মহোনাহীন প্রেম সাগরের উৎস নবী মুহাম্মাদ (স:)
ইমাম বুসুরী নিজ গৃহে বসে প্রেম শহর মদীনার বিভিন্ন পল্লী-পাড়ার বাতাবরণ অনুভব করেন। এই অনুধাবন এতই বাস্তব যে গালদ্বয়ের উপর অশ্রু ধারায় অঙ্কিত প্রণালী এবং মাটির ওপর সিক্ত তৃণ তার প্রমাণ দেয়। মুহাম্মদ ইকবাল অক্ষরজালে মদিনা ভ্রমণ সম্পূর্ণ করে আসেন। হৈতুক মানস বলে প্রেম আবেগ ব্যাখ্যা হয়না, কিন্তু বুসুরি আর ইকবালের মত প্রেমসুধায় উন্মাদ মানুষ তা করে গেছেন। যেহেতু প্রেম অন্যদেশের নাম, তা সময়-সীমাহীন। তাঁদের প্রেম-প্রভাব এখনও বিরাজমান। তাহলে প্রেম-উৎসের উৎসব কতই না হয়!
প্রেম-উৎসের পরিচয়
প্রেম-উৎস মক্কার অধিবাসী, মদীনার বাসিন্দা, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিপালকের প্রিয়, সারা-সৃষ্টির রহমত, মোমিনদের হৃদয়ে বিরাজমান, ইনসান-এ-কামিল মুহাম্মদ (সা:)। উৎসের সঙ্গে যখন সকল সৃষ্টি যুক্ত, সব জিনিস হয়ে যায় প্রেম প্রকাশ ও তা ব্যাখ্যার বিষয়। ক্রিয়া এককেন্দ্রিক হয়না, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সময়সাপেক্ষ খন-কিছুক্ষনের মধ্যে সংঘঠিত হয়। যদি ইমাম বুসুরী আর আল্লামা ইকবালের প্রেম বহিঃপ্রকাশ শুধুমাত্র প্রক্রিয়া হয়, তবে প্রেম-সৃষ্টির ক্রিয়া কেমন হবে! ব্যাখ্যাহীন!
বিশ্ব জাহানের মহা নিয়ন্ত্রক আল্লাহ তাআ'লার ঘোষনা: "হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।" আরও সুস্পষ্টভাবে: "আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।" নবী মুহাম্মদই যে প্রেম-উৎস তা প্রমাণের জন্য আরও কত ঐশ্বরিক দলিল প্রণালী জ্ঞান-উৎসের কালি কাগজে বিদ্যারুপে বিদ্যামান।
ক্রিয়া উদাহরণ
উৎস থেকে উদ্ভৃত প্রেমলীলার কত কথা। শুনে জান জুড়িয়ে যায়, গায়ে শিহরণ জাগে। কি প্রাকৃতিক সংকেত যে জন্ম প্রভাতই রহমত উদাহরণের এক বিরাট দৃষ্টান্ত। বিশ্ব প্রকৃতিতে এক নতুন প্রভাতের সূচনা হয়। এবার থেকে অন্ধকারের অবকাশ আর থাকবেনা। বিশ্বনবীর আবির্ভাব মানব জাতির মুক্তি ও নবদিশার নিদর্শন - মানুষ্যের সার্বিক কল্যাণ। আমিনার কুটির থেকে আরম্ভ হয়ে হালিমার ঘর পেরিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তীর্ণ হয়ে যায় সেই প্রেম ক্রিয়া।
পিপীলিকা, হরিণী, পাখির ছানা, উৎসর্গের উট এবং আরও কত অবলা প্রাণী নবীর প্রেম জালে রেহাই পেয়েছে। বৃক্ষ, খাদ্য, পানীয় জল ইত্যাদির ওপর সেই প্রেম বয়ে গেছে। শিশু, বাচ্চা, বৃদ্ধ, যুবক, মহিলা, পুরুষ, বিধবা, অনাথ, অসহায় সকলেই তাঁর প্রেম রহমতের অসীম সীমার পরিমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত।
উম্মত গোষ্ঠীর প্রতি প্রেমের প্রতাপ এতই উদ্দৃপ্ত যে ব্যাক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই লাভবিত। ঐশরিক উক্তি "আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন" -এর প্রতিক্রিয়ায় উম্মতের ভবিষ্যৎ দুর্দশা দর্শন করে প্রেম প্রতিফলন হয়: "হে প্রভু! আমার উম্মতের একজন জাহান্নামে থাকলে আমি সন্তুষ্ট হবনা।" ইতিহাসের পাতায় শিষ্য সমুদয়ের প্রতি এমন সহানুভূতি নজিরবিহীন। বর্তমানে প্রেম নামের যে অবমাননা তা দেখে নিশ্চিত যে এরকম প্রেম প্রকাশ ভবিষ্যতেও ঘটবেনা।
ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া
মোহনায় গিয়ে বড়ো সাগরে ছোট নদী মিশে হারিয়ে গেলেও তার উৎস পথের ইঙ্গিত করে। তারপর দেখা যায় সেই উৎস থেকে একটি নয় অনেক প্রণালী সম্পৃক্ত হয়ে আছে। তখন গোচরে আসে উৎসের প্রাধান্য, উৎসের প্রতি আকর্ষণ। ক্রমশ মোহনা লুকিয়ে যায় এবং পুরোটাই হয়ে যায় সাগর - মোহনাহীন প্রেম সাগর। প্রণালীদ্বয় ইমাম বুসুরী আর আল্লামা ইকবাল এই সাগরেই সংযুক্ত। তাছাড়া, এই ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত সংখ্যাহীন।
প্রেম ভালোবাসা ব্যাথা আনন্দের সন্মিশ্রণ ঘটায়। হৃদয় থেকে শিহরণ কম্পন সৃষ্টি হয়ে সারা শরীরে বিচরণ করে। কষ্টকে মধুর আর উল্লাসকে উন্মাদনায় পরিবর্তন করে দেয় প্রেমের গুন - প্রেমাগুন। তাই তো সাপের দংশনে আবু বাকর (র:) বিষ ব্যাথা নয়, প্রেম পীড়ায় কান্না শুরু করেন। অনুরূপ, আবু দুজানা (র:) নিক্ষিপ্ত তীরের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে যান। আরও দৃষ্টান্ত নুসাইবাহ বিনতে কাআব (র:) যাঁকে উহুদ যুদ্ধ ক্ষেত্রে দেখা যায়। সেদিন নবী প্রেম উত্তপ্ত নারীত্বের বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি।
অবশেষে, এই নবী প্রেম যতই প্রশস্ত, ঠিক তেমনটি শর্তসম্পূর্ন। প্রেম শর্তের প্রথমে আসে নবী অনুসরণ। প্রেমুৎসের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলার আদেশ: "এ নবী, মোমিনদের তাদের প্রাণের চেয়েও অধিক মালিক।" মোমিন হওয়াতে নবী প্রেম অবশ্যই বর্তমান: "তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই।"
তাছাড়া, উৎসের প্রশস্তা লক্ষ্য করলে ভালোবাসা না হওয়া অস্বাভাবিক, একেবারে অসম্ভব।