হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ
আদম (আঃ) থেকে শুরু করে ঈসা (আঃ) পর্যন্ত মনে করা যায় প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার বা ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী এবং রসুল এই ধরার বুকে প্রেরিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)। দুনিয়াতে যারা তার দেখান পথে চলবে পরকালে তারায় জান্নাত যাবে। আর তারায় জাহান্নামের কষ্টদায়ক এবং কঠোর আযাব ও শাস্তি থেকে রেহাই পাবে। আর আমরা তিনার উম্মত বা অনুসরণকারী দল। আমরা তিনার দেখান পথে চলি । সঠিক পথ পাওয়ার জন্য তিনি আমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে গিয়েছেনঃ (১) আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ও বাণী কোরান মাজীদ এবং (২) তিনার সুন্নাত। নবীর সুন্নাত সম্পর্কে জানতে পারা যায় হাদিস থেকে। কিন্তু হাদিস কি? নবীর বানী কে হাদিস বলে। নবীর কাজকর্ম ও চরিত্রের বর্ণনা কেও হাদিস বলে। নবীর আদেশ নিশেধাজ্ঞার বর্ণনা কেও হাদিস বলে।
ইসলামের সত্যতা, সৌন্দর্য এবং সঠিক পথকে জানবার জন্য আমাদের আল্লাহ তায়ালার বানী কোরআন মাজিদ কে পড়তে ও বুঝতে হবে। ঠিক তেমনি আমাদের মহা নবী (সাঃ)-এর বানী ও হাদিস চর্চা করতে হবে বুঝতে হবে এবং সকলের মধ্যে প্রচার ও প্রসার করতে হবে এবং তিনার কথা ও হাদিস মতাবিক আমাদের চলতে হবে। তবেই মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি খুশি হবেন এবং আমরা হতে পারব একজন সত্যি কারের মুসলিম ও মুমিন। তাই এই মূল বিষয়বস্তু প্রতি লক্ষ করে এবং এর পরিপেক্ষিতে সংকলন কর হয়েছে এই প্রবন্ধটি। এই প্রবন্ধটিতে ইসলামের শিল্প ও সংস্কৃতিতে হয্রাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভুমিকা ও প্রভাব আলচনা করা হয়েছে।
আমরা সকলেই জানি ৫৭০ সালে হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্ম হয় মরুময় আরবের এক অতিব দরিদ্র পরিবারে। পিতা আব্দুল্লাহ, মাতা আমিনা, পিতামহ আব্দুল মুত্তালিব। তিনার আগমন ও আবির্ভাবের পূর্বে সমগ্র আরব জাতি তথা সমগ্র পৃথিবীই ছিল এক অন্ধকার কুপের মধ্যে আবদ্ধ ও বন্দি এবং অন্ধ ও মিথ্যার দাসি; মিথ্যার উপাসনাকারী। হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আগমনের পর তিনার নুরের জ্যোতি ও আলো যখন মরুময় নির্জন ও মিথ্যার উপাসনকারি আরব থেকে শুরু করে সমগ্র পৃথিবীতে সেই আলোর জ্যোতি ছড়িয়ে পরে। কিছু সময় পরে সেই আলোর পথ ধরে বহু মানুষ মূর্তিপূজা, অগ্নিপূজার মতো মিথ্যা উপাসনাকে ত্যাগ করে হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রচারিত ধর্মে মানুষ দলে দলে যগ দান করে। এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর প্রতি তারা কঠোর ভাবে ইমান নিয়ে আসে। আর তার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে ইসলামিক সাম্রাজ্য।
দলে দলে মানুষের ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার ফলে ইসলামের শক্তির বিকাশ ঘটে। এর মূল বিষয়বস্তু শুধু প্রচার এবং প্রসার ছিল না, শুধু যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম সমগ্র পৃথিবীতে প্রসারিত হয়নি বা মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেনি ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসাবে আক্ষায়িত হয়নি। হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চরিত্র, তিনার আখলাক-ব্যাবহার ও ইসলামের সৌন্দর্য, ভাতৃত্ববোধ, আদব-কায়িদা,আচার-আচারন, আইন-সংবিধান, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, ইসলামের প্রতি প্রভাবিত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ধর্ম গ্রহন করে। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ) হলেন শান্তির প্রচারক। অন্যায়কে কখনও তিনি প্রস্রয় দেননি। সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে রুক্ষে দাড়িয়েছে। তিনি সত্যকথা বলতে কখনও ভয় পেতেন না, সংকচ বা দিধাবোধ করতেন না। তিনি ছাড়া ইসলাম অসম্পূর্ণ । ইসলাম ‘মুসলিম’ তথা আমরা যা কিছু যতকিছু পেয়েছি সব হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছ থেকে। এত মানুষ যে ইসলাম গ্রহণ করেছে তা কেবল মাত্র সম্ভব হয়েছে হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তিনার সাহাবাদের এর প্রচেষ্টাই ও তিনার শান্তি ও সহনশীলতার প্রভাবে। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন আদাব কাকে বলে, আদর্শতা কাকে বলে,ভাল চরিত্র কামন হয় ,একজন মমিন কামন হয়া উচিত তার বিশিষ্ট ও তার আচরণ কামন হয়া উচিত। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন ভাল ও মন্দের মধ্যে বিচার করা, সত্য ও মিথ্যে কে বোঝা। কূকর্ম থেকে দূরে সরে আসা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছেন ।
ইসলামের দ্রুত গতিতে প্রচার এবং প্রসার হওয়ার ফলে ধিরে ধিরে ইসলামিক সাম্রাজ্য গঠন হয় সাম্রাজ্যের বিকাশ ঘটে। মুসলিমরা ক্ষমতায় আসে, ইসলাম আর দ্রুত আলোর গতিতে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে যেতে শুর করে। এবং এই গতিকে রোধ করার জন্য মক্কার কাফির সহ সমগ্র পৃথিবীর ক্ষমতা সম্পন্ন শাসক দল ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা ইসলামের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র শুর করে। কিন্তু তবুও ইসলাম সেই সকল ষড়যন্ত্রকে মূলচ্ছেদ করে আপন গতি বেগে এগিয়ে চলে এবং সারা পৃথিবীতে ইসলামিক সাম্রাজ্য স্থাপিত হয় আর বৃদ্ধি পেতে থাকে ইসলামিক ক্ষমতা ও সম্রিদ্ধি। সারা বিশ্বে স্থাপিত হতে শুরু করে ইসলামিক আইন ও শাসন ব্যাবস্থা। আর বৃদ্ধি পায় ইসলামিক শিল্প ও সংস্কৃতি, যা মানবজাতি ও মানবতাকে দেয় এক নতুন রূপ ও আকার। সৌন্দর্যময় ইসলাম যখন সারা বিশ্বে তার দাপট ও সমৃদ্ধিকে স্থাপন করতে সফল হয় তখন শুর হয় এক নতুন অধ্যায় (স্বর্ণযুগ)। এই স্বর্ণযুগের মাধ্যমে সারা মানব জাতীর জীবনের এক নতুন আধ্যইয়ের প্রজন্ম হয়। সকল মানুষী জীবনের এক নতুন আলোর রাস্তা খুজেপায়। আর তা কেবল সম্ভব হয়েছে হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কারণে। ইসলামের আদর্শ এতটাই সুসম্পন্ন ও সুন্দর ছিল যে সকলেই এর প্রশংসা করতে বাধ্য। আর এত সাফল্য ও সমৃদ্ধির পিছনে ছিল শুধু এক জন বাক্তি যিনার কার্যকলাপের গুনে, যিনার প্রচেষ্টায়, যিনার আদর্শ ও সহনশীলতার কারণে আজ ইসলাম এতদূর। তিনি আর কেও না সুপথের উপদেশ দাতা সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)। তিনি ছাড়া ইসলাম কখনয় পরিপূর্ণতা পেতনা।
আষ্টম শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাসে সংস্কৃতিক, আরথনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমৃদ্ধি হওয়ার সময় কালকে ইসলামের ‘স্বর্ণযুগ’ বোঝায়। যা ৬২২ সালে মদিনায় প্রথম ইসলামিক রাষ্ট্র স্থাপিত হয় ও ইসলামিক শক্তির উত্থানের সময় থেকে শুরু হয়। ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের দ্বারা বাগদাদ আব্রখের সময়কে এই স্বর্ণযুগের শেষ ধরা হয়। কিন্তু এর পরেই বিভিন্ন সাংকৃতিক উন্নতি হতেই থাকে। ১৪৯২ সালে ইবেরিয়ান উপদ্বীপের আন্দালুসে খ্রিস্টান 'রিকনকোয়েস্টার' এর ফলে গ্রানাডা আমিরাতের পতন কেও এর সমাপ্তি কাল হিসেবে গণ্য করা হয়। আব্বাসিয় খিলাফা হারুন রশিদের (৭৮৬-৮০৯) সময় বাগদাদে বাইতুল হিকমা প্রতিষ্ঠার ফলে জ্ঞানচর্চার প্রভূত সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই যুগে মুসলিম বিশ্বের রাজধানী বাগদাদ, কায়রো ও কর্ডোবা বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, বাণিজ্য ও শিক্ষার বুদ্ধি বৃত্তিক কেন্দ্রে পরিনিত হয়।
ইসলামের শিল্প ও সংস্কৃতি হিসেবে ১৩ শতকে পারস্য কবি রুমীর আনেক বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন। “চারুকলা“ পণ্ডলিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ছিল যা পারস্যীয় বিশ্বে সমৃদ্ধ হয়। পাণ্ডূলিপি এবং আর্কিটেকচারাল অলংকরণে লিখিত আরবির একটি অপরিহার্য বিসয় “ক্যালিগ্রাফি” যা ইসলামিক শিল্পের এক আন্যতম স্তম্ভ যা ‘আরব, ইরাক, ইরান, তুরকি, সিরিয়া, ওমান, ভারতের মত বহু দেশে তার প্রমান আজও বর্তমান। ইসলামের পা যে সকল স্থানে পড়েছে, সেই স্থানেরই উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটেছে। নবম ও দশম শতাব্দীতে আরবি “সঙ্গিতের” বিকাশ ও উন্নায়ান ঘটে যা ইসলামিক শিল্প ও সংস্কৃতিকে এক নতুন পর্যায় পৌঁছেদেয়। কোরানের ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গাতে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের যথাযথ গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তৎকালীন মুসলিমদের জ্ঞান অর্জন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষাত্রে উন্নয়ন ও শিক্ষালাভে উৎসাহ ও আনুপ্রেরণা হিসেবে মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবধ যাথাযথ ভূমিকা পালন করেছিল। ইসলামের শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নের ও বৃদ্ধির এক বিশেষ বিষয় হল জ্ঞানচর্চা। তার পাশাপাশী ছিল সামাজিক উন্নয়ন, ব্যাবসা বাণিজ্য ও ধার্মিক আইন সংক্রান্ত বাবস্থা। তৎকালীন ইসলামিক সাম্রাজ্য জ্ঞানী পন্থিদের যাথাযাথ পৃষ্টপোষক ছিলেন। শিক্ষার বিষয়ের সকল খরচ রাষ্ট্র বহন করত। ইসলামিক শিল্প ও সংস্কৃতির এমন সুসম্পন্ন ব্যাবস্থা পনা দেখে বেধর্মীয় বাক্তি যারা জ্ঞান লাভের প্রতি ছিল ভীষণ আগ্রহী তারাও ইসলামিক পাঠাগারে জ্ঞানচর্চার জন্য আসত। এবং “আইনশাস্ত্র, দর্শন, গনিত, সাহিত্য, সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান” -এর মত বহু বিষয়ে তারা জ্ঞান অর্জন করত। কিন্তু এতকিছু ও এত সাফল্যের পিছনে কেবল ছিল একজন ব্যাক্তি। যিনি জানতেন যে ইসলাম একদিন এমন একটি শীর্ষস্থানে পৌঁছাবে যা কেবল কল্পনা মাত্র । তিনি আর কেও না শান্তির আগ্রদূত “হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)”। তিনি না থাকলে আজ ইসলাম কখনই এতটা সুন্দরময় হয়ে উঠত না।
তিনি ছাড়া ইসলামের সমৃদ্ধি,উন্নয়ন ও বিকাশের কথা কল্পনা করা অসম্ভব। তিনি ছাড়া সাফল্যের চাবিকাঠি কখনই ইসলামের হাতে আসতনা।
ইসলামের শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, সমৃদ্ধির উন্নতি ও বিকাশের পিছনে হযরাত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভুমিকা অপরিসীম ও ভাষাহীন যা মুখে বলে বা কলমের দ্বারা কোন বই লিখেও প্রকাশ করা সম্ভব নয়।