হাম দো হামারে বারাহ মুভি না স্বৈরাচারের প্রচার
কাশ্মীর ফাইল (২০২২), পাদ্মাভাত (২০১৮) লিপিস্টিক আন্ডার মাই বুরকাহ (২০১৬) তানহাজি (২০২০) ৭২ হুরাইন (২০১৯), আজমির ৯২ (২০২৩), টিপ্পু তারপর এবার হাম দো হামারে বারাহ নামক মুসলিম রিরোধী আরেকটি মুভি ২০২৪ এর জুন মাসের ৭ তারিখ রিলিজ হতে যাচ্ছে। আন্নু কাপুর, পার্থ সাম্থান, মনোজ জোশি, পরিতোশ ত্রিপাঠি, রাহুল বাজ্ঞা, অশ্বিনী কালসেকর, এবং প্রমুখ অভিনেতাদের দেখা যাবে। এই ফিল্মটি ভারতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, এই চলচ্চিত্রে এহ সমস্যার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে হেয় করা হয়েছে।
ফিল্মের কাহিনী
এই ফিল্মটিতে দেখানো হয়েছে যে মুসলমানরা ভারতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির প্রধান কারণ, এবং তারা জাতীয় সম্পদের জন্য হুমকি, তারা বেশি শিশু জন্ম দিয়ে এই দেশে তাদের আধিপত্য তৈরি করতে ইচ্ছুক। এই ফিল্মটির কাহানী এইভাবে রচায়ন করা হয়েছে যে একটি মেয়ে তার মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন, গর্ভপাত করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আদালতে তার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করছে।
ফিল্মটির পোস্টার মুসলিম সম্প্রদায়কে হেন করে একটি মুসলিম পরিবারকে দেখানো হয়েছে যাতে এক মাউলানা ও বুরকাহ পরিধানে তার গর্ভবতী স্ত্রী একজন অকিল এবং অন্যান্য পরিবার সদস্য রয়েছে।
আমরা কোন বিশেষ সম্প্রদায়কে টার্গেট করিনা- ডাইরেক্টর কামাল চন্দ্র
নব ভারত টাইমস-এর একজন রিপোর্টার যখন এই মুভির ডাইরেক্টর কামাল চন্দ্র কে তার এই ফিল্মের পোস্টারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে তখন সে তার প্রত্যুত্তরে বলে যে "আমাদের ছবি 'হাম দো হামারে বারাহ' এর পোস্টারটি মোটেই বিতর্কিত নয়। এটি সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলেই বোঝা যাবে। আমরা সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে এই ছবির মাধ্যমে আমরা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করি না। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি দেখলে মানুষ অবশ্যই খুশি হবেন। এই ফিল্ম জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইস্যু নিয়ে নির্মিত এবং আমরা কারোর অনুভূতিকে আঘাত না দিয়েই এটি তৈরি করছি। এ ছবিতে কোনো রাজনৈতিক পার্টির পক্ষপাত করছি না।
তিনি আরও বলেন যে আমরা যদি কোন অন্য সম্প্রদায়কে এই পোস্টারে দেখাতাম তাহলে একই কথা উঠত। আমি মনে করি যে চলচ্চিত্র আমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশের সেরা মাধ্যম। ফিল্মের পোস্টারকে নিয়ে যাতে সবাই কোন ইস্যু না তৈরি করে তার আহ্বান জানায় এবং সবাইকে পোস্টার ও ছবিটি সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার জন্য অনুরোধ করে।
আনন্দবাজার পত্রিকার একজন রিপর্টারের উপর রেগে গিয়ে তিনি বলেন যে একটি বইকে তার কভারটা দেখে বিচার করা যায় না, ছবিটি জনসমক্ষে আসতে দিন সবাই বুঝে যাবেন।
আসলে এই ধরনের কিছু মুভি এবং কার্টুন তৈরি করে ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে স্বৈরাচারীর রাজত্ব আরম্ভ করেছিল অ্যাডলফ হিটলার। আর এখন এরই প্রচেষ্টায় মোদী সরকার।
দেড় স্টারমাড় পত্রিকা ও তার প্রভাব
১৯২৩ সালে জার্মানির স্বৈরাচারী শাসক আডলফ হিটলারের আমলে তারই এক সহযোগী জুলিয়াস স্ট্রাইকার নামক এক জনপ্রিয় নেতা দেড় স্টারমাড় নামক এক জার্মানী পত্রিকা প্রকাশ করে যার অর্থাৎ যদ্ধ্যা। এই পত্রিকাতে সর্বপরি জার্মান বাসীদের প্রসাংশা করে, তাদেরকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মানব বলে আখ্যায়িত করে। তারপর এহকালের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে নিন্দনীয় সংবাদ প্রচার শুরু করে, তাদের ব্যাপারে উল্টোপাল্টা খবর, তাদের ধর্ম নিয়ে অকেজো কথাবার্তা, তাদের দৈনন্দিন পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন, খাবার, পরিধান, ব্যাবসা, এমনকি তাদের আবির্ভাব ও ধর্মের বিদ্যমান নিয়েও প্রশ্ন করতে শুরু করে। প্রথমত এই পত্রিকাটি যখন জনসমক্ষে আসে, সবাই এই খবরের বিষয়বস্তুকে অবহেলা করে, কিন্তু তার পরের প্রজন্মে এর প্রভাব দেখা যায়। সকলেই ইহুদীদের দৈত্য, দানব, রাক্ষস, অনুপ্রবেশকারী, দেশের সম্পদ ধংশকারী, এবং আরও নগণ্য নাম দিয়ে ডাকতে শুরু করে। ক্রমাগতভাবে ইহুদীদের সকল বিপর্যয়কর বিশয়ের অপরাধী মেনে জেলে ভরা শুরু হয়। হিটলার নাযি পার্টির কর্মীরা এটাও বলে ফেলে যে এই ইহুদীরা নাকি তোমাদের বাচ্চাদের রক্ত শুষে ওদের খেয়ে ফেলবে, তোমাদের সন্তানহারা করবে। এবং যদি তোমরা রক্ষ্যা পেতে চাও তাহলে ওদেরকে তাড়াবার কাজ করতে হবে আর সেটা করবে আমাদের নেতা আডালফ হিটলার।
জার্মানবাসীদের ম্যানিপুলেট করার ক্ষেত্রে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভূমিকা৷
এটি সেই যুগ ছিল যখন সিনেমা সবেমাত্রই চালু হয়েছিল এবং জার্মান এই প্রযুক্তিটি শীঘ্রয় গ্রহণ করেছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর শাষক এর অপব্যাবহার করে নিজের এজেন্ডা প্রচার করে। ১৯৩৮ সালে পল জোসেফ গোয়েবল্স তার প্রচাররমন্ত্রী সিনেমার মধ্যে ইহুদী বিরোধী বিষয়বস্তু যোগ করে, সমস্ত চলচ্চিত্রে ইহুদীদের বদনাম করার নির্দেশ দেয়। ১৯৪০ সালেই রথসচাইল্ডস নামক একটি ফিল্ম আসে যাতে দেখানো হয় যে কিভাবে এক গৃহস্থ ইহুদী দেশের সব সম্পতি নষ্ট করছে এবং জার্মান দেশপ্রেমিকরা কিভাবে আপন দেশের সম্পতি সুরক্ষা করছে।
জুড শুষ, জোসেফ গোয়েবেলসের নির্দেশে টেরা ফিল্ম দ্বারা নির্মিত একটি ১৯৪০ সালের নাৎসি জার্মান ঐতিহাসিক নাটক এবং প্রচারমূলক চলচ্চিত্র। এটিকে সর্বকালের সবচেয়ে ইহুদি-বিরোধী চলচ্চিত্র গণ্য করা হয়। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন ভিইট হারলান, যিনি এবারহার্ড উলফগ্যাং মোলার এবং লুডভিগ মেটজগারের সাথে চিত্রনাট্য লিখেছেন। ফার্দিনান্দ মারিয়ান এবং হারলানের স্ত্রী ক্রিস্টিনা সোডারবাউম প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন; ওয়ার্নার ক্রাউস এবং হেনরিখ জর্জ প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই ফিল্মে দেখানো হয়েছিল যে কিভাবে ওয়ার্টেমবার্গ নামক এক জার্মান শহরের ইহুদী শাসক ডিউক কার্ল আলেকজান্ডার এবং তার কোষাধ্যক্ষ সুস ওপেনহেইমার মিলে দেশের সম্পদের অপব্যবহার করছে এবং জার্মান ধর্মপ্রাণ নারীদের সন্মান উলঙ্ঘন এবং নির্যাতন করছে।
এই ফিল্মটি জার্মানিতে একটি দুর্দান্ত সাফল্য ছিল এবং ২০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছিল, এমনকি জার্মান নাৎসি সৈন্যদেরও এই চলচ্চিত্র দেখানো হয়েছিল ৷ এর ধরনের ইহুদী বিরোধী ফিল্ম তৈরি করে হিটলার জার্মান বাসীদের মন জয় করে ফেলে এবং তাদের মধ্যে সংখ্যালঘু ইহুদীদের প্রতি হিংসা সৃষ্টি করে যার কারণে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ এর মধ্যে জার্মানীতে ইতিহাসে সবথেকে নির্লজ্জ হোলোকাস্টে ৬ মিলিয়ন ইহুদীদের হত্যা করা হয়।
ভারতীয় সমাজের করণীয়
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতা অসিন হওয়ার পর সঙ্ঘ পরিবার দ্বারা পরিচালিত ভারতীয় জনতা পার্টি বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নিজ মুসলিম বিরোধী অ্যাজেন্ডা প্রচারক হিসেবে ব্যাবহার করে সংখ্যালঘু বিরোধী নানান মুভি রিলিজ করেছে এবং করছে। যার কারণে শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের না বরং সকল ভারতবাসীর মান হানি হচ্ছে এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আইন উলঙ্ঘন করা হচ্ছে। সমাজে বিদ্বেষ ও হিংসা প্রচার হচ্ছে। তাই সকল ভারতবাসীর প্রতি অনিবার্জ কর্তব্য যে সকলেই এই ধরনের মুভিকে বয়কট করি এবং এই ধরনের ফিল্মকে রিলিজ হওয়ার পুর্বেই ফ্লপ মুভি ঘোষণা করি ।
 
  
             
            
                     
            
                     
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
             
            
             
            
             
            
            