দ্বিমুখী সংগ্রামী কুতুবুজ্জামান সায়্যিদ আলাবী

চেম্মাড মার্কেট থেকে দক্ষিণে রোড ধরে এক কিলোমিটার। তারপর বাঁক নিয়ে কাডুলন্ডি নদী পারে কেরালার আধ্যাতিক গুরু  সায়্যিদ আলাবী মাওলাদ্দাবিলার (কদ:) ঐতিহ্যপূর্ণ সমাধিস্থল বা মাজার শরীফ অবস্থিত। প্রত্যেক দিন এখানে হাজার হাজার মানুষ নিজের আশা আকাঙ্খা নিয়ে উপনীত হয় এবং মনপূর্ণ মনোবল নিয়ে আবার প্রত্যাগমন করে। বৈকি, কেরালার মানুষ আজও এই কেন্দ্রস্থল মারফত দৃশ্য-অদৃশ্য ফলাফলে লাভবিত।  

কে সেই কুতুব

সম্পূর্ণ নাম কুতুবুজ্জামান সায়্যিদ আলাবি বিন মুহাম্মদ বিন সাহল মাওলাদ্দাবিলা থাঙ্গল (কদ:)। আরব সাগরপার দক্ষিণ ভারতে ধর্ম প্রচারে চাচার সঙ্গে যোগ দিতে মাতৃভূমি ইয়ামিনের হাজার্মৌত ত্যাগ করে 1770 দশকে মালাবার অঞ্চলে অবস্থান করেন। তখন তিনি সবে মাত্র জীবনের যৌবণ পর্যায় পদার্পণ করেছিলেন।  এবার আরম্ভ হয় তাঁর মালাবারের সংসারিক ও সংগ্রামী জীবন। তিনি হয়ে উঠেন দ্বিমুখী সংগ্রামের অভিনব নায়ক - ধার্মিকতার অবক্ষয়ে আটক সমাজের পথ নির্দেশক এবং স্বৈরাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ধ্বজধারক। 

আধ্যাত্মিকতার প্রতিমূর্তি 

দূর দূরান্ত থেকে জীবন, অর্থ, চেতনা, ধর্ম, আধ্যাত্মিকতার মত জটিল প্রশ্ন নিয়ে বিমর্ষ মানুষ থাঙ্গাল সাহেবের কুটিরে এসে সতেজতার সঙ্গে ফিরে যায়। হযরত হয়ে উঠেন সমকালীন কুতুব অর্থাৎ কুতুবুজ্জামান যে উপাধিতে আজও তিনি প্রখ্যাত। তিনি আব্দুল কাদির জিলানী (রহ:) থেকে সম্পৃক্ত কাদ্রিয়া সিলসিলার সঙ্গে সংযুক্ত বা'আলবী তরিকতের অনুসারী ছিলেন। তিনার বংশ পরম্পরা আলী পুত্র হুসেইন (র:)-এর সঙ্গে গিয়ে মিলে যায়। থাঙ্গলের সাহেবের অবশিষ্ট মান ও আদর্শ এখনও বিশেষত কেরালাবাসীদের জন্য জ্বলন্ত মশাল। দারুল হুদার মত আরও কত ইসলামিক প্রতিষ্ঠান মামবুরাম শরীফের আর্থিক অবদানে স্থিতিশীল। 

স্বাধীনতার এক সংগ্রামী নায়ক

আধিভৌতিক জগতের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব জগতেও তিনি অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। সমকালীন সময়ে স্বৈরাচারী ব্রিটিশদের গতিবিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু তিনার নেতৃত্বে মাপিলাদের ব্রিটিশ বিরোধী অগ্রগমন বিদেশী শক্তিকে থমকিয়ে দিয়েছিল। দেশ ও ধর্মের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশদের বিপক্ষে অস্ত্রধারণ করতে যুবকদের তিনি উৎসাহিত করেন। আধুনিক যুদ্ধ ক্ষেত্রেও তিনার অবদান অনস্বীকার্য। অত্যাচার প্রতিরোধ এক সার্বিক কর্তব্য। 

বার্ষিক উরুস

প্রত্যেকদিনই মামবুরাম মাকাম শরীফে ভিড় হয় ভকদের। মুহাররমের প্রথম সপ্তাহ ধরে উদযাপিত হয় বার্ষিক উরুস। দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ মামবুরাম প্রাঙ্গণে সমবেত হন। দারুল হুদার নির্দেশনায় সপ্তাহের প্রতিদিন অব্যাহত থাকে বিভিন্ন দুআ, যিকিরের মজলিস। শেষ দিনে সংঘঠিত হয় জনসাধারণের জন্য অন্নদান আয়োজন। বিতরণ হয় সার্বিক কল্যাণের ফল।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter