এ কোন মহরম উৎসব করছে বর্তমান সমাজ
হ্যাঁ ইসলামিক ক্যালেন্ডারও মোট ১২ টি মাস আর তার পয়লা মাস হল মহররম। এই মহরম ইসলাম অনুযায়ী অনেক পূর্ণযোগ্য ও ফজিলতময় মাস।
কোরআন পাকের দলিল অনুযায়ী চারটি মাস হারাম নামক হিসেবে বিভক্ত আর এই মহরম মাস তার মধ্যে এক(সূরা তওবা)(৯:৩৭)। এই মাসের পয়লা দশ দিনে রয়েছে ইসলামী সম্মত অনেক কর্ম কিন্তু নিখুঁতভাবে লক্ষ করতে গেলে বর্তমান সমাজে দেখতে পাওয়া যায় এক অদ্ভুত কান্ড। পরনে কালো পোশাক পরিধান করে সাথে উড়ছে কালো রঙের পতাকা আর সঙ্গে রয়েছে ঢোল বাজনা আর তার তালি তারা কি এক দিচ্ছে নাচ কেউ কেউ আবার হাতে নিয়ে আছে তলোয়ার আবার কেউ নিয়ে আছে লাঠি তার সাথে কেউ কেউ কি নাও উন্মাদের মতো নিজের বুকে হাত দিয়ে, চাকু দিয়ে, শিকল দিয়ে করছে আঘাত।এ তো ছিল এক দৃশ্য অন্য দিকে নজর দিতে গেলে আরো কি অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়, সাথে আছে ডিজে বক্স আর মদ্যপান করে মাতালের তালে পাগলের বেশে করে চলেছে নাচ। এছাড়াও অনেকেই কিছু কিছু কুখ্যাত শিল্পী তৈরি করেছে হিন্দুদের রথ রূপক তাজিয়া।কিন্তু এতে কোন অবাকের কথা নেই অবাক হবার তো তখন কথা যখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় এ তোমরা কোন উপলক্ষে বা কিসের উদ্দেশ্যে এইসব উদযাপন বা পালন করো। প্রশ্নোত্তরে আপনি অবশেষে পাবেন একটাই উত্তর তারা নাকি ইমাম হোসেন (রাঃ)এর ভক্ত আর তারই শহীদ দিবস উপলক্ষে করছে এসব কান্ড।
সময়ের সাথে সাথে পৃথীবির প্রতিটা জিনিসে পরিবর্তন ঘটে কিন্তু এ কোন পরিবর্তন যে একেবারে অপ্রত্যাশিত। হ্যাঁ রাসুল সাল্লালাহ সালাম বলেছেন:
خيركم قرني، ثم الذين يلونهم، ثم الذين يلونهم
অর্থাৎ _যুগের মধ্যে সর্বত্তম রাসুল (সাঃ) -এর যুগ, তারপর যত যুগ কাটবে সেই রুপে খারাপের দিকে অগ্রসর হবে।_
ধীরে ধীরে যেমন কাল কাটবে তার সাথে সাথে পরবর্তী কালও খারাপে পরিবর্তন হবে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে মুসলিমের সাম্প্রদায়িক বা ঐক্যতার শক্তির দড়ি ছিঁড়ে গেছে অনেক আগেই কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মুসলিমদের মধ্যে বেড়েছে সহিংসতা ও শত্রুতার বাঁধ আর সেই হিংসতা আর শত্রুতা সৃষ্টি করেছে _ফিরকাপন্তী_।
সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের দুই ভাগে বিভক্ত এক সুন্নী দুই শিয়া। আর এই বিভক্ত হয়েছিল খলিফাদের যুগ থেকে কিন্তু শিয়ারা বর্তমানে এতটাই নির্লজ্জ বা অপ্রত্যাশিত কুফরী আক্বীদা পোষণ করে চলেছে যে তার কুপ্রভাব সীমান্ত চুক্তি করে প্রবেশ করে ফেলেছে সুন্নী মুসলমানদের সীমান্তে আর অনেক সুন্নী মুসলমানও তার কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে। যদি হঠাৎ করে কারো মনে সংশয় জাগে কি সেই কুকর্ম ?
হ্যাঁ অনেক কুকর্মকে আপন করে নিয়েছে বর্তমান মুসলিম সমাজ তারমধ্যে মহরম মাসে যেসব কুকর্ম বা কুপন্থীদের কাজ করে চলছে তা সবই সেই শিয়াপন্থীদের কর্ম। শিয়া পন্থীরা ইমাম হোসেনের শহীদ দিবস পালন করতে গিয়ে অনেক কুকর্ম করে ইমিম হোসেনের হত্যাকারী কুখ্যাত ইয়াজিদের দাসত্বের পরিচয় দেয়। কিন্তু অথচ তারা দাবি করে যে তারা ইমাম হোসেনের শহীদের তরে শোকে কাতর হয়ে এই সব কান্ড করে।
সাধারণত সবাই জানে যে ঢোল বাজনা ইত্যাদি জিনিস তখনই ব্যবহৃত হয় যখন কোন খুশি বা আনন্দ উপভোগ করার সময় হয় কিন্তু এরা ইমাম হোসেনের শহীদের শোক বলে তারা করছে এ কি কর্মকাণ্ড।যুগটা এমন হয়ে গেছে যে কিছু কিছু নির্লজ্জ ব্যক্তি আছে যারা কিনা দাবী করে যে আমরা সুন্নি মুসলমান অথচ তারা এমন সব কাজ করে যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কখনোই সেই সব কুকর্মকে আশ্রয় দেয় না। কিছু সুন্নি দাবিকারী তারা তো ওহাবী দেবান্দী আর অন্য কিছু ফেরকা পন্থী নিয়ে তারা সব সময় বক্তব্য দিয়ে বেড়ায় কিন্তু এই মহরম মাসে এত বেয়াদবি আনন্দ করা সত্বেও কোনো আপত্তি করে না বরং তারা ও তাদের কে উৎসব করতে সাহায্য করে চলছে। ধিক্কার জানাই তাদের প্রতি!
আমরা জানি মেলা মানে শয়তানের হাট যেখানে সমস্ত রকমের নোংরামী কাজ বা যত প্রকারের ইসলামী অবৈধ কর্ম ।জুয়া খেলা লটারি ইত্যাদি যত হারাম কাজ হয় সমস্ত সেখানে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছে যে মহরম মাসে যেখানে শহীদ দিবস শুধুমাত্র ইমাম হোসেনের শহীদ রূপে কিন্তু তারা মেলা উৎসব করে তারা সেটাকে কুকর্মে পরিবর্তন করে ফেলেছে। তাছাড়া এমন কিছু বিরোধীপক্ষ আছে যারা সব সময় বিরোধীতা করে যে দুরুদ পড়া বা কিয়াম করা এসব বিদআতী কাজ কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় এরাও মহরম মাসে লাঠিখেলা ঢোল বাজনা বাজাতে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। মহরম মাসের দশম তারিখকে _আশুরা_ নামে পরিচিত এই দিনে ইসলামী ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে তাই এই দিন রোজা রাখা অনেক পূণ্যময় ও ফজিলত রয়েছে।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হাদিসের মাধ্যমে এই দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেখানে ইমাম হোসেনের শহীদের তরে দান খাইরিয়াত বা খিচুড়ি করনীয় বরং পরিবর্তে করা হচ্ছে ঢোল বাজনা লাঠি খেলা আর নাচ যা ইয়াজিদী দাসত্বের পরিচয় দেই।
পশ্চিম বাংলার মাটিতে অনেক জায়গায় এই ধরনের লোক আছে তারা আশুরার আগে বের হয় গ্রাম গ্রাম বেড়ায় যেমন বীরভূম জেলার লক্ষ করলে দেখতে পাওয়া যায় কিছু জন মিলে দলবদ্ধ হয়ে _মশিয়া_ করে বেড়ায়, যা আরবি শব্দ _মির্সিয়া_ থেকে উৎপত্তি যার অর্থ কারো মৃত্যুর শোকে গান গাওয়া।
এরা এরূপ বুকে হাত দিয়ে মারে আর শোকের গান গেয়ে বেড়ায়।
মালদা জেলায় লক্ষনীয় যে আশুরার আগে কিছু দল বের হয় যা দৌড়াহা নামে পরিচিত, এরাও সেইরূপ বের হয়ে গ্রাম গ্রাম ঘুরে বেড়ায়।
বর্তমান সমাজে ইসলামী নীতিতে করণীয় ও স্মরণীয় সব কিছু দিয়ে পরিত্যাগ করে তাদের নিজ খুশিমতে সৃষ্টি করেছে তাদের ইচ্ছামত করণীয় ও স্মরণীয় কর্ম। একজন সুন্নি হয়ে এই দাবী করতে হবে যে হ্যাঁ আমি সুন্নি মুসলিম কিন্তু মহরম এইসব বেয়াদবি কাজ কে আশ্রয় দিই না । ইমাম হোসেনের শহীদের নাম করে তারা যখন ঢোল বাজনা নিয়ে লাঠি ঘুরায় আর কেউ কেউ ডিজের তালে মাতালের মত উন্মাদ হয়ে, পাগলের বেশে নাচে তখন তাদের একটাই প্রশ্ন করার ইচ্ছা জাগে তারা কি খুশি ইমাম হোসেনের মৃত্যুতে?