‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র পর এবার ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নিয়ে বিতর্ক
ভুমিকা :-
কেরালা স্টোরি নিয়ে বিতর্ক যখন দিন দিন বাড়ছে, ঠিক তখনই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে আরও একটি সিনেমা। ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর ট্রেলার এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ছবির ট্রেলার নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র মতো ছবির বিষয়বস্তু ঘিরে ঢের বিতর্ক হয়েছে। অসত্য এবং বিকৃত তথ্যকে সত্য বলে ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি যে বাস্তব সম্মত নয়, গোটাটাই পরিচালকের কল্পনা, সেই মর্মে অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। আর এই বিতর্কের মধ্যেই ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ ছবি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ছবিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে কলকাতার আমহাস্ট স্ট্রিট থানায়। বাংলাকে বদনাম করাই ছবির উদ্দেশ্য বলে তাতে দাবি করেন অভিযোগকারী।
সনোজ মিশ্র দ্বারা রচিত এবং পরিচালিত, এবং জিতেন্দ্র নারায়ণ সিং প্রযোজিত, ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ –এর ট্রেলারটি এক মাস আগে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল এবং ছবিটি আগস্টে পর্দায় আসার কথা রয়েছে। সিনেমাটির ট্রেলারে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এবং বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বাংলাকে চিত্রিত করা হয়েছে। অভিবাসন, রোহিঙ্গা বসতি এবং পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ও সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার দৃশ্য রয়েছে। এটি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা বলার কিছু অভিনেতাকেও দেখায়। এটিতে একজন মহিলা নেত্রীর শটও রয়েছে, যিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সনোজ মিশ্রের দাবি:-
ছবির পরিচালক দাবি করেন যে, পশ্চিমবঙ্গে গণহত্যা এবং হিন্দু দেশত্যাগ ঘটছে। ছবিটির শুটিং ৬০ শতাংশ সেরে ফেলা হয়েছে। ছবিতে সরাসরি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাংলা ভারতের নতুন কাশ্মীরে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। তিনি আরও দাবি করেন যে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি মমতার ভালোবাসা হিন্দুদের তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে। এবং রাজ্যে তুষ্টির রাজনীতির ফলে হিন্দু উৎসবগুলিতে বিধিনিষেধ রয়েছে। ট্রেলারটি এমন একটি ঘটনাও উল্লেখ করেছে যেখানে ২০১৩ সালে নালিয়াখালি গ্রামে হিন্দুদের ২০০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ট্রেলার প্রকাশের পরে, জিনিসগুলি বাড়াতে সময় লাগেনি কারণ এটিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করেছে তাই এটি একটি রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত হয়েছে।
পরিচালক সনোজ মিশ্রকে ইতিমধ্যেই তলব করেছে কলকাতা পুলিশ। তার আসন্ন ছবি ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ –এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কলকাতার আমহাস্ট স্ট্রিট থানায় ছবিটির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সনোজ মিশ্রের ছবিটি পশ্চিমবঙ্গকে বদনাম করার করেছে বলে অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ। কারণ, এই ছবির মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ভক্তদের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগে একটি প্রথম তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) নতিভুক্ত করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ছবিটির প্রভাব:-
ছবিটির ট্রেলার এমন এক সময়ে আসে যখন কয়েকদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমার উপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছিল। যদিও পরে ছবিটি যে বাস্তব সম্মত নয়, গোটাটাই পরিচালকের কল্পনা, সেই মর্মে অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। পরিচালক সনোজ মিশ্র যিনি বলেছেন যে, ছবিটি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি। শুধুমাত্র পরিচালককে ভয় দেখিয়ে বাকস্বাধীনতা দমন করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে পরে লেগেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সনোজ মিশ্রের দাবি যে, তার ছবিটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। তবে এটাকে ভিত্তিহীন বলে অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশের নিকট। কারণ বিরোধীরা সত্যকে নীরব করার চেষ্টা করছে। এই ছবির ব্যাপারে বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালভিয়া বলেছেন যে, ট্রেলারে যা কিছুই দেখানো হয়েছে বাস্তবে ভুল বলে মনে হচ্ছে না।
যাইহোক, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার পিটিআইকে বলেছেন যে, ছবিটির লক্ষ্য “ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করা, ঘৃণার একটি মিথ্যা আখ্যান ছড়িয়ে দেওয়া এবং পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ব্যাহত করা”। তিনি আরও বলেন যে, ছবিটি এমন লোকেদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে যারা পশ্চিমে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মৈত্রী নষ্ট করার এজেন্ডা চালাতে চায়। এবং সিনেমাটির মাধ্যমে রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা করছে।
রাজ্যের মানহানি করার চেষ্টার অভিযোগের জবাবে মিশ্র বলেন, “আমার উদ্দেশ্য রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করা নয়। আমরা ফিল্মে শুধুমাত্র তথ্য দেখিয়েছি যা ভালোভাবে গবেষণা করা হয়েছে”। তিনার বক্তব্য, ছবিটির শুটিং সম্পূর্ণ হয়নি এবং তারা আগামী মাসে এটি সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনে জমা দেওয়ার সম্ভাভনা রয়েছে।
মিশ্রের ওপরে লাগানো ধারা:-
যুগ্ম কমিশনার শুভ্র চক্রবর্তীর মতে, ১১ই মে একজন নাগরিকের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি নতিভুক্ত করা হয়েছিল যার পরিচয় পুলিশ প্রকাশ করেনি। পরিচালককে ৩০ই মে ট্রেলারের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত সমস্ত উপকরণ নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। IPC এর 120B ধারা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, 153A বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা, 501 মানহানিকর বিষয়, 504 ইচ্ছাকৃত ভাবে অপমান, 505 জনসাধারণের দুষ্টুমি, 295A ধর্মীয় অনুভূতিতে আক্রোশ , এই ধরণের ধারা ছবির পরিচালকের ওপরে লাগানো হয়েছে।
উপসংহার
যাইহোক, বিগত কয়েক বছর ধরেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। এবং যখন থেকেই বিজেপি ভারতবর্ষে ক্ষমতাই এসেছে তখন থেকেই এই দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করার জন্যে ওঠে পরে লেগেছে। তাই সবদিক থেকে ইসলামকে আক্রমণ করার পর এবার সিনেমার দ্বারাই মুসলমানদের বদনাম করার সমস্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাইতো ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, যেই সমস্ত রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতাই নেই ওই সমস্ত রাজ্যের ওপর ষড়যন্ত্র চালিয়ে সিনেমা বানানো হচ্ছে। তবে যারা আজও ধর্মনিরপেক্ষতা মেনে চলে তারা কখনই এই ধরনের সিনেমাকে সমাজে আসতে দেবে না। যেহেতু ২০২৪ এ ভোট রয়েছে সেই কারণেই বাংলার ওপরেও এই ধরনের ছবি বেরিয়ে আসা স্বাভাবিক। এবং এই সিনেমার ট্রেলারেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাইয়ের রাজনীতির ওপর আঙুল তোলা হয়েছে। এবং পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিদ্যমান ভালোবাসাকে শেষ করতে চাইছে।