চতুর্থ  খলিফা: হযরত আলী ( রাঃ)

সূচনা:  

ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা:) এর ইন্তেকালের পরে মুসলিম দুনিয়ায় এক মহা দুর্যোগের সূত্রপাত ঘটে। ইসলামী রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ গোত্র দ্বন্দ্ব পুনরায় মাথা চারা দেয়। চারিদিকে অশান্তি সৃষ্টি হয়। ওসমান (রা:) এর হত্যার প্রতিশোধ  নেওয়ার জন্য ভীষণ ভাবে জোরদার হয়। হজরত আলী (রা:) কে খলিফা নির্বাচনে সমস্ত অবস্থা এক নতুন পথে মোড়  নেয়। নতুন খলিফা সাহস ও শক্তি দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অবস্থা সামাল দেওয়ার মত ছিল না। কারণ খেলাফতের  স্থায়িত্ব ও  সংকটময়  ছিল।
    
বাল্যকাল :       

   ৬০০  খ্রিস্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কোরায়েশ  বংশে হজরত আলী (রাঃ)  জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম আবু তালেব ও মাতার নাম বিবি ফাতেমা। আবু তালেব ছিলেন নবী ( সাঃ) - এর  আপন চাচা।
     দাদা আবু মুত্তালিবের ইন্তেকালের  পরে নবী (সাঃ) -কে   তিনি  সস্নেহে লালিত পালিত করেন। নবী (সাঃ)-এর  আপন চাচাতো ভাই হজরত আলী (রাঃ)। এই কারনেই নবীজির  সঙ্গে হজরত আলী ( রাঃ)-এর  সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। যখন নবীজি(সাঃ) নবুয়াতপ্রাপ্তহন তখন হজরত আলী (রাঃ) -এর  বয়স দশ বছর তাই তিনি প্রথম থেকেই ইসলামের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। 
যুবক পুরুষের মধ্যে তিনিই প্রথম পুরুষ যিনি তৎকালীন আরবে  ইসলাম ধর্মকে দ্বিধাহীন ভাবে মেনে নেন।  যেদিন নবীজি  মক্কা থেকে মদিনায় হিযরত  করেন তখন নবীজি আলী (রাঃ) -কে  নিজের বিছানায় শুয়ে থাকতে বলেন। তিনি ওই অনুরোধ থেকে পিছিয়ে আসেনি এটা জেনেও যে মৃত্যু নিশ্চিত। পরের দিন শত্রুরা নবীজি কে খুঁজতে খুঁজতে ঘরে এসে দেখে নবীজির বিছানায় আলী ঘুমিয়ে আছেন। 

মদিনার জীবন: 
           
তারপর  নবীজির নির্দেশে তিনিও  মদিনায় হিযরত  করেন।  হজরত আলী (রাঃ) ছিলেন পয়গম্বরের  ছায়া  স্বরূপ। 
মুহাম্মদ (সাঃ)- এর  কন্যা বিবি ফাতেমার  সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। 
তিনি ছিলেন প্রচুর সাহসী, শক্তিশালী, বিনয়ী ও সরল।  তিনি ইসলামের সততা  নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। 
প্রতিটি যুদ্ধে তিনি তাঁর সাহসিকতার পরিচয় দেন। 
অসীম বীরত্বের  জন্য তিনি 'শেরে-ই- খোদা '  নামে পরিচিত।  নবীজি  তাঁকে ' লা- ফাতাহ- ইল্লা -আলী '  উপাধি দেন। আরবের শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন  অন্যতম। হুদাইবিয়া  সন্ধি পত্র তিনিই তৈরি করেন। ইসলাম ধর্ম ও ইসলামী সাম্রাজ্যের  যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য তিনি সব রকম ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন। 


খেলাফত নির্বাচন  :
         
হজরত ওসমান (রাঃ) এর দুঃখ জনক শাহাদাতের  পরে  আরব দুনিয়ায় অকাল কেয়ামত ও বিশৃঙ্খলা ছাড়িয়ে পড়ে।
রাজধানী মদিনা আয়ত্তের  বাইরে চলে যায়। 
এমন সময়ে চতুর্থ  খলিফা নির্বাচন নিয়ে মহা অনিশ্চয়তা  দেখা দেয়। 
কয়েক দিন পরে মদিনায় ইবনে সাবা  ও গন্যমান্য 
ব্যাক্তি গণ ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলী( রাঃ) - কে খলিফা পদে নিয়োগ করেন। 
      


হজরত আলী (রাঃ)-এর  চরিত্র ও কৃতিত্ব:
     
হজরত আলী (রাঃ) ছিলেন ইসলামের সেবক ও ধৈর্য্যের প্রতীক। 
বীর হামজা(রাঃ)  ও ওমর (রাঃ) - এর  সমকক্ষ  ছিলেন তিনি । হযরত আলী (রাঃ)   ছিলেন ইসলামের সরলমতী একজন সেবক। 
ইসলামের দুর্দিনে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন।  হজরত আলী (রাঃ) -এর দারিদ্র ছিল জীবনের প্রধান বন্ধু। তাই হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তিনাকে সাহায্য করতেন । তিনি ইসলামের শক্তিশালী  সেবক ছিলেন তাই আলী কে শেরে-খোদা বলেন। তিনি কোরান  ও হাদিস ব্যাখ্যা করে পড়তে পারদর্শী ছিলেন। তাই নবী মুহাম্মদ ( সাঃ)  হজরত আলী (রাঃ)-কে বাব-উল-ইলম  বা জ্ঞানের দরজা বলে অভিহিত করেছেন। হজরত আলী (রাঃ)-এর  ইন্তেকালের পরে তাঁর জ্যেষ্ঠ  পুত্র হাসান (রাঃ) খলিফা পদে নিযুক্ত হন।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter