মুয়াজ্জাম বা মহিমান্বিত্তের বিশেষণে শাবান মাস
অতিক্রমী সময়ের নির্ঘন্টে পাওয়া বৎসরের এক পবীত্র মাস। ইসলামী আরবি চন্দ্র বর্ষের অষ্টম মাস যেটির নাম ‘শাবান’। শাবান শব্দে পাঁচটি অক্ষর আছে। চন্দ্র বর্ষের প্রথম মাস হলো মুহাররম। দেখা যায় মুহাররম শব্দে ও পাঁচটি বর্ণই আছে। তাছাড়া চন্দ্র বর্ষের নবম মাস রামাদানেও রয়েছে পাঁচটি বর্ণ। এই পাঁচ বর্ণ বিশিষ্ট চন্দ্র বর্ষের তিনটি মাসের ফযিলত ও তাৎপর্য ইসলামের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। যা কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবে...।
শাবান মাসের আখ্যায়িত নাম সমূহ
শাবান মাসকে মুয়াজ্জাম বা মহিমান্বিত এই বিশেষণে বিভূষিত করা হয়েছে। সহিহ হাদিসসমূহে রাজাব মাসের পরই এই মাসের স্থান দেখতে পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে ও মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র এই মাসের মধ্যবর্তী রজনীকে লাইলাতুল বারায়াত বা শবে বরাত নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ, দেশে বসবাসকারী আচেনীয়গণ এই রাতকে কুন্দুরী বলে অভিহিত করেন। এই রাতে পরোলোকগত ব্যক্তিদের জন্য রূহানি মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রাতভর দোয়া ও মোনাজাত করেন। কবরস্থানগুলো পরিষ্কার করা হয় ও কান্দুরী নামক খাদ্য ও নিয়াজ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব মঙ্গলক্রিয়ার শুভফল দ্বারা মৃত ব্যক্তিগণ রূহানিভাবে উপকৃত হন বলে সাধারণ মানুষ মনে করে থাকেন। আর জাভার অধিবাসীগণ এই রাতকে ‘রূয়াহ’ বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের ভাষায় রূয়াহ শব্দটির বহুবচন হলো আরওয়াহ। রূহানিভাবে পরলোকগত লোকদের উপকার সাধনই তার লক্ষ্য। আর দ্বীপদেশে বসবাসকারী চিন্নেগোত্রের লোকেরা এই রাতকে ‘মাদ্দাগেন’ বলে অভিহিত করেন। তাদের ভাষায় মাদ্দাগেন শব্দের অর্থ হলো সে রাত রজব মাসের অনুমান করে ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। এই রাত্রির বিশেষ নফল সালাতকে বলা হয় ‘সালাত আল হা-জাহ।’ এই চন্দ্রমাসের শেষ কয়েক দিবসে এই দেশের রাজধানীতে একটি বিশাল জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। তা ছাড়া আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তের দেশ মরক্কোর শাবান মাসের সমাপ্তি দিবসে একটি উৎসব পালিত হয়। পাশ্চাত্য লেখক এল. বুনটের রচনায় এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়।
শাবান শব্দের মূল ধাতু ও তার বর্ণনা
প্রাচীন আরবে তাৎপর্যের দিক দিয়ে রমজান মাসের সাথে শাবান মাসের সাদৃশ্য রয়েছে বলে মনে করা হতো। কেননা, শাবান শব্দে পাঁচটি বর্ণ রয়েছে। অনুরূপভাবে রামাজান শব্দেও রয়েছে পাঁচটি বর্ণ। রামাজান শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে ‘রমজ’। এর অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া। শাবান শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে ‘শায়াব’। এর অর্থ হচ্ছে বিরতি। মোটকথা, বিরতিসহ ইবাদতের মাধ্যমে গোনাহসমূহ জ্বালিয়ে দেয়াই হলো শাবান ও রমজানের মূল চেতনা। এই চেতনা জাগ্রত না হলে সময়ক্ষেপণ হয়তো হবে। কিন্তু কাক্সিক্ষত ফল লাভ করা যাবে না। সহি হাদিসের বর্ণনা হতে জানা যায়, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. অন্যান্য মাস অপেক্ষা শাবান মাসেই অধিকতর নফল রোজা রাখতেন। (সহি বুখারি : কিতাবুস সাওম, অধ্যায় ৫২; জামে তিরমিজী : কিতাবুস সাওম, অধ্যায় ৩৬)। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রা. পূর্ববর্তী রামাজানের পরিত্যক্ত রোজা শাবান মাসে আদায় করতেন।
শাবান মাসের ফজিলত ও করণীয় বার্তা
যেহেতু পবিত্র রমজান মাস বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মাস, সেহেতু পূর্ব থেকেই এ মাসের ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাই একজন মুমিনের কর্তব্য। হজরত রাসূল (সা.)-এর উপরোক্ত দোয়া-ই প্রমাণ করে তিনি পবিত্র রজব মাস শুরু থেকেই রমজানের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র রজব ও শাবানে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রমজানে অধিক ইবাদতের জন্য সময়-সুযোগ বের করতেন। মানসিকভাবে তৈরি হতেন। আর এ কারণেই তিনি পবিত্র শাবানের দিন, তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূল (সা.) পবিত্র শাবানের (দিন, তারিখ হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৮)।
হাদীস সমূহ
অনেক হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে_ হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র শাবানের চাঁদের দিন, তারিখের হিসাব রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। সুতরাং পবিত্র শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখাটাই সুন্নত এবং মুমিনদের করণীয়। পবিত্র শাবান মাসে অধিকহারে নফল রোজা রাখা উত্তম। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হজরত উন্মে সালামা (রা,) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হজরত নবী করিম (সা.) শাবান ও রমজান ব্যতীত দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.) কে শাবান মাসের মত এত অধিক (নফল) রোজা রাখতে আর দেখিনি। এ মাসের অল্প কিছুদিন ব্যতীত বরং বলতে গেলে সারা মাসটাই তিনি নফল রোজা রাখতেন (জামি তিরমিযী ১/১৫৫)।
১৪ তারিখ দিবাগত রাতের ফজিলত ও করণীয় বার্তা
পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত, অর্থাৎ পনেরো শাবান রাত হচ্ছে পবিত্র শবেবরাত, ভাগ্য রজনী, এ রাতের অশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বছরের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি রজনীর অন্যতম এ রাত। এ রাতের করণীয় সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন -পনের শাবান রাতে (শবেবরাত) তোমরা জেগে থেকে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। এ জন্য শবেবরাতে জেগে থেকে ইবাদত করা এবং পরদিন রোজা রাখা উত্তম। হাদিসের ভাণ্ডার পর্যালোচনা করে পবিত্র শাবানের এসব ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে জানা যায়। সুতরাং এর বাইরে নিজেদের মনগড়া কোনো কিছু করা সম্পূর্ণ অনুচিত।
দ্রষ্ট্যব্য, হাদীস সমূহের আলোকে
এক. শাবান মাসে কিবলা পরিবর্তন হয়
মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস। মিরাজের রাতে মুসলমানদের ওপর নামাজ ফরজের পর থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে নামাজ আদায় করতেন তারা। মুহাম্মদ (সা.) হৃদয় দিয়ে চাইতেন, কাবাঘর হোক মুসলমানদের কিবলা। পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর বানানো ঘর হোক সেজদার নিদর্শন। এজন্য মুহাম্মদ (সা.) নামাজে দাঁড়িয়ে বারবার আকাশের দিকে তাকাতেন। মনের আকুল প্রার্থনা ব্যক্ত করতেন।
১৬ মাস পর বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবাঘর কিবলা হিসেবে ঘোষিত ও নির্ধারতি হয় এই মাসে। কোরআনে বাঙ্ময় হয়েছে এভাবে, ‘বারবার আপনার আকাশের দিকে মুখমণ্ডল আবর্তন আমি অবশ্যই লক্ষ করি। সুতরাং কিবলার দিকে আপনাকে প্রত্যাবর্তন করে দেব, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। অতএব আপনি মসজিদুল হারামের (কাবাঘর) দিকে চেহারা ঘোরান। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, ওই (কাবা) দিকেই মুখ ফেরাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৪)
দুই. শাবানে রাসুল (সা.) নফল রোজা রাখতেন
রমজানের রোজা মুসলমান, বালেগ, সুস্থ মানুষের ওপর ফরজ। রমজান ছাড়া ভিন্ন মাসে ফরজ রোজা নেই। তবে অন্য মাসে ও বিশেষ দিনে নফল রোজা রাখায় সওয়াব রয়েছে। রাসুল (সা.) ও সেসব নফল রোজা রাখতেন। সাহাবিদের উদ্বুদ্ধ করতেন। রাসুল (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। অন্য কোনো মাসে এ পরিমাণ রোজা রাখতেন না।
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন এবং বলতেন, তোমাদের মধ্যে যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু (নফল) আমল করো, কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) পরিশ্রান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা (সওয়াব) দান বন্ধ করেন না। নবী (সা.)-এর কাছে সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় নামাজ ছিল তাই, যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হতো, যদিও তা পরিমাণে কম হতো এবং তিনি যখন কোনো (নফল) নামাজ আদায় করতেন পরে তা অব্যাহত রাখতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৭০)
তিন. রমজানের চাঁদ দেখে খুশি হতেন মহানবী (সা.)
নবী করিম (সা.) শাবান মাসে অধিকহারে নফল রোজা রাখতেন। উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৩৬)
চার. বরকত হাসিলের দোয়া করা
রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী বেশি বেশি বরকত হাসিলের দোয়া করতেন। রমজান মাসে ইবাদত করার সুযোগ ভিক্ষা চাইতেন। তিনি এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন
আরবি :
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান
অর্থ : হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৯)
পাঁচ. শাবান মাসে ১৫ তারিখ শবে বরাত
শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী মুক্তির রজনী। রোজা রাখার দিবস। এই রাতে বান্দার গুনাহ মাফ করা হয়। অভাবীকে রিজিক দেওয়া হয়। বিপন্মুক্ত করা হয় বিপদগ্রস্তকে। এই রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। ‘শব’ শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ রাত। ‘বারাআত’ শব্দটি আরবি। অর্থ : মুক্তি। তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হলো ‘শবেবরাত’। ‘শবেবরাতকে হাদিসের পরিভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়। এই রাতে আল্লাহতায়ালা সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন। বান্দাকে ডাকতে থাকেন। বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন আল্লাহর কাছে পেশ করার আহ্বান করেন।
হজরত আয়শা (রা.) -এর বর্ণনার আলোকে শাবান মাস
১. হজরত আয়শা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) রমজান ব্যতীত কোনো সময় পূর্ণ মাস রোজা রাখতেন না, তবে শাবান কিছুটা ভিন্ন। কারণ, এ মাসের প্রায় পূর্ণ সময় তিনি রোজা রাখতেন।’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-১৯৭০, সহীহ মুসলিম ও আবু দাউদ) একই অর্থের একটি বর্ণনা উম্মুল মুমিনিন হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ সুনানে তিরমিজিতেও এসেছে।
২. হজরত আয়শা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) শাবান মাসের প্রায় পূর্ণ সময় রোজা রাখতেন। আমি একবার তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনার শাবানের রোজা খুব পছন্দ? রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা সারা বছরে যারা মারা যাবে তাদের তালিকা এ মাসে প্রস্তুত করেন। আমার আকাঙ্ক্ষা যে, আমার নাম মৃতদের তালিকায় ওঠানো হোক রোজা থাকা অবস্থায়।’ (ফাতহুল বারী, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৫২)
৩. হজরত আয়শা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করি যে, শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোনো মাসে আপনাকে এত বেশি রোজা রাখতে দেখি না কেন? রাসূল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মাঝের মাস হচ্ছে শাবান। এ মাসের বরকত সম্পর্কে লোকেরা উদাসীন। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার সারা বছরের আমল পেশ করা হয়। আমার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, আমার আমলনামা ওই অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। (নাসায়ী, আবু দাউদ) মুহাদ্দিসগণের বড় একটি সংখ্যা এ হাদিস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন।
রাসূল (সা.) এর উক্তি দ্বারা প্রতীয়মাণ হয় যে, শাবান মাস সম্পর্কে লোকেরা উদাসীন থাকতো। এর কারণ হলো, শাবান হচ্ছে রজব ও রমজানের মাঝের মাস, মানুষ রমজানকে খুব গুরুত্ব দেয় বরকতময় হওয়ার কারণে, আর রজব যেহেতু হারাম মাসসমূহের অন্তর্ভূক্ত, তাই এটাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়। এই দুই মাসের মাঝে শাবান আসার দরুন গুরুত্বহীন ভাবা হতো। অথচ ফজিলতরে দিক থেকে এ মাসের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়।
রাসূল (সা.) উদাসীনতার সময়কে গুরুত্ব দিয়ে আমল করেছেন। এটাই শাবান মাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হওয়া উচিত যে, মানুষের উদাসীনতার সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে এগিয়ে নেয়া। এটা শুধু রাসূল (সা.) এর সুন্নত নয় বরং ইসলামেরও শিক্ষা। এর উদাহরণ হচ্ছে বাজারে গেলে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও জিকিরের নির্দেশনা। মানুষ যখন গভীর রাতে ঘুমের ঘোরে থাকে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে ঘুম থেকে ওঠে আল্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদা করা। বিভিন্ন ফেতনা-ফাসাদ প্রকাশ ও আইন-শৃঙ্খলা অবনতির সময় মানুষ দ্বীনদারির ব্যাপারে উদাস হয়ে যায়। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, সে সময় আরো বেশি আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। রাসূল (সা.) বলেন, ফেতনার সময়ে ইবাদত করা, আমার দিকে হিজরত করার ন্যায় ফজিলতপূর্ণ।’
এখানে জেনে রাখা ভালো যে, মূলত তিন সময়ে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। প্রথম হচ্ছে প্রত্যেক দিন ফজর ও আসরের পর বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। সাপ্তাহিক সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা হয়। বাৎসরিক আমলের রিপোর্ট পেশ করা হয় শাবান মাসে। হাদিসে আমল পেশ করার জন্য শাবান মাসের কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি, তাই বান্দার কর্তব্য হচ্ছে সারা মাস গুরুত্ব সহকারে আমল করা।
বুজূর্গদের নিকট শাবান মাস
পূর্ববতী বুজূর্গদের নিকটও শাবান মাসের অনেক গুরুত্ব ছিল। তারা শাবান আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কাজ ছেড়ে ইবাদতের জন্য অবসর হয়ে যেতেন। যেমন সালামা ইবনে কুহাইল (রাহ.) বলতেন, ‘শাবান মাস হচ্ছে কারীদের জন্য। যখন শাবান মাস এসে যেতো হাবিব ইবনে আবি ছাবিত (রাহ.) বলতেন, ‘এ মাস কারীদের মাস।আমর ইবনে কাইস আলমালায়ী (রাহ.) এর ব্যাপারে বলা হয়, শাবান মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দোকানপাট বন্ধ করে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য অবসরে চলে যেতেন। যে কোনো কাজের আগে তার অনুশীলন করতে হয়। খেলা শুরু হওয়ার আগে খেলোয়াড়দেরকে মাঠে নামিয়ে অনুশীলন করানো হয়, যেন খেলা শুরু হলে প্রস্তুতির জন্য কোনো সময় নষ্ট না হয়। মুসলমানের জন্য রমজান হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। আগে থেকে এ মাসের প্রস্তুতি না নেয়া হলে রমজানে প্রস্তুত হতে হতে অনেক সময় কেটে যাবে। তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে শাবান মাসের আমলগুলো দ্বারা রমজান মাসের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করা। যেহেতু রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের আমল, তাই শাবান মাসেও ওই আমলগুলো করতে হবে যে সব আমল রমজানে করতে হয়। যেমন কোরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদের নামাজে গুরুত্ব দেওয়া, মন্দ চর্চা ও পরনিন্দা পরিহার করা, দান-সদকা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত হচ্ছে শবে বরাত। এ রাতের আমল বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই শবে বরাতে আমলের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া।