কাতার বিশ্বকাপ এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
দ্যা ডনকি কিং অ্যানিমেশন কার্টুন মুভিতে মাংকি নিউজ নেশনের সংবাদ উপস্থাপক বানর জাম্বোরার প্রচারণা: "খারাপ বলো, খারাপ শুনো এবং খারাপ দেখাও।" কিছু সংবাদ মাধ্যম ঠিক এমনটাই প্রমাণ করছে বছরের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্যান ফেস্টিভ্যাল ফিফা বিশ্বকাপের অবসরে। কারণ একটাই - মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট একটি ইসলামিক দেশ কাতার এই জমকালো উদযাপনের আয়োজন করছে, তা আবার অভূতপূর্ব এবং অতিরঞ্জিত আকারে।
ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম আরব স্বাগতিক দেশ হয়ে কাতার ইতিহাস তৈরী করেছে। বলা বাহুল্য, এটি সহজেই হয়নি। ২০১০ থেকে বহু সমালোচনার প্রতিউত্তর দিয়ে নিরালস প্রচেষ্টার পর কাতার এই রূপ পেয়েছে। এমনও ঝুঁকি হয়েছিল যে সম্ভবত পশ্চিমা দেশের চাপে কাতারে আর ফাইনাল না হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু কোন উদযাপনের ঐতিহাসিক বৃহত্তম বাজেট ২২০ বিলিয়নের ওপর ব্যয় করে দেশের মধ্যে অন্যদেশ নির্মাণ করে ফেলেছে এই উপসাগরীয় দেশ কাতার। সম্প্রতি ২০ নভেম্বর থেকে আরম্ভ হয়েছে এবং ১৮ ডিসেম্বরে গ্র্যান্ড ফাইনাল পর্যন্ত চলতে থাকবে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ কাতার।
উক্ত বিশ্বকাপ এখন শুধুমাত্র খেলার রেখা অতিক্রম করে রাজৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধার্মিক আকার ধারণ করেছে। আর এই বাতাবরণ তৈরি করেছে কিছু হিংসুক স্বাজাতিবাদীরা এবং তাতে ফুঁক দিয়েছে কিছু সেই বর্ণের সংবাদ মাধ্যম।
শুধুমাত্র ২৮ দিনের জন্য কাতার তার পরিচয় হারাতে গররাজি। এই দেশের সংস্কৃতি ইসলাম। শুধু সংস্কৃতি শব্দ তার ব্যাখ্যাকে সীমিত করে। বরং ইসলাম হল ব্যাক্তিগত, শিক্ষাগত, ব্যাবহারিক, প্রশাসনিক, আধ্যাতিক, পরিবারিক, সামাজিক, ধার্মিক এবং এক পূর্ণাঙ্গ জীবন পরিকাঠামোর নাম। এত বড়ো একটি আন্তর্জাতিক স্টেজে নিজ সংস্কৃতি বহিঃপ্রকাশ করা একটি নৈতিক দায়িত্ব।
তাছাড়া খেলার ব্যাপারে একথা সর্বসম্মত যে এটি সাংস্কৃতিক বিনিময়, প্রদর্শনী, ভালবাসা এবং একে অপরের কাছ থেকে শেখার সময়। বছর বছর ধরে তাই চলে আসছে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রভাবেই পাশ্চাত্যের দেশগুলো আজ ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলায় নিমজ্জিত। কিন্তু, প্রাচ্যের দাবি: আমরা অন্য সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশও পরিদর্শন করতে প্রস্তুত নয়। তাইতো স্টেডিয়াম ক্ষেত্রে অ্যালকোহল সেবন, প্রকাশনী কাপড়, এলজিবিটিকিউ কার্যক্রম ইত্যাদি নিষিদ্ধ করায় কাতার বিরোধী মনোভাবকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আশ্চর্য যে তারাই লিবেরালিস্ম নামের উদারনীতির শিক্ষা দেয়: উদারনৈতিকতা হল নিজেকে একজনের ইচ্ছা হিসাবে প্রকাশ করা এবং সবাইকে তাদের মতো করে গ্রহণ করা। কি একটি বিড়ম্বনা! পাশ্চাত্যের ভন্ডামী উন্মোচিত! তাদের এই হিপোক্রেসি সমগ্র সমস্যায় দেখা যায়। সাসটেইনেবালিটি (স্থায়িত্ব), হিউম্যান রাইটস (মানবধিকার), জেন্ডার ইকুয়ালিটি (লিঙ্গ সমতা)-এর মত বড়সড় নামের অভিযানসমূহও এতে অন্তর্ভুক্ত।
আর একটি দিক প্রকাশের প্রযোজ্য সেটা হল প্রবাসী মজুরদের কাতার নির্মাণে প্রাণ বিসর্জন। অবশ্যই, প্রত্যেক মানুষ মন্ত্রী হক বা শ্রমিক সবাই তার অধিকারের প্রাপক। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তো পশ্চিমারা শুধু ব্যাক্তি ক্ষেত্রে নয় বরং সম্পূর্ণ দেশব্যাপী উপনিবেশিক শক্তির প্রহার দেখিয়ে গেছে। যেখানে ইসলামী নীতি: শক্তি সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কাজ শ্রমিকদের উপর চাপাবে না। এবং তোমরা ঘাম শুকানোর আগে শ্রমিককে তার মজুরি দিয়ে দাও। এবার তবুও যদি অধিকারসমূহ উলঙ্ঘন করা হয়েছে তাহলে তা নিন্দনীয়।
প্রকৃতপক্ষে, ইউরোপীয় যুক্তিতেই তাদের কাতারকে গ্রহণ করা উচিত। অধিকন্তু, এর স্বিকারুক্তিও দেখা গেছে। ফিফা সভাপতি গিয়ানি ইনফান্টিনোর কথায়: আমি মনে করি যে আমরা ইউরোপীয়রা 3,000 বছর ধরে বিশ্বজুড়ে যা করে আসছি, মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া শুরু করার আগে পরবর্তী 3,000 বছরের জন্য আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
তাছাড়া এই বাস্তবটা উন্মোক্ত করতে কাতার প্রশাসনও যথেষ্ট করেছে। উল্লেখযোগ্য, যখন মার্কিন ফিল্ম ডিরেক্টর মরগান ফ্রিম্যান কাতার বিশ্বকাপের রাষ্ট্রদূত কাউডাল রিগ্রেশন সিনড্রোমে ভুক্ত ঘানিম আল মুফতাহর সাথে মহা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সার্বজনীন সমতার একমাত্র সমাধান নিয়ে বার্তা আদান প্রদান করেন।