ঈমাম আজাম আবু হানীফা (রহঃ)
এই সৌন্দর্যময় পৃথিবীতে অনেক মুজতাহিদীন এসেছেন। যিনাদের মৃত্যুর পরেও তিনাদের অস্তিত্ব বজায় রাখে। তাদের মধ্যে একজন হলো ঈমাম আজাম আবু হানীফা (রহঃ)। যিনি তিনার পুরো জীবন কে আল্লাহর রাস্তায় ও ইসলামের রাস্তায় অতিবাহিত করেছেন। ঈমাম আজাম আবু হানীফা (রহঃ) ইসলাম ধর্মের চার ঈমামের মধ্যে একজন বড়ো ঈমাম ছিলেন। আপনার নাম নু’মান বিন সাবিত বিন যুতা বিন মাহ । ছদ্মনাম আবু হানীফা , উপাধি ঈমাম আজাম।
জন্ম : আপনার জন্মের উপরে ৩টি কতা রয়েছে। প্রথম কথা অনুযায়ী আপনার জন্ম ৮০ হিজরি তে হয়। আপনার নাতি ইসমাইল বিন হাম্মাদ বলেন ولد جدّ في سنة ثمانين ھ অর্থাৎ আমার দাদা জান ৮০ হিজরি তে জন্ম হয়েছেন এবং কিছু উলমাগণও এই কথাটিই বলেন। দ্বিতীয় কথা অনুযায়ী আপনার জন্ম ৭০ হিজরিতে হয়। আল্লামা বাদরুদ্দিন আইবানী উমদাতুল ক্বারী বইয়ে আবু হানিফার জন্ম তারিখ নকল করতে গিয়ে বলেন وقيل مولده سنة سبعين
পড়াশোনা ও লালনপালন : ইমাম আবু হানীফা কুফায় বড়ো হয়। সাবালিগ হলে বংশগত কর্ম ব্যবসাতে লিপ্ত হন। ইতিমধ্যে কুফার বিখ্যাত ইমাম হযরত হাম্মাদ(রহঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হয়। তিনি আপনার বুদ্ধি কে চিন্তে পেরে আপনাকে শিক্ষা অর্জন করার জন্য উলামাগণদের মজলিসে ভর্তি করে দেন। প্রথমত আপনি ইলমে কালামের দিকে মনযোগ দেন আর অনেক শিক্ষা অর্জন করেন। কিছু সময় পর্যন্ত আপনি তর্ক বিতর্ক তে ব্যস্ত থাকার পর আপনি অনুভাব করলেন যে সাধারন মানুষ, উলামা ও বিচারকদের জন্য ফিক্বহা একান্ত দরকার। অতঃপর আপনি ইলমে কালাম থেকে নিজের মনযোগ সরিয়ে দিলেন। আপনার এই ভাবনাটি একটি ঘটনা থেকে বেশি তাক্বওয়া পাওয়া যায়, একসময় আপনার কাছে একটি মহিলা এসে জিজ্ঞাসা করে যে সুন্নত অনুযায়ী তালাক দেওয়ার কী হুকুম আছে? আপনি উত্তর না বলতে পেরে ওনাকে বল্লেন যে হযরত হাম্মাদ(রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করো। উনি যা বলবেন সেটা আমাকেও বলে দিবেন। অতঃপর সেই মহিলাটি তেমনিই করল। ইমাম আবু হানীফা কে এই ঘটনা থেকে অনেক লজ্জা বোধ হলো এবং ইমাম হাম্মাদ(রহঃ)-এর শিক্ষা মজলিসে অংশ গ্রহন করলেন।
ইমাম আজামের পরহেজগারি : মুসলমানদের মধ্যে কে এমন আছে যে ইনার নাম শুনে নি বা ইনাকে চিনেনা? কেউ নাই। ইনি ৮০০ (খ্রিঃ)-এর একজন বিখ্যাত ও বড়ো আলেম ছিলেন। কোটি কোটি মুসলিম তিনাকে ধর্মীয় শীক্ষার একজন বড়ো ইমাম ‘ইমামে আজাম’ মানতো। ইমামে আজাম আবু হানীফা (রহঃ) অতিরিক্ত ইবাদতকারি ও পরহেজগার ছিলেন। তিনি সাংসারিক লেনদেনে কোনো নাযায়েজ বা হারাম টাকা ব্যবহার করতেন না। কোনো মামুষের কাছ থেকে এক টাকাও লাভ করতেন না। ব্যবসা বানিজ্যে কোনো মানুষের কাছে আসল দাম ছাড়া বেশি নিতেন না।
এক সময় এক ক্রেতা থান কিনার জন্য ঈমাম আবু হানীফা(রহঃ)-র দোকানে আসে। ঈমাম আবু হানীফা নিজের কর্মচারি কে বলেছিলেন যে এই থানের মধ্যে কিছু দোষ আছে এই বলে বিক্রি করবে এবং থানের অর্ধেক দাম নেবে যদি সে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু কর্মচারী ওই ক্রেতা কে থানের দোষ বলা ভুলে যায় আর পুরো দামে বিক্রি করে দেয়। কিছুপর ঈমাম আবু হানীফা (রহঃ) এসে ওই কর্মচারী কে জিজ্ঞাসা করলেন-ওই থানটি বিক্রি হলো কি হলো না? সে বলল- বিক্রি তো হল কিন্তু দোষটি বলা হয়নি। তখন ঈমাম আবু হানিফা (রহঃ) ওই ক্রেতা মানুষটিকে খুজে তার বেশি টাকাটা ফিরিয়ে দিলেন। এটি হল ঈমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর পরহেজগারী।
ফুক্বাহাত : ইসলামি ফিক্বহায় ইমাম আবু হানীফা(রহঃ) অনেক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ফিক্বহায় তিনি এমন একটি স্থানে ছিলেন যেই স্থানে পৌছানো শুধু কঠিনি নয় সেটা অসম্ভব। ঈমাম আবু হানীফা (রহঃ) নিজের স্থান অর্জন করার জন্য অনেক আসহাবে রসুলের সাঁথে সাক্ষাত করেছেন।
প্রথমে আপনি হাদিস শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিলেন । হাদিস শিক্ষা অর্জন করে আপনি অনেক খুশি হতেন । এই জন্যে আপনি বহু জায়গাই ভ্রমন করেছেন যেমন শাম দেশ ও ইরাক ইত্যাদি । আপনি ইল্মে ফিকহায় অনেক বিশেষজ্ঞ ছিলেন কারণ আপনি হাজার হাজার হাদিসের শিক্ষা অর্জন করে নিয়ে ছিলেন । আপনি ফিকহার শিক্ষা হজরত হাম্মাদ (রাঃ)-এর কাছে অর্জন করেছিলেন । আপনার পরিচয় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরেছিল জার জন্য মানুষ দূর দূর থেকে আপনার কাছে ফিকহার মাসলা জিজ্ঞাসা করতে আসত ।
এক সময় আপনি পাঠ পড়াচ্ছিলেন একজন মহিলা আপনার কাছে আপেল ও চাকু নিয়ে এল। আপনি সেই আপেল টিকে দু টুকরো করে তাকে ফিরিয়ে দিলেন । উপস্থিত মানুষ ভাবতে লাগলেন যে হাদিয়া হওয়া সত্তেও সেটি কে গ্রহন না করে কেন ফিরিয়ে দিলেন ? তখন আপনি তাদের বললেন যে ওই মহিলাটি হাদিয়া দিতে আসেনি বরং একটি মসলা জিজ্ঞাসা করতে এসেছিল যে মহিলা অপবিত্র হলে খুনের রং পরিবর্তন হয়ে যায় , ঠিক তেমনি আপেলের বাইরে হয়েছে। কিন্তু পবিত্রের রং কী? তাই আমি আপেলটি কে দু টুকরো করে সাদা রং টি বার করে ওনাকে দিয়ে দিলাম, কারণ সাদা পবিত্রের রং ।
মৃত্যু : ইমাম আজাম আবু হানিফা (রাঃ) ১৫০ হিজরিতে বাগদাদ শহরে মৃত্যু বরণ করেন । আপনার প্রথম যানাজার নামাযে ৫০ হাজার মানুষ অবদান রাখে ।