কুরআন ও হাদিসের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা
UDHR (মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা) হল একটি ঘোষণাপত্র যা একটি আন্তর্জাতিক দলিল যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দ্বারা গৃহীত হয় যা সমস্ত মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতাকে সংহত করে। এই ঘোষণায় একজন ব্যক্তির "মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা"-এর সম্পর্কে বিস্তারিত ৩০টি প্রবন্ধ রয়েছে এবং তাদের সর্বজনীন চরিত্রকে সহজাত, অবিচ্ছেদ্য, এবং সমস্ত মানুষের জন্য প্রযোজ্য হিসাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯৬৬ সালে সম্পন্ন হয়েছিল এবং ১৯৭৬ সালে কার্যকর হয়েছিল। UNO -এর UDHR দ্বারা ঘোষিত ৩০ অধিকার ১৪০০ বছর আগেই আল্লাহ ও তার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। আল্লাহর কালাম কোরআন এবং রাসূলের বাণী হাদিসে যদি আমরা সন্ধান করি, দেখতে পাবো যে আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ধর্ম দ্বারা মানবজাতিকে তার অধিকার দান করেছেন, যে অধিকার অন্য কোন ধর্ম দিতে পারেনি।
এই প্রবন্ধটিতে লেখক UNO দ্বারা ঘোষিত মানবাধিকার গুলো হাদিস ও কোরআনের আলোতে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
১) সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত।
ইসলাম ধর্ম প্রত্যেক মানবজাতির স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- প্রতিটি শিশুই প্রবৃত্তের ওপর জন্মায়। আরবী শব্দ ফিতরাত الفطرة মানে হল সেই অবস্থা যাতে সৃষ্টি কর্তা প্রত্যেক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ কোন বিশেষ ব্যক্তিকে স্বাধীন, কাউকে ক্রীতদাস হয়ে সৃষ্টি করেনি। و لقد کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ وَ حَمَلۡنٰہُمۡ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ وَ رَزَقۡنٰہُمۡ مِّنَالطَّیِّبٰتِ وَ فَضَّلۡنٰہُمۡ عَلٰی کَثِیۡرٍ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِیۡلًا
যার অর্থ হচ্ছে, আর নিঃসন্দেহে আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মান দিয়েছি এবং তাদেরকে স্থলে ও জলে আরোহণ করিয়েছি আর তাদেরকে পবিত্র বস্তুসমূহ জীবিকারূপে দিয়েছি এবং তাদেরকে আপন বহু সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রত্যেক ব্যক্তি হচ্ছে আদম আলাইহিস সালামের পুত্, সে মুসলিম হোক না কেন বা কাফের ইহুদী বা খ্রিস্টান যাই হোক না কেন। আদাম এর পুত্র সেই দিক থেকে আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক ব্যক্তিকে মর্যাদা দান করেছেন।
২) এ ঘোষণায় উল্লেখিত স্বাধীনতা এবং অধিকারসমূহে গোত্র, ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষা, ভাষা, রাজনৈতিক বা অন্যবিধ মতামত, জাতীয় বা সামাজিক উত্পত্তি, জন্ম, সম্পত্তি বা অন্য কোন মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই সমান অধিকার থাকবে।
কোন দেশ বা ভূখণ্ডের রাজনৈতিক, সীমানাগত বা আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে তার কোন অধিবাসীর প্রতি কোনরূপ বৈষম্য করা হবেনা; সে দেশ বা ভূখণ্ড স্বাধীনই হোক, হোক অছিভূক্ত, অস্বায়ত্বশাসিত কিংবা সার্বভৌমত্বের অন্য কোন সীমাবদ্ধতায় বিরাজমান।
ইসলাম ধর্মে মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য নেই। কারো জাতি বা গোত্র দেখে ইসলাম ধর্ম এক মানবকে অন্যের ওপর প্রাধান্য দেয়নি। ইতিহাস সাক্ষী আছে যে মহান নবী সেই যুগে ঘোষণা করে দিয়েছেন, অনারব এর ওপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠতা নেই আরবের ওপর অনারবের কোন শ্রেষ্ঠতা নেই। কালোর ওপর শ্বেতাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠতা নেই এবং শ্বেতাঙ্গের ওপর কালোর কোন শ্রেষ্ঠতা নেই তাকওয়া ছাড়া।
৩) জীবন, স্বাধীনতা এবং দৈহিক নিরাপত্তায় প্রত্যেকের অধিকার আছে।
ইসলাম ধর্ম মানব জাতিকে গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া হত্যা করার আদেশ কখনোই দেয়নি বরঞ্চ হত্যাকারীর জন্য শাস্তি ঘোষণা করেছেন যেটাকে আরবি শব্দে দিয়েত নামে জানা যায়।
الَّذِیۡنَ لَا یَدۡعُوۡنَ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ وَ لَا یَقۡتُلُوۡنَ النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰہُ اِلَّا بِالۡحَقِّ وَ لَا یَزۡنُوۡنَ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ یَلۡقَ اَثَامًا অর্থাৎ
ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্র সাথে অন্য কোন উপাস্যের পূজা করে না এবং ওই প্রাণকে, যার রক্তপাত আল্লাহ্ হারাম করে দিয়েছেন, অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করেনা আর জে এ কাজ করে সে শাস্তি পাবে।
হাদিসে জনহত্যাকে সাতটি বড় গুনাহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে আল্লাহ মানুষকে সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার ও স্বাধীনতা দান করেছে, কারণ ব্যথিত কোন ব্যক্তি এক অপরের প্রতি আক্রমণ করতে পারেনা না।
৪) কাউকে অধীনতা বা দাসত্বে আবদ্ধ করা যাবে না। সকল প্রকার ক্রীতদাস প্রথা এবং দাসব্যবসা নিষিদ্ধ করা হবে।
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় যেই সময় মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ মক্কা বিজয় করেছিলেন সেই দিন কাফের গান ও মুশরিকগণ ভেবেছিলেন যে তারা সবাই ক্রীতদাস হয়ে গেলো এবং তারা জিজ্ঞেস করল যে হে মোহাম্মদ তুমি আমাদের সঙ্গে কি করবে তখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন যে তোমরা সবাই স্বাধীন। যেইখানে ইচ্ছে তোমরা চলে যাও তোমাদেরকে বন্দী বানানো হবে না।
৫) কাউকে নির্যাতন করা যাবে না; কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না অথবা কাউকে এহেন শাস্তি দেওয়া যাবে না।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অত্যাচার থেকে সাবধান হও, কেননা কিয়ামতের দিন অত্যাচার অন্ধকার, আর কৃপণতা থেকে সাবধান, কেননা কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে।
কুরআন মাজিদের সূরা আহযাবে আল্লাহ বলছেনঃ-
الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ بِغَیۡرِ مَا اکۡتَسَبُوۡا فَقَدِ احۡتَمَلُوۡا بُہۡتَانًا وَّ اِثۡمًا مُّبِیۡنًا ( 58)
অর্থাৎ: এবং যারা ঈমানদার পুরুষ ও নারীদেরকে অপরাধমূলক কোন কাজ না করলেও কষ্ট দেয়, তারা অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ নিজেদের মাথায় নিলো।
ইসলাম ধর্ম সর্বদা তার অনুসারীদের অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে আলাপ ও মিলামিশার সময় মর্যাদা ও সম্মানের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমার প্রতি দেশের সম্মান করো যদিও সে কাফের হয়।
৬) আইনের সামনে প্রত্যেকেরই ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার আছে।
ইসলাম ধর্ম তার শরীয়তের কানুন ও ধরার সামনে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমদৃষ্টিতে দেখে অপরাধী যেই হোক না কেন রাজাধনী ব্যাক্তি দরিদ্র ব্যক্তি অপরাধীর যা শাস্তি নির্ধারিত আছে সেটা সেই পেয়েই থাকবে। আল্লাহ কোরআন মাজীদে বলছে ٱعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ
সুবিচার করো। তা
আত্নসংযমের অতি নিকটতর ।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুবিচার করার জন্য নিজেই বলেছেন, যদি মোহাম্মদের কন্যা অর্থাৎ ফাতিমা ও যদি চুরি করে আমি তার হাত কেটে দিব।
৭) আইনের চোখে সবাই সমান এবং ব্যক্তিনির্বিশেষে সকলেই আইনের আশ্রয় সমানভাবে ভোগ করবে। এই ঘোষণা লঙ্ঘন করে এমন কোন বৈষম্য বা বৈষম্য সৃষ্টির প্ররোচনার মুখে সমান ভাবে আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই আছে।
যে যুগে নারীদের অধিকার দেওয়া হতো না। সমাজের নারীদের সম্মান করা হতো না যদি কোন স্ত্রীর মেয়ে সন্তান জন্ম নিতো তাহলে শিশু মেয়েকে জীবিত হত্যা করা হতো। সেই যুগে মহান নবী ইসলামের শরিয়াত নিয়ে আসেন এবং শরীয়াতের মধ্যে সবাইকে আশ্রয় দেন। প্রত্যেক ব্যক্তিকে অধিকার দান করেন এবং শিশু হত্যা বন্ধ করেন স্বরূপ নবীর আগমনের পূর্বে দারিদ্র ও কালো বর্ণের মানুষদের দাসী বানিয়ে রাখা হতো এবং তাদের ওপর সয্যের বাহির অত্যাচার করা হতো সেই সময় মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করলেন প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের সমান অধিকার আছে এক অপরের প্রতি অত্যাচার করা হারাম।
৮) শাসনতন্ত্রে বা আইনে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের কাছ থেকে কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
এই ধারাটি সমতার ধারা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে কুরআন সমতার ধারাকে অনেকেই সুস্পষ্ট বাক্যের দ্বারা মানুষদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তায়ালা বলছে;
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِصَاصُ فِی الۡقَتۡلٰی ؕ اَلۡحُرُّ بِالۡحُرِّ وَ الۡعَبۡدُ بِالۡعَبۡدِ وَ الۡاُنۡثٰی بِالۡاُنۡثٰی ؕ فَمَنۡ عُفِیَ لَہٗ مِنۡ اَخِیۡہِ شَیۡءٌ فَاتِّبَاعٌۢ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ اَدَآءٌ اِلَیۡہِ بِاِحۡسَانٍ ؕ ذٰلِکَ تَخۡفِیۡفٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ؕ فَمَنِ اعۡتَدٰی بَعۡدَ ذٰلِکَ فَلَہٗ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
অর্থাৎ: ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ফরয যে, যাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের খুনের বদলা নেবে- আযাদের বদলে আযাদ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। সুতরাং যার প্রতি তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা (প্রদর্শন করা) হয়েছে, তাহলে উত্তমভাবে তলব করা এবং সুন্দরভাবে আদায় করা বিধেয়। এটা হচ্ছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের বোঝা হাল্কা করা এবং তোমাদের উপর দয়া। অতঃপর, এর পরে যে সীমা লংঘন করবে তার জন্য বেদানাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
ইসলাম শরীয়তে এবং কোরআনের ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে যেন তারা ক্ষমা করে। কিন্তু ন্যায্য বিচারের জন্যও আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের উৎসাহিত করেছে, যেমন কর্ম তেমন ফল।
৯) কাউকেই খেয়ালখুশীমত গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ করা কিংবা নির্বাসন দেওয়া যাবে না।
কোরআন সকল মানুষকে ন্যায় পরাজয় ও ধার্মিক হওয়ার আদেশ দেয়। সেই প্রত্যেক কর্ম থেকে বাধা দেয় যেগুলো গুনাহের মূল। ইসলাম ধর্ম কখনো কোন নির্বিচারে গ্রেফতার আটক বা নির্বাচনের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্তরে না ইসলাম সকল মানুষদের গুনাহের দিকে অগ্রসর হতে বাধা দেয়। সূরা হুজরাত (আয়াত -১২) এ আল্লাহ বলছে; یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡہِ مَیۡتًا فَکَرِہۡتُمُوۡہُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ
যার অর্থাৎ: ঈমানদারগণ! তোমরা বহুবিধ অনুমান থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান পাপ হয়ে যায় এবং দোষ তালাশ করো না আর একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ এ কথা পছন্দ করবে যে, যে আপন মৃত ভাইয়ের গোশ্ত ভক্ষণ করবে? বস্তুত; এটা তোমাদের নিকট পছন্দীয় হবে না। এবং আল্লাহ্কে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ খুব তাওবা ক্ববূলকারী, দয়ালু।
১০) প্রত্যেকেরই পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে প্রকাশ্য শুনানি লাভের অধিকার রয়েছে।
১১) দন্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চিত অধিকারসম্বলিত একটি প্রকাশ্য আদালতে আইনানুসারে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ গণ্য হওয়ার অধিকার থাকবে।
এই দুটি ধারা ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়েছে ইসলাম ধর্ম সুন্দরভাবে ন্যায্য বিচারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে কোন কর্তৃপক্ষকে শুধু ক্ষমতা দিয়ে নয় বরং মানুষকে ক্ষুদ্রতম বিশ্বাসের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ বলছে: ঈমানদারগণ! না পুরুষ পুরুষদেরকে বিদ্রূপ করবে; এটা বিচিত্র নয় যে, তারা ওই বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম হবে; এবং না নারীগণ নারীদেরকে (বিদ্রূপ করবে); এটাও বিচিত্র নয় যে, তারা এই বিদ্রূপকারীনীদের অপেক্ষা উত্তম হবে। এবং তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না আর একে অপরের মন্দ নাম রেখো না। কতই মন্দ নাম- মুসলমান হয়ে ‘ফাসিক্ব’ বলানো! এবং যারা তাওবা করে না, তবে তারাই যালিম। (সূরা হুজরাত আয়াত ১১)
১২) কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তাঁর গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশীমত হস্তক্ষেপ কিংবা তাঁর সুনাম ও সম্মানের উপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
কুরআন একজনের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের উপর জোর দিয়েছে, কোরান, একটি মানবাধিকার হিসাবে গোপনীয়তার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আল্লাহ সূরা নুর আয়াত ২৭,২৮ এ আদেশ দিয়েছে: ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ব্যতীত অন্যান্য ঘরগুলোতে যেও না যতক্ষণ পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং সেগুলোর মধ্যে বসবাসকারীদের সালাম না করো। এটা তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা মনোযোগ দাও।(২৭), অতঃপর যদি সেগুলোর মধ্যে কাউকেও না পাও। তখনও মালিকদের অনুমতি ব্যতীত সেগুলোতে প্রবেশ করো না এবং যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও!’ তবে ফিরে যাবে। এটা তোমাদের জন্য খুবই পবিত্র। আল্লাহ্ তোমাদের কার্যাদি সম্বন্ধে জানেন(২৮)।
১৩) নিজ রাষ্ট্রের চৌহদ্দির মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং বসবাস করার অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। ও প্রত্যেকেরই নিজ দেশ সহ যে কোন দেশ পরিত্যাগ এবং স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে।
১৪) নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভিন্নদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করবার এবং সে দেশের আশ্রয়ে থাকবার অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
কোরআন সেই মানুষদের ওপর রহমত বর্ষণের কথা দিয়েছে যারা আল্লাহর জন্য দেশ ত্যাগ করে অনেকগুলো আয়াতে আল্লাহ বলছে; আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে ঘরবাড়ি ত্যাগ বের হবে সে হবে সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং অবকাশ পাবে। (সূরা আল - নিশা;১০০), আপনি বলুন, ‘পৃথিবীতে ভ্রমণ করে দেখো কেমন পরিণতি হয়েছে পূর্ববর্তীদের?’ তাদের মধ্যে অনেকে মুশরিক ছিলো। (সূরা আল - রুম ৪২).
১৫) প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে।
কাউকেই যথেচ্ছভাবে তাঁর জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, কিংবা কারো জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অগ্রাহ্য করা যাবে না।
মানবকূল! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে শাখা-প্রশাখা ও গোত্র-গোত্র করেছি, যাতে পরস্পরের মধ্যে পরিচয় রাখতে পারো। নিশ্চয় আল্লাহ্র নিকট তোমাদের মধ্যে অধিক সম্মানিত সেই, যে তোমাদের মধ্যে অধিক খোদাভীরু। নিশ্চয় আল্লাহ্ জানেন, খবর রাখেন।
অব্যাহত……