শবে মেরাজের ফযিলত ও এবাদত

আরবি মাস "রজবের" ২৯ তম রাতকে শবে মেরাজ বলা হয়।

   ফযিলত:-
     এই রাত অত্যান্ত বরকতময় ও কল্যানময় রাত, এই রাতে আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ'সাল্লাম) মহান আল্লাহ পাক এর সঙ্গে সাক্ষাত ও এক বিশেষ নৈকট্য লাভ করেছিলেন। যা কোনো নবী ও রাসুল (আলাইহিমুস সালাম) ও ফেরেস্তাদেরও ভাগ্য হয়নি। এবং এই রাতে মহান আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ'সাল্লাম) কে নিজের দিদার করিয়েছিলেন ও তাঁর উম্মতের জন্য নামাযের মতো পবিত্র ও মহান এবাদতের উপহার দিয়েছিলেন।

রোযা:-
    এই মাসে দুইটি রোযা রাখা অর্থাত্ ২৬ ও ২৭ তারিখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ।হযরত আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন রজব মাসে আল্লাহ পাক নেকির সাওয়াব কয়েক গুন বাড়িয়ে দেন।
যে ব্যক্তি এই মাসে একদিন রোযা রাখলো সে যেন পুরো বছর রোযা রাখলো। এবং যে ব্যক্তি এই মাসে ৭ সাত-দিন রোযা রাখবে তার জন্য জাহান্নামের সাত-টি দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এবং যে ব্যক্তি ৮ আট-দিন রোযা রাখবে তার জন্য জান্নাতের আট-টি দরজা খুলে দেওয়া হবে । এবং যে ব্যক্তি ১০ দশ-দিন রোযা রাখবে সে মহান আল্লাহ পাকের কাছে যা চাইবে তা কবুল করা হবে  ان شاء اللہ ইন শা-আল্লাহ। এবং যে ব্যক্তি ১৫ দিন রোযা রাখে তার জন্য আকাশের প্রচারক, আওয়ায দিয়ে বলে, হে রোযাদার ব্যক্তি তোমার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, এখন নেক আমল ও সৎকর্ম করা আরম্ভ করে দাও।

নামায:-
       হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) থেকে বর্ণিত: নবী পাক (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যারা রজব মাসের ২৭ তম রাতে এবাদাত করে, তাদেরকে একশত ১০০ বছরের এবাদাতের সাওয়ার দেয়া হয়।

নফল নামাযের কয়েকটি নিয়ম:-
১) এই রাতে দুই বা চার রাকাতের নিয়ত করে যত সম্ভব নফল নামায আদায় করা দরকার।
  বিশেষ করে ১২ রাকাত নামায আদায় করা অবশ্যই দরকার, যার বর্ণনা হাদিস পাকের মধ্যেও রয়েছে।
২)১২ রাকাত  নামায আদায় করার নিয়ম:
১২ রাকাত নামায ছয় ৬ সালামে আদায় করতে হবে, প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে যেকোনো সুরা পাঠ করতে হবে।১২ রাকাত নামায আদায় করার পরে ১০০ বার এই তাসবিহ-টি পাঠ করতে হবে।
سُبْحَانَ اللَّهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ ، وَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ، وَاللَّهُ أَكْبَر“
সুবহানাল্লাহি ওয়াল-হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।এবং ১০০ বার "أَسْتَغْفِرُ اللهَ رَبِّيْ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وَّأَتُوْبُ إِلَيْه"“আসতাগ-ফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি যামবিউ অ-আতুবু ইলাইহি” পাঠ করতে হবে।
এবং ১০০ বার নিজের জানা যেকোনো দরুদ শরিফ পাঠ করার পরে হাত তুলে দুআ করবে, এবং দুনিয়া ও আখিরাতের যা চাওয়া রয়েছে, তা আল্লাহর কাছে চাইবে  ان شاء اللہ ইন শা-আল্লাহ সমস্ত দুআ কবুল করা হবে।
(৩)২০ রাকাত নামায আদায় করার নিয়ম:
২০ রাকাত ১০ সালামে আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে  সুরা এখলাস এক বার পাঠ করতে হবে। এর ফলে মহান আল্লাহ পাক তার জান ও মালের রক্ষা করবেন।
৪)৪ রাকাত নামায আদায় করার নিয়ম:
৪ রাকাত দুই সালামে আদার করতে হবে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা ইখলাস ২৭ বার পাঠ করতে হবে।
সালাম ফেরার পরে ৭০ বার দরুদ শরিফ পাঠ করে আল্লাহর নিকটে নিজের সমস্ত গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন  ان شاء اللہ ইন শা-আল্লাহ।
৫)৬ রাকাত নামায আদায় করার নিয়ম:
৬ রাকাত তিন সালামে আদায় করতে হবে, প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা ইখলাস ৭ বার পাঠ করতে হবে।
নামাযের শেষে ৫০ বার দরুদ শরিফ পাঠ করে আল্লাহ পাকের নিকটে দু'আ চাইবে, আল্লাহ পাক সমস্ত দু'আ কবুল করবেন ان شاء اللہ ইন শা-আল্লাহ।
বিঃ দ্রঃ: যদি ফরয নামায কাযা থাকে, তাহলে নফল এর পরিবর্তে কাযা নামায আদায় করা জরুরি ও উত্তম।
কারণ নফল নামায আদায় না করলে কোন গুনাহ হবে না, কিন্তু যদি কাযা নামায আদায় না করা যায়, তাহলে অত্যান্ত গুনাহের অধিকারী হতে হবে।

কুরআন শরীফ পাঠ করার নিয়ম :-
এই রাত্রে বেশি বেশি করে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত। বিশেষ করে নিম্নে বর্ণিত সূরা ও আয়াতগুলি তেলাওয়াত করা উত্তম।

(১) সূরা ফাতিহা (২) সূরা ইয়াসিন (৩) সূরা ইখলাস ৩ বার (৪) সূরাতুল কাফেরুন ৪ বার (৫) সূরাতুল যিলযাল ২ বার (৬) সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত (৭) সূরা কাহাফের প্রথমের তিন আয়াত । এই সমস্ত সূরা ও আয়াতের অসংখ্য ফযিলাত বর্ণনা করা হয়েছে।

তাসবিহ ও যিকর:-

(১)আল্লাহ পাকের তাসবিহ ও বেশি বেশি করে যিকর এবং দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
(২) মৃত্যু ব্যক্তিবর্গের জন্য সাদকা ও খায়রাত করা এবং সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ক্ষমা চাওয়া, আল্লাহ পাকের নিকট তৌবা ও ইস্তিগফার করা অত্যন্ত পূন্যের কাজ।
একটি হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে  হযরত আনাস রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন হুজুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাত্রে কোন ব্যক্তি যদি এবাদত করে তাহলে তার জন্য ১০০ বছরের এবাদাত এর   সাওয়াব পাবে এবং যেই ব্যক্তি ওই দিন রাত্রে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবে এই নিয়মিত ভাবে প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পরে যে কোন সূরা মিলাবে দুরাকাত করে পূর্ণ করবে।
এইভাবে ১২ রাকাত হয়ে যাবে তারপরে ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, ১০০ বার আস্তাগফিরুল্লাহ এবং ১০০ বার দরুদ শরীফ পাঠ করে দুনিয়া এবং আখেরাতের জন্য যা যা কিছু চাইবে এবং পরের দিন রোজা রাখবে। তাহলে আল্লাহ তাবারক তা'আলা তার সমস্ত দুআ কবুল করবে।তবে দোয়াটী কোন হারাম কাজে কিংবা নাজায়েজ কাজের জন্য না হয়।
   টীকা: সুতরাং রজব মাসের এই একটি রাতে যদি আমারা নিয়মিত ভাবে আমল টী করতে পারি তাহলে ইন শা আল্লাহ আল্লাহ আমাদের আমল নামাকে গুনাহ থেকে পরিষ্কার করে দেবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আমল টী করার তাওফীক দান করুন।

আপনি কি জানেন শবে বারাত, শবে কদর এবং শবে মেরাজ ইত্যাদির নফল নামায গুলি কাদের জন্য*

শবে বারাত, শবে কদর, শবে মেরাজ ও আসুরার রাত ইত্যাদি, যে সমস্ত নফল নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে, সেই নফল নামায গুলি সকলের জন্য নয়, বরং এই সমস্ত নফল নামায গুলি, ঐ সমস্ত সুভাগ্যবান নামাযীদের জন্য, যাঁদের জীবনে এক ওয়াক্তেরও ফরয নামায কাযা নেই। কারণ শরীয়াতের বিধান অনুযায়ী নারী হোক বা পূরুষ হোক, সাবালোক সাবালিকা হওয়ার পর, যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের অতীত জীবনের ফরয আমল গুলি আদায় না করবে, ততক্ষন পর্যন্ত, তার কোন নফল আমল কবুল হবে না।
এ প্রসঙ্গে মুসনাদ আহমাদ খণ্ড - ৪, পৃষ্ঠা ২৬৮ এবং সুনানে কুবরা লিল বৈহাকি ইত্যাদি কিতাবে আলোচনা করা হয়েছে। এবং এই প্রসঙ্গে মালফুয শরীফের ১ম খন্ডের ৬২ পৃষ্ঠায় লিখা আছে যে,
*جب تک فرض ذمہ پر باقی رہتا ہے کوئی نفل قبول نہیں کیا جاتا*
*অর্থাৎ :-* যতক্ষন পর্যন্ত আপনার ফরয আমল বাকি থাকবে, ততক্ষন পর্যন্ত কোন নফল আমল কবুল হবে না
এই কারণে উল্লেখিত পবিত্র রাত্রি গুলিতে বিশেষ পদ্ধতিতে, নফল নামায গুলি না পড়ে, তার পরিবর্তে নিজ নিজ অতীত জীবনের ফরয নামায গুলি পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি।এই প্রসঙ্গে সুন্নী বেহেশ্তী যেওর নামক কিতাবের ৯৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে,
*قضا نمازیں نوافل سے اہم ہیں،یعنی جس وقت نفل پڑھتا ہے انہیں چھوڑ کر انکے بدلے قضا نمازیں پڑھیں تاکہ بری الذمہ ہو جاے*
অর্থাৎ :-ফরয নামাযের কাযা আদায় করা নফল নামায পড়ার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং নফল জায়গাতে যদি কাযা ফরজ গুলি পড়ে নেওয়া হয় তাহলে ফরজ আদায়ের দায়িত্ব থেকে মুক্ত পাওয়া যাবে।
গুলিস্তানে শরীয়াত নামক কিতাবের ২৩৭ পৃষ্ঠায়, বাহারে শারীয়াত নামক কিতাবের চতুর্থ খন্ডের ৪৭ পৃষ্ঠায় একই ধরনের কথা লেখা আছে।
উদয়, অস্ত ও দ্বিপ্রহর ছাড়া, যে কোন সময় নামায পড়া যায়। কারণ এই সময়ে সিজদা করা হারাম। এই তিনটি সময় ছাড়া যখনই সময় পাবেন, তখনই কাযা নামায আদায় করে নিবেন।
বেতের সহ প্রতি দিনের মোট কুড়ি রাকাত করে কাযা নামায আদায় করতে হবে।তাহলে আপনি নিজেই হিসাব করে দেখেনিন, আপনার জীবনে, কত দিনের, কত মাসের, বা কত বছরের কত রাকাত নামায কাযা আছে। *নিঃশ্বাসকে বিশ্বাস নেই, কাজেই যত দ্রুত সম্ভব নফলের জায়গায়, ঐ কাযা ফরয নামায গুলি আদায় করুন।
বিঃ দ্রঃ :-তারাবীর ২০ রাকাত ও পাঁচ ওয়াক্তের ১২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামায বাদ দিয়ে, তার জায়গায় কাযা নামায আদায় করা জায়েজ নয়। যাদের অনেক বেশী নামায কাযা আছে, তাঁদের নিজ নিজ অতীত জীবনের সেই  কাযা নামায আদায় করার কিছু সহজ ইসলামী পদ্ধতি আছে যেগুলি নিম্নে দেওয়া হলো
◆ রুকু ও সাজদায় শুধু ১বার করে তসবিহ পড়লেও হবে।
◆ ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পরিবর্তে তিন বার অথবা শুধু ১বার সুবহানাল্লাহ বললেও হবে।
◆ শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর, শুধু ১বার আল্লাহুম্মা সল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলেহি, পড়লেই যথেষ্ট হবে।
◆ বেতেরের তৃতীয় রাকাতে দুয়া কুনুতের পরিবর্তে শুধু তিনবার রব্বিগ ফিরলী পড়া যাবে।
বিস্তারিত জানতে দেখুন মালফুয শরীফ ১ম খন্ডের ৬১ ও ৬২ পৃষ্ঠা, সুন্নী বেহেশ্তী যেওর নামক কিতাবের ৯৪ পৃষ্ঠা।
★ মাসআলা :- কাযা নামায গোপনে পড়া দরকার। তার কারন হলো, পাপকে প্রচার করাও পাপ। এই প্রকার কাযা নামাযের বাংলা ভাষায় এই ভাবে নিয়াত করা যায়।
আমি আমার জীবনের অমুক ওয়াক্তের এত রাকাত প্রথম ফরয কাযা বা প্রথম ওয়াজিব কাযা নামাযের নিয়াত করেছি। কিন্তু প্রত্যেক বার অবশ্যই প্রথম শব্দটা দিতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা সকলকে জানার বোঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।

পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ এর নফল নামাজের  নিয়ম :-
এই পবিত্র রাতে দুই বা চার রাকাতের নিয়ত করে যত সম্ভব নফল নামাজ আদায় করা যাবে তত ভালো। হাদীস পাকের বর্ণনা অনুযায়ী কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম।
নামাজের নিয়ত :-
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লালাহি ত-আলা রাক আতাই সলাতি লাইলাতুল মেরাজে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ্বারিফাতি আল্লাহু আকবার।
১২ রাকাত নামাজ আদায় করার নিয়ম:
১২ রাকাত নামাজ ছয়টি সালামে আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পর অন্য যে কোনো সুরা পাঠ করতে হবে।

১২ রাকাত নামাজ আদায় করার পরে ১০০ বার এই তাসবিহ-টি পাঠ করতে হবে।
سُبْحَانَ اللَّهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ ، وَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ، وَاللَّهُ أَكْبَر"
সুবহানাল্লাহি ওয়াল-হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
এবং ১০০ বার
"أَسْتَغْفِرُ اللهَ رَبِّيْ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وَّأَتُوْبُ إِلَيْهِ"
“আসতাগ-ফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি যামবিউ অ-আতুবু ইলাইহি”পাঠ করতে হবে।

★  এবং ১০০ বার নিজের জানা যে কোনো দরুদ শরিফ পাঠ করার পরে হাত তুলে দুয়া করবে। এবং দুনিয়া ও আখিরাতের যা চাওয়া রয়েছে, তা আল্লাহর কাছে চাইবে  ان شاء اللہ ইনশাল্লাহ সমস্ত দুয়া কবুল করা হবে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter