আয়াতের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি রাহমানুর রাহিম, অসীম দয়ালু  মেহেরবান। তারপর হাজার হাজর দরুদ  সালাম বর্ষিত হোক সেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরে যিনি  এই দুনিয়ার এসে সমস্ত মানুষকে এক ঘোর অন্ধকার থেকে উজ্জ্বল আলোর দিকে পথ দেখিয়েছেন। এবং তাদের সঠিক দ্বীনের দিকে হিদায়াত-এর আহ্বান জানিয়েছেন। যিনার উপরে আল্লাহ তাআলা মুজেজাহ হিসাবে কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ২৩ বছর যাবত কোরআন শারিফ থেকে কিছু কিছু আয়াত করে সম্পূর্ণ কোরআন নাজিল করেছেন।

  কোরআন শারিফ হল আল্লাহ তাআলার কালাম অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মাদ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উম্মতের উপরে যা হুকুম করেছে, সেগুলি সব কোরআন পাকের মাধমে করেছেন। হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আসার পর  উম্মতের সাথে জিবন যাবন করার সময়, অবস্থা হিসেবে যখন যে হুকুমের প্রয়োজন হয়েছে সেই সময় সেই হুকুম কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে নাজিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন পাক সর্বপ্রথম সম্পূর্ণভাবে লহ মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাযিল করেন, এরপর অবস্থা হিসেবে কিছু কিছু আয়াত করে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে  অবতীর্ণ করে থাকেন। মোট ২৩ বছর যাবত নাজিল করেন। আল্লাহর নিকট হতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পর্যন্ত ওহী নিয়ে  আসার দায়িত্ব হজরত জিব্রাইল আলাইহি সালাম পালন করতেন।

  কোরআন হল আল্লাহ হতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি একটা মজেজা, যার দ্বারা কোনো অসম্ভব জিনিসকে সম্ভব করে দেখানো হয়। মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি একটা মোজেজা। কিন্তু অমুসলিম অর্থাৎ আরবের কাফেরগণ তাকে অস্বীকার করে এবং বলে এটা মোহাম্মাদের বানানো কথা আর একটা বই। তখন আল্লাহ তা'আলা কোরআনের মাধ্যমে সেই কাফেরদের চ্যালেঞ্জ করলেন। যদি তোমরা সক্ষম হও তাহলে এর মত কোন একটা আয়াত অথবা একটা সূরা এনে দেখাও। তখন তারা হতবাক্য হয়ে গেল এবং তাদেরকে সেই রকম আয়াত অথবা সূরা আনতে অক্ষম পাওয়া গেল।

  কোরআন হলো একটা মোজেজা। কোরআনে যে সমস্ত আয়াতগুলো আছে প্রত্যেকটি আয়াতের নিজ নিজ স্থান ওয়াহি এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা  কোরআনে আমরা বর্তমান যুগে দেখতে পাই। কোরআনে প্রথম সূরা হলো সুরাতুল ফাতিহা ও সর্বশেষ সূরা হল সুরাতুল নাস। কিন্তু কোরআনের প্রথম সুরাতুল ফাতিহা প্রথম নাজিল হয়নি এবং শেষ সূরা সূরাতুল নাস শেষে নাযিল হয়নি বরং কোরআনের মধ্যে প্রথম নাজিল হওয়া সুরাটি হল সুরাতুল আলাক এর পাঁচটি আয়াত

     (إِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الّذِي خَلَقَ* خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقَ* إِقْرَأْ وَ رَبُّكَ الْأَكْرَمُ* الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ* عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ*)

এবং শেষ নাযিল হওয়া আয়াতটি হল সুরাতুল বাকারা 281 নাম্বা আয়াত।

واتَّقُوا یَوْمَا تُرْجَعُوْنَ فِیهِ إِلَى االلهِ ثُمَّ تُوفى كل نفسٍ مَا كسبت وَهُم لاَ یُظلمُون*

কোরআন বিভিন্ন সময় নাযিল হওয়া সত্বেও আয়াতের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ আছে। আয়াতের মধ্যে একের অপরের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এবং প্রত্যেক আয়াতের নিজ নিজ স্থান নির্ধারিত রয়েছে।এক স্থানের আয়াতকে কুরআনের অন্য কোন সূরার মধ্যে কোন স্থানে বসালে সেটা কখনোই উপযুক্ত হবে না।

  আলেমদের মধ্যে ইখতেলাফ রয়েছে যে  কোরআনের মধ্যে আয়াতগুলোর নির্ধারিত স্থানগুলি তৌকিফী না ইজতেহাদি। তৌকিফী এর মানে হচ্ছে যা কিছু ওয়াহির মাধ্যমে পাওয়া গেছে। আর ইজতিহাদী হল কিছু মানুষ আলোচনা করে যা পাওয়া যায়। এই নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবেদ রয়েছে কেউ বলছেন কুরআন এর আয়াতগুলোর নির্ধারিত স্থানগুলি তৌকিফী আবার কেউ বলছেন তৌকিফী নয় এটা ইজতিহাদি। কিন্তু অধিকাংশ আলেমগণ বলছেন এটা তৌকিফী।

  কোরআন মধ্যে যে পারস্পারিক সংযোগ রয়েছে সেটা হল দুই রকমের সংযোগ। একটা হল আয়তের মধ্যে আর  অপরটা হল সুরার মধ্যে, একে অপরের সম্পর্ক। কিছুজন ছেড়ে, আয়াতের মধ্যে সংযোগ এটা সমস্ত আলিমগণ মেনে নিয়েছেন কিন্তু সূরার মধ্যে সংযোগ অনেক আলেমগণ মেনে নেননি এবং সূরার নামগুলি ইজতেহাদি বলে ঘোষণা করেছেন। আমরা কোরআন হাদিস থেকে প্রমাণসহ বিস্তারিত জানবো ইনশা আল্লাহ।


 আয়াত ও সুরার অর্থ জানবো।
আয়াতের অর্থ বিভিন্ন রকমের হয়।
১। স্পষ্ট মোজেজা
২। আল ইবরা (নিদর্শন  
৩। আল আলামাহ (চিহ্ন)
৪। বুরহান ও দালিল (প্রমাণ ও দলিল)

আয়াতের আভিধানিক অর্থ: কোরআনের একটি অংশ যেটি তার পূর্বের ও পরবর্তী থেকে আলাদা হয়ে আছে আর তার আরম্ভ ও শেষ আছে এবং সেটা সূরার অন্তর্ভুক্ত হবে।

সূরার অর্থ কি

সূরার অর্থ হলো অংশ।
সূরার আভিধানিক অর্থ: কুরআনের মধ্যে কিছু আয়াতের সমষ্টি যার আরম্ভ এবং শুরু আছে।

আয়াতের নির্ধারিত স্থান  এবং এ সম্পর্কে আলেমদের বক্তব্য।
আলেমদের মধ্যে কোন মতবেদ নেই যে সূরার আয়াতের গঠন এটা তৌকিফী নয়। এটা আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং এর উপর কোরআন হাদিস এবং ইজমাও প্রমাণ দেয়।

ইজমা দিয়ে প্রমাণিত,
 ইমাম আবু জাফর বিন আল জুবায়ের বলেছেন:

 إِعْلَمْ أَوَّلًا أَنَّ تَرْتیبَ الآیاتِ فِي سُوَرِها وَقَعَ بِتَوْقیفِ النَّبِي صلى الله عليه وَسلَّم وَأَمرَهُ مِنْ غَیْرِ خِلافٍ فيِ هَذا بَیْنَ المُسْلِمیْنَ.

অর্থাৎ প্রথমে জেনে নিন যে নিশ্চয়ই সুরার আয়াতের মধ্যে পরস্পরিক সংযোগ ওয়াহি দিয়েই প্রমাণ হয়েছে এবং আদেশ করেছেন যে তাতে মুসলমানদের মধ্যে কোন মভেদ ছিল না।

 ইমাম সুয়ুতি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেছেন

 الإِجْماعُ وَالنُّصُوصُ المُتَرادِفةُ عَلَى أَنَّ تَرْتیْبَ الْآیاتِ تَوْقِیفِيٌ لاَ شُبْهَةَ فِي ذَلِكَ


অর্থাৎ ইজমা (আলেমগণ এক মত)এবং নাস (কুরআন-হাদিস দিয়ে কোন কিছু প্রমাণ করা) একি মত যে সূরার আয়াত পরস্পরের সংযোগ হল তৌকিফী এতে কোন সন্দেহ নেই।

নাস দিয়ে প্রমাণিত
সূরার আয়াতের পারস্পরিক সংযোগ কে প্রমাণ করে এমন অনেক হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নোক্ত হাদিসগুলো হল-
  জায়েদ বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, আমরা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে কাপড়ে অথবা চামড়াতে কোরআন লিখতাম।
  উমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোন জিনিস আলোচনা করেনি যতবার কালালা (মানুষের মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশ হিসেবে পিতা ও ছেলে কেউ নেই) -এর ব্যাপারে করেছি। এবং তিনি কোন বিষয়ে কঠোর হননি যত এই বিষয়ে আমার জন্য কঠোর হয়েছেন আর নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে তিনার আঙ্গুল মোবারক দিয়ে মেরে তিনি এরশাদ করেন, হে উমর তোমার জন্য কি সূরা নিসার শেষে অবস্থিত আয়াত শরীফ আয়াত সাইফটি যথেষ্ট নয়?
 এই হাদিস দুটি দিয়ে প্রমাণ হয় যে প্রত্যেক আয়াতের নিজ নিজ স্থান আগে থেকেই নির্ধারিত রয়েছে। সেটা কোন ইজতেহাদি নির্ধারণ নয় তা নাহলে রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলতেন না সেই আয়াতের নাম ও তার নির্ধারিত স্থান এবং স্পষ্ট-সঠিক স্থান যা সূরা নিসার শেষে আয়াতটি অবস্থান আছে। এরকম হাদিস আমরা আরো অনেক দেখতে পাবো যা, সূরার আয়াতের নির্ধারিত স্থানকে সমর্থন করে

 আব্দুল্লাহ বিন সাব্বির হতে বর্ণিত তিনি ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে বললেন, সূরা বাকারা 240

 

   وَالّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَ يَذَرُونَ أَزْوَاجًا

 

সম্পর্কে যে, এটি একটি সে আয়াত যেটি অন্য একটি আয়াতের কারণে মানসুখ হয়ে গেছে তাহলে আপনি এটা কেন লিখছেন?  ওসমান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু উত্তর দিলেন, হে আমার ভাইপো আমি কোন আয়াতের তার নিজস্ব স্থান থেকে স্থান পরিবর্তন করি না।

  সমস্ত আয়াতের স্থান আগে থেকেই ওহির মাধ্যমে নির্ধারণ হয়ে ছিল।
ইবনে আবির মাসুদ আনসারি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত কেউ যদি রাত্রে পাঠ করে তার জন্য সেটা যথেষ্ট হবে।
  আবু রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। সূরা কাহাফ এর প্রথম দশটি আয়াত কেউ যদি মুখস্ত করে সে ভয়ঙ্কর দাজ্জাল থেকে রেহাই পাবে।


ইমাম সুয়ুতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সমস্ত হাদিস গুলোকে তিনার কিতাব ইতকান” -এ বর্ণনা করেছেন।


সুরার গঠন এবং আলেমদের বক্তব্য

যদিও আয়াতের পারস্পরিক সংযোগ সম্পর্কে একই মত কিন্তু সূরার পারস্পরিক সংযোগ সম্পর্কে একই মত নয়। কোরআনের সুরার পারস্পরিক সংযোগ সম্পর্কে আলেমদের ভিন্ন তিনটি বক্তব্য রয়েছে।
প্রথম, বর্তমান কোরআনে সূরাগুলো যেভাবে সাজানো আছে সেটা হলো ত্বকীফী।  নিশ্চয়ই সেগুলোকে কোরআনের রাখা হয়েছে, হুজুর সাঃ এর আদেসে এবং সেই আদেশ হলো স্বয়ং আল্লাহর যা হযরত জিবরীল আলাইহিস সাল্লাম এর মাধ্যমে প্রেরণ করেছি সেই ভাবে সাজানো হয়েছে যেভাবে আয়াত সাজানো হয়েছে।
  হযরত আবু বকর আমবারি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, আল্লাহ সম্পূর্ণ কোরআনটিকে প্রথমে পৃথিবীর আসমানে অবতীর্ণ করেন তারপর আলাদা আলাদা করে কোন হুকুম আদেশ করার একটু একটু করে অবতীর্ণ করেন আর জিব্রাইল আলাই সাল্লাম সেই আয়াত এবং সূরা স্থান নির্বাচন অথবা নির্ধারণ করে দিতেন আল্লাহ তাআলার হুকুমে। সূরা আয়াত এবং হরফ এর পারস্পরিক সংযোগ সমস্ত আমাদের নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিয়েছেন এবং তাদের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন কেউ যদি কোন সূরা কিংবা আয়াতকে আগে পিছে করে তাহলে নিশ্চয়ই সে কোরআনের গঠনকে বরবাদ করেছে ও কলুষিত করেছে।


  ইমাম কিরমানী রাহমাতুল্লাহ বলেন সুরার সংযোগ সেই রকমই যেরকম আল্লাহ নিকটে লাওহে মাহফুজে সুরক্ষিত ছিল।

  ইমাম আবু জাফার রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন কোরআনের পারস্পরিক সংযোগ আল্লাহর এবং রাসুলের, তাতে কাউরির মত গ্রহণযোগ্য নয়।

  ইমাম  হাসসার রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন। সূরাগুলোর গঠন এবং আয়াতের স্থান এটি ওয়াহীর মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, কিছু হাদিস যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন এবং তিনার সাহাবী বর্ণনা করেছেন। যে হাদিসের মাধ্যমে আমরা সূরা গঠন সম্পর্কে জানতে পারি যে গঠন ওসমান বিন আফফান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর সংগৃহীত কোরআন এর মধ্যে অবস্থিত অর্থাৎ বর্তমান কোরআন।

আবু উমামা আলবাহালি রাজিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো। কেননা কেয়ামতের দিন সেটি তার তেলাওয়াতকারীদের জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে আসবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন যে তোমরা (زهراوين) দুটি সূরা তিলাওয়াত করো সুরা বাকারা ও আল ইমরান কেননা সেই সূরা দুটির কিয়ামতের দিন মেঘ হয়ে আসবে অথবা পাখির দুটি দল হয়ে আসবে যারা তাদের তিলাওয়াত কারীদের ডানা দিয়ে ঢেকে নেবে।


  হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাবার জন্য বিছানার দিকে অগ্রসর হতেন তো তিনি বিছানায় দুই হাতকে জোর করে কুলহু আল্লাহু আহাদ, কুল আয়ুদু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আয়ুদু বিরাব্বিন নাস তেলাওয়াত করতেন এবং তাতে ফুক দিয়ে পুরো শরীরটাকে যতখানি সম্ভব মাসাহ  করতেন। এরকম তিনবার করতেন।

তৃতীয়ত, সমস্ত সাহাবা কেরাম আল্লাহর রাসূল এর কঠোরভাবে অনুকরণ করতেন এবং তিনারা বেদাত, অনুমান এবং মনের ইচ্ছায় কাম থেকে অনেক দূরে থাকতেন নিঃসন্দেহে, যখন তারা কোরআন সংকলন করার সময় জমা হলেন তারা সবাই প্রত্যেক সুরাকে তদন্ত করে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশের মাধ্যমে সংকলন করেছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ তার কথা দিয়ে কিংবা তার কর্ম দিয়ে কিংবা তার সিদ্ধান্ত দিয়েই থেকে হোক না কেন। এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বছরে এই দুনিয়া থেকে পরলোগমন করেন সেই বছরে নবী জিব্রাইল আলাইহি  সাল্লামকে দুইবার কোরআন পেশ করেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে সে সময়ে নিশ্চয়ই কুরআন সম্পন্ন ভাবে রাসুলের উপরে অবতীর্ণ হয়েগেছিল। এবং জিব্রাইল আলাইহিস সাল্লাম কে সম্পূর্ন কোরআন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পেশ করেন। এবং বর্তমান কোরআন সেই গঠনেই আছে যে গঠনে লহে মাহফুজে ছিল, যেমন হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম পেশ করেন সম্পূর্ন কোরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর নিশ্চয়ই রাসুল সাঃ এর নিকটে জাইদ বিন সাবিত উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সমস্ত ওহী লিখতেন। সেই জন্য বর্তমান কুরআন তার মাধ্যম দ্বারা নেওয়া হয়েছে এবং সংকলন করা হয়েছে।

  উপরোক্ত সমস্ত হাদিস গুলোর মাধ্যম দিয়ে বোঝা গেল যে কোরআনের আয়াতগুলো হলো আল্লাহ তাআলার কালাম এবং কুরআনের যে সমস্ত আয়াতগুলো রয়েছে তাদের নিজ নিজ স্থান রয়েছে সেটা ওহীর মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে, কেউ আলোচনা করে কিংবা ইজতেহাদ করে বসাইনি। আর সমস্ত আয়াতের নিজ স্থান রয়েছে যদি কোন অন্যস্থানে রাখা হয় সেটা তার জন্য উপযুক্ত হবে না।  


  সেই রকমই সমস্ত সুরার নিজ নিজ স্থান অহীর মাধ্যমে নির্ধারণ হয়েছে, কেউ নিজে করেননি সেটা ওহীর মাধ্যমে হয়েছে। সেগুলো সব আমাদের হযরত মুহাম্মদ সাঃ সুন্দরভাবে সেই সময় ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন যা কিছু তিনি ওহীর মাধ্যমে পেয়েছিলেন।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter