ইসমাইল হানিয়েহের মৃত্যু এবং হামাসের নতুন নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার
হামাস হল একটি ফিলিস্তিনি ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং গাজা উপত্যকার শাশক যারা ২০০৭ সালে ইসরায়েলকে হঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এরপর ইসরায়েলের সাথে রণ ক্ষিতে উপবিষ্ট হয়ে ইসরায়েলের দিকে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করার জন্য উৎসাহ দিয়েছে। জবাবে ইসরায়েলও বারবার হামাসকে বিমান হামলার মাধ্যমে আক্রমণ করেছে এবং মিশরের সাথে একজোট হয়ে ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকাকে অবরোধ করে রেখেছে। ইসরায়েল বলছে তারা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই অবরোধ দিয়ে রেখেছে। মূলত ইরান এক দেশ যে হামাসকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে, যদিও ইসরায়েল এর পাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অনেক প্রভাবশালী দেশ হামাসকে একটি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এতদ্বারা এই প্রবন্ধটি হামাসের হিজবুল্লাহ দলের সিনিয়র সামরিক কমান্ডার ইসমাইল হানিয়ে ইসরায়েলি হামলায় কিভাবে নিহত হয়েছে তার বিস্তারিত আলচনা করবে।
ইসমাইল হানিয়ে কে?
ইসলামের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করে দেন ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়ে, যিনি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনার ডাক নাম হহল আবু আল-আবদ, এবং তিনি ছিলেন হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
অবস্থাভেদে তিনাকে ইসরায়েল ১৯৮৯ সালে তিন বছর বন্দী করে রাখ, কিছু বছর পর তিনাকে লেবাননের মধ্যকার একটি নো-ম্যানস-ল্যান্ডে নির্বাসিত করা হয়। সেখানে তিনি ১৯৯২ সালে কিছু হামাস নেতার সাথে ভায়াভাহ পরিস্থিতিতে একটি পুরো বছর কাটিয়েছিলেন। নির্বাসন বাসি হাওয়ার পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ১৯৯৭ সালে হামাস আন্দোলনের নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, যা তার অবস্থানকে আরও শক্ত পক্ত করল তোলে, যার ফলে ২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হামাস তিনাকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত করে, এবং একই মাসের ২০ তারিখ তাকে নিযুক্ত করা হয়।
এক বছর হতে না হতেই ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসমাইল হানিয়েকে তার পদ থেকে পদচ্চূত করেন, কারণ গাজা উপত্যকায় এক সপ্তাহের মধ্যে আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করে, এমনকি হানিয়ে তাদের সাথে অনেক বার সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি ২০১৭ শালের ৬ মে পর্যন্ত হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন, কিন্তু হাঠাৎ ২০২৪ সালের ২ আগস্ট বুধবার তিনি ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন।
ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত
মঙ্গলবার রাতে ইসরাইল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা কারায় যার কারণে ইরান-সমর্থিত সশস্র গ্রুপ হিজবুল্লাহর সিনিয়র সামরিক কমান্ডার হানিয়ে এবং স্ট্র্যাটেজিক ইউনিটের প্রধান ফুয়াদ শুকুর নিহত হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।
হামাসের দাবী হল যে, ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ করার পর তাকে হত্যা করা হয়, এবং এই হামলায় লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীর শক্ত ঘাঁটি দাহিয়েহ শহরে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার কারণ বলে যে তারা ফুয়াদ শুকুরকে লক্ষ্য করেই বিমান হামলা করেছিল, এবং আর একটি কারণ বলে যে, হিজবুল্লাহ শনিবার ইসরায়েলের গোলান মালভূমিতে একটি রকেট হামলা করেছিল যাতে অন্তত ১২ জন মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই শিশু ছিল।
ওই রাতেই লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি ইসরায়েলিদের নিন্দা করেন, এবং বলেছিলেন যে, আক্রমন চালিয়ে বেসামরিক মানুষদের হত্যার এই ঘটনা সুস্পষ্ট আর্ন্তজাতিক আইনের লঙ্ঘন।
আবার একদিকে, ইসরাইলের রক্ষা মন্ত্রি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন যে, “হিজবুল্লাহ রেড লাইন অতিক্রম করেছে” ।
এই ইসরাইলি হামালার কারণে লেবাননে অনেকগুলি দায়িহে এলাকা বিধ্বস্ত হয়, এবং একদিকে গ্রুপ হিজবুল্লাহর সিনিয়র সামরিক কমান্ডার ইসমাইল হানিয়ের নিহত হয়, কিন্তু হামলায় ফুয়াদ শুকুর নিহত হয়েছেন কি-না তা সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। ইসরায়েলি কর্মকর্তা বিবিসির মার্কিন পার্টনার প্রতিষ্ঠান সিবিএস নিউজকে বলেছেন যে, ইসরায়েল বৈরুতে হামলার বিষয়টি আগেই মার্কিন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল।
ইসরায়েলি বিমান হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করেন যে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বড় যুদ্ধ এড়ানো যেতে পারে’, এবং আর বলেছেন যে, “এটা আরো বাড়ুক আমরা তা চাই না, আমরা সর্বত্র যুদ্ধ দেখতে চাই না”। তার পূর্বে দুইজন ইসরায়েলি নেতা বলে যে তারা হিজবুল্লাহর ওপর হামলা করলেও, তারা লেবাননকে সর্বাত্মক যুদ্ধে টেনে আনতে চায় না।
হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান যেমনটি ইরানের পূর্ব শহিদ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি জবাব দিয়েছেলেন, কিন্তু কাতার, চীন, জর্ডান ও লেবানন এই হামলার প্রতি নিন্দা জানিয়েছে। এই কিছু সময়ের মধ্যে ইরান সমর্থিত বাহিনীর দুইজন কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় ওই এলাকাই সংঘর্ষ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এতদ্বারা এর ফলে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তির আলচনা হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে উঠে এতসব হুমকি মধ্যে দিয়ে, কারন মি. হানিয়া ওই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন।
হামাসের নতুন নেতার নিয়োগ
ইস্মাইল হানিয়েহর মৃত্যুর পর হামাসের নতুন নেতা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত ইয়াহিয়া সিনওয়ার, অক্টোবর ৭ ইস্রায়েলের উপর হামলার চিন্তাশীল ব্যক্তি, যেখানে ইস্রায়েলের অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে এবং বেশ কয়েক জনকে বন্দী করা হয়েছে। সিনওয়ার হামাসের জন্য একটি কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছেন, এবং তার কৌশলগত উদ্দেশ্য একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছে, যা সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল দ্বারা গঠিত।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার কে?
১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিস শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে হামাসের একটি সদস্য ছিলেন। অবশেষে তিনি এই গোষ্ঠীর সুরক্ষা শাখার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে ইসরায়েল তাকে বন্দি করেছিল, অবশেষে তিনি ১২ জন সন্দেহভাজন সহযোগীকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছিলেন , যে জন্য তার নামকরণ করা হয় "খান ইউনিসের কসাই" হিসাবে, এবং দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যার অপরাধে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে ইসরায়েলি ফাঁদ থেকে বেঁচে যান তিনি, ২০১১ সালে হামাসের হাতে বন্দি এক ইসরায়েলি সেনার বিনিময়ে সিনওয়ারকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
অক্টোবর ৭ ইস্রায়েলের উপর হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি, যেখানে ১,১৯৮ জন ইস্রায়েলির মৃত্যু হয় এবং ২৫১ জনকে বন্দী করা হয়।
2024, মঙ্গলবার রাতে তেহরানে সন্দেহভাজন ইসরায়েলি হামলায় ইসমাইল হানিয়াহ নিহত হওয়ার পর জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের পরবর্তী প্রধান হয়ে নির্বাচিত হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ইসরাইলের হুমকি দেই, তারা সিনওয়ারের ওপর হামলা করবে , যেমনটি ইসমাইল হানিয়ার ওপর হামলা করেছিল।
উপসংহার
ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর হামাসের পরবর্তী প্রধান হয়ে নির্বাচিত হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। যিনি কৌশলগত উদ্দেশ্য একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন। অক্টোবর ৭ ইস্রায়েলের উপর হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। অতঃপর ইসরাইলের হুমকি দেই, তারা সিনওয়ারের ওপর হামলা করবে , যেমনটি ইসমাইল হানিয়ার ওপর হামলা করেছিল, আল্লাহ যেন তিনিকে তাদের ষড়যন্ত্র রক্ষা করে।