উঠেছেন, তিনি নিরপেক্ষভাবে মহানবী ﷺ-কে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।
এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন মুসলিম সমাজে গৌরবের উপলক্ষ তৈরি করেছে, তেমনি ইতিহাসচর্চার ধারায় নতুন আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় মহানবী ﷺ এর বহুমাত্রিক অবদান—ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ ও নৈতিকতায়—হার্টের গবেষণার মাধ্যমে আবারও নতুনভাবে বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
মাইকেল হার্ট ও The 100 এর প্রেক্ষাপট
মাইকেল এইচ. হার্ট (Michael H. Hart) ১৯৩২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ( New York ) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শুধু একজন লেখকই নন, বরং পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং ইতিহাসবিদ। তাঁর বহুমুখী জ্ঞানচর্চা তাঁকে এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যার ভিত্তিতে তিনি মানব ইতিহাসের ওপর একটি নতুন রকমের গবেষণায় হাত দেন। সেই গবেষণার ফলাফলই হলো তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে।
গ্রন্থটির উদ্দেশ্য ছিল জনপ্রিয়তা বা ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া নয়, বরং ইতিহাসে ব্যক্তিবিশেষের প্রকৃত প্রভাবকে নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করা। হার্ট নিজেই তাঁর বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন:
“আমার উদ্দেশ্য জনপ্রিয়তা নয়, বরং ইতিহাসের নিরপেক্ষ প্রভাব পরিমাপ।”
এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, তিনি ব্যক্তিদের নির্বাচন করেছেন আবেগ নয়, বরং প্রমাণ ও বিশ্লেষণের আলোকে। হার্ট যখন শতজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নির্বাচন করেন, তখন তিনি কয়েকটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করেন, যেমন—
ধর্মীয় প্রভাব: যেসব ব্যক্তিত্ব নতুন ধর্ম বা আধ্যাত্মিক আন্দোলনের সূচনা করে কোটি কোটি মানুষের জীবনে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রভাব: রাষ্ট্র পরিচালনা ও সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে যারা ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখেছেন।
বৈজ্ঞানিক অবদান: নতুন আবিষ্কার ও তত্ত্বের মাধ্যমে মানবসভ্যতার গতিপথ পরিবর্তনকারী বিজ্ঞানীরা।
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: যাদের প্রভাব শুধু তাঁদের সময়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে আছে।
এই মানদণ্ডের ভিত্তিতেই হার্ট তাঁর তালিকা তৈরি করেন। তাঁর কাজটি শুধুমাত্র পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির পুনরাবৃত্তি নয়, বরং একটি গবেষণাধর্মী প্রচেষ্টা, যেখানে তিনি নিরপেক্ষভাবে স্বীকার করেছেন কোন ব্যক্তিত্বরা আসলেই মানব ইতিহাসের গতিধারা নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
মহানবী ﷺ প্রথম স্থানে কেন?
মাইকেল হার্ট তাঁর গ্রন্থে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক—উভয় ক্ষেত্রেই অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছেন, তিনি হলেন মহানবী মুহাম্মদ ﷺ। তাঁর ভাষায়:
“He was the only man in history who was supremely successful on both the religious and the secular level.” (The 100, p. 3)
হার্টের মতে, ইসলামের আগমনের পূর্বে আরব সমাজ ছিল গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত—গোত্রীয় শত্রুতা, নারীর প্রতি অবিচার, মূর্তিপূজা ও সামাজিক বৈষম্যে ভরা এক বিভক্ত সমাজ। কিন্তু মাত্র ২৩ বছরের স্বল্প সময়ে মহানবী ﷺ সেই সমাজকে রূপান্তরিত করেন এক ঐক্যবদ্ধ, শৃঙ্খলাপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক শক্তিতে।
তাঁর নেতৃত্ব শুধু আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক প্রশাসন, আইন, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—সবক্ষেত্রে এক পূর্ণাঙ্গ আদর্শ উপহার দেন। তাঁর জীবন ও শিক্ষা থেকে গড়ে ওঠে এমন এক সভ্যতা, যা শুধু আরব উপদ্বীপ নয়, পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে সমগ্র বিশ্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঘোষণা করেছেন:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
“আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আল-অম্বিয়া ২১:১০৭)
এই আয়াতের মর্মার্থই প্রতিফলিত হয়েছে হার্টের বিশ্লেষণে। তিনি দেখিয়েছেন, মুহাম্মদ ﷺ কেবল একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না, বরং তিনি এমন একজন সংস্কারক, যিনি সমগ্র মানবজাতির গতিপথকে বদলে দিয়েছেন।---
অন্য ব্যক্তিত্ব বনাম মহানবী ﷺ
মাইকেল হার্ট তাঁর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রেখেছিলেন বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনকে। নিউটনের আবিষ্কার ও তত্ত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছে, এবং তাঁর অবদান মানবসভ্যতার উন্নয়নে নিঃসন্দেহে বিপ্লব এনেছে। তবে হার্ট যুক্তি দেন, নিউটনের প্রভাব মূলত একাডেমিক ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। তিনি কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বা বৈশ্বিক রাজনৈতিক কাঠামোতে সরাসরি পরিবর্তন আনতে পারেননি।
তৃতীয় স্থানে রাখা হয়েছে ঈসা (আঃ)-কে। যদিও খ্রিস্টধর্ম পৃথিবীর অন্যতম বড় ধর্মে পরিণত হয়েছে, তবুও হার্ট মনে করেন এর বিস্তারে যীশুর সরাসরি ভূমিকার চেয়ে বেশি কার্যকর ছিলেন তাঁর অনুসারী পল অব তারসাস (Paul)। পলের প্রচেষ্টা ও ব্যাখ্যাই খ্রিস্টধর্মের পরবর্তী বিকাশে প্রধান ভূমিকা রাখে। এ কারণে যীশুর প্রভাবকে তিনি সীমিত আকারে মূল্যায়ন করেছেন।
এছাড়া তালিকায় ছিলেন গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস ও আলবার্ট আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছেন—কেউ আধ্যাত্মিকতার দিশা দিয়েছেন, কেউ নৈতিক দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেছেন, আবার কেউ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। কিন্তু তাঁদের কারও জীবনেই ধর্মীয় নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব একসাথে দেখা যায়নি।
ফলস্বরূপ, হার্ট স্পষ্টভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে “সবচেয়ে প্রভাবশালী” শব্দটির পূর্ণ প্রতিফলন একমাত্র মহানবী মুহাম্মদ ﷺ-এর জীবনেই খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ তিনি শুধু ধর্মীয় সংস্কারক নন, বরং একজন পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রনায়ক ও সমাজসংস্কারক, যিনি মানব ইতিহাসকে বহুমাত্রিকভাবে পরিবর্তন করেছেন।
প্রতিক্রিয়া: মুসলিম বিশ্ব ও পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি
মাইকেল হার্টের The 100 প্রকাশের পর তাৎক্ষণিকভাবেই এটি বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে বইটি আনন্দ ও গৌরবের সাথে গ্রহণ করা হয়। কারণ, একজন অমুসলিম খ্রিস্টান ঐতিহাসিক যখন নিরপেক্ষভাবে স্বীকার করেন যে মহানবী মুহাম্মদ ﷺ-ই ইতিহাসের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, তখন তা মুসলমানদের কাছে ইসলামের সার্বজনীনতার এক প্রমাণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। অনেকে মনে করেন, এটি কেবল ধর্মীয় পক্ষপাতহীনতার প্রকাশ নয়, বরং একটি বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিনির্ভর মূল্যায়ন। ফলে বইটি মুসলিম সমাজে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়।
অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্বে বইটির প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্নধর্মী। কিছু পাঠক হার্টের গবেষণাকে সাধুবাদ জানালেও, অনেক সমালোচক এটিকে বিতর্কিত বলে আখ্যা দেন। তাঁদের মতে, যীশু (আঃ)-কে তৃতীয় স্থানে রাখা খ্রিস্টান জগতে একধরনের “অস্বস্তি” ও হতাশার সৃষ্টি করে। কারণ, পশ্চিমা সভ্যতার মূল ভিত্তি খ্রিস্টধর্ম, আর তার প্রবর্তক যীশুর অবস্থান হার্টের তালিকায় প্রথম বা দ্বিতীয় নয়—তৃতীয়। এই মূল্যায়নকে অনেকে খ্রিস্টান বিশ্বাসের অবমূল্যায়ন হিসেবে দেখেছিলেন।
তবে সমালোচনা ও চাপের মধ্যেও মাইকেল হার্ট নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে তাঁর সিদ্ধান্ত কোনো আবেগ, ধর্মীয় পক্ষপাত বা জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে নয়, বরং ইতিহাসে ব্যক্তিত্বদের প্রভাবের বাস্তবিক ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ থেকে এসেছে।
ফলত, বইটি একদিকে যেমন মুসলিম সমাজে ইতিবাচক সাড়া জাগিয়েছে, তেমনি পশ্চিমা দুনিয়ায় নানা বিতর্ক ও মতবিরোধ উসকে দিয়েছে। কিন্তু সব সমালোচনা সত্ত্বেও, The 100 আজও ইতিহাসচর্চার জগতে আলোচিত ও পাঠকপ্রিয় একটি গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আমাদের জন্য শিক্ষা
মাইকেল হার্টের এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য শুধুই এক ধরনের আনন্দ বা গর্বের বিষয় নয়; বরং এটি একটি বড় শিক্ষা বহন করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নবী করিম ﷺ-এর প্রভাব কোনো সাময়িক জনপ্রিয়তা বা আবেগ নয়, বরং এক চিরস্থায়ী ঐতিহাসিক সত্য। একজন অমুসলিম গবেষকও যখন নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে এ সত্য মেনে নিতে বাধ্য হন, তখন মুসলমানদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়।
আজকের মুসলমানদের উচিত, মহানবী ﷺ-এর জীবন ও শিক্ষাকে আধুনিক গবেষণা ও একাডেমিক আলোচনার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা। কারণ, তাঁর জীবন কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ মানবজীবনের দিকনির্দেশনা। সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিকতা, অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবার—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি এমন এক আদর্শ স্থাপন করেছেন, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু কেবল গর্ব করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। মুসলমানদের উচিত তাঁর আদর্শ নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়ন করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন:
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে কুরআন শিখে এবং তা শিক্ষা দেয়।” (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫০২৭)
এই হাদিস আমাদের দেখিয়ে দেয়, ইসলাম কেবল তত্ত্ব নয়; বরং শিক্ষা ও কর্মের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই মুসলিম সমাজের কর্তব্য হলো নবী ﷺ-এর রেখে যাওয়া বার্তাকে বিশ্বমঞ্চে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা—আদর্শ সমাজ, ন্যায়নীতি, মানবিকতা ও জ্ঞানের আলো দিয়ে।
হার্টের বই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: যদি একজন অমুসলিম ঐতিহাসিকও তাঁর প্রভাবকে স্বীকার করতে বাধ্য হন, তবে মুসলমানদের আরও গভীরভাবে তাঁর জীবন অধ্যয়ন করা এবং বিশ্বকে সেই শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া এক অনিবার্য দায়িত্ব
উপসংহার
মাইকেল হার্টের The 100 কেবল একটি ইতিহাসভিত্তিক বই নয়; বরং এটি পশ্চিমা জগতে ইসলামের প্রতি এক অনিচ্ছাকৃত অথচ গৌরবময় স্বীকৃতি। যেখানে আইজ্যাক নিউটন, যীশু (আঃ), গৌতম বুদ্ধসহ বহু বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের নাম তালিকাভুক্ত, সেখানে সবার শীর্ষে রয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ।
হার্ট স্পষ্ট করে লিখেছেন, নবী ﷺ হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক রাষ্ট্রনায়ক—উভয় ক্ষেত্রেই সমান সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য শুধু ইতিহাসের দলিল নয়; এটি প্রমাণ করে যে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনযাপন আজও সমগ্র মানবতার জন্য পথনির্দেশক।
অতএব, আমাদের জন্য উপসংহার স্পষ্ট—
নবী ﷺ কেবল ইতিহাসের প্রথম স্থান অর্জনকারী নন, বরং মানবসভ্যতার অনন্ত পথপ্রদর্শক ও বিশ্বজনীন আদর্শ।