কুরআন ও তিলাওয়াতের ফজীলত
কুরআন হচ্ছে চারটি পবিত্র আসমানী বইয়ের মধ্যে সর্বশেষ। এর মধ্যে না কেও কোনো ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে না পারবে। কারণ আল্লাহ তাআলা নিজেই তাঁর পবিত্র কোরআনে ঘোষনা করে দিয়েছেন যে,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
অর্থাৎ: আমি এই পবিত্র কুরআনকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছি, আর আমি নিজেই সেই কুরআন কে রক্ষা করবো।
এই কুরআনের মর্যাদা এতটা যে দুনিয়ার মধ্যে কোনো বইয়ের তা নেয়। কুরআন শরীফ সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ মুস্তাফা (স:)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি করি কিতাব। আল্লাহ এই কোরআনের মর্যাদা অনুসারে বলেন যে :
لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَیْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْیَةِ اللّٰهِ.
অর্থাৎ: আমি যদি এই কুরআনকে একটি পাহাড়ের উপর নাজিল করতাম, তাহলে সেই পাহাড়টি আল্লাহ তাআলার ভয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ত। তাহলে বুঝা গেলো যে এই পবিত্র কোরআনের কতটা মর্যাদা।
কুরআন তিলওয়াত করার ফজীলত:
আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কোরআনে ঘোষনা করেন:
ٱلَّذِينَ ءَاتَيْنَٰهُمُ ٱلْكِتَٰبَ يَتْلُونَهُۥ حَقَّ تِلَاوَتِه أُوْلَٰٓئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَمَن يَكْفُرْ بِهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَٰسِرُونَ
অর্থাৎ: যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা তিলাওয়াত করে যেভাবে এটি পাঠ করা উচিত, তারাই এতে বিশ্বাস করে এবং যারা এতে অবিশ্বাস করে তারাই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত।
কুরআন হচ্ছে এমন একটি বই যার একটি হরফ বা অক্ষর পড়লে ১০ নেকী পাওয়া যায়। আর যদি ৩টি শব্দ পড়া হয় তবে ৩০ নেকী পাওয়া যায়। যেমন 'الم' এখানে তিনটি শব্দ আছে। তাহলে যদি কেউ কুরানের মধ্যে সবথেকে যেটি বড় সূরা হল সেটি সূরাতুল বাকারা তিলাওয়াত করে তাহলে কত নেকী পাবে। হযরত উমর (রা:) হতে বর্ণিত যে হুজুর (সা:) বলেছেন:
خيركم من تعلم القران وعلمه
অর্থাৎ: তোমাদের মধ্যে সব থেকে উত্তম ব্যাক্তি সে হবে যে নিজে কুরআন শিখে আর অন্যকেও শিখায়।
কুরআন তিলওয়াত করার এতটা ফজিলত রয়েছে যে কেও যদি কুরআন তিলাওয়াত না করতে পারে, তাহলে অন্য জনের কুরআন শুনা উচিত, কারণ কুরআন দেখে পড়লে যতটা নেকী পাওয়া যায় ততটা নেকী শুনলেও পাওয়া যায়।
কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাই তাহলে সে ব্যক্তিকে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা দরকার। এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল: আল্লাহ তাআলার 'اهل' কে হবে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি তার জীবনে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করবে।
সূরাতুল মূলক তিলাওয়া করার ফজীলত:
এই সুরাকে যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন মাগরিব নামাজের পর তিলাওয়াত করবে সে ব্যক্তিটির মৃত্যুর পর তার কবরের আযাব কম করে দেওয়া হবে। সেই ভাবে কুরানের প্রত্যেকটি সূরার কোনো না কোনো ফজিলত আছে। সেই জন্য কুরআন বেশি বেশি করে তিলাওয়াত করা দরকার। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে:
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوالِي وَلَا تَكْفُرُونِ
সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।
কুরআন হিফজ করা বা মুখস্থ করা এবং অন্তরে রাখা আনন্দের বিষয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই যে ব্যক্তির অন্তরে কুরআনের কোন অংশ নেই সে নির্জন ঘরের মত।”
সূরা আল-বাকারা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় শয়তান সেই ঘর থেকে পালিয়ে যায় যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়।"
কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত এতই যে, কেউ যদি তার মৃত পরিবারের সদস্যদের নামে তিলাওয়াত করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবনে এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, ইনশাআল্লাহ।