বিহার ও প্রতিশ্রুতির ফাঁদ: ইসলামি ন্যায়নীতি ও নাগরিক দায়িত্বের আলোকে এক বিশ্লেষণ
ভূমিকা: প্রতিশ্রুতির রাজনীতি ও বিহারের বাস্তবতা
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের বিহার রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইনসভা নির্বাচন। ১৪ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণার আগে পুরো রাজ্যজুড়ে এখন নির্বাচনী উত্তেজনা, প্রতিশ্রুতির বন্যা ও রাজনৈতিক কৌশলের প্রতিযোগিতা। প্রতিটি দল উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা সংস্কার, সংখ্যালঘু সুরক্ষা ও রেশন সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে— যেন এবারই বিহারের দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দুর্নীতি মুছে যাবে।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বিহার বারবার একই প্রতিশ্রুতির জালে বন্দি হয়েছে। নির্বাচনের সময় যত জোরালো শ্লোগান ওঠে, নির্বাচনের পর ততই সেই স্বপ্ন ভেঙে পড়ে বাস্তবতার কঠিন মাটিতে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কেবল রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়; বরং এক গভীর নৈতিক সংকট। যেখানে নেতৃত্বের দায়িত্ব (আমানত), সততা ও জবাবদিহিতা হারিয়ে গেছে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও স্বার্থের রাজনীতিতে।
নেতৃত্ব ইসলামে কোনো সুবিধা নয়, বরং একটি ভারী দায়িত্ব। যখন এই দায়িত্ব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রভাবশালী লোভে কলুষিত হয়, তখন সমাজের নৈতিক ভিত্তি নড়ে যায়। তাই প্রশ্ন থেকে যায়— বিহারের জনগণ কি আবারও প্রতিশ্রুতির মোহে অন্ধ হবে, নাকি ইসলামের ন্যায়নীতি ও নাগরিক সচেতনতার আলোকে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেবে? এখন সময় এসেছে বিবেকের রাজনীতি ফিরিয়ে আনার, যেখানে প্রতিশ্রুতির নয়, নৈতিকতার জয় হবে।
ইসলামে নেতৃত্ব ও ওয়ালায়াতের ধারণা
ইসলামে নেতৃত্ব বা ওয়ালায়াত (الولاية / الإمارة) কোনো সম্মানের আসন নয়; বরং এটি এক বিশাল দায়িত্ব ও আমানত। নেতৃত্ব মানে হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, জনগণের কল্যাণে কাজ করা এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন যেন তোমরা আমানত তাদের নিকট পৌঁছে দাও, যারা এর যোগ্য।”
(সূরা আন-নিসা ৪:৫৮)
এই আয়াতে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে নেতৃত্ব এমন ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত, যিনি যোগ্য, ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত। ইসলাম নেতৃত্বকে ক্ষমতার প্রতীক নয়, বরং জনগণের সেবার প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচনা করে। এজন্যই নবী করিম ﷺ বলেছেন—
"إِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ"
“যখন আমানত (দায়িত্ব) অযোগ্যদের হাতে সমর্পিত হবে, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করো।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৩১)
এই হাদিস নেতৃত্বের প্রকৃত মানে ও এর গুরুত্বকে গভীরভাবে প্রকাশ করে। যখন নেতৃত্ব অযোগ্য, স্বার্থান্বেষী বা দুর্নীতিগ্রস্তদের হাতে চলে যায়, তখন সমাজে ন্যায়বিচার লোপ পায়, দুর্বলরা নিপীড়িত হয়, আর সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
ইসলামী ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসন এক আদর্শ উদাহরণ— যেখানে নেতৃত্ব ছিল দায়িত্ব, ক্ষমতা নয়। হজরত উমর (রা.) বলেছেন, “যদি ইউফ্রেতিস নদীর তীরে একটি খচ্চরও হোঁচট খায়, আমি ভয় করি আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন কেন তার রাস্তা সমান করা হয়নি।”
এই বোধই নেতৃত্বের আসল রূপ— জবাবদিহিতা ও ভয়ভীতির সঙ্গে দায়িত্ব পালন। তাই ইসলামী দৃষ্টিতে নেতৃত্ব নির্বাচন মানে হচ্ছে এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া, যিনি আল্লাহভীরু, ন্যায়নিষ্ঠ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। যখন সমাজ এমন নেতৃত্বকে বেছে নেয়, তখনই প্রকৃত উন্নয়ন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাজনীতিতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও কোরআনের সতর্কবার্তা
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতি কোনো ক্ষমতার খেলা নয়; এটি জনগণের প্রতি এক মহান দায়িত্ব। প্রতিশ্রুতি হলো জনগণের সঙ্গে করা একটি চুক্তি (ʿahd), যা পূরণ করা ঈমানের অংশ। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে এই চুক্তি প্রায়ই ভোট পাওয়ার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের মঞ্চে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, উন্নয়নের স্বপ্ন কিংবা সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার—সবই অনেক সময় নির্বাচন-পরবর্তী বাস্তবতায় হারিয়ে যায়।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন:
وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا
“তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”
(সূরা আল-ইসরা, ১৭:৩৪)
আরেক স্থানে বলেন:
كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ
“তোমরা যা করো না তা বলা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত।”
(সূরা আস-সাফ, ৬১:৩)
নবী করিম ﷺ আরও বলেছেন:
"آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ..." — “মুনাফিকের তিনটি লক্ষণ আছে: যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, প্রতিশ্রুতি দিলে তা ভঙ্গ করে, এবং আমানত পেলে তাতে খিয়ানত করে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩)
এই আয়াত ও হাদিসগুলো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পবিত্রতা স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রতিশ্রুতির অপব্যবহার শুধু নৈতিক নয়, আধ্যাত্মিক অপরাধও বটে। সমাজের বিশ্বাস নষ্ট হয় তখনই, যখন নেতারা আল্লাহর সামনে দায়বদ্ধতার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। তাই ইসলামী রাজনীতি বলে— নেতৃত্ব মানে জনগণকে সেবা করা, নয়তো আল্লাহর বিচারের সম্মুখীন হওয়া।
দরিদ্রতা, শ্রেণিবৈষম্য ও ভোট রাজনীতির ফাঁদ
বিহারের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে দারিদ্র্য ও শ্রেণিবৈষম্য। রাজ্যের প্রায় অর্ধেক জনগণ আজও বেকারত্ব, শিক্ষা সংকট, কৃষি অনিশ্চয়তা ও স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এই সামাজিক দুরবস্থাকে রাজনীতির মঞ্চে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের আবেগী ফাঁদ হিসেবে— যেন ভোটই হবে মুক্তির একমাত্র উপায়।
ইসলামী দৃষ্টিতে এটি গভীরভাবে নিন্দনীয়। ইসলাম কোনো সমাজে দারিদ্র্যকে শোষণের হাতিয়ার বানানোর অনুমোদন দেয় না। বরং কোরআন মানুষকে সতর্ক করেছে অন্যায়ের সাথে আপস না করতে:
﴿وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ﴾
“তোমরা অত্যাচারীদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তা না হলে আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে।”
(সূরা হুদ, ১১:১১৩)
এই আয়াত আজকের ভোট রাজনীতির প্রেক্ষিতে এক কঠোর নৈতিক বার্তা দেয়— যে নেতা জনগণকে প্রতারণা করে, ন্যায়বিচার রক্ষা করে না, দরিদ্রের কষ্টকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানায়, তাকে সমর্থন করা ইসলামী দায়িত্বের পরিপন্থী।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
"انصر أخاك ظالمًا أو مظلومًا" — “তোমার ভাই যদি অত্যাচারিত হয়, তাকে সাহায্য কর; আর যদি সে অত্যাচার করে, তবে তাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখো।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৯৫২)
অতএব, ইসলামী ন্যায়বোধ বলে— ভোট হলো এক নৈতিক দায়িত্ব, যা এমন নেতৃত্বকে সমর্থন করতে হবে যারা সমাজের দুর্বল শ্রেণির উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ন্যায়বিচারের বাস্তব প্রতিশ্রুতি দেয়। দারিদ্র্যকে ভোটের অস্ত্র নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের আমানত হিসেবে দেখতে শেখায় ইসলাম।
নাগরিকদের দায়িত্ব: ভোট একটি আমানত
ইসলামে প্রতিটি নাগরিক সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বহন করে। ভোট দেওয়া কেবল রাজনৈতিক অধিকার নয়; এটি এক দীনি আমানত (religious trust), যার মাধ্যমে সমাজে নেতৃত্ব, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম আমানতের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছে। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا﴾
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন যেন তোমরা আমানত তাদের নিকট পৌঁছে দাও, যারা এর যোগ্য।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:৫৮)
এই আয়াত অনুযায়ী ভোট দেওয়া মানে হলো এমন ব্যক্তিকে ক্ষমতায় আনা, যিনি যোগ্য, ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত। ইসলাম কখনো অযোগ্য বা দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে সমর্থন করতে উৎসাহ দেয় না; বরং তাকে সমর্থন করা এক প্রকার নৈতিক অন্যায় হিসেবে গণ্য হয়।
নবী করিম ﷺ বলেছেন:
"كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ"
“তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষণাবেক্ষণকারী, এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৯৩; সহিহ মুসলিম, ১৮২৯)
এই হাদিস স্মরণ করিয়ে দেয়— একজন নাগরিক তার ভোটের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নেন, তার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবেন। তাই ভোট কোনো আবেগ, গোষ্ঠীগত প্রভাব বা স্বার্থপরতার বিষয় নয়; বরং এটি এক ইমানি পরীক্ষা।
বিহারের মতো দারিদ্র্য ও বৈষম্যে ভরা সমাজে ভোট হলো পরিবর্তনের হাতিয়ার। মুসলিম সমাজের উচিত এমন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া, যারা ন্যায়বিচার, শিক্ষা ও মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ﴾
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।”
(সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:৪২)
অতএব, ভোট প্রদান ইসলামী দৃষ্টিতে এক আমানত— যা ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজকে উত্তম পথে পরিচালিত করার প্রতিশ্রুতি। নাগরিক যদি এই দায়িত্ব অবহেলা করে, তবে তা কেবল রাজনৈতিক নয়, আখিরাতের ক্ষেত্রেও দায় সৃষ্টি করবে।
নৈতিক পুনর্জাগরণ: রাজনীতিতে ঈমান ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা
ইসলামী ইতিহাসে নেতৃত্বের মূল ভিত্তি ছিল ন্যায়, জবাবদিহিতা ও আল্লাহভীতি। নেতার দায়িত্ব ছিল কেবল শাসন নয়, বরং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর বিখ্যাত উক্তি—
“যদি ইউফ্রেতিস নদীর তীরে কোনো খচ্চরও হোঁচট খায়, তবে উমরকে জবাবদিহি করতে হবে কেন তার রাস্তা সমান করা হয়নি।”
— নেতৃত্বে দায়বদ্ধতার এক অনন্য উদাহরণ।
আজকের রাজনীতিতে এই মূল্যবোধের চরম অভাব দেখা যায়। ক্ষমতা ও স্বার্থের প্রতিযোগিতায় নৈতিকতা হারিয়ে গেছে, আর জনগণ রাজনীতিকে অবিশ্বাসের চোখে দেখছে। অথচ ইসলামি দর্শন অনুসারে শাসনব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘মাসলাহাহ’ (জনকল্যাণ)— এমন এক ব্যবস্থা, যা সমাজে ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা ও নৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
কোরআনে আল্লাহ বলেন:
﴿وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ﴾
“তোমরা পরস্পরকে সৎকাজ ও তাকওয়ায় সহায়তা করো।”
(সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:২)
অতএব, ইসলামী রাজনীতির পুনর্জাগরণের প্রথম শর্ত হলো ঈমানভিত্তিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা। যখন নেতারা আল্লাহভীতির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, তখনই সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন ও জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।
প্রতারণা ও অসত্য প্রচারণা: ইসলামী দৃষ্টিতে সামাজিক ক্ষয়
ইসলামে প্রতারণা, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। নবী করিম ﷺ বলেছেন:
"مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا"
“যে আমাদের প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০১)
রাজনীতিতে যখন ভোট আদায়ের জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, গুজব, অপপ্রচার বা বিভাজনের কৌশল ব্যবহার করা হয়, তখন তা শুধু নৈতিক অপরাধ নয়— ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে তা হারাম। এসব প্রচারণা সমাজে বিভ্রান্তি, ঘৃণা ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়, যা উম্মাহর ঐক্যকে দুর্বল করে।
একজন মুসলমানের কর্তব্য হলো সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, না যে কোনো প্রতারণার হাতিয়ার হয়ে যাওয়া। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ﴾
“তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ে দিও না।”
(সূরা আল-বাকারা, ২:৪২)
অতএব, রাজনীতিতে সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী সমাজের নৈতিক দায়িত্ব।
উপসংহার: পরিবর্তনের ডাক
আল্লাহ বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ
“আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে।”
(সূরা আর-রা‘দ ১৩:১১)
বিহারের মুসলমান ও সাধারণ নাগরিকদের সামনে আজ এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব— তারা কি আবারও প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়বে, নাকি নৈতিক নেতৃত্বের পথে হাঁটবে? ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্বের নির্বাচনই প্রকৃত সামাজিক সংস্কারের প্রথম ধাপ।
রাজনীতির মঞ্চে মিথ্যা, লোভ ও বিভাজনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হবে আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। কারণ, ইসলাম শেখায়— ন্যায় ও সত্যের উপর দাঁড়ানোই হচ্ছে প্রকৃত বিজয়, আর সেটিই “মাদানির বিজয়”-এর মতো এক নৈতিক বিপ্লবের সূচনা হতে পারে, যেখানে শ্রেণি ন্যায় ও ধর্মীয় পরিচয় একত্রে সমাজকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।