আমরা ফেলেস্তিন কে কেন ভালোবাসি
যদি আপনার ছেলে মেয়ে ফেলেস্তিনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা না করে তবুও মুসলমান ও উম্মাতে মোহাম্মাদী হয়ে আমাদের প্রতি খুব প্রয়জনীয় কর্তব্য হচ্ছে যে, একবার আমাদের ছেলে মেয়েদের এই সমন্ধে বিশ্লেষণ করে দেওয়া যে আমাদের জন্য ফেলেস্তিন কতটা প্রয়োজনীয় ও আমরা কেন সেই দেশটি কে ভালোবাসি।
১) এই ফেলেস্তিন আনবিয়া গনদের বাসস্থান ও জমি ছিল ২) হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ফেলেস্তিনের দিকে হিজরত করেছিলেন। ৩) আল্লাহ তাবারক ওয়া তায়ালা হজরত লুত (আঃ) কে শাস্তি থেকে মুক্ত করেছিলেন সেই শাস্তি তিনার উম্মতের ওপর এই জাগায় অবর্তীর্ণ করেছিলেন। ৪) হজরত দাউদ (আঃ) এই জাগায় বসবাস করতে শুরু করেছিলেন এবং এখানে তিনি এক মেহরাবও নির্মাণ করেছিলেন। ৫) হজরত সুলাইমান (আঃ) এই সরজমিনে বসে পুরো দুনিয়ায় রাজত্ব চালাতেন। ৬) পিঁপড়ের যে ঘটনা হয়েছিল সুলাইমান (আঃ) যুগে যে, যখন সুলাইমান (আঃ) সেনাদের কে নিয়ে রওয়না হলেন হটাৎ রাস্তার মধ্যে এক পিঁপড়ের দল যাদের সর্দার সুলাইমান (আঃ) এর আগমন দেখে নিজের সাথীদের কে বলছিল যে "হে পিঁপড়ে তোমরা সবাই তোমাদের নিজের নিজের বিলে প্রবেশ করে নাও কেননা এক দল আসছে যিনারা তোমাদের পিষে চলে যেতে পারে। এই ঘটনাটি ঘটেছিল এই পবিত্রময় সরজমিনের এক শহর আসকালানের এক উপত্যকায়, পরবর্তীতে যার নাম "ওদি আল নামাল" বলে জানা যায়। ৭) হজরত জাকারিয়া (আঃ) এর মেহরাব এই শহরে অবস্থিত। ৮) হজরত মুসা (আঃ) এই শহরের সমন্ধে নিজের সাথীদের বলেছিলেন যে "এই পবিত্রময় জাগায় তোমরা প্রবেশ কর, তিনি এই জাগা কে এই জন্যই পবিত্র বা মুকাদ্দাস বলেছেন কেননা এই জমিন শিরক হতে পবিত্র ছিলেন এবং এই জাগাটি নবী গনদের বাসস্থান ছিল। ৯) এই শহরে অনেক পরিমানে মু'জিযা ঘটেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে কুমারী বিবি হজরত মারিয়াম (আঃ) এর গর্ভ থেকে ঈসা (আঃ) জন্ম গ্রহণ করেন।
১০) যখন ঈসা (আঃ) কে তিনার উম্মত তিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন তখন আল্লাহ তাবারক ওয়া তা'য়ালা এই শহর থেকে তিনাকে আকাশে উঠিয়ে নেন। ১১) ঈসা (আঃ) জন্ম গ্রহণ করার পরে মারিয়াম শারীরিক দুর্বলতা যখন উপভোগ করেন সেই সময় খেজুরের গাছের টাঙ্গন হিলিয়ে আরাম করাও এক মু'জিযা ছিল। ১২) এই শহরের এক জাগা "বাবে লুদ্দ" নামক জাগায় হজরত ঈসা (আঃ) মাশিহু দাজ্জাল কে হত্যা করবেন। ১৩) ফেলেস্তিনী কিয়ামতের দিবসের দিনের হাশরের ময়দান হবে। ১৪) এই শহর থেকেই য়া'জুজ মা'জুজ পৃথিবীর বুকে হত্যা ও বিবাদ সৃষ্টি করবেন। ১৫) এই শহরে যত গুলি নবীদের কিস্সা বা ঘটনা ঘটেছিল তার মধ্যে একটি হচ্ছে জালুত ও মালুতের কিস্সা। ১৬) ফেলেস্তিন পঞ্চম ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করার পরে প্রথম কিবলা বলে উপাধি পেয়েছিলেন। হিজরতের পরে হজরত জিব্রাইল (আঃ) নামাজের মধ্যেই আল্লাহর হুকুমে নবী মোহাম্মদ সাঃ কে মসজিদে আকসা হতে (ফেলেস্তিন) আল্লাহর ঘর কা'বা "মক্কা মুকাররম" এর দিকে অভিমুখ করান। যে মসজিদ এই ঘটনাটি ঘটেছিল আজও সে মসজিদটিকে মসজিদে কিবলাতাইন বলে জানা যায়। ১৭) হুজুর মোহাম্মদ (সাঃ) কে মে'রাজের রাতে আকাশে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে মক্কা মুকাররামা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস "ফেলেস্তিন" নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৮) অনম্বীয়া গনদের সর্দার হজরত মোহাম্মদ সাঃ কে ইক্তিদা করে সকল আন্বিয়া এই মুকাদ্দাস সরজমিনে নামাজ আদা করেছিলেন। এই থেকে ফেলেস্তিন আবার সকল আঁম্বিয়াগনদের বাসস্থান হয়েগেছিল। ১৯) সায়্যিদুনা আবু যার (রাঃ) এরশাদ করছেন যে, আমি একদা নবী সাঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম যে হুজুর পৃথিবীতে সর্ব প্রথম মসজিদ কোনটি নির্মাণ করা হয়েছিল ? তখন নবী সাঃ বললেন যে মাসজিদুল হারাম (খানায়ে কা'বা) আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম হুজুর তার পরে কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল তো হুজুর বললেন মাসজিদুল আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাস)। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম যে হুজুর এই দুটি মসজিদের মধ্যে কতটা দূরত্ব তখন হুজুর বললেন চল্লিশ বছরের আর তোমরা এর মধ্যে যেখানে নামাজের সময় হয়ে যাক ওখানেই নামাজ পোড়েনও অথচ ওটা মসজিদই বলে গণ্য করা যাবে।
২০) শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হজরত আবু বাক্কার রাঃ কে ধর্মত্যাগ নির্যাতন উপলক্ষে ও অন্য কিছু মুশকিল কে মোকাবেলা করার জন্য সেনাপতি ও জনশক্তি প্রয়জন থাকা সত্ত্বেও সরজমিনে ফেলেস্তিনের দিকে নবী সাঃ এর তৈরী করা সেনা পাঠানোও এক সম্পূর্ণবিস্মৃত বাস্তব। ২১) ইসলাম ধর্মে স্বর্ণ যুগ হজরত উমার ফারুক (রাঃ) এই সময় সারা দুনিয়াকে বিজয় করা ত্যাগ করে শুধুমাত্র ফেলেস্তিন কে বিজয় করার জন্য সায়্যিদুনা উমার ফারুক (রাঃ) এর হেটে যাওয়া আর ওখানে গিয়ে নামাজ আদা করা এই শহরের মহিমা কে তুলে ধরে। ২২) দ্বিতীয় বার মে'রাজের রাত্রি জুম'য়ার দিন ২৭ রজব ৫৮৩ হিজরীতে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর হাতে এই শহরের বিজয় করা একটি লক্ষণ। ২৩) বায়তুল মুকাদ্দাসের নাম কুরআন অবর্তীর্ণ হওয়ার পূর্ব থেকেই বলা হোত,কুরআন অবর্তীর্ণ হওয়ার পরবর্তীতে তার নাম মাসজিদুল আকসা রাখা হয়। কুদস বলার কারণ হচ্ছে এই শহরের পবিত্রতার জন্য যা অন্য শহর থেকে এই শহরটিকে বৈশিষ্টপ্রদান করে। এই শহর কে অর্জন করার জন্য আর শহরটিকে রোমদের জবরদস্তি ও ক্ষমতা থেকে রক্ষা করার জন্য ৫০০ এর অধিক সাহাবী কেরাম (রাঃ) শহীদ হন। শহীদের দরজা আজও বন্ধ হয় নি, এই সিলসিলা এখন পর্যন্ত চলে। এর জন্যই এই শহর এই থেকে শহীদগণদের শহর। ২৪) মাসজিদুল আকসা এবং শাম শহরের গুরুত্ব মাসজিদুল হারামাইনের মত। যখন কুরআন করিমের এই আয়াত :
والتين والزيتون وطورسينين وهذا البلد الأمين অবতীর্ণ হয় তখন ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে আমরা শাম শহর কে (والتين) ডুমুরের সঙ্গে তুলনা করা,ফেলেস্তিন শহর কে (والزيتون) জৈতুনের সঙ্গে তুলনা করা,আর (وطور سينين) কে মিসরের পর্বত তুর পাহাড় সঙ্গে তুলনা করা,যেখানে হজরত মুসা (আঃ) গিয়ে আল্লাহর সাথে কথবকথন করতেন, এই আয়াত থেকে দলিল নেওয়া হয়।
২৫) আর কুরআন পাক এর আয়াত :
ولقد كتبنا في الزبور من بعد الذكر أن الأرض يرثها عبادي الصالحون এই আয়াত হতে দলিল নেই যে উম্মাতে মাহাম্মাদীই এই পবিত্র জমির উত্তরাধিকারী। ২৬) ফেলেস্তিনের গুরুত্ব ও মরমীর এই কথা থেকে অনুমান করা যায় যে এই সরজমিনে যে নামাজগুলি আদা করা হয় প্রত্যেক নামাজের নেকি ৫০০ গুন্ বাড়িয়ে দেওয়া হয় সুবাহানাল্লাহ!। আল্লাহ আমাদের এই পবিত্রময় সরজমিনে গিয়ে নামাজ আদা করার তৌফিক দান করুক আমিন। আর এই পবিত্র শহর কে সকল প্রকারের মুসিবত থেকে পরিত্রান করুক আমীন !।