ব্রিটিশ বিতরণে উঠে আসা এক জনপ্রিয় নাম:  মাওলানা মাহমুদ হাসান রহঃ

জন্ম ও বংশ পরিচয় 

মাওলানা  মাহমুদ হাসান খ্রিস্টীয়  উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের বিশিষ্ট আলিম, জীবন উৎসর্গীকৃত মুজাহিদ, পথপ্রদর্শক এবং তারীকাত (তাসাউফ)-এর খ্যাতিমান শায়খ ছিলেন। তার পিতা মাওলানা জুলফিকার আলী, একজন প্রখ্যাত আলিম,বহু গ্রন্থ প্রণেতা এবং বুযুর্গ ছিলেন। এবং আরবি ভাষার প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক ছিলেন । তাদের মধ্যে একজন ছিল শায়খুল  মাওলানা মাহমুদ হাসান । দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম সারির বেশিরভাগ আলেমিই এমন ছিলেন যে তাদের বংশধারা চার খলিফার কার ও কার ও সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান ও এ পর্যায়ে একজন। এবং তিনার বংশ হযরত উসমান রাঃ দিক দিয়ে মিলিত হয়। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান ১২৬৮ হিজরী মোতাবেক ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে বেরিলিতে (উত্তরপ্রদেশে)জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষা দীক্ষা

শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান শৈশবে তিনি মিয়াজী মঙ্গলুরীর নিকট কুরআন কারীম এবং মিয়াজী আব্দুল লতিফ এর নিকট ফারসী ভাষায় প্রাথমিক স্তরের গন্ধসমূহ অধ্যায়ন করেন। এছাড়াও, তিনি ফারসী ভাষার উচ্চস্তরের গ্রন্থসমূহ এবং “কুদুরী„ পর্যন্ত আরবীর প্রাথমিক কিতাব তার চাচা মাওলানা মাহতাব সাহেবের নিকট অধ্যায়ন করেন। ১২৮৩ হিজরীতে দারুল উলুম দেওবান প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা মাহমুদ হাসান, দারুল উলুম এর সর্বপ্রথম ছাত্র ছিলেন। “সিহাহ সিওাহ”এবং উঁচু পর্যায়ের গ্রন্থবলি দারুল উলুম এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোঃ কাসিম এর নিকট অধ্যয়ন করেন। ১২৯০ হিজরীতে তার প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। ১৮৭৫ সালে দারুল উলুমে সহকারি শিক্ষকরূপে শিক্ষাদান শুরু করেন।

শিক্ষা বিস্তারে শাইখুল হিন্দ (রঃ)

১৩০৫ হিজরীতে, মাওলানা মাহমুদ হাসান দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি তাহার “ইলমের গভীরতা” দায়িত্ব-শীলতা কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতার দ্বারা উহাকে ইসলামী জগতের একটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপান্তরিত করেন। তিনার সময়ে ভারত ছাড়াও আফগানিস্তান তুর্কিস্তান বসরা বুখারা ও ইন্দোনেশিয়ার ইলমে দীনের ছাত্রগণ পর্যন্ত দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাদীক্ষা দ্বারা উপকৃত হয়। শায়খুল-হিন্দ ইলমে দীনের সকল বিষয়েই গভীর বিৎপত্তির অধিকারী ছিলেন। কিন্তু তিনার হাদিস পাঠদানের খ্যাতি সমগ্র ভারতবর্ষেই ছিল। তিনার পাঠদানের দর্শনীয় বৈশিষ্ট্য ছিল, ফাকিহের দিকে মতামত ও হাদিস সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।

আর ইহাই ছিল শাহ ওয়ালিউল্লাহ পরিবারের পাঠদান পদ্ধতি। দীর্ঘ ৪০ বৎসর কাল তিনি দেওবান দারুল উলুম মাদ্রাসায় হাদিস এর অধ্যাপনা করেন। এতদ্ব্যতীত মক্কা ও মদিনায় তিনি হাদিসের পাঠদান করেন।

ব্রিটিশ বিতারণে হযরত মাহমুদ হাসান (রহঃ) এর ভূমিকা

খ্রিস্টীয় বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এমন কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়, যাহার ফলে মাহমুদ হাসানকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিতে হয়। ইতিমধ্যেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮খৃঃ) এর ধ্বংসতক ঘটনা সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে তুরস্ক ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে জার্মানদের মিত্র। মাওলানা মাহমুদ হাসান বিশ্বের ঘটনাবলী বিশেষত ভারত ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের দুরবস্থা দর্শনে  বিশেষভাবে সম্মোহিত হইলেন। তিনার দিনের আরাম ও স্বস্তি এবং রাতের ঘুম হারাম হইয়া গেল । এবং তিনার ধারণা নিশ্চিত বিশ্বাসের রূপান্তরিত হইল যে, ইংরেজ যতদিন পর্যন্ত ভারত ত্যাগ না করিবে। ততদিন পর্যন্ত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ ও আফ্রিকার উপর হইতেও ইংরেজদের আধিপত্য বিলুপ্ত হইবে না।

 

এই সকল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্য হইয়াই তিনি স্বীয় দীনী কর্তব্য মনে করিয়া কর্মক্ষেত্রে কেবল একাই ঝাঁপিয়া পড়িলেন না, বরং ভারতের অন্যান্য প্রভাবশালী বড় বড় আলিম ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের সহিত মিলিত হইয়া পরিস্থিতির মোকাবিলায় বাস্তব ব্যবস্থা গহনে উদ্যোগী হইলেন। মোটকথা শায়খুল হিন্দ সকল বিপদাপদ উপেক্ষা করিয়া সম্মুখে অগ্রসর হইলেন।

১৮৫৭ সালের পর মুজাহিদ আলেমদের পক্ষে আন্দোলন তো দূরের কথা আপন অস্তিত্ব রক্ষা করাও সম্ভব ছিল না। সে সময় এই শায়খুল হিন্দিই  স্বাধীনতা আন্দোলনকে পুনর্জীবীত করেন। কিন্তু ইংরেজদের শেদৃষ্টি এড়ানোর জন্য তার কর্মতৎপরতা এত গোপন পরিচালনা করেন, কেউ "টু" শব্দটিও জানতে পারেনি। মাওলানা  সিন্ধি (রহঃ) বলেন, ইয়াহিস্তান অঞ্চলে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমাদের বিস্ময়ের অন্ত রইল না। বিগত ৫০ বছর পূর্ব থেকেই শাইখুল হিন্দ এ আন্দোলন পরিচালনা করে আসছিলেন অথচ আমরা কেউ তা জানতে পারিনি। শাইখুল (রহঃ) সর্বাত্মকভাবে তার আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য তিনটি মূলনীতি গ্রহণ করেন

 ১. উপমহাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ।

২. সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদ

  1. প্রত্যেক ধর্মবলম্বীদের জন্য নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার পরিপূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা

এই তিনটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

তিনি বলেন,ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করাকে আমি আমার ঈমানের অংশ মনে করি। ঐতিহাসিক তাহরীকে রেশমী খুতুব,জমিয়াতুল আনসার,ইদারাতুল মা,আরিফ ইত্যাদি রাজনৈতিক সংগঠন তার ইংরেজ বিরোধী দুর্দমনীয় কার্যকর্মেরাই  বহিঃপ্রকাশ । ইংরেজ খেদাও আন্দোলন তথা স্বাধীনতার দাবি কে তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সাইকুল হিন্দের কাছে মহাত্মা গান্ধী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সহ আরো অনেকের শ্রেষ্ঠ গ্রহণের জ্বলন্ত প্রমাণ বহন করে সাইফুল হীন যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও দুর্নিবার কার্যক্রম বহন করেন ইংরেজ বিতরণে সাইখুল হিন্দ যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প ও দু নির্বাচন কার্যক্রম গ্রহণ করেন রেশমি রুমাল আন্দোলন ছিল তার চূড়ান্ত রূপ। কিন্তু মির সাদিক মীর কাসিম এর উত্তরই সুরে গাদ্দার আমির হাবিবুল্লা খানের গাদ্দারির কারণে তার এ আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্জব ঘোষিত হয় এবং তিনি মালটা দ্বীপে নির্বাচিত হন দীর্ঘ ৩ বছর ১৯২০ সালের কুড়ি মার্চ থেকে মুক্তি পেয়েই আপাষহীন সিপাহশালার স্বদেশের আজাদী চেতনায় কনফিডেন্স গিয়ে যোগ দেন ফলে তিনি সাইকুল হীন উপাধিতে ভূষিত হন।

পরলোকগমন

অবশেষে উপমহাদেশের এর সংগ্রামী মহাপুরুষ ১৩৮ হিজরীর ৮ই রবিউল আউয়াল মুখে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে করতে দিল্লিতে শেষ নিস্তেজ ত্যাগ  দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দিল্লি থেকে তার জানাযা দেওবন নিয়ে আসা হয় এবং পথে কয়েকবার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সর্বশেষে তার মহামান্য উস্তাদের পায়ের কাছে দারুল উলুম দেওবন্দের কবর স্থান মাকবরায় কাসেমিতে দাফন করা হয়।

উপসংহার

মাওলানা মাহমুদ হাসান মৌলিকভাবে একজন সরস্কারক আলিম ও তরিকাত(আধ্যাত্মিক সাধনা) এর শায়খ ছিলেন। থিনার আসল কাজ ছিল পাঠদান (অধ্যাপনা) কোন কোন বিশেষ অবস্থা ও জাতীয় প্রয়োজনে তিনাকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করিতে হয়, তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে মুসলিম জগতের জন্য ঘোর শত্রু বলিয়া মনে করিতেন। এবং তিনি এই দৃঢ় বিশ্বাস পোষন করতেন যে যতদিন পর্যন্ত ভারতের উপর ইংরেজদের আধিপত্য বজায় থাকিবে ততদিন পর্যন্ত মুসলিম জগতে ও তাহাদের আধিপত্য বলবং থাকিবে। তিনি আলিম সমাজকে মসজিদের হুজরা ও মাদ্রাসার গণ্ডি হইতে বাহির করিয়াছেন এবং তাদের মধ্যে স্বাধীনতার দাবি জাতির প্রতি দরদ ও সমবেদনা সত্যের পথে যান কোরবানি করা ও আত্মা ত্যাগের অনুপ্রেরণা দান করিয়াছেন হক কথা প্রচারের ফলে মাওলানা মাহমুদ হাসান কে কঠোর অত্যাচার নিপীড়ন করিতে হয় কিন্তু সত্যের পথ হইতে কখনো তিনি বিন্দুমাত্র হটেন নাই। সকল উৎপিরণ ও বিপদাপদ হাসিমুখে বরণ করিয়া লইয়াছেন। কিন্তু কখনো কোন অভিযোগের কথা মুখেও আনেননি ধৈর্য নম্রতা ছিল তিনার চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter