অফুরন্ত জ্ঞান মোহনায় ছেড়ে গেলেন মৌলানা ওয়াহিদুদ্দিন খাঁন
তাঁর কোনো এক পকেট বইয়ে পার্থিব জীবনের একটা সুন্দর উপমা পরেছিলাম:
মানুষের পুরো জীবনটাই পরীক্ষা। স্কুল পরীক্ষার মতোই এর সমস্ত নিয়মমালা, আদেশ-নির্দেশ। ঘড়ির কাঁটা নির্ধারিত সময়ে আসলেই ঘন্টা বাজবে। হেরফের হওয়ার কোন ব্যাপার নেয়। শুধু এবার ফলাফলের অপেক্ষা। প্রকাশিত হবে কে পাস আর কে ফেল।
অন্য একটা তাঁরই বয়ে দেখেছিলাম:
সৃষ্টির পর মানুষের জীবনের অন্ত নেয়। এই বিরামহীন মানব জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে; পার্থিব জীবন ও ঐশিক জীবন। এই দ্বিজীবনের বিভাজক হচ্ছে মারক মরণ।
আধ্যাত্মিক ও আত্মতিক জ্ঞান দর্শনে পরিপূর্ণ এবং ধার্মিক, নৈতিক ও তাত্ত্বিক বিদ্যায় ভরপুর পণ্ডিত মৌলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান ৯৬ বছর ধরে এই রকম মূল্যবান অসংখ্য চিন্তাধারার জোহর উত্তরাধিকারসূত্রে রেখে সীমাবদ্ধ পার্থিব জীবন পরিত্যাগ করলেন। যোগ্য জোহরিরাই মূল্য বুঝে পরিত্যাক্ত মুক্তধারার সুরা থেকে লাভবিত হবেন।
এছাড়াও এই পণ্ডিতের 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া' পত্রিকার 'স্পিকিং ট্রি' সংস্করণে আধ্যাত্মিক আলোচনায় ইসলামী প্রতিনিধিত্ব দেখে, পড়ে খুব গর্বিত বোধ করতাম। জানিনা আবার কোন মুসলিম সাহস এই শূন্যে পরে যাওয়া স্থান আবার পুনঃদখল করবে। ইনশা আল্লাহ তা শীগ্রই হবে।
উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভূমিষ্ট হওয়ার পর লেখক হয়ে, বক্তা হয়ে, কখনও আধ্যাত্মিক-নৈতিক নেতা হয়ে ভারতীয় মুসলিম প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শান্তি ও সহনশীলতার পথিক হয়ে বিশ্বে ইসলাম বাণী প্রচার করেন। কুরআন, তাফসীর, হাদীস ও তাসাউফ ও তরজুমা দিয়ে ধর্মীয় মুক্তা ছড়িয়ে দেন। ফলত: 'বিশ্বের ৫০০ সবথেকে প্রভাবশালী ব্যাক্তি' উপাধিতে উপনীত হন। নতুন নিয়মে সমাজ সেবায় সেরা হয়ে দাঁড়ান। ভারত সরকার সন্তুষ্ট হয়ে ২০০০ সালে পদ্মা ভূষণ ও ২০২১-এর জানুয়ারিতে পদ্মা বিভুষণ পুরস্কারে সম্মানিত করেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরুস্কারের অধিকারী এই ধিরকন্ঠে প্রভাবী বিজ্ঞ পণ্ডিত মৌলানা ওয়াহিদুদ্দিন খাঁন।
বহু মূল্যবান ও জ্ঞান তত্তে পরিপূর্ণ বইয়ের লেখক তিনি। ইসলাম, ধর্ম, অধিকার, নারী, সমাজ, আধ্যাতিকতা, নবী মুহাম্মদ (স:), মানবতা, স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক লেখনী রেখে গেছেন। আজীবন মানুষ জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণে তাঁর প্রবাহমান ধারা থাকে উপকৃত হবেন। আপাতে অন্তরে পরীক্ষার প্রস্তুতি তিনি সুন্দর করে গেছেন। আল্লাহ তাঁর ফলাফলও ভালো করেন, আমীন।